** অখন্ড পোস্ট - ১ এর পর থেকে **
( ১ পড়তে ক্লিক করুন: Click This Link )
ছয়
“ওহ নো। ওয়ারিদ।” মনে মনে ভাবলো আকাশ। আকাশের দুইটা মোবাইল। একটা নিয়মিত ব্যবহার করে। আরেকটা ফ্লিপিং সিম এর জন্য বরাদ্দ। যখন যাদের অফার থাকে, তাদের সিম ভরে কথা বলে। ডিজুসের অফার চলছে এখন। কিন্তু ফারিয়ার ওয়ারিদ। কি আর করা। ডিজুসের সিমটা খুলে ওয়ারিদের সিম খুঁজতে বের করে ভরলো। ভাগ্যভালো, ক্রেডিট আছে। তাছাড়া রাতে কলরেটও অনেক কম। তবে ফ্রি না, এটাই সমস্যা।
“হ্যালো”। ওদিক থেকে ফারিয়া ধরলো। “বাহ। মেয়েটার গলার স্বরতো দারুন।” মনে মনে ভাবলো আকাশ।
কথা চলতে লাগলো। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কিছুক্ষনের মধ্যে প্রসঙ্গ বয়ফ্রেন্ডে নিয়ে আসলো আকাশ। “এত চমৎকার একটা মেয়ে তুমি, নিশ্চয় সিঙ্গেল না।”
“এসব সিঙ্গেল-ডাবলের কথা আর বলো না। আই এ্যাম পিসড্ অফ!”
আকাশ মনে মনে হাসলো। এই উত্তরটা বহুবার বহু মেয়ের কাছ থেকে শুনেছে। প্রতিবার ব্রেক-আপের পর তারা ‘পিসড্ অফ’ থাকে কিন্তু মাসখানেকের মধ্যে ‘ইন এ রিলেশন’ অবস্থায় চলে যেতে তাদের সময় লাগেনা।
আকাশ গলায় একটা সমবেদনা নিয়ে এসে বলল, “বয় ফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া, তাই না?”
“না, না। এবার আর ঝগড়া না। এবার আমি সিরিয়াস। এই রিলেশন টেনে বেড়াতে পারবো না আর।”
“কেন, কি হয়েছে?”
“হি ইজ সাচ এ্য…। বাদ দাও।”
“তুমি মনে হয় বেচারার উপর খুব রেগে আছো।” আকাশ হাসতে হাসতে বলল। এটা হচ্ছে সদ্য ব্রেক আপ হওয়া মেয়েদের জন্য আকাশের প্রথম টনিক। এর পর মেয়েটা তার এক্স-বয়ফ্রেন্ডের ব্যপারে একটার পর একটা অভিযোগ করে যাবে। আকাশ সব অভিযোগগুলোকে খন্ডন করে দেখিয়ে দিবে যে আসলে মেয়েটা ছেলেটার উপর অবিচার করছে। ছেলেটা হয়তো এতটা খারাপ না যতটা মেয়েটা ভাবছে। এক সময় মেয়েটা হয়তো বলবে, “এই তুমি ওর হয়ে ওকালতী করছো কেন? তুমি বন্ধু আমার নাকি ওর?” তখন আকাশ গম্ভির ভাবে বলবে সে আর দশটা সাধারন বন্ধুর মত স্বার্থপর হতে চায় না। সে চায় তার বন্ধু সুখি হোক। এবং তার বন্ধুর সুখ মানেতো বন্ধুর বয়ফ্রেন্ড। এটা শোনার সাথে সাথে মেয়েটা গলতে শুরু করবে। গলায় হাজারো ন্যাকামো এনে বলবে, “ইউ আর সাচ এ্য সুইটি হানি।” কিন্তু তার পরপরই আবার বয়ফ্রেন্ডের বদনাম শুরু করবে। আকাশ আরো দুয়েকটা বদনাম খন্ডানোর ব্যর্থ চেষ্টা করবে। তারপর বলবে, “হয়তো আমিই ভুল। তবে অনুরোধ করবো যা করার ভেবে করতে।” এ অংশটা খুবই গুরুত্বপূর্ন। সঠিক জায়গায় এটা বলতে হবে। আগে-পরে হয়ে গেলে ওষুধে ভালো কাজ নাও দিতে পারে। তবে ঠিকঠাক বলতে পারলে এই পদ্ধতিতে নব্বই শতাংশ মেয়ে প্রথম কথা বলায় কাত হবে। তার পর ধীরে ধীরে বয় ফ্রেন্ডকে সরিয়ে হৃদয়ে কি করে জায়গা করে নিতে হয়, সেটা আকাশ খুব ভলো করেই জানে।আকাশ এটা ভেবেই পায় না মেয়েরা একই ফাঁদে বারবার কেন পা দেয়!
আকাশ যখন বলল তুমি বেচারার উপর অনেক রেগে আছো, এটা শুনে ফারিয়া যেন আরো তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলো। “তুমি জানো না রবিন, মানে আমার বয়ফ্রেন্ড কতটা মিন। সব শুনলে তুমিও আর এভাবে বলবে না।”
“কেন, কি করেছে? অফ কোর্স, যদি বলতে সমস্যা না থাকে।”
“আরে নাহ। সমস্যা কেন থাকবে। আমি গিয়েছি একটা বার্থ-ডে পার্টিতে।এটা শুনে, হি ওয়াজ শাউটিং লাইক হেল। আমি কেন গেলাম! আরে, আমি কি তোর কাজের বুয়া নাকি যে কোথায় যাব তোর থেকে শুনে যাবো?”
“নিশ্চয় কোন ছেলের বার্থ ডে ছিল।” আগুনে ঘি দেয়ার জন্যই যেন আকাশ যুক্ত করলো।
“হ্যা। ছেলেরই ছিল, তবে সে ছেলের বয়স দুই বছর।”
“তাহলে হয়তো কোন কারন আছে। তাছাড়া রবিন নিশ্চয় তোমার খারাপটা চাইবে না।”
“খারাপ ভালো জানি না। তবে রবিন সবসময় আমার উপর কতৃত্ব করতে চায়। সে যেটা বলবে সেটাই হবে।”
“এমনও তো হতে পারে সে ভেবেছিল ওখানে গেলে তোমার কোন সমস্যা হতে পারে?”
“আরে সমস্যা কিসের? আমার ফ্রেন্ডের ছেলের বার্থ ডে।” তারপর ফারিয়া একটু থেমে বলল, “ঠিক ফ্রেন্ডের ছেলের না। ফ্রেন্ডের ফ্রেন্ডের ছেলের।”
“মানে?” আকাশের ততক্ষনে বোঝা হয়ে গিয়েছে এখানেও একটা প্যাঁচ আছে। এই প্রজন্মের কারো জীবনে মনে হয় সোজা ঘটনা ঘটে না।
ফারিয়া আমতা আমতা করে বলল, “আসলে আমার এক্স বয়ফ্রেন্ডের এক্স গার্লফ্রেন্ডের ছেলের বার্থ ডে ছিল।”
এক্স-এ ভরপুর জটিল সম্পর্কের জালটা ব্যবহার করে আকাশ যখন ফারিয়ার উপর ওর পরবর্তি ওষধ প্রয়োগ করতে যাবে, তখনই অন্য মোবাইলটা বেজে উঠলো। মনিকা ফোন করেছে। আকাশ দেখলো ফারিয়াকে এখনও পুরোপুরি মুঠোয় আনা হয়নি। কথায় বলে, ফার্স্ট ইমপ্রেশন ইজ দ্যা বেস্ট ইম্প্রেশন। সেই ফার্স্ট ইম্প্রেশনই এখনও ঠিক মত তৈরী হয়নি। এখন মনিকার ফোন ধরা মানে ফারিয়া হাত ছাড়া হয়ে যাওয়া। আবার ফোন না ধরা মানে মনিকা হাত ছাড়া হবার সম্ভাবনা। উভয় সঙ্কট বোধয় একেই বলে।
তবে ছেলেটা যখন আকাশ। সমাধান বের করা কষ্টসাধ্য হলো না। আকাশ ফারিয়াকে একটু অপেক্ষা করতে বলে প্রথমে মনিকার ফোনটা কেটে দিল। কিন্তু ভাব দেখালো সে ফোনটা উল্টা ধরলো। তার পর অন্য ফোনে যাতে ফারিয়া স্পষ্ট শুনতে পায় এভাবে বলল, “হ্যা মামা বলেন।… আমিতো ওদের জানিয়ে দিয়েছি।… ওরা পায়নি? সেকি? কেন?.... আচ্ছা আমি আবার জানিয়ে আপনাকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে জানাচ্ছি।” বলাইবাহুল্য, পুরোটাই ছিল আকাশের অভিনয় সংলাপ। অন্য ফোনে ফারিয়া শুনছে আকাশ জরুরী কোন বিষয়ে কথা বলছে মামার সাথে। তার পর মামার কাল্পনিক কলটা শেষ করে ফারিয়াকে বলল, “আমাকে পাঁচ মিনিট সময় দেয়া যাবে? মামার বাইং হাউজে একটা ফোন করেই আমি তোমাকে আবার কল দিচ্ছি।”
ফারিয়া রীতিমত গলে যেতে শুরু করলো। আহা, এত সমস্যার মধ্যেও ছেলেটা আমার সাথে কথা বলতে চাচ্ছে। তাই বিগলিত গলায় বলল, “আমার কোন সমস্যা নেই। তুমি ধীরে সুস্থে ফোন দাও। তার পর আমাকে করো। আমি জেগে আছি।”
আকাশ ফারিয়ার লাইনটা কেটে অন্য ফোন থেকে দ্রুত মনিকাকে কল দেয়। ফোন ধরেই মনিকা সন্দেহের সুরে বলে, “তুমি কোথায় ছিলে? ফোন কাটার পর কল দিতে এত দেরী হলো কেন?”
“আর বলো না। মামার বাইং হাউজে একটা সমস্যা হয়েছে। সেটার জন্য ল্যান্ডফোন থেকে আমি গত দুই ঘন্টা ধরে ফোন করছি বিভিন্ন জায়গায়। তোমার ফোন পেয়ে আমি মামাকে বললাম অন্তত পাঁচ মিনিটের জন্য ছাড়তে।”
মনিকার গলা নরম হয়ে আসলো। বলল, “ওহ। আমি ভেবেছিলাম অন্য কারো সাথে কথা বলছো।”
আকাশ যেন খুব কষ্ট পেয়েছে এভাবে বলল, “এটা তুমি কি করে ভাবলে? আমাকে তুমি বিশ্বাস করো না?”
মনিকা তাড়াতাড়ি বলল, “না, না। তা কেন করবো না? করি বলেইতো এত ভালোবাসি তোমাকে।”
আকাশ হাসলো। তার পর বললো, “মামার সমস্যাটা শেষ হতে কত সময় লাগবে বুঝতে পারছি না। তবে এক ঘন্টার মধ্যে শেষ না হলে, আমি উঠে চলে আসবো। আর আগে হলে, আগেই এসে তোমাকে কল দিব।”
“তুমি যাও। আমি অপেক্ষা করছি।” তারপর গলায় রহস্য আর দুষ্টুমী এনে বলল, “তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করো। আজকে তোমার জন্য স্পেশাল ট্রিট আছে!”
আকাশ মনিকার ফোন রেখে দ্রুত ফারিয়াকে ফোন দিল। পরবর্তি এক ঘন্টা ফারিয়ার সাথে কথা বলে আবার ফিরে গেল মনিকার কাছে। এভাবে পালাবদলের মধ্য দিয়ে যখন আকাশের কথা বলা শেষ হলো, তখন ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। শুধু আকাশ বা মনিকা নয়, এই প্রজন্মের একটা বড় অংশ এভাবে সারারাত ফোনে কথা বলে ভোরের দিকে ঘুমোতে যায়। তাদের যদি জিজ্ঞেস করা হয় সর্বশেষ কবে তারা সূর্য উঠতে দেখেছে, তারা মনে করে বলতে পারবে না। ধীরে ধীরে এ প্রজন্ম সূর্যদয়-বঞ্চিত প্রজন্মে পরিনত হচ্ছে।
সাত
“এ আমি কি দেখছি!” পরিহাসের সুরে সজীব বলল। “লাভ-গুরু আকাশ আজ দিনে দুপুরে ক্যাম্পাসে? লাল গালিচা বিছিয়ে দিব?”
আকাশ বিরক্ত হয়ে হাতের ইশারায় সজীবকে থামালো। ওর ঘুম থেকে উঠতে উঠতে আজ দুপুর হয়ে গিয়েছে। যদিও এটা নুতন কিছু নয়। মাঝে মাঝেই এমনটা হয়। সকালের ক্লাসটা মিস হয়েছে। তিনটার সময় আরেকটা ক্লাস আছে। তাই ভাবলো যাই, করে আসি।
আকাশদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গলিতে একটা বটতলা আছে যেখানে বেশ কিছু ঘুন্টি চায়ের দোকান রয়েছে। মহাখালী এবং আসেপাশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের কাছে এই জায়গাটা বেশ প্রিয়। মাঝেমাঝে এখানে জড়ো হয়ে আড্ডা দেয় তারা। একটা দোকানে বসতে বসতে সজীব বলল, “মামা, দুইটা চাফি পাঠাও”। চা এবং কফির সমন্বয়ে তৈরী এই চাফি। তার পর আকাশের দিকে ফিরে বলল, “সত্যি করে বলতো, কি মনে করে আজ তুই ক্লাসে আসলি? আমিতো ভেবে ছিলাম আজও আসবি না।”
“কেন আমি কি ক্লাস করি না?”
“করিস, তবে এই গৌন কাজটা তুই সাধারনত কোন মূখ্য কাজের সাথে করিস। তাই ভাবছি তোর মূখ্য কাজটা কি? মেয়ে বিষয়ক কিছু নাকি? এবারের ফ্রেশারদের মধ্যে বেশ কিছু ‘হটি’ আছে।”
“তোর কি ধারনা আমি সব সময় মেয়ে নিয়েই চিন্তা করি?” একটু বিরক্ত হয়ে আকাশ বলল।
“বাহ! তোর এত উন্নতি হয়েছেতো জানতাম না। এখন ছেলেদের নিয়েও চিন্তা করিস নাকি?” সজীব খোঁচাটা দিয়েই হাসতে লাগলো।
আকাশ বলল, “সমস্যাটা কি তোর? ইদানিং তুই বেশি স্মার্ট সাজার চেষ্টা করছিস। গত কিছুদিন ধরেই আমি এটা লক্ষ্য করছি। ঝেড়ে কাশতো এবার।”
সজীব আরো জোরে হেসে বলল, “না রে ভাই। তুই হলি লাভ-গুরু আকাশ। তোর থেকে বেশি স্মার্ট হবার সাধ্য আমার নাই।” তার পর প্রসঙ্গ পাল্টে বলল, “শুনেছিস, অনিন্দিতার বাবা মারা গিয়েছেন?”
“হুম। মার কাছ থেকে শুনলাম কাল।”
“বেচারীর জন্য খারাপ লাগছে।”
“খারাপ লাগার কি আছে? ভালই হয়েছে।”
“আর ইউ আউট অফ ইওর মাইন্ড? একটা মেয়েকে যতই ঘৃনা কর, তার বাবা মারা গিয়েছে, এটা নিয়ে এরকম একটা কথা কি করে বললি?”
আকাশ দেখলো কথাটা এভাবে বলা ঠিক হয়নি। তাই তাড়াতাড়ি বলল, “আচ্ছা বাদদে না প্লিজ। স্বীকার করছি এভাবে বলা ঠিক হয়নি। আসলে এক জীবনে আমি এত ঘৃনা আর কাউকে করতে পারি না।” তার পর একটু থেমে বলল, “তুই কোথা থেকে শুনলি?”
“আমাদের এ্যাপার্টমেন্টের তিনতালার নাফিসা অনিন্দিতার বান্ধবী। নাফিসার কাছ থেকে শুনলাম।”
“কোন নাফিসা? ঐ যে সেক্সি করে মেয়েটা?”
“সব মেয়েকেই তোর সেক্সি লাগে, তাই না? একটা মেয়ে যে কারো বোন হতে পারে, কিম্বা কারো ভালোবাসার মানুষ, এমনকি তোর নিজেরও, সেটা মাথায় আসে না কেন?” সজীব বিরক্তভাবে বললো।
আকাশ খোঁচা দিয়ে বলল, “ব্যাপার কি রে? এত গায়ে লাগছে কেন? নাফিসার সাথে তোর চক্কর চলছে নাকি? এরকম কিছু হলে আমাকে আগেই বলে রাখিস। বন্ধুদের গার্লফ্রেন্ডের দিকে হাত দেয়ার মত খারাপ সময় এখনও আকাশের আসেনি।” কথাটা বলেই আকাশ হাসতে লাগলো।
চাফির মাগদুটো দোকানের ছেলেটার হাতে দিতে দিতে সজীব বলল, “এতটুকু জেনে রাখিস, অন্তত বিয়ের আগে আমার বৌ-এর সাথে তোর কোনদিন পরিচয় করিয়ে দেব না।”
কথাটা আকাশ গায়ে মাখলো না এতটুকু। আসলে তখন সে ব্যস্ত অন্য বিষয়ে। গলির মুখে ফরিদকে দেখা যাচ্ছে। ফরিদ হলো বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইয়াবা সাপ্লাই দেয়ার মূখ্য ব্যাক্তি। আগে ইয়াবা সম্রাট জুয়েলের নিকেতনের বাসা থেকেই সবাই ইয়াবা নিয়ে আসতে পারতো। এমনকি প্রথম দিকেতো জুয়েল পার্টি থ্রো করে ফ্রি ইয়াবা দিত। পরে টাকা নেয়া শুরু করে। একটা সময়ে ব্যাপারটা জানাজানি হতে শুরু করলে জুয়েল বিভিন্ন এ্যাজেন্টের মাধ্যমে ইয়াবা সাপ্লাই করা শুরু করে। বলাইবাহুল্য ফরিদ সে সব এ্যাজেন্টদের মধ্যে অন্যতম।
আকাশ উঠে গিয়ে ফরিদকে ডাক দিল। ফরিদ বিগলিত একটা হাসি দিয়ে বলল, “কি খবর আকাশ ভাই?”
“খবরতো সব তোমার কাছে। মাল কোথায়?”
“মালের কথা আর বইলেন না। RAB-এর কারনে মাল সাপ্লাইয়ে বহুত সমস্যা হইতাসে।”
“কেন RAB মালপানি নেয় না?”
“আসলে তাগো বুঝা মুশকিল। কার এত বুকের পাডা আছে তাগো লগে মালপানি নিয়া ক্যাচাল করতে যাইবো? কোন সময় ক্রসফায়ারে ফুট্টুস কইরা দিব।”
“ধুর, সব বাজে কথা। কাপড়ের রং খাকি থেকে কালো হলেই মানুষ পরিষ্কার হয় না।”
“চেষ্টা চলতাসে। জুয়েল ভাইতো এখনও লাপাত্তা। আমরাই দেখা পাই না। তয় ব্যবস্থা হইবো একটা না একটা।”
আকাশ দেখলো আসলেই অবস্থা বেশ খারাপ। সরকার ইয়াবার বিরুদ্ধে কঠিন অবস্থান নিয়েছে। যেন পলিথিলিন মুক্ত বাংলাদেশের মত এখন ইয়াবা মুক্ত বাংলাদেশ গড়বে। কিন্তু ওদের কি হবে? ইয়াবা যে ওদের অনেক কষ্টের বন্ধু। যখন প্রচন্ড হতাশ লাগে আকাশের, তখন ইয়াবাই যেন শেষ আশ্রয়। ইয়াবার আরেকটা বিশেষত্ব হচ্ছে, এটা অন্য ড্রাগের মত ঘুম পাড়িয়ে দেয় না বরং এটা জাগিয়ে রাখে। আকাশ ওর পরিচিত কিছু ছেলেমেয়েকে দেখেছে, ইয়াবা খেয়ে দিনের পর দিন না ঘুমিয়ে জেগে আছে। চোখের নিচে কালি পড়ে গিয়েছে, চেহারা ভেঙ্গে গিয়েছে। তবুও তারা নিচ্ছে তো নিচ্ছে। যদিও আকাশ এতটা এ্যাডিকটেড না, তবে যখন পুরানো কষ্টগুলো জেগে উঠে বুকের মাঝে তখন ইয়াবা ওকে অনেক শান্তি দেয়।
আকাশ ফরিদকে বলল, “আমি অত কথা বুঝি না। আমাকে মাল দিতে হবে, এবং এখনই।”
“কিছু মাল আছে। তয়, ডবল দাম দিতে হইবো। বোঝেনইতো অবস্থা।”
আকাশ বিরক্ত হয়ে বলল, “আমার সাথে ধান্দাবাজি কর, তাই না? অবস্থার ফায়দা তুলছো?”
ফরিদ যেন খুব লজ্জা পেয়েছে এমন ভাবে বলল, “কি যে কন আকাশ ভাই। তয় কিছু করনের নাই।”
আকাশ বুঝলো এভাবে কাজ হবে না। তাই স্বর নরম করে বলল, “দেখো ফরিদ, আমিতো মাঝে মধ্যে মজা করে খাই। আমার থেকে ডাবল দাম নিয়ে কয় টাকা আর লাভ করতে পারবা? তোমাদেরতো রেগুলার কাস্টোমার আছে। ওরা না কিনে থাকতে পারবে না। আসল ব্যবসাতো ওদের থেকেই করতে পারো।”
ফরিদ কি যেন ভাবলো। তার পর বলল, “আইচ্ছা ঠিক আছে। আগের দামেই দিচ্ছি আপনারে।” তার পর একটা কাগজের প্যাকেট বের করে আকাশের হাতে দিয়ে দিল। আকাশও একটা পাঁচশ টাকার নোট ফরিদের পকেটে গুঁজে দিল।
বিদায় নেয়ার আগ মুহুর্তে ফরিদ আকাশকে বলল, “আকাশ ভাই, আপনারে ভালো পাই, তাই একটা কথা কই। আমাদের যারা রেগুলার কাস্টোমার আছে, তারা কিন্তু শুরুতে আপনার মত মজা কইরা খাইতো। তার পর এক সময় এমন হইছে যে আর না খাইয়া থাকতে পারে না। যদিও এইডা আমার ব্যবসা, তবুও আপনারে কমু, যদি পারেন ছাইড়া দিয়েন। জিনিসটা একদমই ভালো না।”
আকাশ কিছু বললো না। কিছুক্ষন ফরিদের দিকে তাকিয়ে থেকে চুপচাপ হেটে চলে আসলো বন্ধুদের মাঝে। কিন্তু এখানেও সেই একই আলোচনা, ইয়াবা। এক ছেলে নেতাদের মত ইয়াবা বিষয়ে মিডিয়ার বিভ্রান্তিকর প্রচারনা নিয়ে কথা বলছিল। কিছুদিন আগে দেশের কিছু দৈনিক পত্রিকা ‘ইয়াবা সুন্দরী ইয়ানা’ নামে একটা রিপোর্ট করেছিল। এই মেয়ে আকাশদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রী। আসৎ সঙ্গে পড়ে সে কিছুদিন ইয়াবা নিয়েছিল বটে, তবে এক সময় সে তার ভুল বুঝতে পেরে সরে আসে এ পথ থেকে। এখন সে সমাজের একজন সম্মানিত ব্যাক্তির স্ত্রী। অথচ তাকে নিয়ে যেভাবে উল্টাপাল্টা কথা ছড়ানো হচ্ছে, এটা তার পারিবারিক এবং সামাজিক শান্তি নষ্টের জন্য যথেষ্ট। শুধু এই মেয়েই নয়, অন্য যাদের নিয়ে হুটহাট মন্তব্য করে বসছে মিডিয়া, কতটুকু গভীরের খবর তারা জানে সেটা রীতিমত সন্দেহজনক।
ইয়াবা বিষয়ক বক্তব্য আকাশের আর একদমই ভালো লাগছিল না। তাই উঠে ক্লাসের দিকে হাটা দিল।
আকাশ চলে যাবার পর সজীব এবং আরো কিছু ছেলে ফরিদকে ঘিরে ধরেছিল। তারপর কাটাকাটা শব্দে জানিয়ে দিয়েছিল যদি তাকে আর একবারও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের আসেপাশে দেখা যায়, তাহলে তার বিশেষ অঙ্গের নিচে একটা ছোট অপারেশন করে দুটো রসুন ভরে দেয়া হবে। বলাইবাহুল্য, এর পর ফরিদকে স্বশরীরে অন্তত সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে আর কখনও দেখা যায় নাই।
আট
“কি খবর? কেমন আছেন?”
ফারজানা ম্যাসেঞ্জারে নক করেছে। আকাশের কথা বলতে ইচ্ছে করছিল না। অনিচ্ছা স্বত্বেও কথা বলল।
“এইতো ভালো। আপনি?”
“আমিও ভালো। এত রাতে কি করছেন? দেশেতো এখন তিনটার বেশি বাজে।”
“আমি নিশাচর প্রানী। রাতে জেগে থাকি, আর দিনে ঘুমাই।”
“আরে বাহ! ক্লাসটা কে করে দেয়? স্যার নিজেই?”
খোঁচাটা আকাশ সম্পূর্ন অগ্রাহ্য করলো। সুন্দরী মেয়েরা খোঁচা দিতেই পারে, এটা তাদের অধিকারের মধ্যে পড়ে। যদিও ফারজানা নামক এই অদেখা নারী সুন্দরী কি না সেটা এখনও জানা যায়নি। সজীবকেও কোন দিন জিজ্ঞেস করা হয়নি। আসলে কেন যেন এই মেয়েটার প্রতি তেমন কোন আকর্ষন বোধ করছে না আকাশ। হয়তো সজীবের বলা সেই কথাটাই সত্য, “ফারজানাকেতো আর বেডে নেয়া যাবে না।”, মনে মনে ভাবছিল আকাশ।
হঠাৎ ভাবনায় ছেদ পড়লো। ফারজানা আবার লিখেছে, “কি হলো চুপ করে আছেন কেন?”
আকাশ লিখলো, “ভাবছি আমরা কয়েকদিন হয়ে গেল কথা বলছি, কিন্তু এখনও তুমিতে আসতে পারলাম না।”
“কেন? তুমিতে আসাটা কি খুব জরুরী?”
“তা না হলে কেমন যেন পর পর মনে হয়। বন্ধুত্বটা ঠিক জমে না।”
“তাই নাকি? আর যাদের তুমি করে বলেন, তাদের সবাইকেই কি খুব আপন মনে হয়?”
“মেয়েটার সমস্যাটা কি? প্রত্যেকটা কথায় খোঁচা দিচ্ছে।” মনেমনে ভাবলো আকাশ। তার পর লিখলো, “‘তুমি’ হচ্ছে বন্ধুত্ব এবং ভালোবাসার প্রথম পদক্ষেপ।”
ফারজানা ভেংচিকেটে লিখলো, “আমাকে ভালোবাসতে কে বলেছে আপনাকে?”
আকাশও সাথে সাথে একহাত নিল, “আমার এত খারাপ দিন আসে নাই যে আপনাকে ভালোবাসতে হবে। আমি বন্ধু হবার প্রথম পদক্ষেপের কথা বলছিলাম।”
আকাশ এখন বেশ প্রফুল্যবোধ করছে। দুইদুইটা খোঁচা খাবার পর ইটের জবাবে একটা পাটকেল মারতে পেরেছে। তবে ফারজানাকেও বেশ চটপটে দেখা গেল। সাথে সাথেই লিখলো, “আপনার হৃদয়ে এত নারী আছে যে আপনি চাইলেও আমাকে ভালোবাসতে পারবেন না। জায়গা হবে না তো!”
“তাই নাকি? আমার খবর বেশ ভালই জানেন দেখছি? কে দিল এত তথ্য? সজীব?”
“কেন সজীব ছাড়া কি আর খবর জানার মানুষ নেই? মনে রাখবেন, পৃথিবীটা গোল। কখন যে কে কার পরিচিত বের হয়ে যায়, আপনি নিজেও বুঝে উঠতে পারবেন না।” এর পর রহস্য করে বললো, “হয়তো আপনার কোন এক গার্লফ্রেন্ড-এর বান্ধবী আমি।”
আকাশ একটু চিন্তায় পড়ে গেল। মেয়েটা কি মজা করছে, নাকি সিরিয়াস? এই মেয়েকে যতটা সোজা মনে হয়েছিল, আসলেতো সে ততটা সোজা নয়।
আকাশকে কিছু লিখতে না দেখে ফারজানা আবার লিখলো, “এই যে মি. নিশাচর। এত কি ভাবছেন? চিন্তা করেন না, আমি আপনার নীলা-লোলিতা-নিরুপমাদের বান্ধবী না।” তার পরপরই প্রসঙ্গ পাল্টে লিখলো, “আচ্ছা, এত মেয়ের সাথে যে প্রেম-প্রেম খেলা খেলেন, কি মজা পান আপনি? বোর লাগে না?”
আকাশ একটা হাসি দিয়ে লিখলো, “বোর কেন লাগবে? এই খেলা আমাকে এ্যানার্জি দেয়।”
“আরে ধুর। আমি সিরিয়াস। সত্যি করে বলেনতো, আপনার খারাপ লাগে না এমন করতে?”
হঠাৎ করে আকাশের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। লিখলো, “খারাপ লাগার কি আছে? আমি যা করছি, তারাও তাই করছে। সবাই তাই করে।”
“কিন্তু আপনি যা করছেন, সেটা যে ঠিক না, সেটা কখনও মনে হয়নি?”
“কেন ঠিক হবে না? আমি যা করছি এটাই ঠিক।অল দ্যা গার্লস আর বিচেস।” হঠাৎ করে যেন আকাশের ভেতরে নিভে থাকা আগুনটা দপ করে জ্বলে উঠলো। মনে মনে বলল, “আমাকে ভালো-খারাপ শেখাতে এসেছে! সব মেয়েই আসলে একেকটা…।” আকাশের মাথায় ‘ম’ অদ্যাক্ষরের একটা গালি ঘুরছিল তখন।
আকাশের কথায় ফারজানা হয়তো একটু হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল। তাই বেশ কিছু সময় চুপ করে রইলো। তার পর লিখলো, “একটা সত্য কথা বলবেন?”
“কি?”
“আপনার ভেতরে কি কোন তিব্র কষ্ট আছে?”
“সেটা জেনে আপনার কি দরকার?” কথাটা বলেই আকাশ বুঝলো বেশি রুঢ় হয়ে গেল ব্যবহারটা। কিন্তু মেয়েটাই বা কেন এ সব কথা তুলছে? আকাশের ভেতরের ঘৃনার সমুদ্রে যে সে ঝড় তুলে ফেলেছে এরই মধ্যে।
ফারজানা কিছু লিখছে না দেখে আকাশ আবার লিখলো, “আমি সরি। আসলে এ ব্যাপারগুলো আমাকে প্রতিমুহুর্তে যন্ত্রনা দেয়। এ সব বিষয় উঠলে আমার মাথা ঠিক থাকে না।”
ফারজানা মনে হয় ততক্ষনে আকাশকে একটু একটু করে বুঝতে পারছে। তাই লিখলো, “যন্ত্রনাগুলো ভেতরে রাখলে আপনি আরো কষ্ট পাবেন। আমার সাথে শেয়ার করুন। হালকা বোধ করবেন।”
“কি শেয়ার করবো? এখানে শেয়ার করার কিছু নাই।”
“অবস্যই আছে। বুকের ভেতরে আপনি যন্ত্রনার সমুদ্র নিয়ে বসে আছেন। আর বলছেন শেয়ার করার কিছু নাই?”
“আমি সত্যিই জানি না এসব কষ্ট কি করে শেয়ার করে।” হতাশ ভাবে আকাশ বলল।
“আমি আপনাকে সাহায্য করছি। আপনি শুরু করুন। যেখান থেকে ইচ্ছা, শুরু করুন।”
“আপনি প্রশ্ন করুন। আমি উত্তর দিচ্ছি।”
“আপনার ভালোবাসার মানুষের কথা বলুন। যাকে আপনি সত্যি সত্যি ভালোবেসে ছিলেন। আমি নিশ্চিৎ, এমন কেউ না কেউ আপনার জীবনে অবস্যই ছিল।”
আকাশ প্রথমে একটু চুপ করে ছিল। তার পর যেন নিজের অজান্তেই লিখে ফেললো নামটা। “অনিন্দিতা। আদর করে আমি ডাকতাম – অনি।” বুকের ভেতরের জমে থাকা কষ্টগুলো হঠাৎ যেন একটু হালকা হয়ে এলো। গত দুবছর যে নামটাকে আকাশ জোর করে ঘৃনা করার চেষ্টা করছে, আজ কেন সেই নামটাই ওর কষ্টগুলোকে হালকা করে দিচ্ছে? আকাশ সর্বশক্তি দিয়ে আবারও ঘৃনা করতে চাইলো, কিন্তু আর পারলো না। তার পর আবার লিখলো, “আমাদের পরিচয় স্কুল থেকে। বন্ধুরা বলতো আমাদের মত জুটি নাকি আর হয় না। অদ্ভুত এক আবেগে অনি জড়িয়ে রাখতো সব সময় আমাকে। আমাদের ভালোবাসা ছিল নিঃশ্বাসের মত। একজন আরেকজনকে একমুহুর্ত না ভাবলে যেন বেঁচে থাকা অসম্ভব হয়ে যেত। যখন অনির কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকতাম, তখন মনে হতো এই পৃথিবীর সবকিছু যদি কেউ আমার থেকে নিয়েও নেয়, তুবও আমি সবচেয়ে সুখি মানুষ হয়ে থাকতে পারবো। এক জীবনে একটা মানুষ এত ভালোবাসা দিতে পারে, অনিকে না দেখলে কোন দিন বিশ্বাস করতে পারতাম না।”
আকাশ একটু থামলো। ফারজানা লিখলো, “তার পর?”
“তার পর? সব কিছু কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেল। কিভাবে যেন আমাদের ভালোবাসায় নজর লেগে গেল। কলেজে ওঠার পর অনি বদলে যেতে শুরু করলো। একটু একটু করে দূরত্ব বাড়তে লাগলো। জিজ্ঞেস করলে বলতো পড়ালেখার ব্যস্ততার জন্য এমন হচ্ছে। কিন্তু মাঝে মাঝে আমার কানে আসতো, অনি আমাকে না জানিয়ে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাচ্ছে। যদিও মেয়ে বন্ধুই থাকতো বেশি, তবে তাদের মধ্যে দু’একজন ছেলে বন্ধুও ছিল। প্রথম প্রথম আমি স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছিলাম ব্যাপারগুলোকে। কিন্তু একটা সময় রায়হান নামে একটা ছেলের সাথে ওর ঘনিষ্ঠতা বাড়তে শুরু করে। জিজ্ঞেস করলে বলতো ভালো বন্ধু। কিন্তু এই তথাকথিত ভালো বন্ধুর সাথে অনেক জায়গায় অনিকে একা ঘুরতে দেখা যেতো। এক সময় আমার থেকে রায়হানের প্রতিই বেশি আগ্রহী হয়ে উঠলো অনি। আমাকে পুরোপুরি এড়িয়ে চলতে শুরু করলো তখন। সময় কেটে যেতে লাগলো।…”
“তার পর…?” যেন সম্মোহিতের মত প্রশ্ন করলো ফারজানা।
“তার পর এক সময় সেই নির্মম সত্যগুলো বের হয়ে আসতে শুরু করলো। প্রকাশ হতে শুরু করলো রায়হানের সাথে অনির বিভিন্ন স্ক্যান্ডাল। রায়হানও যে অনিকে ভালোবেসে ছিল তা কিন্তু নয়। রায়হানও অনির সাথে প্রেম-প্রেম খেলাই খেলেছিল। রায়হান গোপন ক্যামেরা দিয়ে ভিডিও করে রেখেছিল অনির সাথে ওর বিভিন্ন অভিসারের চিত্র। এই নিয়ে অনেক ঝামেলা শুরু হলো। থানা-পুলিশ পর্যন্ত হয়েছিল। রায়হানের পরিবারের সাথে অনির পরিবার মিটিং করলো। শেষ পর্যন্ত সবগুলো ভিডিও টেপ বাজেয়াপ্ত করার মধ্য দিয়ে রায়হানের সাথে মীমাংসা করলো অনির পরিবার।”
আকাশ একটু থেমে আবার বলতে শুরু করলো, “কিন্তু ততদিনে হারিয়ে গিয়েছে আমার অনি। অনি তখন কেবলই অনিন্দিতা। এর পর অনি আর কলেজে যেতো না। এমন কি কারো সাথে কথাও বলতো না। আমি চেষ্টা করেছিলাম দেখা করার, কথা বলার। কিন্তু কোন ভাবেই আর অনি রাজী হয়নি আমার সাথে কথা বলতে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে দেশের সব কিছু বিক্রি করে ওরা অস্ট্রেলিয়া চলে যায়।”
আকাশ থামলো। ফারজানাও চুপ। যেন দুজনেই কথা হারিয়ে ফেলেছে। বেশ কিছু সময় চুপ থাকার পর ফারজানা আবার জিজ্ঞেস করলো, “তার পর আপনি আর অনিন্দিতার খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করেননি?”
“নাহ। আমি আর যোগাযোগের কোন চেষ্টা করিনি। যে আমার সাথে এত বড় বিশ্বাসঘাতকতা করলো, তাকে আমি কেবল দূর থেকে ঘৃনাই করতে পেরেছি। এর পর আমি যখনই কোন মেয়েকে দেখেছি, আমি তার মাঝে অনিন্দিতাকে দেখেছি। আমি যখনই কোন মেয়ের শরীরকে দেখেছি, আমি রায়হানের হাতে অনিন্দিতার নগ্ন শরীরকে কল্পনা করেছি। যখনই আমি কোন মেয়ের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছি, আমি অনুভব করেছি, আমি যেন অনিন্দিতার উপর একটু হলেও প্রতিশোধ নিতে পেরেছি।”
আকাশ আর লিখতে পারছিল না। ওর হাত কাঁপতে শুরু করেছে। বুকের মাঝে উন্মাতাল ঝড় উঠেছে তখন। অনেক অস্থির লাগছিল। বারবার চোখ চলে যাচ্ছিল টেবিলে রাখা প্যাকেটটার দিকে। আজকে দুপুরেই ফরিদের কাছ থেকে কেনা ইয়াবার ট্যাবলেটগুলো তখন ওকে আকর্ষন করছে তিব্র ভাবে। ওর রক্ত প্রবাহে বইতে শুরু করেছে একটা হাহাকার। নেশার হাহাকার।
ফারজানা আবার লিখলো, “কি হলো? কোথায় গেলেন?...হ্যালো… আছেন?” কিন্তু আকাশের দিক থেকে সে রাতে আর কোন জবাব পেলো না সে। অস্থির আকাশ তখন নেশার হাতে জিম্মী। প্রতিটা ইয়াবার ট্যাবলেট যেন আকাশের মাঝ থেকে একটু একটু করে মুছে দিচ্ছিল অনিন্দিতাকে। ধীরেধীরে এক আলো-আধারীর জগতে চলে গেল আকাশ। যেন এটাই একমাত্র জগৎ যেটা আকাশকে একমুঠো শান্তি দিতে পারে, একান্ত আরাধ্য শান্তি।
********************** ইন্টারমিশন ********************
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০০৮ রাত ৯:২৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


