বেগম খালেদা জিয়া যেভাবে অরাজনৈতিক ব্যাবহার করে প্রধানমন্ত্রীর পটুয়াখালী গমন উপলক্ষ্যে হরতাল প্রতাহার করল, রাষ্ট্রপতির মরদেহর প্রতি নিয়ম বহির্ভুত যে ভাবে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করল তাতে তাকে থামানোর জন্য আমি রক্ষী বাহিনীর কোন বিকল্প দেখি না। আচ্ছা কারা এই রক্ষী বাহিনী? শক্ত করে বসুন। লেটস গো।
রক্ষী বাহিনী- কেউ কেউ বলে পক্ষী বাহিনী। পক্ষী বাহিনী কেন? কারণ একটা আছে। দুর্দান্ত ছিল ওদের আগমন। কিন্তু বিদায় হয়েছে পক্ষীর মতো। কোথায় যে চলে গেল কেউ বুঝতে পারেনি। এই রক্ষী বাহিনীর সৃষ্টির পিছনে একটি রহস্য আছে। এদের সংগঠিত করা, প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্র প্রদান সম্পূর্ণ ছিল ভারতীয়দের হাতে। যেহেতু বাংলাদেশ আয়তনের দিক দিয়ে ভারতের চেয়ে বহুলাংশে ছোট; তাই ভারতই তো বাংলাদেশের প্রতিরক্ষার জন্য যথেষ্ট। তবে হ্যাঁ, অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য একটি শক্তিশালী বাহিনী দরকার, তাই ভারতীয় সেনাবাহিনীর আদলে পোশাক দিয়ে এই রক্ষী বাহিনী তৈরি করা হয়। এদের অধিকাংশ নিয়োগ হয়েছিল আওয়ামী লীগের সুপারিশে। ভারী কোনো অস্ত্র এদের দেয়া হয়নি। ওরা পুলিশি কাজ করবে ভারী অস্ত্রের কী দরকার?(লে. কর্নেল মুহম্মদ আনোয়ার হুসাইন খান, পিএসসি (অব.), ঢাকা।)
গোপন সাত দফা চুক্তি মোতাবেক একটি আধাসামরিক বাহিনী তৈরীর প্রস্তুতি আগেভাগেই ছিল ভারতের আর ‘র’ মনোনীত ব্যাক্তি বসেই ছিলেন ডাক পাবার অপেক্ষায় আর সে ব্যক্তিটি ছিলেন বিশেষ ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী তৈরীতে বিশেষ অভিজ্ঞ মুজিব বাহিনীকে মূল ট্রেনিং দাতা মেজর জেনারেল এস এস উবান। শেখ মুজিবুর রহমান ভারতের প্রাধানমন্ত্রী ইন্দিরা কে চিঠি দিতেই হাজির উবান।
সাথে আসে মেজর মালহোত্রা। তানদুয়ার মুজিব বাহিনীর ক্যাম্পে ট্রেনিং এর সময় ও এই মেজর মালহোত্রা ছিল। তার মানে নতুন বোতলে পুরানো মদ। মুজিব বাহিনীর ট্রেইনাররা আসে রক্ষী বাহিনী কে ট্রনিং দিতে। এই রক্ষী বাহিনী যাপিয়ে পরে বামপন্থী আর সমাজতান্ত্রিক বামপন্থী চিন্তাধারার অনুবর্তীদের ওপর।
নির্যাতন আর হত্যাকান্ডের অবাধ লাইসেন্স পেয়ে যায় রক্ষী বাহিনী কারন এরা একমাত্র জবাব দিহী করত প্রধান মন্ত্রী ও পরে প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে। আদালতে কোন মাম লা দায়ের করার সুযোগ ছিলনা এদের বিরুদ্ধে। ব্যাস শুরু হল গুমের রাজত্ব।
বামপন্থীদের ওপর হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য সম্পর্কে মাওলানা ভাসানীর হক কথা লিখে, “একটি বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থা বিশেষ প্রোগ্রামে এ দেশে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের হিসেব হলো, বাংলাদেশে সোয়া লক্ষ বামপন্থী কর্মীকে হত্যা করতে হবে। তা না হলে শোষণের হাতিয়ার মজবুত করা যাবে না।” (২৬ মে-১৯৭২ : সাপ্তাহিক হক কথা)
স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনৈতিক হত্যাযজ্ঞে শেখ মুজিবের ভূমিকার এক ভয়ঙ্কর তথ্য জানা যায় মাসুদুল হক রচিত ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের এবং সিআইএ' গ্রন্থে। ঐ গ্রন্থের ১০৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে, ‘১৯৭২ সালে একদিকে তিনি (মুজিব) সকল মুক্তিযোদ্ধাকে অস্ত্র জমা দেয়ার নির্দেশ দেন, অপরদিকে আব্দুর রাজ্জাক ও সিরাজুল আলম খানকে অস্ত্র জমা দিতে বারণ করলেন। শেখ মুজিবের ওই নিষেধ সম্পর্কে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সিরাজুল আলম খান আর আমাকে ডেকেই বঙ্গবন্ধু (শেখ মুজিব) বলেছিলেন, সব অস্ত্র জমা দিও না। যেগুলো রাখার দরকার সেগুলো রেখে দাও। কারণ, সমাজ বিপ্লব করতে হবে। প্রতি বিপ্লবীদের উৎখাত করতে হবে, সমাজতন্ত্রের দিকে এগুতে হবে। এটা আমাদের পরিষ্কারভাবে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন।
আহমদ মুসা তার ইতিহাসের কাঠগড়ায় আওয়ামী লীগ বইয়ে লিখেছেন, “আওয়ামী লীগ শাসনামলে যেসব প্রকাশ্য ও গোপন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ সরকার ও তার নীতির বিরোধিতা করেছে, সেসব দলের মতে, সে আমলে ২৫ হাজার ভিন্ন মতাবলম্বীকে হত্যা করেছে আওয়ামী লীগ। এ হতভাগাদের হত্যা করা হয়েছে চরম নিষ্ঠুরতা ও নৃশংসতার মধ্য দিয়ে- যে নৃশংসতা অনেক ক্ষেত্রে পাকিস্তানী সৈন্যদেরও ছাড়িয়ে গেছে। খুন, সন্ত্রাস, নির্যাতন, হয়রানি, নারী ধর্ষণ, লুণ্ঠন কোনো কিছুই বাদ রাখা হয়নি।”
সুতরাং ১৯৭২-১৯৭৫ সাল পর্যন্ত এসব হত্যাকাণ্ড যে পুরোপুরি রাষ্ট্রীয় মদদে হয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
শেখ মুজিব নিহত হবার পরেই এই সব নির্যাতন হত্যাকান্ড পত্রিকায় আসা ধরে। রিডার্স ডাইজেষ্ট ১৯৭৫ সালের মে মাসে লেখা হয়, ‘শেখ মুজিব দুটি বেসামরিক সংগঠনের ওপর নির্ভরশীল একটি হল ভাগনে শেখ মনির নেতৃত্বধীন এক লাখ যুবকের এক গুয়ে সংগঠন। এটি জাতীয় শুদ্ধি অভিযানে নিয়োজিত। অপরটি নিষ্ঠুর রক্ষী বাহিনী। শেষোক্ত দলটি যে কোন সময় যে কোন জায়গায় বন্ধুক উচিয়ে ঢুকে পড়ে………………………….
নিউজ উইক ১৫ ই জুলাই ১৯৭৫ লেখে, বিদেশী সাংবাদিকদের কাছে দেশের প্রকৃত অবস্থা বর্ননা করতে যেয়ে আজো পাকিস্তানী আমলের মত জনসাধারন ভয়ে কেপে ওঠে। সম্প্রতি এক মন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও করতে যেয়ে রক্ষীবাহিনীর মেসিন গানের গুলিতে ঠান্ডা মাথায় ১৯ জন হত্যা করে (একটু মিলিয়ে দেখুন কয়দিন আগে একদিনে ২৫ জন হত্যা করেছে ওরা কিন্তু রাজাকার বা জামাত ছিল না)
পশ্চিম বাংলার ‘ফ্রন্টিয়ার’ পত্রিকার ভলিউম বি, নম্বর-২’ প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়, ময়মনসিংহ জেলার এক থানাতেই শত শত তরুন, কৃষক ও ছাত্র কে হত্যা…………………….
রক্ষীবাহিনীর অত্যাচার ও হত্যার লাইসেন্স দেয়া প্রসঙ্গে ১৯৭২ সালের ২ এপ্রিল সাপ্তাহিক হলিডে পত্রিকার ‘স্যাংশান টু দ্য কিল ডিসেন্টার’ শীর্ষক প্রবন্ধে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব যখন প্রকাশ্যে জনসভায় নির্দেশ দিলেন, “নক্সালদের দেখামাত্র গুলী কর” তখন রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড চালানোর জন্য অন্য কোনো অনুমোদনের আর দরকার পড়ে না।’ এ পত্রিকার ১৯৭৩ সালের ২০ মে প্রকাশিত ‘ভিসেজ অব কাউন্টার রেভ্যলুশন’ শীর্ষক প্রবন্ধে বলা হয়, “রক্ষীবাহিনী হচ্ছে প্রতি বিপ্লবের অস্ত্র, যার উপর এমনকি সর্বভুক শাসক শ্রেণীর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ভারতীয় শাসক শ্রেণীর অনুগত এক সরকারকে এবং ভারতীয় উপ-সাম্রাজ্যবাদের সম্প্রসারণবাদী স্বার্থকে রক্ষা করার জন্য এটা হচ্ছে সিআরপির সম্প্রসারণ। এর নিঃশ্বাসে রয়েছে মৃত্যু আর ভীতি। আপনি অথবা আমি যে কেউ হতে পারি এর শিকার এবং বাংলাদেশের প্রশাসনের পুস্তকে আমাদের পরিচিতি হবে ‘দুষ্কৃতকারী’ হিসাবে।”
রক্ষীবাহিনীকে ইনডেমনিটি দেয়া প্রসঙ্গে সাবেক উপরাষ্ট্রপতি ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদের লেখা, ‘শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকাল’ বইয়ে উল্লেখ করা হয়-‘যখন রক্ষীবাহিনীর আচরণ এবং ভুমিকা নিয়ে জনগণের অসন্তোষ চরম পর্যায়ে উপনীত হয় এবং দেশের সংবাদপত্রগুলো তাদের ক্ষমতা, কতৃ ত্ব ও ভুমিকা নিয়ে অব্যাহতভাবে প্রশ্ন উত্থাপন করতে থাকে তখন ২০ মাস কার্যধারা পরিচালনায় ঢালাও লাইসেস দেয়ার পর সরকার রক্ষী বাহিনীর তৎপরতাকে আইনসিদ্ধ প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যেও একটি অধ্যাদেশ জারি করে।’
এইবার একটা মাত্র বর্ননা দেব রক্ষীবাহিনীর নৃশংসতার-
রক্ষী বাহিনী এসে বিপ্লবকে প্রথম খুব মারধর করলো।.. খুব মেরে বিপ্লবের মা ও বাবাকে ডাকিয়ে আনলেন। তারপর বিপ্লবকে বললো,’কলেমা পড়’। বাধ্য হয়ে বিপ্লব হিন্দু হয়েও কলেমা পড়লো। এরপর বললো, ‘ সেজদা দাও পশ্চিমমুখী হয়ে।‘ ভয়ে বিপ্লব তাই করলো। যখন সেজদা দিল, পেছন থেকে বেয়োনেট চার্জ করে বাবা-মা ও অনেক লোকের সামনে হত্যা করলো তাকে। বেয়োনেট চার্জ করার সময় রক্ষীদের একজন বললো, মুসলমান হয়েছো, এবার বেহেশতে চলে যাও।...
আমার সাথে যে ৪০জনের মতো ছেলে রাজনীতি করতো তারা সবাই ছিল ব্রিলিয়ান্ট, ফাস্টক্লাস পাবার মতো ছেলে। শুধু বেঁচে আছি আমি ও আরেকজন। বাকী সবাই রক্ষী বাহিনী, মুজিব বাহিনী ও মুজিবের অন্যান্য বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে গৌতম দত্তকে গ্রেফতার করা হয় ঢাকায় এবং হত্যা করা হয় কাটুবুলিতে তার নিজের বাড়িতে নিয়ে। রশিদকে হত্যা করা হয় রামভদ্রপুরে নিয়ে। ডামুড্যার আতিক হালদার, ধনুই গ্রামের মোতালেব এদেরকেও তাদের বাড়িতে নিয়ে আত্মীয়স্বজনের সামনে হত্যা করা হয়। পঁচাত্তরের প্রথম দিকে মোহর আলীকে ধরেছিল পুলিশে। শিবচর থেকে তাকে নিয়ে গিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। তার শরীরের চামড়া খুলে লবণ মাখিয়ে তাকে হত্যা করা হয় এবং তার লাশ ডামুড্যা বাজারে টানিয়ে রাখা হয় কয়েকদিন।
.... আঘাত এলো সিরাজ সরদারের উপরে। তিনি পালিয়ে গিয়ে সিরাজ সিকদারের বাহিনীতে আশ্রয় নিলেন। সিরাজ সিকদার তাকে চারজন গার্ড দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। একদিন তাকে ডেকে নিয়ে এলো। এরপর ঘেরাও করে প্রথমে তারা সিরাজ সিকদারের দেয়া চারজন গার্ডকে হত্যা করলো। আর সিরাজ সরদারকে নিয়ে এলো নদীতে। নৌকার মাঝির বর্ণনামতে, প্রথমে তারা সিরাজ সরদারের হাতের কব্জি কাটল, তারপর পা ও অন্যান্য অংগ প্রত্যঙ্গ কেটে এবং শরীরের মাংস কেটে টুকরো টুকরো করে নদীতে ফেলে দিলো।‘ ( বামপন্থী নেতা শান্তি সেনের বর্ণনা)
এই হল সুশীল আওয়ামীলীগের রাজনীতি। উপরের ছবিটি বাসন্তীর যারা এদেশে হিন্দু সংখ্যা লগুদের এক মাত্র অভিবাবক। বাসন্তী হিন্দু। গায়ে জাল জড়ানো আওয়ামী লীগের সুশাষনের আর এক নিদর্শন ১৯৭৪ এর দূর্ভিক্ষ। আমি এগুলো অবশ্য বিশ্বাস করি না মানুষ এত পিচাশ হয় কিভাবে?

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




