somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেষ মানুষ

০৯ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পর্ব ১

দরজার বাইরে কিসের একটা আওয়াজ হলো। হ্যালোজেন লাইট জ্বালিয়ে বসে থাকা মানুষটি আতংকিত চোখে হাতের কাছে থাকা লোহার শাবল টি কাছে টেনে নিল। নেকড়ে গুলো কি আবার ফিরে এসেছে? গত শীতে কোথা থেকে যেন এক দল নেকড়ে ডেরা বেধেছে এই এলাকায়, তাদের সাথে দুই তিনবার সম্মুখ যুদ্ধে যেতে হয়েছে মানুষটিকে। খাবার এর সন্ধানে যেতে, নিজেকেই খাবার হিসাবে নেকড়ের পাল্লায় পড়তে দেখেছে। কোন ভাবে টিকে গেছে, এদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাবার মত অস্ত্র ও হাতে নেই। যে কয়টি অস্ত্র দেখেছে, সবগুলো মরচে পড়ে আছে। ব্যবহারের অযোগ্য। বিগত ৪ বছর সে এই এলাকায় আছে, ঠিক মনে নেই কিভাবে সে এইখানে এলো। আশে পাশে কোন মানুষের খোজ পায় নাই, কিন্তু অজস্র মাংসাশী প্রানীর ডেরা আছে সবখানে। আরেকবার দরজা নক এর অপেক্ষায় থাকলো মানুষটি। আসলেই সে কোন শব্দ শুনেছে? নাকি মনের ভুল। বিগত ৪ বছর কোন মানুষের সন্ধান না পেয়ে, ধারনাই করে নিয়েছিল পৃথিবীতে সে হয়তো একাই বেচে আছে।

আবার ও দরজা ধাক্কা দিল কেউ। নাহ, এটা কোন প্রানীর কাজ না, এটা নিশ্চিত ভাবেই মানুষের কাজ। ছূটে যেয়ে দরজা খুললো, মুহুর্তের মাঝেই সে অবাক নয়নে তাকিয়ে থাকলো, সামনে দাঁড়ানো মানব অবয়বের দিকে।

~ কে তুমি? জিজ্ঞাসা করলো মানুষটি।

~ আমি আর এক্স ফাইভ টু, পৃথিবীর অধিবাসী। তুমি কে?

~ আমি? আমি পৃথিবীর শেষ মানুষ!

~ মানুষ? সেটা আবার কি? পৃথিবীর শেষ মানুষ মারা গেছে ৮০০ বছর আগে? তুমি কিভাবে বেচে আছো এই ল্যাবে?

~ আমি..... জানি না! আমার মনে নাই! আমি কোথায় আছি? চার বছর আগে আমি ঘুম থেকে উঠে দেখি কোথাও কেউ নেই। আমি এক ধ্বংসস্তুপের মাঝে জেগে উঠি।

~ তুমি আছো জিংজুয়ান ক্রাইয়োজেনিক সেন্টারে। তুমি কে?

~ আমার মনে নেই!! .... আচ্ছা আমি কে? তুমি কি জানো আমি কে?


আর এক্স ফাইভ টু, খুব অবাক দৃষ্টি তাকিয়ে আছে। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটা মানুষ! যে মানুষের গল্প সে শুনে এসেছে, মিউজিয়াম এ দেখেছে। একটা মানুষ? যাদের অসং্খ্য কংকাল ছড়িয়ে আছে পৃথিবীর আনাচে কানাচে? এই দুপেয়ে প্রানী এক সময়ে পৃথিবী শাসন করতো? এতো দুর্বল প্রানী?

~ তুমি কে? প্রতিটা মানুষের নাম থাকে আমি জানি। তোমার নাম কি?

~ আমার মনে নেই! আমার সত্যি কিছু মনে নেই। আমি কে? আমি কিভাবে এইখানে এসেছি আমার মনে নেই। আমার পরিবার এর কাছে আমি ফেরত যেতে চাই। তুমি কি আমাকে সাহায্য করবে?

~ এইচ কিউ!! আর এক্স ফাইভ টু বলছি। You will not believe what I found!! I found a human!! Alive human.

~ কি বলছো ফাইভ টু? তোমার কি হেলিসিনেশন হচ্ছে? মেডেকেশন নিচ্ছো ঠিক মতো? মানুষ? ৮০০ বছর পরে মানুষ কিভাবে আসে?

~ এইচ কিউ, আমি ফাজলামো করছি না। আমার সামনে জলজ্যান্ত মানুষ দাঁড়িয়ে আছে।

~ তুমি লোকেশন বীকন চালু করো, টিম লিডারকে জানাও। মানুষটির থেকে নিরাপদ দুরুত্ব বজায় রাখ। তুমি জানো না সে কি ধরনের ভাইরাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে! ফিজিকাল কন্ট্যাক্ট করবে না।

কিছুক্ষনের মাঝে জিংজুয়ান ল্যাবে ৮ জনের একটা টিম এসে দাড়ালো। সবাই মিলিটারি গ্রেডের ড্রেস পরে আছে। কারো চেহারা দেখা যাচ্ছে না। হাতে অত্যাধুনিক অস্ত্র। বিশাল একটা ভ্যানে চড়ে এসেছে তারা।

~ ফাইভ টু, এই কি তোমার মানুষ?

~ স্যার, ইয়েস স্যার!


~ আমি জি ওমেগা নাইন জিরো, টিম লিডার। আমি এবং আমার দল এসেছি নাটালজুলু মিলিটারি বেইজ থেকে। বিগত কিছুদিন ধরেই আমরা এই এলাকায় লাইফ সাপোর্ট এর সিগ্ন্যাল পাচ্ছিলাম। প্রথমে বানর, শিম্পাঞ্জি ভেবে গুরুত্ব দেই নি। কিন্তু সপ্তাহ দুয়েক আগে আমাদের সার্ভেইলেন্স ড্রোন দুই পায়ে দৌড়ানো কোন এক প্রানীর কিছু ছবি তোলে। তাই আমরা সেটার অনুসন্ধানে এসেছি।

অবাক চোখে তাকিয়ে আছে মানুষটি। কি বলবে বুঝতে পারছে না। দুই সপ্তাহ আগে, নেকড়ের দলের পাল্লায় পড়েছিল, প্রাণ নিয়ে পালিয়ে এসেছিল কোন ভাবে। সেটাই এদের কে টেনে এনেছে। কি সৌভাগ্য।

~ আমি জানি না, আমি কে! আমি জানি না আমি কোথা থেকে এসেছে, বা কোথায় আছি। আমার পরিবার থাকতো সিয়েরাপিক শহরে।

~ সিয়েরাপিক? এখান থেকে ২৩০০ কিমি দূরে একটা এলাকা আছে যার নাম ছিল সিয়েরাপিক। অবশ্য এই শহর টা ৮০০ বছর আগে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।

~ আমার পরিবার? আমার প্রতিবেশি?

~ তুমি বোধহয় বুঝতে পারছো না বর্তমান পরিস্থিতি। পৃথিবীতে শেষ মানুষ ছিল ৮০০ বছর আগে। তুমি এখন পৃথিবীর একমাত্র মানুষ। আমরা বিগতে ৭/৮ জেনারেশন কোন মানুষের সন্ধান পাই নি, তোমাদের ইতিহাস, সভ্যতা এগুলো আমরা শিখেছি মিউজিয়াম, লাইব্রেরি, ইত্যাদির মাধ্যমে। সুতরাং, আমরা তোমার বা তোমার প্রজাতির ব্যপারে খুব ই কম জানি।

~ তোমরা কি মানুষ না? তোমরা কি তাহলে?

~ আমরা বায়োবট, বায়োলোজিকাল রোবট। এই গ্রহে আমাদের পূর্বসূরিরা আস্তানা করেছিল ৭০০ বছর আগে। তখন পৃথিবী জুড়ে শুধু মানূষ সহ বিভিন্ন প্রানীর কংকাল পেয়েছি। কোন জীবিত মানুষ পাই নি। তুমি আমাদের দেখা প্রথম মানুষ, জীবিত মানুষ।

~ ওমেগা নাইন, দিস ইজ হেডকোয়ার্টার। তোমরা কি মানূষটির সাথে কন্ট্যাক্ট করেছো?

~ ইয়েস হেড কোয়ার্টার। তবে সে কিছু মনে করতে পারছে না। সম্ভবত লং টার্ম মেমোরি লস এ আছে।

~ খোজ নাও সে কোথায় ছিল এই ৮০০ বছর। তারপর কোয়ারেন্টাইন করে বেইজে নিয়ে এসো তাকে।

ওমেগা নাইন কৌতুহল চোখে মানূষটির দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষন। ভাবছে কি ভাবে এই মানুষটির রহস্য উদ্ধার করা যায়?

~ তুমি কি আমাদের দেখাবে তুমি কোথায় ছিলে এতো বছর?

~ হ্যা চলো আমার সাথে। আমার থাকার জায়গা আন্ডারগ্রাউন্ড এ। এই বিল্ডিং এর ই ৭ তলায়।

ওমেগা নাইন বিল্ডিং এর বাইরে প্যারামিটার সেট করে, ৪ জন বায়োবট কে সাথে নিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ড বেইজমেন্ট এর সিড়ি ধরলো মানুষটির সাথে। এখনো এই বিল্ডিং দাঁড়িয়ে আছে সেটাই অবাক কান্ড। জিংজুয়ান সেন্টার খুব নামকরা ফ্যাসিলিটি, এমন ম্যাটেরিয়াল দিয়ে এই বিল্ডিং বানানো হয়েছিল যা কিনা হাজার বছরেও কোন ক্ষতি হবে না। বায়োবট ইঞ্জিনিয়ার দের কাছে মানূষের এই আবিষ্কার খুব ই রহস্যের। লিফট কাজ করছে না যেহেতু পাওয়ার নেই, তবে সিড়ি কাজ করছে ভালো। একে একে ৬ ফ্লোর বেজমেন্ট পার হয়ে ৭ নাম্বার ফ্লোরে এসে দাড়ালো সবাই। মানুষটি হেটে চলে গেল একটা ক্রায়োজেনিক চেম্বার এর দিকে, কে ওয়াই ১৯২৩ চেম্বার টির সামনে এসে দাড়ালো। বিস্ময় নিয়ে পুরো ফ্লোর টা দেখলো ওমেগা নাইন, প্রায় ১০০ টির উপরে চেম্বার আছে এর মাঝে শুধু এই মানুষ বেচে আছে? অন্য চেম্বার গুলোতে উকি দিলো একে একে। রক্তাক্ত, ছিন্ন ভিন্ন কংকাল, মানুষের দেহবশেষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কোন হিংস্র প্রাণীর আক্রমন হয়েছিল এইখানে। লোকটা সৌভাগ্যক্রমে বেচে আছে।

সেন্ট্রাল কম্পিউটারকে চালু করার প্রচেষ্টা নিল ফাইভ টু। একটা প্যানেল চালু হলো। সেখানে লেখা, জিংজুয়ান ক্রায়োজেনিক ফ্যসিলিটি, লেভেল সেভেন ~ ভিসিয়াস ক্রিমিনাল টেস্ট সাব্জেক্ট। চেম্বার কে ওয়াই ১৮৪৫-১৯৪৫। আরো কিছু তথ্য দেয়া আছে, ফাইভ টু খুজে খুজে ১৯২৩ চেম্বার এর ডেটা খুজলো, কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে মানুষ টিকে জিজ্ঞাসা করলো,

~ তুমি কি জানো এই ফ্লোরে যাদের রাখা হয়েছিল, তারা সবাই ক্রিমিনাল? এবং তারা স্বেচ্ছায় এই ফ্যাসিলিটির ল্যাব টেস্ট সাবজেক্ট হিসাবে নিজেদের নিয়োজিত করেছিল?

ওমেগা নাইন সন্দেহের চোখে মানুষটিকে জিজ্ঞাসা করলো, “ তুমি একজন অপরাধী? একটা ক্রিমিনাল?”

মানুষটি চমকে কয়েক পা পিছিয়ে গেল, ঢোল গিলে বললো, “ প্লিজ, আমাকে মেরো না! আমি জানি না আমি কে? আমার কোন স্মৃতি নেই আমি কে ছিলাম! শুধু সিয়েরাপিক এ আমার পরিবার থাকে এটুকু জানি! প্লিজ আমাকে মেরো না।’”

কান্নায় ভেংগে পড়া রুগ্ন, বিধ্বস্ত মানুষটির দিকে তাকিয়ে রইলো ওমেগা নাইন আর ফাইভ টু।



পর্ব ২

১.
নাটালজুলু মিলিটারি বেইজে মিটিং চলছে। ৬ জন থ্রি স্টার পাওয়া জেনারেল হাজির, সাথে দুই জন ফোর স্টার জেনারেল। থমথমে একটা ভাব বিরাজ করছে মিটিং রুমে।

~ আমি বুঝতে পারছিনা, কিভাবে জিংজুয়ান ফ্যাসিলিটি তে একটা জলজ্যান্ত মানুষ এসে হাজির হলো? ৮০০ বছর কোন মানুষের পদ চারনা নেই এই পৃথিবীতে। তাহলে এই মানুষ কিভাবে বেচে ছিল? আর ওই এলাকায় আমরা কি ধরনের সার্ভেইলেন্স করেছি? কিভাবে একটা সচল ফ্যাসিলিটি আমাদের নজর এড়িয়ে গেল? আমি এর উত্তর চাচ্ছি কর্নেল সিয়েরা!

ফ্যাকাসে চোখে কর্নেল সিয়েরা কয়েকবার ঢোক গিললেন। কি বলবেন নিজেই বুঝতে পারছেন না।

~ জেনারেল, আমি নিজেই এই রহস্য ভেদ করতে পারছি না। জিংজুয়ান এ আমরা সার্ভেইলেন্স রাখছি বিগত ১৭৪ বছর যাবৎ, কোন লাইফ বা একটিভিটি চোখে পড়ে নাই। প্রতি মাসে রুটিন ট্রেনিং হয় ওই এলাকায়। কোন ভাবেই আমরা টের পাই নি, এই ল্যাব সচল আছে।

~ তো ১৭৪ বছর পরে কি এমন ব্যপার হলো যে ঐ ল্যাব চালূ হলো এবং শুধু তাই না একটা মানুষ বের হয়ে এলো? আমাদের গোয়েন্দারা কি করছিল?

রুমের এক কোনা থেকে এক জন হাত তুলে কথা বলার অনুমতি চাইলো। জেনারেল মাথা নেড়ে সম্মতি দিল।

~ জেনারেল, আমি এই বেইজের ইলেক্ট্রিক এবং সার্ভেইলেন্স ইঞ্জিনিয়ার। আমি একটা থিউরী দিতে পারি। আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে ৪ বছর আগে আমরা জিংজুয়ান ল্যাব এর ৬০ কিমি উত্তরে একটা পরীক্ষামুলক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিলাম। এবং সেটার ব্লাস্ট রেডিয়াস আমাদের ধারনার ও বাইরে ছিল এবং মোটামুটি ৪ রিখটার স্কেলের ভূমিকম্প হয়েছিল। আমার ধারনা সেই বিস্ফোরণ এবং ভুমিকম্পের কারনে ল্যাবের লেভেল ৭ এর ইমারজেন্সি পাওয়ার সাপ্লাই থেমে যায় এবং লোকটি জেগে ওঠে। আপনারা তো জানেন জিংজুয়ান এর পাওয়ার সাপ্লাই এর ফ্রিকোয়েন্সী আমাদের র‍্যাডার এ ধরে না। আর এই লেভেল ৭ এর রাস্তা এমন ভাবে লুকানো ছিল আমরা খুজে পাই নি কারন, ওই ল্যাব যে সমস্ত উপাদানের তৈরি সেগুলো আমাদের ও বিজ্ঞানের বাইরে। তাই আমরা নিশ্চিত ছিলাম না ঐ ল্যাবে কোন বেজমেন্ট লেভেল আছে। আর আমি ফিল্ড টিমের কাছে যা শুনেছি, মানুষটি যে পথ দিয়ে লেভেল ৭ পৌছেছে সিড়ি বেয়ে সেটা কোন বিল্ডিং প্ল্যানের অংশ ছিল না। এটা কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগে সৃষ্টি একটা রাস্তা, তাই আমার ধারনা ৪ বছর আগের সেই ঘটনার কারনে এই ল্যাব আবার সচল হয়েছে।

চুপ করে ব্যাখ্যা শুনলেন জেনারেল। পছন্দ হয়েছে ব্যাখ্যা। অবশ্য উপায় ও নেই, বিশ্বাস না করে। এটাই এই মুহুর্তের সেরা উত্তর।

~ আমি মানুষটার সাথে কথা বলতে চাই।

~ জেনারেল, আপাতোত সে হাসপাতালে আছে, অপুষ্টি, বিষাদ আর ক্লান্তিতে আক্রান্ত। আপনি কি ফিল্ড টিমের ব্রিফিং শুনবেন?

~ হ্যা, ফিল্ড লিডার কে ডাকো।

ওমেগা নাইন এবং ফাইভ টু মিটিং রুমে ঢুকলো। তাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা বলা শুরু করলো।

২.
নাটালজুলু মিলিটারি হসপিটাল

সবাই ৪০৩ নাম্বার কেবিনে উকি মারছে। একজন মানুষ শুয়ে আছে সেখানে। জীবন্ত মানুষ, এতো দিন হলোগ্রাফিক মানুষ দেখে সবাই এই দুর্ধর্ষ প্রানীদের কথা জেনেছে। এরা নাকি এই পৃথিবী শাসন করতো। গত চারদিন যাবত মানুষটি ঘুমাচ্ছে, স্যালাইন, ওষূধ সব ই চলছে। সমস্যা হলো, মানুষের এনাটমি আলাদা, পাঠ্যপুস্তক থেকে যা জানা যাচ্ছে তার উপর ভরসা করেই চিকিঠসা চলছে। সবার ই কৌতুহল কিভাবে এই মানুষটি বেচে ছিল, তার মতো আরো কেউ আছে কিনা। সবাই তার জ্ঞান ফেরার অপেক্ষায় আছে। অনেক কিছু ই নিশ্চিত ভাবে জানা যাবে। উপরের মহল থেকে নিয়মিত খোজ নেয়া হচ্ছে রোগী কেমন আছে। ক্যাপ্টেন ফাইভ টু আর টিম লিডার ওমেগা নাইন প্রতিদিন হাসপাতালে আসছেন, ফলে প্রটোকল নিয়ে সবাই খুব ব্যস্ত।

পঞ্চম দিনে জ্ঞান ফিরলো মানুষটির, চারপাশে অগনিত অপরিচিত মুখ দেখে ভড়কে গেল।একজন নার্স সামনে এসে বিভিন্ন চেকাপ করলো।সব পরিক্ষা শেষ হবার পরে দুইজন আগন্তুক কেবিনে ঢুকলো।

~ চিনতে পারছো আমাদের?

মানূষ টি খুব মনোযোগ দিয়ে চেহারা টা মনে করার চেষ্টা করলো, গলার স্বর খুব পরিচিত। কিন্তু কোথায় দেখা হয়েছে মনে আসছে না। তার চেহারার অভিব্যক্তি দেখে আগন্তুক দুইজন বুঝে গেল মানুষটি তাদের চিনতে পারছে না।

~ আমি ফাইভ টু, আর আমার সাথে ওমেগা নাইন। এখন মনে পড়ছে?

একজন মধ্যবয়স্ক আর একজন তরুণ দাঁড়িয়ে আছে সামনে যারা নিজেদের বায়োবট বলে পরিচয় দিয়েছিল। চেহারা ঠিক মানুষের মতো ই কিন্তু শারীরিক কাঠাম দেখে বোঝা যাচ্ছে এরা খুব ই নিখুত কাঠামোর অধিকারী। দুইজনের চেহারাও খুব পরিচিত লাগছে, কোথায় দেখেছে মনে হচ্ছে না। মানুষটি খুব চেষ্টা করছে তাদের চেহারা মনে করার।

~ তোমাকে একটা নাম দেয়া উচিত তাই না? তোমাকে আমরা “এডাম” ডাকবো। কারন তুমি আমাদের এই পৃথিবীর প্রথম মানুষ। এডাম, তোমার কি মনে আছে তুমি কে? কেন তুমি ঐ ল্যাবের চেম্বারে ছিলে?

এডাম খুব ধীরে মাথা নাড়লো, তার কিছু ই মনে নেই।

ওমেগা নাইন ~ দেখো এডাম, আমরা চাই তোমাকে মুক্ত ভাবে আমাদের এই জগতে চলাফেরা করতে দিতে, কিন্তু সেই জন্য আমাদের জানা লাগবে তুমি আমাদের জন্য কতটা বিপদজনক। কারন, আমরা জানি মানূষের একটা আদিম প্রবৃত্তি আছে, সে নিজেকে ধ্বংস করতেও দ্দ্বিধা করে না, আজ পৃথিবী মানবশুন্য কারন তোমরা যুদ্ধের মাধ্যমে একে অপরকে নিশ্চিহ্ন করেছো।

এডাম ~ আমি এগুলোর কিছু ই জানি না! বিশ্বাস করো আমাকে? আমি কেন ঐ ল্যাবে তাও জানি না। আমাকে কেন তোমরা ভয় পাচ্ছো? আমি একা মানুষ আর তোমরা হলে রোবট।

ফাইভ টূ ~ এক্সকিউজ মি! আমরা রোবট না, আমরা বায়োবট। আমাদের ও মস্তিক আছে, হ্রদয় আছে, ফুসফুস আছে, আমাদের মেটাবলিজম মানূষের মতো তবে অনেক জটিল। আর হ্যা আমরা প্রজনন করি না তোমাদের মত। আমরা একটা নিদিষ্ট সময় পর্যন্ত বাচি। যেমন ধরো ওমেগা নাইন, ওর বয়স ২৪৭ বছর, আমাদের অনুযায়ী সে মধ্যবয়স্ক। আর আমি ১০২ এ পা দিয়েছি আমাকে তরুন বলা যায়। তোমাদের রোবটের সাথে আমাদের তুলনা হয় না।

এডাম ~ আমাকে কি তোমরা সিয়েরাপিক শহরে নিয়ে যাবে?

ওমেগা নাইন ~ আচ্ছা এডাম , তুমি নিজের নাম পর্যন্ত ভুলে গেছ। অথচ সিয়েরাপিক শহর এর নাম কিভাবে মনে আছে?

এডাম ~ আমার সাথে ঐ চেম্বারে আরো দুইজন মানুষ ছিল, তারা মারা যাবার আগে আমাকে জানিয়েছিল সিয়েরাপিক শহর থেকে আমাদের আনা হয়েছিল।

ফাইভ টু ~ তারা কি মারা গেছে?

এডাম উত্তর না দিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকলো।

৩.
১৫ সদস্যের একটা টিম হাজির হয়েছে জিংজুয়ান ল্যাবে। ৯ তলা বিল্ডিং মাটির উপরে, সময়ের সাথে ক্ষয়ে ৪ তলা অক্ষত আছে আর মাটির নিচে ৭ টি লেভেল যার অস্তিত্ব জানা ছিল না। কিরা ওয়ান নাইন এইট এর নেতৃত্বে পুরো ল্যাবকে চালু করার চেষ্টা করা হচ্ছে, কিন্তু খুব একটা লাভ হচ্ছে না। কিরা খুব চৌকস বায়োবট একই সাথে আর্টিফিশিয়াল সার্ভেইলেন্স এবং সাইকোলোজিতে ডাবল ডি লিট প্রাপ্ত। বেইজের অন্যতম তুখোর ফিমেল বায়োবট অফিসার।

একসপ্তাহের প্রচেষ্টায় কিরা কিছু তথ্য বের করতে পেরেছিল, তাতে যেটা জানা গেল। লেভেল ৭ এ যত টাইপের বেআইনী হিউম্যান এক্সপেরিমেন্ট ছিল আগের যুগে, তার সব কিছুই করা হতো। এবং এই লেভেল এ আনা হতো বিশ্বের নামকরা দুর্ধষ খুনি দের, যাদের কে সোজা ভাষায় সাইকো বলা যায়। কে ওয়াই ১৯২৩ চেম্বারের মানুষটির নাম উল্লেখ নেই, কিন্তু তার অপরাধের মাত্রা ভাষায় প্রকাশের বাইরে। ৩৫ টি খুনের সাথে জড়িত, যার মাঝে ২১ জন নারী এবং ৮ জন শিশূ এবং ৬ জন বৃদ্ধ ভিক্টিম ছিল। যদিও মাত্র ১৩ টা ডেডবডি পাওয়া গিয়েছিল, কিন্তু তাকে এই ল্যাবে আনা হয়েছিল বাকী ডেডবডির হদিস পাবার জন্য । বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্ট করা হয়েছিল, কিন্তু লাভ হয় নাই। ২০২৪ থেকে ২০২৬ পর্যন্ত তাকে এই ফ্যাসিলিটিতে রাখা হয়েছিল, পরে তাকে ক্রায়োজেনিক ভাবে ফ্রোজেন করে রাখা হয়েছিল যদি ভবিষ্যতে কোন ভাবে তার কাছ থেকে বাকী ডেড বডির হিসাব পাওয়া যায়। চেম্বারের বাকী মানুষ গূলোও ছিল বিভিন্ন অপরাধে জড়িত, প্রত্যকের ই মৃত্যুদন্ড নির্ধারন ছিল। তবে অনেকে স্বেচ্ছায় এক্সপেরিমেন্ট এর অংশ হয়েছিল যদি বিশেষ ক্ষমা পাবার সু্যোগ থাকে এক্সপেরিমেন্ট শেষে।

ওমেগা নাইন ~ কিরা! আপডেট কি?

কিরা~ স্যার , লেভেল ৭ এ সর্বমোট ৭৫ টা চেম্বারে ডেডবডির অংশবিশেষ পাওয়া গেছে। এর মাঝে ৩৭ টা বিগত কয়েক বছরে মারা গেছে।
ওমেগা ~ মানে কি? এরা ৮০০ বছর ধরে বেচে ছিল?

কিরা~ জ্বি স্যার! এবং এই ৩৭ জন এর শেষ দিন খুব সুখকর ছিল না, এরা ঘুমন্ত অবস্থায় খুন হয়েছে এবং কোন মাংশাসী প্রানীর উদরপূর্তির কারন হয়েছে। এরা সবাই বিগত ৪/৫ বছরের মাঝে মারা গেছে।

ওমেগা~ কিরা তুমি এডাম এর ফাইল টা আমাকে পাঠাও। আর সিয়েরাপিক এর লোকেশন টাও জিপিএস এ পাঠাও। আমরা এডাম কে নিয়ে ঐদিকে যাচ্ছি। যদি কোন কিছুর হদিস পাওয়া যায়।


ইতিহাস বলে, সিয়েরাপিক এশিয়া নামের এক মহাদেশের বৃহৎ সমুদ্রবন্দর ছিল, চীন এবং ভিয়েতনাম বর্ডারের কাছের এই শহরটা বানিজ্যের মক্কা নামে পরিচিতি পেয়েছিল। অবশ্য আরেক কারনে ও এটা পরিচিত ছিল, টারটারাস নামের জেলখানার জন্য বিখ্যাত ছিল যার ধারন ক্ষমতা ছিল ২ লাখ ৫০ হাজার। পৃথিবীর সব থেকে দুর্ধষ অপরাধীদের এইখানে এনে রাখা হতো নিদিষ্ট ফি এর মাধ্যমে। বলা হতো এই জেল থেকে পালানো অসম্ভব ছিল। ৮০০ বছর পরে টারটারাসের ধ্বংসাবশেষ আছে শুধু। ওমেগা নাইন,এডামে কে নিয়ে সেই বিখ্যাত সিয়েরাপিক শহরে এসে হাজির হলো। যদিও দেখার কিছু ছিলো না। এডাম মনোক্ষুন্ন ই হলো সিয়েরাপিক দেখে। আধাবেলা এদিক সেদিক ঘুরে তারা আবার নাটালজুলু বেইজে ফিরে গেল। সেখানে এডামের আরো কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হলো এবং তারপর সিধান্ত হলো, তাকে ইলিসিয়াম শহরে পাঠানো হবে। ইলিসিয়াম হলো দক্ষিনের মহাদেশ ইরিত্রিয়ার রাজধানী, প্রায় ৩৫ কোটি বায়োবট সেখানে বসবাস করে। বায়োবট দের ইতিহাসে এই প্রথম একটি মানুষ এই শহরে থাকবে।

৪.

মাস খানেক হলো এডাম ঘাটি গেড়েছে ইলিসিয়াম শহরে। প্রাথমিক ভাবে কিছু সমস্যার সৃষ্টি হলেও , তার পালক বায়োবট ফ্যামিলির সাহায্যে নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছে। নিয়মিত পরিচর্যায় এডাম এর বাহ্যিক পরিবর্তনে ব্যপক নতুনত্ব আসা শুরু করলো। এডামের রুগ্ন শরীর এখন সুঠাম দেহে পরিনত হয়েছে, ধীরে ধীরে এডাম নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস আনতে শুরু করেছে। নতুন ভাবে জীবন শুরু করছে। নাটালজুলু বেইজের ফাইভ টূ আর কিরা প্রতিমাসে তার সাথে দেখা করতে আসে, যদিও সে জানে এগুলো রুটিন চেক আপ। তাকে সব সময় চোখে চোখে রাখা হয়, তার অতীতের জন্য। যদিও সেই অতীতের কোন সৃত্মি তার মনে নেই।

মাস গড়িয়ে বছর চলে গেল, ধীরে ধীরে এডাম নিজেকে বায়োবট সমাজের ই অংশ করে নিলো। ইতিমধ্যে সে এবং কিরা একসাথে থাকা শুরু করেছে, যেহেতু এই সমাজে বিয়ে নামক ব্যপার নেই, তাই একে অপরের লিগাল পার্টনার হিসাবে থাকা শুরু করেছে তারা এবং চিন্তা করছে একটা বাচ্চা বায়োবট এডাপ্ট করার। এলাকার একটা শপিং স্টোরে এডাম চাকরী শুরু করেছে, দোকানের মালিক খুব সন্তুষ্ট এডামকে পেয়ে, কারন প্রচুর ক্রেতা আসে এডামকে দেখতে ফলে ব্যবসা ভালো ই যাচ্ছে। কিরা বদলি হয়ে ইলিসিয়াম শহরে চলে এসেছে, নিজের একটা ব্যবসা খুলেছে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই দিন কেটে যাওয়া শুরু করলো।

~ তুমি কি জিংজুয়ান ল্যাবের ১৯২৩?

এডাম ~ আমার নাম এডাম, ঐ জাহান্নামের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই আর।

~ আমার নাম জেটা থ্রি ফাইভ নাইন কিন্তু আমাকে তুমি এপোলো বলে ডাকতে পারো। আমি একজন টেলিকাইনাটিক সাইকোলোজিস্ট!
এডাম ~ কিহ? সেটা কি জিনিষ।

এপোলো ~ তোমাদের যেমন সাইক্রিয়াটিস্ট ছিল, আমিও তেমন একজন বলতে পারো। তুমি যেহেতু তোমার অতীত কে মনে করতে পারো নাই, তাই আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি, তোমার অতীতকে ফিরিয়ে আনার।

এডাম ~ কিভাবে?

এপোলো ~ আমার চেম্বারে একটা মেশিন আছে, যার মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ের ব্রেইন ফ্রিকোয়েন্সী কে চিহ্নিত করা সম্ভব এবং সেগুলো কে ভিজুয়ালাইজ করা যাবে। তুমি চাইলে আমি তোমাকে হেল্প করতে পারি। এই হলো আমার কার্ড , আশা করি যোগাযোগ করবে শীঘ্রই।

বাসায় ফিরে কিরা কে এপোলোর কথা জানালো এডাম। কিরার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল, খপ করে এডামের হাত ধরে বললো , “প্লিজ এডাম, আমার কথা রাখো, ঐ পাগলের আখড়াতে যেও না। তুমি কে ছিলে, কি করেছো সেটা এখন গুরুত্বপূর্ন না। আমাদের এই লাইফ টাই আমাদের গুরুত্ব পুর্ন। প্লিজ বেবি, যেও না ঐখানে।”

এডাম ~ আচ্ছা কথা দিচ্ছি, যাবো নাহ। কিন্তু তুমি এমন চমকে যাচ্ছ কেন?

কিরা~ জেটা থ্রি ফাইভ আমাদের সময়ের খুব বিখ্যাত মণোবিজ্ঞানী বলতে পারো , এবং মানূষ এর সভ্যতা এবং ইতিহাস নিয়ে ওর অনেক কাজ আছে। অনেকে বলে, জেটা থ্রি ফাইভ এর পুর্বসূরীর হয়তো মানূষের সাথে দেখাও হয়েছিল।

এডাম ~ কি বলছো? আমি তো জানি তোমরা ৭০০ বছর আগে এই পৃথিবী তে এসেছো। মানে মানুষ মারা যাবার ও ১০০ বছর পরে। তাহলে জেটার পরিবার কিভাবে মানুষ এর সাথে দেখা করলো?

কিরা ~ বেবী, আমাদের অনেক ইতিহাস আছে, যেগুলো কে সামনে আনা হয় না। তবে আমরা কেউ কেউ বিশ্বাস করি, বায়োবট এবং মানূষ এক সাথেই ছিল পরে কোন এক যুদ্ধে মানূষ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। আমরা যথেষ্ট শান্তিপ্রিয় এবং বিজ্ঞান মনস্ক, সেখানে মানুষ ছিল খুব আদিম মনোভাবের প্রাণী। আমাদের সাথে ওদের ঠিক মিলতো না, তাই আমাদের পূর্বপুরুষ চেষটা করে ঐ অধ্যায় কে ঢেকে রাখতে। তবে এগুলো সব ই কনস্পিরেসি থিউরী বলে চালানো হয়ে থাকে।

এডাম~ ওকে বেবি, আমি যাচ্ছি না ঐ পাগলা গারদে।

পরের দিন অফিসে যাবার পথে এডাম এর মনে হলো কেউ তার পিছু নিয়েছে। খুব ভালো ভাবে খেয়াল করার চেষ্টা করলো, কিন্তু নিশ্চিত হতে পারলো না। এইভাবে পার হয়ে গেল এক সপ্তাহ এবং প্রতিদিন ই কিছু না কিছু অদ্ভুত ব্যপার হতে থাকলো। যেমন গত রাতে পোকার খেলে ফেরার পথে একজন বায়োবটকে দেখে সে চমকে ঊঠেছিল, কারন সেই বায়োবট টি দেখতে অবিকল তার মতো ছিল। ভীড়ের মাঝে ভালো ভাবে খেয়াল করার আগেই কোথায় যেন হারিয়ে গেল। আজকে অফিসে যাবার পথে, একটা বৃদ্ধা বায়োবট প্রচন্ড গালিগালাজ করলো, এমন সব অভিশাপ দিলো, যে এডাম সেগূলোর কোন অর্থ খুজে পেলনা। অফিসের বস একদিন তাকে খুব বকাবকি করলো, কারন তার নামে কোন এক কাস্টমার অভিযোগ করেছে, কারন সে নাকি সেই কাস্টমারের সাথে এবিউজিব কথা বলেছে এবং হুমকী দিয়েছে। এইতো কিছু দিন আগেই, এলাকার পুলিশ এর সাথে দেখা করতে হলো, এক টিনেজ বায়োবটের গার্ডিয়ান অভিযোগ করেছে, এডাম নাকি খুব পৈশাচিক ভাবে টিনেজার এর দিকে তাকিয়ে ছিল। এইভাবে কিছু দিন চলতে চলতে এডাম অতিষ্ট হয়ে একদিন পা বাড়ালো জেটা থ্রি ফাইভের অফিসের দিকে, এর একটা বিহিত হওয়া দরকার কেন তাকে নিয়ে বায়োবট সমাজ এমন অদ্ভুত আচরন করছে। কি আছে তার সুপ্ত সৃত্মিতে, যার জন্য অতীতের দুস্বপ্ন তাকে আজ ও তাড়া করছে?

৫.

~ এডাম আমি খুব খুশি হয়েছি, তুমি এসেছো আমার কাছে। আমি চাই মানূষ এবং বায়োবটের ইতিহাসকে আরো সুন্দর ভাবে তুলে ধরতে।

এডাম ~ জেটা, আমি কিছু উত্তর খুজতেছি।

~ প্লিজ আমাকে এপোলো ডাকবে, আমি তোমার কাছে মানূষ রুপে থাকতে চাই। আমি চাই তুমি আমাকে বিশ্বাস করো। জেটা থ্রি ফাইভ একটা নাম্বার , আমি চাই না আমাদের মাঝে অমন প্রফেশনাল কোন মাধ্যম থাকুক।

এপোলো ~ এসো আমার ল্যাব দেখাই তোমাকে। এই হলো আমার নিজের আবিষ্কার “সেরিব্রোহলোগ্রীড”, এটা অনেকটা ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মত, যেমন টা মানূষ আবিষ্কার করেছিল। শুধু পার্থক্য হলো, ওটা ছিল একটা এক্সট্রার্নাল ভিডিও ফিড এর অংশ, আর আমার টা হলো তোমার নিজের ব্রেইনের সিগ্ন্যাল এর অংশ।

পুরো ব্যপার টা ভালো ভাবে বুঝে নিলো এডাম, এবং এই এক্সপেরিমেন্ট এ রাজী হলো। এপোলোর নির্দেশ ফলো করতে করতে এক ফাকে হিপনোসিস এ পৌছে গেল এডাম। খুব ঝাপসা ভাবে এলোমেলো সৃত্মি উকি দিতে শুরু করলো, কিছু ছিল অচেনা , কিছু ছিল চেনা। আর কিছু ছিল দুর্বিষহ।

এক ফাকে চোখ খুলে তাকালো এডাম, মনে হচ্ছিল অসীম শুন্যতায় দাঁড়িয়ে আছে। আলো আধারীতে খুব একটা নিশ্চিত না কোথায় আছে , মাথা টা ঝিম ঝিম করছে। এপোলো বলেছিল, কিছু কেমিক্যাল সাইড ইফেক্ট থাকবে। সোজা হয়ে বসার চেষ্টা করলো, এক্টূ দুলে উঠে পরে যাচ্ছিল কিন্তু নিজেকে সামলে নিল এডাম।

~ “এপোলো!!! কোথায় তুমি? তোমার এক্সপেরিমেন্ট হলো কিছু?” এপোলো!!!! সাড়া দিচ্ছো না কেন?

সেরিব্রোহলোগ্রীড এর চেয়ার থেকে উঠে দাড়ালো এডাম। পুরো ল্যাব কেমন মৃত্যু পুরী, দেখে মনে হচ্ছে সেই জিংজুয়ান ল্যাবের লেভেল ৭ এর কে ওয়াই ১৯২৩ চেম্বারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আধা অন্ধকারে রুমের কোনার চেম্বারে কিছু একটা নড়া চড়া করছে, ধীর পায়ে এগিয়ে গেল এডাম। কিছু দূর যেতেই একটা অশরীরি ভয় তাকে ঘিরে ধরলো, মনে হচ্ছে রক্ত মাখা মেঝেতে দাঁড়িয়ে আছে, আর কে ওয়াই ১৯৩১ চেম্বারে উবু হয়ে কেউ একজন কিছু করছে, খুব অদ্ভুত শব্দ আসছে ওইখান থেকে।

~ এই যে শুনছেন? আমি কি জিংজুয়ান ল্যাবে আছি? কিভাবে এখানে এলাম। আপনি কি আমাকে হেল্প করতে পারবেন!

এডামের গলার শব্দে, উবু হয়ে থাকা মানূষটি সোজা হয়ে দাড়ালো। ধীরে ধীরে ঘুরে দাড়ালো, হাতে লোহার একটা শাবল, শরীরে রক্তে মাখা মাখি অবস্থা। এডাম বুঝে গেল, খুব ভুল একটা কাজ করে ফেলেছে, একটা মাংসাশী অপার্থিব প্রাণীকে জাগিয়ে দিয়েছে। ভিতর থেকে কেউ বলে উঠলো , “পালা এডাম!! পালা!!! বাচতে চাইলে এখন ই পালা”। কিন্তু ভয়ে এডামের পা পাথরের মতো জমে গেছে, তার দিকে ছূটে আসছে ঐ দু পেয়ে প্রাণীটা, তার মুখ থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে এখনো ,ছূটে এসে এডামের গলা চেপে ধরলো মুহুর্তের মাঝে। অবিশ্বাস আর ভীতির সংমিশ্রনে অমানূষিক এক চিঠকার দিয়ে উঠলো এডাম।

~ ভিনিতা, এখনি ২৫ মিলিগ্রাম সেজেক্সিন ইনজেক্ট করো । অমিক্রন, ওর হাত চেপে ধরো , কোন ভাবেই ওকে সীট ছেড়ে উঠতে দিবে না।

সেরিব্রোহলোগ্রীড এর চেয়ারে বসে এডাম এর জান্তব চিঠকারে ব্যতিব্যস্ত এপোলো আর তার টিম, কেমিক্যাল রিএকশন এ এডাম এর বডি খুব বাজে ভাবে রিএক্ট করছে, কোনভাবেই শান্ত করা যাচ্ছে না। এপোলো তার জ্ঞানের সবটুকু ঢেলে দিচ্ছে এডামকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু সব কিছুই যেন বিফলে যাচ্ছে। দীর্ঘ ত্রিশ মিনিট যমে মানূষে টানা টানি হলো, ধীরে ধীরে এডাম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলো। চোখ খুলে এপোলো কে দেখে প্রচন্ড প্রশান্তি পেল এডাম। এক্টূ হেসে বললো, “যাক তুমি আছো, আমি ভাব্লাম ভয়ে তুমি পালিয়েছো কিনা। তোমার এক্সপেরিমেন্ট কেমন হলো?”

এপোলো~ শেষের ত্রিশ মিনিট আর ভ্যাম্পায়ার এর মত আমাকে কামড়াতে আসা বাদ দিলে, এক্সপেরিমেন্ট এর প্রথম ফেইজ সফল বলতে পারো !!!!

এডাম~ কিহ!! আমি তোমাকে কামড়াতে গিয়েছিলাম? কি যে বলো।

এপোলো~ বিশ্বাস না হলে সময় করে রেকর্ডিং দেখো নেক্সট টাইম, আর তোমার ব্রেইনের ফ্রিকোয়েন্সির ভিজুয়ালাইজেশন হতে ঘন্টা দুয়েক সময় লাগবে। এখন তুমি অমিক্রনের সাথে বাসায় ফিরে যাও। কিরা টের পেলে আমাকে গুম করে দিবে, হা হা হা !!

এডাম চলে যাবার পরে এপোলো, রেকর্ড করা ফাইল নিয়ে বসল, এডামের ব্রেইন ফ্রিকোয়েন্সির কাজ প্রায় শেষ। ভিডিও ফীডে চলে এসেছে। এসি রুমে বসেও এপোলোর শিড়দাড়া দিয়ে শীতল একটা স্রোত বয়ে গেল। নিজের চোখ কেও বিশ্বাস করতে পারছে না, জিংজুয়ান ল্যাবের কে ওয়াই ১৯৩১ চেম্বারের থাকা ঘুমন্ত সাবজেক্ট এর বুক ফেড়ে হৃদপিন্ড চিবাচ্ছে এডাম।




শেষ পর্ব


১.

সিয়েরাপিক শহর যেন বিস্ফোরিত হচ্ছে । রাস্তায় অগনিত মানুষ নেমে এসেছে, সবার চোখ সুপ্রিম কোর্টের দিকে, আজকে দুর্ধষ খুনী লুসিয়াস ড্রেক্স এর মামলার ফলাফলের দিন। এখন পর্যন্ত ১৩ জনের ডেডবডি পাওয়া গেছে, আর কমপক্ষে ২২ টা ডেড বডি নিখোজ আছে। লুসিয়াস এর সাথে অনেক ডিলিংস এর কথা চলছে কিন্তু সে কোন ভাবেই বাকী ডেডবডি গুলোর কথা স্বীকার করছে না। আদালটের কানায় কানায় লোকারন্য।

~ বিজ্ঞ আদালত, আমরা এই পৈশাচিক খুনী লুসিয়াসের মৃত্যুদন্ড কামনা করছি! এখন পর্যন্ত আমরা ১৩ জনের পরিবারের কাছে তাদের লাশ ফিরিয়ে দিতে পেরেছি। কিন্তু এখনো কমপক্ষে ২ ডজন পরিবার অপেক্ষায় আছে তাদের স্বজনের শেষ দেখার জন্য! সৌভাগ্য ক্রমে আমরা, এইবার লুসিয়াসকে হাতে নাতে ধরতে পেরেছিলাম যখন সে এপেল্গ্রুভে নূমিয়েন সিসিলির লাশ অর্চাড গার্ডেন এ কবর দিচ্ছিল। এবং ঠিক সেই সময়ে লোকাল গার্ড এর চোখে পরে যায় এবং আমরা আরো ৪ টি লাশ উদ্ধার করতে পারি। এর আগে আমরা আরো ৯ টি লাশ উদ্ধার করেছি। সামগ্রিক ভাবে বিবেচনা করে আমরা এবং ভিক্টিমদের পরিবার এটুকু অনুরোধ করছি, যদি লুসিয়াস আমাদের কে বাকী লাশগুলো কোথায় রেখেছে জানিয়ে দেয় তাহলে তার মৃত্যুদন্ড কমিয়ে তাকে আজীবন কারাগারে রেখে দেবার ব্যপারে আমরা একমত হতে পারি।

লুসিয়াস ~ আজীবন কিভাবে আমাকে কারাগারে রাখবে? আমি ঠিক ই পালিয়ে যাবো।পৃথিবীর কোন কারাগার আমাকে আটকে রাখতে পারবে ভেবেছ? আমি ঠিক ই বের হয়ে যাবো আর বাকী পরিবারকে ওই লাশগুলোর পোস্ট কার্ড পাঠাবো। হা হা হা হা! এত সহজ ভেবেছো আমাকে?

~ লুসিয়াস, তুমি কি একটা অমানুষ? তোমার জন্য কতগূলো নিরিহ পরিবার বিনিদ্র যন্ত্রনায় রাত কাটাচ্ছে, কতো গূলো বাবা মা তাদের শিশু সন্তানের জন্য অপেক্ষায় আছে। তুমি কি তাদের এটূকূ সান্ত্বনা দিবে না?
~ আমি হলাম ওমেগা ম্যান! পৃথিবীর শেষ মানূষ পর্যন্ত আমাকে মনে রাখবে। আমার ইতিহাস জানবে, ভয়ে কাপবে, হা হা হা হা ! তোমরা ভুলে যেতে পারো তোমাদের প্রিয় মানুষকে কবরে পাঠাবার শখ। এভাবেই চির অপেক্ষায় থাকবে। আমি কি মরতে ভয় পাই নাকি? তবে জেনে রাখো আমাকে মেরে ফেললে, ঐ আদুরের দুলাল গুলোকে আর খুজে পাবে না।

~ মাননীয় আদলত লুসিয়াস যদি আমাদের অনুরোধ না মানে, তাহলে এর থেকে বেশি কইছু বলার নেই আমাদের। আমরা সঠিক বিচার চাই।

দীর্ঘ ২ ঘন্টা আলোচনার পরে জুরিরা একমতে আসলো যে লুসিয়াস কে মৃত্যুদন্ড দেয়া হবে না, তাকে টারটারাস কারাগারে পাঠানো হবে এবং সবথকে হিংস্র কয়েদিদের সাথে তাকে রাখা হবে যদি সে আগামী ২ বছরের মাঝে বাকী লাশ গুলো সন্ধান দেয়, তাহলে তার মৃত্যুদন্ড মওকুফ করা হবে। আদালত এর এই রায়ের সাথে অধিকাংশ পরিবার ই খুশী হয় নাই, তারা অবশ্য ই তাদের প্রিয়জনের লাশ চাচ্ছিল, কিন্তু এমন একটা পিশাচকে বাচিয়ে রাখার কোন অর্থ পাচ্ছিল না তারা। তবে অনেকে বলাবলি করছিল, টারটারাস কারাগার এই মামলার রায়ের পিছনে অনেক টাকা ঢেলেছে, কোন এক কারনে তারা চাচ্ছিল লুসিয়াস যেন তাদের কাছে বাকী দিনগূলো কাটায়। হাতে হাত কড়া আর পায়ে ডান্ডা বেড়ি পরা অবস্থায় লুসিয়াস কোর্ট রুমের বাইরে পা রাখলে, বাইরে অপেক্ষারত পরিবার গুলো তার উপর ঝাপিয়ে পড়ার চিন্তা করছিল, কিন্তু পুলিশ তাদেরকে যথেষ্ট ভালো ভাবে সামলে নিচ্ছিল। নিরুপায় চোখে হাস্যজ্জ্বল লুসিয়াসকে গাড়িতে উঠে বসতে দেখলো সবাই, আর পিশাচীয় হাসি দিয়ে সবাই কে হাত নেড়ে বিদায় নিলো লুসিয়াস।

২.

সন্ধ্যা নেমে এসেছে, ইলিসিয়াম শহরের পাশ দিয়ে বিশাল এক নদী বয়ে চলেছে। পিয়ার ৩৫ এ চুপ করে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখছে এডাম, খুব প্রিয় একটা দৃশ্য তার। বিশাল দিগন্তের মাঝে হাজার রং এর খেলা, এর মাঝে লাল টকটকে সূর্য ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছে। আজ দুসপ্তাহ হলো এপোলোর ল্যাব থেকে ফেরেছে, এপলো কেমন যেন লূকোচুরি করছে, , এডাম দুই একবার বলেছে এক্সপেরিমেন্ট এর সেকেন্ড ফেইজ এ সে আগ্রহী। কিন্তু এপোলো কেমন যেন অনাগ্রহ দেখাচ্ছে। প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হচ্ছে এডামের। ভিতরে একটা অপার্থিব ক্ষোভ অনুভব করছে। এই রকম বিহেভ সে একেবারেই সহ্য করতে পারে না সে, কেউ তাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবে সেটা সে একেবারেই মানতে পারে না। কি যেন একটা ইচ্ছা করছে তার, ইচ্ছা করছে এপোলো কে …… নাহ কি ভাবছে সে! এরকম সহিংসতা মুলক ভাবনা কেন সে আনছে নিজের মাঝে। কিন্তু মনের ক্ষোভ কে দমন করতে পারছে না।

~ আরে এডাম যে?

চোখ ঘুরিয়ে দেখে অফিসের লাল চুলের বায়োবট মেয়ে টি! কি যেন নাম, ধ্যত মনে আসছে না। ওহ নাম আবার কি, এদের তো সব সংখ্যা , এই সব টিনের লোহা লক্কর গূলো পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দেখলেই মনে হচ্ছে এগুলাকে ইলেক্ট্রিক করাত দিয়ে কেটে জাংক ইয়ার্ডে ফেলে দেই।

~ এডাম, কি হল? চিনতে পারছো না নাকি? আমি ণূ সেভেন ফোর জিরো, ১২ তলায় কাজ করি!

~ আরে হ্যা নু সেভেন। কেমন আছো। সরি একটূ অন্যমনস্ক ছিলাম আসলে এতো বছর পরে সূর্যাস্ত দেখে এখনো বিমোহিত হয়ে থাকি। তোমার শিফট শেষ?

ণূ সেভেন ~ হ্যা , পাবে যাচ্ছিলাম। যাবে নাকি তুমি? ওখানে আরো অনেকে আড্ডা দিচ্ছে।

কি মনে করে ণূ এর সাথে ওয়াকওয়ে তে উঠলো এডাম। এই শহরে ফূটপাত গুলো চলন্ত এস্কেলেটর এর মতো। সোজা চলতে থাকে, যে যেখানে থামতে চায় নেমে যায়। শুধু ঊঠে দাঁড়িয়ে থাকলেই হলো। পাবে পৌছাতেই অনেকর সাথে দেখা হলো, সবাই আড্ডা দিচ্ছে কাল সোমবার , সাপ্তাহিক ছূটি। কেন সোমবার ছুটি তা কেউ বলতে পারে না, কোন এক অদ্ভুত কারনে এই শহরের অনেক কিছুই তার খুব অদ্ভুত লাগে, এই শহরে আছে সে প্রায় ৯ মাস এবং আজকাল তার মনে হয় এই শহরে সে আগেও ছিল। অনেক এলাকা তার পরিচিত লাগে, যেমন পিয়ার ৩৫। কেন যে এই স্থান থেকে সূর্য্যাস্ত দেখে সে নিজেও জানে না। তারপরে এই যে“ ওরোবরোস পাব” এ এসেছে , এই প্লেস টাও খুব পরিচিত লাগে তার। প্লাজমা স্ক্রিনে কিছু পরেই খেলা শুরু হবে, এখন খবর হচ্ছে, এই সপ্তাহে আরো দুইজন নিখোজ হয়েছে। এই নিয়ে গত ৫ মাসে ২৩ জন নিখোজ তালিকায় এসেছে। পুলিশ কোন ক্লু পাচ্ছে না।

~ কি হলো এডাম এতো অন্য মনস্ক কেন? আজকের রাগবিতে গেইমে কে জিতবে প্রেডিকশন দাও দেখি।

এডাম ~ আজকে মনে হয় সিক্স হর্সগ্রীড জিতবে।

ণূ ~ নো ওয়ে!!! আজকে আমার হোম টিম ইকারাস টার্মিনাস জিতবে।

এডাম ~ তাহলে বাজী হয়ে যাক ?

ণূ ~ আমার টিম জিতলে আমি পাব এর সবাই কে ফ্রি বিয়ার খাওয়াবো। আর তুমি জিতলে আমাদেরকে স্কাই ট্রেনের স্পেশাল বুফে খাওয়াবে।

এডাম ~ ওক্কে আমি রাজি!

তুমুল খেলা ছিল, এবং ণূ এর দল ই জিতলো। মিনিটে মিনিটে বিয়ার অর্ডার হতে লাগলো। রাত ২ টায় যখন সবাই বের হলো কেউ সোজা হয়ে দাড়াতে পারছিল না। যে যার মতো ট্যাক্সি ডেকে বাসায় ফিরলো। ণূ আর এডাম একটা ট্যাক্সি নিলো, দুইজন এক ই এলাকায় থাকে, এডাম ট্যাক্সির স্ক্রিনে ঠিকানা ইনপুট দিলো। রাতের ইলিসিয়াম এর পুর্নিমা ভেদ করে এয়ার ট্যাক্সি উড়ে চললো গন্তব্যে।


৩.

ণূ~ এডাম , তুমি এইখানে? এত সকালে?

এডাম ~ এখন দুপর ১২ টা বাজে, আর কাল রাতে তুমি এতো টাল হয়েছিলে।

ণূ~ এডাম, তুমি কি আমার ড্রেস চেঞ্জ করেছো?

এডাম ~ হ্যা! তুমি অনেক বমি করেছিলে তাই ভাবলাম আর কি…..

ণূ~ কিহ!! এডাম তুমি আমার অনুমতি ছাড়া এই কাজ করেছো! তুমি কি নিজেকে ওমেগা ম্যান মনে কর নাকি? যে যা ইচ্ছা তাই করতে পারবে?

এডাম~ আরে তুমি এতো সিরিয়াস হচ্ছো কেন? আমি তো ভাবছি তুমি আমাকে লাইক করো , আর আমাকে কাল রাতে ফেরার টাইমে কিন্তু অনেক কিছু ইংগিত দিচ্ছিলে!

ণূ ~ এডাম, আমি মাতাল ছিলাম। আর তুমি সেই সুযোগ নিয়েছ? আমি পুলিশকে জানাবো।

এডাম ~ আরে তোমার মতো রোবটের আবার সুযোগ নেবার কি আছে? তোমরা হলে টিনের বাক্স, বায়োবট বায়োবট বলে কি জাহির করো ? তোমাদের আছে টা কি? মানুষ এর কনা মাত্র ও তোমাদের নাই, তোমাদের সাথে ঐ টোস্টার এর কোন পার্থক্য নাই। আমি হলাম বিবর্তনের বেস্ট উদাহরন। আর তোমরা কিনা আমাদের উপর খবরদারী করছো। যত্তো সব যান্ত্রিক জঞ্জাল, জাহান্নামে পাঠিয়ে দিবো তোদের।

ণূ~ এডাম, প্লিজ শান্ত হও । আমি কোন কিছু বুঝে তোমাকে আঘাত দিতে চাই নি! প্লিজ এডাম শান্ত হও। আমরা খুব ভালো বন্ধু , আমাদের মাঝে এমন আচরন মানায় না। তুমি শান্ত হও। তুমি কি জানো আমার ফ্যামিলি তোমাকে আর কিরা কে কত টা ভালো বাসে? নেক্সট হলিডে তে আমার ফ্যামিলি তোমাদের কে এপেলগ্রুভে তিনদিনের জন্য দাওয়াত দিবার প্লান করেছে।

এডাম ~ তোর দাওয়াত এর নিকুচি করি। এপেলগ্রুভ এ থাকিস তুই? ঐ নোংরা শহরে তুই থাকিস! তোর মত আরো চার টা জঞ্জাল কে রেখে এসেছি ঐখানে, ভাবছি তোকেও রেখে আসবো , হা হা হা হা!

ণূ~মানে কি ? কাকে কোথায় রেখেছো? কি বলছো এগুলো !

এডাম ~ চুপ থাক! যখন তোকে অর্চাড গার্ডেন এর ১৯৩৫ নাম্বার লেইনে পুতে রেখে দিবো তখন বুঝবি।


ণূ বিভীষিকা ময় চোখে তাকিয়ে দেখলো এডামের হাতে কিচেন এর মাংস কাটার ছুরি। প্রচন্ড আর্তচিঠকার দিয়ে উঠলো ণূ, কিন্তু কোন লাভ নেই। তার বাসা টা সাউন্ডপ্রুভ থাকে রাতে ঘুমানোর সময়, সকালে উঠে সিস্টেম অফ করতে হয়, ণূ নিশ্চিত এডাম সিস্টেম অফ করে নাই। ৮ ইঞ্চি ছুরি নিয়ে ণূ এর উপর ঝাপিয়ে পড়লো এডাম, ভাইব্রেনিয়াম মেটাল এর ছুরিতে ক্ষত বিক্ষত হয়ে গেল নূ। মুহুর্মুহ কোপে নিথর হয়ে গেল নূ।

কিছুক্ষন পরেই সম্বিত ফিরে পেলো এডাম। ণূ এর নিথর দেহ আর নিজের হাতে ছুরি দেখে চুপ করে কিছু ক্ষন বসে থাকলো। রাগের মাথায় কি হয়ে গেল? কিভাবে কি করলো ! নূ এর দেহকে কার্পেটে মুড়িয়ে গাড়িতে নিয়ে গেল, গাড়ি চালাতে চালাতে সে ভাবছিল কোথায় এই ডেডবডি ফেলা যায়, নূ বলছিল এপেলগ্রুভ এলাকার কথা, ঐখানেই রেখে আসবে নাকি? এডাম একটূ সন্দিহান, ইলিসিয়াম শহরের বাইরে এপেলগ্রুভ বলে একটা এলাকা আছে, কিন্তু সে কখনো ঐ এলাকায় যায় নাই, অথচ তারপরেও সে কিভাবে ণূ কে থ্রেট দিলো এবং অর্চাড গার্ডেন এর ১৯৩৫ নাম্বার লেইনে পুতে রাখবে বলে হুমকি দিল? গতকিছু দিন ধরে অদ্ভুত অনেক কিছুই হচ্ছে, বিশেষ করে এপোলোর ল্যাব থেকে ফিরে আসার পর আরো অদ্ভুত স্মৃতি তাকে পিছু তাড়া করছে। মাঝে মাঝেই মনে হচ্ছে তার অতীত জীবনের কথা মনে করতে পারছে। এপেলগ্রুভ কি তার অতীতের কোন কাহিনী? ভাবতে ভাবতে মনে হলো এপোলোকে একবার ফোন দেবার কথা, হারামী টা এইবার ও যদি ফোণ রিসিভ না করে তাহলে নূ এর মতো ওকেও গুম করে দিবো ,

~ হ্যালো এপোলো! কি ব্যপার বিগত কয়েকদিন পাত্তা ই দিচ্ছো না? ব্যস্ত ছিলে? আপগ্রেড নিয়ে? ও আচ্ছা বুঝেছি। আমার হলোগ্রীড এর রেজাল্ট কি হলো? তাই নাকি? তাহলে কি আমি আবার আসবো? ঠিক আছে কবে আসবো ? এখন? আচ্ছা আমি এখন শহরের বাইরে আছি। বিকালে আসি তাহলে? ওক্কে বাই!

৪.

সন্ধ্যা বেলাতে এপোলোর ল্যাবে পা দিল এডাম। এপোলোকে খুব অস্থির লাগছিল, ঠিক ভাবে যেনো ঘুমাতে পারে নি।

এডাম~ কি খবর তোমার? কেমন যেন উদ্ভ্রান্ত লাগছে?

এপোলো ~ আসলে আমার আপগ্রেড এবার খুব ভোগাচ্ছে, তাই কাজ অনেক পিছিয়ে গেছে। এডাম তোমাকে কিছু ভিডিও ফিড দেখাবো, আমি নিজেই জানি না কিভাবে এর ব্যখা দিবো। তোমার ব্রেইন ফ্রিকোয়েন্সি ভিডিও তে কিছু ডিস্টার্বিং কাহিনী পেয়েছি, তাই তোমার সাথে আগে আলাপ করতে চাই এগূলো ।

এডাম~ কি এমন পেয়েছ? আমি কাউকে খেয়ে ফেলছি এরকম কিছু? হে হে হে হে! বার বি কিউ করে নাকি কারি লেন্টিল দিয়ে? হে হে হে !

এপোলো ~ কাচা মাংস খেয়েছো তুমি ! এডাম তুমি বলেছিলে চারবছর আগে তোমার ঘুম ভেংগেছিল এবং তোমার সাথে আরো দুই জন ছিলো যারা তোমাকে সিয়েরাপিক শহরের কথা বলেছিল। তাদের কি হয়েছিল এডাম? তারা কিভাবে মারা গিয়েছিল?

এডাম~ তুমি কি আমাকে বিচারকাষ্টে দাড় করাচ্ছো? চারবছর ঐ কবরে আমরা কিভাবে বেচে ছিলাম তোমার ধারণা আছে? ক্ষুধায় আমাদের কি কি করতে হয়েছে?

এপোলো ~ তুমি কি তোমার সংগীদের মেরে তাদের মাংস খেয়ে জীবন কাটিয়েছো?

এডাম~ আমি ওদের মারি নাই, ওরা এমনিতেই মারা গেছে। আমি একা চারবছর ঐ লেভেল ৭ থেকে রাস্তা খুজে মাটির উপরে এসেছিলাম, এসে দেখি কোন মানুষ নেই, আমি একা! ভেবে দেখো আমার কি অবস্থা? আমি পৃথিবীর শেষ মানুষ , আমি ওমেগা ম্যান হয়ে বেচে আছি।

এপোলো~ এডাম তুমি কি জানো তোমার ফাইল এ কি বলা আছে? আমরা তোমার আসল নাম জানতে পারি নাই। তবে এটুকু জানি তুমি খুব নৃশংস একজন মানূষ ছিলে। তোমার কি আসলেই মনে নেই তুমি কি? বা কি করেছ? আমার সাথে শেয়ার করতে পারো , ৮০০ বছর পার হয়ে গেছে কেউ তোমাকে মানুষের আইনে সাজা দিবে না।

এডাম~ তুমি শুনতে চাও? হা হা হা ! আমার নাম লুসিয়াস ড্রেক্স! আমার ফাইল যা পেয়েছো কে ওয়াই ১৯২৩ নামে তার সবই সত্য। আমাকে ক্রায়োজনিক চেম্বারে রাখা হয়েছিল শাস্তি হিসাবে, অনেক এক্সপেরিমেন্ট ও করেছে আমাকে নিয়ে যাতে আমি বাকী ডেডবডি গুলোর সন্ধান দেই। কিন্তু ওরা বোঝে নাই আমি কে? আমি ওমেগা ম্যান, আমাকে ভাংগা এতো সহজ না।

এপোলো ~ কি ভয়ংকর কথা? তুমি কিছু ই ভোলো নাই? এতো দিন শুধু অভিনয় করে গেছো?

এডাম ~ হ্যা!! তোমরা টিনের বাক্সরা, আসল মানুষ এর থেকেও গর্দভ। হা হা হা। আমার দুই ফোটা কান্না আর বিনয়ে তোমাদের এই শহরে আশ্রয় দিলে। আমার জন্য নতুন শিকারের ব্যবস্থা করে দিলে, ৩৫ কোটি অবার্চীন টিনের বাক্স কে লাশ বানানোর সূযোগ। আহা কি আনন্দ!! তোমাদের কে শিকার করেও আনন্দ আছে, জানো তো।

এপোলো ~ কি বলছো এডাম? তুমি কি এই ২৩ জন বায়োবটের নিখোজ হবার সাথে জড়িত?

এডাম ~ বলো ২৪ পিস টিনের বাক্স৷ ণূ কে মনে আছে নাকি? আমার অফিসের ১২ তলার লাল চুলের টিনের বাক্স, মনে নেই? গত সামারে তুমি আমার বাসায় দাওয়াত এ এলে, তখন ও ছিল। অবশ্য চিন্তা করো না, তুমি, কিরা খুব শীঘ্রই ওর সাথে যোগ দিবে। মজার ব্যপার কি জানো? কিরা আমাকে বলেছে তোমার কাছ থেকে সাবধান এ থাকতে হা হা হা!! অথচ তোমার ই উচিত ছিল আমার কাছ থেকে সাবধান এ থাকা।

কথা বলতে বলতে জ্যাকেটের ভিতর থেকে একটা ফেজার পিস্তল বের করে এপোলোর দিকে তাক করলো। নির্দেশ দিলো সেরিব্রো হলোগ্রীড এর চেয়ারে বসে নিজের পা আর এক হাত বেধে ফেলতে। তাই করো এপোলো, এই পাগলের হাত থেকে বাচতে এটাই করা লাগবে। এপোলো নিজেকে বেধে ফেলার পরে, এডাম কাছে এসে বাকি হাত টাও বেধে ফেললো।

এপোলো~ এডাম এই মেশিন আমার উপর কাজ করবে না! এটা মানূষের ব্রেইন ফ্রিকোয়েন্সী নিয়ে কাজ করে। আর আমাকে তুমি মেরে ফেললেও আমার কপি আছে সেন্ট্রাল ভল্টে, ওখান থেকে আমাকে ঠিক ই আবার বাচিয়ে তোলা যাবে।

এডাম ~ হুম জানি। তবে তুমি যেন আমাকে ধরিয়ে দিতে না পারো তাই তোমার ব্রেইন কে ভালো ভাবে ঝালাই করা লাগবে। আচ্ছা বায়োবট হিসাবে তুমি কত খানি ব্যথা সহ্য করতে পারো? চলো আজকে একটা টেস্ট হয়ে যাক। হা হা হা!!

এডাম তার পৈশাচিক হাসি মুখে ডায়মণ্ড কাটার করাত নিয়ে এপোলোর দিকে এগিয়ে গেল। তীব্র আর্তনাদ করে উঠলো এপোলো, কাকুতি মিনতি করলো তাকে একেবারে মেরে ফেলার। কিন্তু এডাম এর অট্টহাসিতে সেই কাকুতি মিনতি হারিয়ে গেল। দীর্ঘ ৩৫ মিনিট পর নিস্তেজ এপোলোর খন্ডিত দেহ নিয়ে পরীক্ষা করছিল।

এডাম~ এপোলো তুমি কি কখনো মাছের সাথে সাতার কেটেছো? আমার খুব প্রিয় একটা জায়গা ছিল সিয়েরা পিক শহরে, ওইখানে পিয়ার ৩৫ নামের একটা নদীর ঘাট আছে। তুমি কি জানো, ঐখানে আমি ৩ টা লাশ ফেলে রেখেছি? ওই জায়গাটা এতো টাই নির্জন যে কেউ ঐদিকে যায় না কারন অসংখ্য পাথুরে দেয়াল ওখানে আছে, ফলে কোন নৌকা বা মাছ শিকারী ঐ দিকে যায় না। মজার ব্যপার তোমার এই শহরেও পিয়ার ৩৫ নামের একটা জায়গা আছে এবং আরো মজার ব্যপার সেটাও খুব নির্জন পাথুরে জায়গা। ভাবছি তোমাকে দিয়ে ঐ জায়গা টা ভরাট করবো, হা হা হা, কি বলো? আইডিয়া টা ভালো না? তুমি হাসছো এপোলো? আইডিয়া ভালো লেগেছে? গূড, শেষ বার হাসি হেসে নাও। তোমার বিজ্ঞানের দিন শেষ মাই ফ্রেন্ড। এখন তুমি মাছের খাবার হবে।

দাড়াও সব লাইট অফ করে আসি, লোকে নাহলে সন্দেহ করবে এতো রাতে তুমি কি করছো। ধীর পায়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেল এডাম।



৫.

~ কি অবস্থা? কোন আপডেট আছে?

~ জ্বি স্যার ! সিমুলেশন কেইস ১৬৭ এর ফেইজ ৪ চলছে। সব কিছু আগের মতো ই চলছে। আমরা ফ্রিকোয়েন্সী ক্রাক করতে পারছি না। খুব সযত্নে আরো কিছু তথ্য লুকিয়ে রেখেছে। তবে ভালো খবর আমরা তিনটা লাশের সন্ধান পেয়েছি।

~ জেন্টাল ম্যান আপনাদের বলে দেয়া লাগবে না, এটা আমাদের জন্য কতো গুরুত্বপুর্ণ একটা ব্যপার। আমরা যদি এই কেইস সলভ করতে পারি , তাহলে কতো গূলো ফ্যামিলি আমাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে সেটা কি বুঝতে পারছেন? আমাদের হাতে অনেক কিছু নির্ভর করে।

~ লাস্ট আপডেট কি আমাদের?

~ স্যার লুসিয়াস, কেইস ১৭ কে নিয়ে পিয়ার ৩৫ এর দিকে যাচ্ছে এবং সেখানে সে আরো তিনটা লাশ রেখেছে বলে জানিয়েছে


~ গূড!! আমাদের হাতে সামগ্রিক ভাবে ৭৫ টি শহরের সাম্ভাব্য টার্গেট লিস্ট আছে। এবং প্রতিটা শহরেই আমরা সেইম প্লান এ আগাবো । আমাদের খুজে বের করতেই হবে কিভাবে একটা খুনি আমাদের চোখে ধূলো দিয়ে যাচ্ছে।

~ আমরা এখন পর্যন্ত ৯ টা কেইস সলভ করেছি স্যার, মিনিস্ট্রি খুব একটা সন্তুষ্ট না আমাদের এই পন্থার।

~ ঊফফ, কিরা প্লিজ!!! ঐসব সরকারী আমলাগূলোর কথা আমাকে বলবে না। এসি রুমে বসে খালি মিটিং করা ওই সব মাথা মোটাদের দিয়ে দুনিয়া চলবে না। আমরা এইখানে বিজ্ঞানের প্রায়োগিক দিক নিয়ে জীবন অতিবাহিত করছি। আর ওরা? খাচ্ছে দাচ্ছে আর আমাদের কাজে নাক গলাচ্ছে। আমি সময় চেয়েছি, এটা কোন চা কফি না যে মেশিন এ চাপ দিলাম আর হয়ে গেল। আমি ফরেন্সিক মার্ডার মিস্ট্রির নতুন দুয়ার খুলে দিবো, এই কেইসগুলা সমাধান করতে পারলে, আমাদের সমাজে অপরাধ প্রবনতা কমে আসবে আর ………

~ স্যার কে ওয়াই ১৯২৩ এর জ্ঞান ফিরেছে।

~ হ্যাল্লো লুসিয়াস! কেমন আছো? নাকি তোমাকে এডাম ডাকবো? ঘুম ভালো হলো?

~ লুসিয়াস/এডাম ~ ওমেগা নাইন তুমি? কিরা বেইবি তুমি এইখানে? কি ব্যাপার আমাকে বেধে রেখেছো কেন? আমি কোথায়?

ওমেগা নাইন~ লুসিয়াস, আমার নাম ড: সলোমন ক্রীড। আমি একজন নিউরোলজি স্পেশালিষ্ট, আর যাকে তুমি কিরা ওয়ান নাইন এইট নামে জানো সে হলো ড কিয়েরা, পৃথিবীর নামকরা হিপনোসিস সাইকিয়াট্রিস্ট। আর ঐ দিকে ফাইভ টু, এপোলো দাঁড়িয়ে আছে ওরা হলো ড আদ্রিয়ানো আর ড এপোলো ইয়াসির। এরাও নিউরো আর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর জগত সেরা। আর এই নিয়ে ১৬৭ তম বার তোমার সাথে আমরা পরিচিত হলাম।

লুসিয়াস ~ আমি বুঝতে পারছি না তোমরা কি বলছো? কে তোমরা? আমি কোথায়?

সলোমন~ তুমি জিংজুয়ান ল্যাবের লেভেল ৭ এর ১৯২৩ চেম্বারে আটকে আছো। তুমি যাদের খুন করেছো তাদের পরিবারের অর্থায়নে আমরা তোমার উপর এক্সপেরিমেন্ট চালাচ্ছি। যেহেতু তুমি আপোসে আমাদের কে ডেডবডির হদিস দিচ্ছো না, তাই আমরা তোমাকে বিভিন্ন সিমুলেশন এর মাধ্যমে তোমার সুপ্ত খুনীসত্ত্বাকে বের করে আনছি এবং সেই সাথে কোথায় তুমি কাকে লুকিয়ে রেখেছো তার ও সন্ধান পাচ্ছি।

লুসিয়াস~ সিমুলেশন? কিসের সিমুলেশন?

সলোমন ~ তুমি সায়েন্স ফিকশন পছন্দ করো, নিজেকে ওমেগা ম্যান বা পৃথিবীর শেষ মানুষ ভেবে আনন্দ পাও। তাই তোমাকে নিয়ে আমরা তেমন সব সিমুলেশন বানিয়ে যাচ্ছি ভার্চুয়াল রিয়ালিটি গেইম দিয়ে। এই ভাবে আমরা এখন পর্যন্ত ১৬৭ টা সিমুলেশন চালিয়েছি তোমার সাথে এবং মোট ৯ টি লাশ উদ্ধার করেছি। প্রাথমিক সিমুলেশন গুলো নিখুত হচ্ছিল না, তবে এখনকার সিমুলেশন গুলো এতো ই নিখুত হচ্ছে যে তুমি নিজের সব ইতিহাস আমাদের জানিয়ে দিচ্ছো৷ হা হা হা হা!! তুমি অবশ্য কিছুই মনে রাখতে পারো না, কারন আমরা প্রতি সিমুলেশন শেষে তোমার স্মৃতি মুছে ফেলি। আর হ্যা আরো কিছু দিনের মাঝেই আমরা বাকীদের সন্ধান পেয়ে যাবো। তারপর তোমাকে আমরা এমন ভাবে বাচিয়ে রাখবো যেন তুমি সত্যিকর অর্থেই পৃথিবীর শেষ মানুষ হিসাবে বেচে থাকতে পারবে।

তো লুসিয়াস, আমরা কি ১৬৮ নাম্বার সিমুলেশন শুরু করতে পারি? তুমি যে ১১ বছরের শিশুকে খুন করে লাশ গুম করে আছো সেই কেইস টা আমরা শুরু করি, কি বলো? এইবার কোথায় পাঠাবো তোমাকে? অতীতের কোন শহরে? নাকি অন্য কোন গ্যালাক্সি তে? তো দেখা হচ্ছে এই সিয়েরাপিকের আদলে তৈরী কোন এক জগতে?

অক্ষম জান্তব চিৎকার দিয়ে উঠলো লুসিয়াস, যেন এক চিৎকারেই সে পৃথিবী ধ্বংস করে দিবে।

(শেষ)


সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৭
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×