somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিএনপির আসলে কতটুকু প্রয়োজন জামায়াতের ভোট-১

২০ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইদানিং একটা বিষয় খুব আলোচিত হচ্ছে। জামায়াতের সাথে আওয়ামীলীগের কোন অলিখিত সমঝোতা হয়েছে কিনা। এমনকি জামায়াতের ভেতরেও এ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এ পর্যায়ে একজন কট্টর জাতীয়তাবাদী হিসেবে আমার মনে প্রশ্ন জাগে, ভোটের রাজনীতিতে বিএনপির আসলে কতটুকু প্রয়োজন জামায়াতকে। হ্যাঁ, মাঠের সহিংসতায় আওয়ামীলীগকে মোকাবিলা করতে হয়তো প্রয়োজন আছে। কিন্তু জামায়াতের ভোটব্যাংক আসলেই কি এতটাই প্রভাবশালী যে, তাদের একবার ৩১ টা ,পরেরবার ৩৯ টা সিট ছেড়ে দিতে হল।

কিছু পরিসংখ্যান ঘাটাঘাটি করে দেখলাম, বিএনপির আসলে জোট করার কোন প্রয়োজনই ছিল না, এখনও নেই। উল্টো, কিছু ক্ষেত্রে বিএনপি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। প্রথমে জেনে নেই, জামায়াতের ভোটব্যাংক প্রকৃতপক্ষে কতটা শক্তিশালী।

জামায়াতের ভোটঃ

এই দলটি প্রথম নির্বাচনে অংশ নেয় ১৯৮৬ সালে। জিয়ার সময়ে তাদের অবস্থা ছিল অনেকটা এখনকার মত, অর্থাৎ দল হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার নিবন্ধন ছিল না। ১৯৮৬ এর নির্বাচনে জামায়াত ৭৬ টি আসনে প্রার্থী দিয়ে ১০ টি আসনে জয়লাভ করে, যা বেশ ভাল ফলাফল। শতাংশের হিসেবে তারা ৪.৬ শতাংশ ভোট পায় সারা দেশে। তারা মূলত মুসলিম লীগের ভোটব্যাংক এবং ভারত থেকে ১৯৪৭ এর পর আসা ভারতবিদ্দেসি ও হিন্দুবিদ্দেসি মুসলিমদের টার্গেট করে তাদের ভোটের পরিমান বাড়িয়ে নেয়।
১৯৯১ এর নির্বাচনেও বেশ ভাল করে জামায়াত। ২২২ টি আসনে প্রার্থী দিয়ে ১৮টি আসন দখল করে দলটি। ভোট পাওয়ার হার ১২.১৩%।
এই সফলতা অবশ্য পরের নির্বাচনেই ধুয়ে যায়।

১৯৯৬ এর নির্বাচনে জামায়াত ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে মাত্র ৩ টি আসন পায়। ভোটের হার নেমে আসে ৮.৬১ শতাংশে। আসন তিনটি হল পিরোজপুর-১, সাতক্ষীরা-২, নীলফামারী-৩। ১৯৯১ এ জয়ী ১৮ টির মাত্র একটি ধরে রাখতে সক্ষম হয় তারা ১৯৯৬ এ। বাকি ১৭ টির মধ্যে লিগ পায় ৯ টি এবং বিএনপি পায় ৮ টি। উল্লেখ্য প্রধান ৩ টি দলের যেকোন ২ টি দলের জোট থাকলে জামায়াত ঐ আসনগুলোও পায় না। অথচ নির্বাচনের আগে তারা আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির সাথে আন্দোলন করে বিএনপির পতন ঘটায়। সেই সাথে ইসলাম নিয়ে রাজনীতি করার ফলে তাদের ভোট প্রতিটি নির্বাচনেই বাড়ছিল(সেই সাথে সাহসও)। তাহলে এই পতনের কারণ কি-
১।
জাহানারা ইমামের নেত্রিত্তে দেশব্যাপি ব্যাপক আন্দোলনের ফলে জনসচেতনতা তৈরি হয়েছিল। এমনকি ছাত্রদলও চট্টগ্রামে এই আন্দোলনের পক্ষে মহাসমাবেশ করে। যার পরিনামে রিজভি-ইলিয়াস কমিটির মেয়াদ ৪ মাস না যেতেই সন্ত্রাসের অভিযোগে তাদের কমিটি বাতিল করা হয়, যাতে মূল ভুমিকা পালন করেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু এবং তথ্যমন্ত্রি নাজমুল হুদা।
২।
বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রশিবিরের ব্যাপক তাণ্ডব। বিশেষ করে বৃহত্তর রাজশাহী ও চট্টগ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাদের তাণ্ডব এই অঞ্চলগুলোতে তাদের কোন আসন না পাওয়াতে মুখ্য ভুমিকা পালন করে।

৪ দলিয় জোটের অংশ হিসেবে ২০০১ এর নির্বাচনে অংশ নেয় জামায়াত। আসন ভাগাভাগিতে পায় ৩১ আসন যার মধ্যে ১৯৯১ এর নির্বাচনে জয়ী ১৮ টির ১০ টি আসনও ছিল। বিপুল জোয়ার ও বিএনপির ভোট মিলিয়ে জামায়াত জয়লাভ করে ১৭ টি আসনে, যা এরশাদের জাতীয় পার্টির তুলনায়ও কম ছিল।
২০০৮ এর নির্বাচনের আগে আবারো ১৯৭১ এর ভুমিকার কথা সামনে নিয়ে আসে আওয়ামীলীগ। তারা জামায়াতের দোসর হিসেবে দোষারোপ করতে থাকে বিএনপিকে। আর্মি পরিচালিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধিনে নির্বাচনের কোনরূপ ইচ্ছা না থাকলেও বিএনপি বাধ্য হয় নির্বাচনে যেতে মূলত কিছু বিদেশি শক্তির চাপে ও জোটের শরিকদের অতি আগ্রহের বলি হয়ে।
আসন ভাগে এবার জামায়াত পায় ৩৯ টি আসন। কিন্তু দক্ষিন চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এর ২ টা আসন ছাড়া সব আসনে তারা পরাজিত হয়। পতন হয় পিরোজপুর, নীলফামারী, সাতক্ষীরার মত দুর্গের। ১৯৯১ এ জয়ী কেবল দক্ষিন চট্টগ্রামের আসনটিই তারা ধরে রাখতে পারে। বাংলাদেশে বসতি স্থাপনকারী ও নাগরিকত্ব গ্রহণকারী রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীরা এ অঞ্চলে জামায়াতের বিশেষ ভোটব্যাংক হিসেবে পরিচিত।
জামায়াতের গায়ে লেগে থাকা যুদ্ধপরাধের গন্ধ বিএনপির ভোটও কমিয়ে দেয় ২০০৮ এ। ব্যক্তিগতভাবে আমি এই কারণটাকে ক্ষমতায় থাকাকালীন হাওয়া ভবনের বাড়াবাড়ি এবং নির্বাচনকালিন ‘উদ্দিনিয়’ সরকারের পক্ষপাতিত্বের পরেই স্থান দেই।

এই পর্বে আমরা দেখলাম, জামায়াতের ভোটব্যাংকের এবং সেই ভোট উঠানামার হিসাব। পরের পর্বে আমরা দেখব, বিএনপির ভোটে জামায়াতের অবদান কতটুকু? সবশেষে নবগঠিত ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিকে স্বাগত ......... ঢাকা কাঁপার অপেক্ষায় রইলাম!
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×