somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রোহিঙ্গা কাদের? এই সমস্যার সমাধান কি?

১৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রোহিঙ্গারা আরাকান রাজ্যের বাসিন্দা। ধর্মের দিক দিয়ে তারা মুসলিম। মায়ানমার সরকারী হিসাবে প্রায় আট লক্ষাধিক রোহিঙ্গা আছে।
মায়ানমার সরকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মায়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। মায়ানমার সরকার ১৩৫ টি জাতিগোষ্ঠীকে সংখ্যালঘু জাতি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, রোহিঙ্গারা এই তালিকার অর্ন্তভুক্ত নয়। মায়ানমার সরকারের মতে, রোহিঙ্গারা হল বাংলাদেশী, যারা বর্তমানে অবৈধভাবে মায়ানমারে বসবাস করছে। যদিও ইতিহাস ভিন্ন কথা বলে।
তাহলে একটু জানতে চেষ্টা করি রোহিঙ্গাদের ইতিহাস। সপ্তম-অষ্টম শতাব্দীতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উদ্ভব হয়। প্রাথমিকভাবে মধ্যপ্রাচ্যীয় মুসলমান ও স্থানীয় আরাকানীদের সংমিশ্রণে রোহিঙ্গা জাতির উদ্ভব। পরবর্তীতে রাখাইন, আরাকানী, বাঙালী, ভারতীয়, মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মানুষদের মিশ্রণে উদ্ভুত এই সংকর জাতি এয়োদশ শেষ ও চর্তুদশ শতাব্দীর শুরুতে পূর্ণাঙ্গ জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এরপরে প্রায় তিনশো বছর আরাকানে রোহিঙ্গাদের নিজেদের রাজ্য ছিল আর তারাই তা পরিচালনা করতো।
মায়ানমার সরকার দাবী করে ব্রিটিশরা ভারত, চাঁটগায়া,বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের আরাকানে এনেছে পরবর্তিতে তারা সেখানে বসতি গেঁড়ে স্থায়ী হয়! আসলে এই কথাটির ঐতিহাসিক কোন ভিত্তি নেই ব্রিটিশরা আসার কয়েক শতাব্দী আগেই রোহিঙ্গারা পরিষ্কার জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। আসলে জাতি হিসাবে রোহিঙ্গাদের আরাকানে বিকশিত হওয়ার ইতিহাস পরিষ্কার হলেও মায়ানমার সরকার ওদের কোন অস্তিত্বই স্বীকার করে না। এইসব পরিচয়হীন রোহিঙ্গারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডের পথে পা বাড়ায়। নৌপথে সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে অসংখ্য রোহিঙ্গা ঢুবে মারা গেছে।
বিগত কয়েক দশক ধরে মায়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশ সীমান্তে পুশ ইন করছে। রুটিনমাফিক নির্যাতন করে রোহিঙ্গাদের বাধ্য করছে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে। অপারেশন ড্রাগন (১৯৭৮) পরিচালনার সময় থেকে চার লক্ষের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রিত অবস্থায় বসবাস করছে। যদিও রিফিউজি হিসেবে বাংলাদেশে তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা আরো কম। ১৯৯২ সালে আরো অনেক রোহিঙ্গা এদেশে আশ্রয় নেয় তবে সেসময় সরকারের কুটনৈতিক প্রচেষ্টায় অনেক রোহিঙ্গাকে ফিরত নিতে মায়ানমার সরকারকে বাধ্য করা হয়।
রোহিঙ্গাদের প্রতি যা করছে মায়ানমার সরকার, তা সমগ্র মানবতার বিরুদ্ধেই অপরাধ। এক হাজার বছরের বেশি সময় ধরে আরাকানে বিকশিত হতে থাকা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব সুবিধা না দেয়া, গ্যাটো সৃষ্টি করে (নির্দিষ্ট কলনী) সেখানে অমানবিক পরিবেশে থাকতে বাধ্য করা, জোরপূর্বক শ্রমে নিয়োগ করা, বিচারবর্হিভূতভাবে গ্রেফতার করা, মালিকানাস্বত্ব, সার্বজনীন শিক্ষা, চিকিৎসা, উপযোগ সেবা ও মৌলিক মানবাধিকার হতে বঞ্চিত করার মাধ্যমে নিমর্মতার শেষ সীমানাটুকু অতিক্রম করেছে মায়ানমার সরকার।
বিশ্ব মিডায়ার কল্যাণে সবাই এই বর্বরতা দেখছে!
জাতিসংঘ বাংলাদেশের বর্ডার রোহিঙ্গাদের জন্য খুলে দিতে বলেছে! এখানে আমার ঘোর আপত্তি! শুনে হয়তো আমাকে অমানবিক মনে হতে পারে কিন্তু সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে এটা সরকারের করা মোটেও উচিত হবে না। আর এটা সমাধানের সঠিক পথও না। রেজিষ্টার্ড রোহিঙ্গাদের খরচ হয়তো জাতিসংঘ নিবে কিন্তু বাকি যারা আছে তাদের দায়ভার নিতে আমাদের সরকার কতটুকু সক্ষম? এখনো যেসব রোহিঙ্গা আন-রেজিষ্টার্ড আছে তারা অনেক অবৈধ কাজের সাথে জড়িত। ড্রাগ (ইয়াবা অন্যতম) জাল টাকা আর যৌনকর্মে এরা ব্যাপক ভাবে জড়িয়ে পড়ছে। এদেশের কিছু দালাল ধরে এরা বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিচ্ছে আর বাহিরে যাচ্ছে সেখানে কোন বে-আইনী কাজ করে ধরা পড়লে বাংলাদেশের ইমেজ নষ্ট হয় রোহিঙ্গাদের না!
মোটকথা এতসংখ্যক রহিঙ্গাদের ভরণপোষণ আর নজরদারিতে রাখার সামর্থ্য বাংলাদেশের নাই। তাই কুটনৈতিক পথে সমাধানের চেষ্টাই হবে শ্রেয়। আমার কিছু সাজেশন আছে এই পথে এগুলো হয়তো দীর্ঘমেয়াদী সমাধান হবে।
১/ রোহিঙ্গাদের করণীয়:
★সকল রোহিঙ্গাদের নিয়ে একটা সংগঠন করা আর সবাইকে এই সংগঠনের ভিতরে একতাবদ্ধ করা।
★ ঐ সংগঠনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিত্ব সৃষ্টি করা প্রয়োজনে জাতিসংঘের সহযোগীতা নিতে পারে।
★নিজেদের শিক্ষত করা। শিক্ষা সামগ্রী সংগ্রহে বিভিন্ন এনজিও ও ইউএনডিপি এর সহায়তা নেওয়া।
★ যথাযথ প্রমাণ ও যুক্তি দিয়ে মায়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে আইনী লড়াই করা।
★ জঙ্গীবাদে যেনো তাদের যুবকেরা ঝুঁকতে না পারে সে ব্যবস্থা করা কেননা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দাতা সংস্থা এটা মনে করে যে রোহিঙ্গা যুবকেরা বিভিন্ন জঙ্গীগোষ্ঠীর কর্মী সংগ্রহের অন্যতম উৎস।
★ আন্তর্জাতিক সংগঠন গুলোকে তাদের ইতিহাস,বিস্তার ও অবস্থা সম্পর্কে অবিহিত করা যাতে তারা চাপ সৃষ্টি করে মায়ানমার সরকারকে রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধানে।
২/রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের করণীয়:
★ বর্ডার খুলে দিলে এর নেতিবাচক দিক গুলো আমাদের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিজনক তা তুলে ধরা (বাংলাদেশ জাতিসংঘের শরনার্থী কনভেনশনে স্বাক্ষর করে নাই তাই আমরা এটাতে বাধ্য নই)
★আর কোন রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না দেয়া।
★ যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আছে, তাদের তালিকা তৈরী করা ও কড়া নজরদারীর ব্যবস্থা করা। রোহিঙ্গা নীতিমালা প্রণয়ন করা; যার মাধ্যমে উদ্বাস্তু রোহিঙ্গাদের কি কি সুবিধা বাংলাদেশ সরকার প্রদান করবে, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে থাকতে হলে কি কি বিধিমালা মেনে চলতে হবে, তার উল্লেখ থাকবে।
★ বিশ্বের কাছে রহিঙ্গাদের ইতিহাস তুলে ধরা আর মায়ানমারকে চাপ দেওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে আরাকানে স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা চালু করা।
৩/ রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের করণীয়:
★ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের জন্য প্রয়োজনীয় সাহায্য প্রেরণ করা।
★ মায়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টি করা, যাতে করে, মায়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের পূর্ণাঙ্গ নাগরিকত্ব প্রদান করে।
★আরাকানের উত্তরাঞ্চলে রোহিঙ্গাদের জন্য স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলের ব্যবস্থা করা।
★রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের মায়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা।
★ রোহিঙ্গাদের জন্য পূর্ণাঙ্গ পূর্নবাসন কর্মসূচী হাতে নেয়া।
৪/ মায়ানমার সরকারের করণীয়:
★ রহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদান আর ঐতিহাসিকভাবে তারা যে আরাকানের অধিবাসী তা স্বীকার করে নেওয়া।
★বিভিন্ন রাষ্ট্রে (বিশেষত: বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সৌদিআরব) যেসকল রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু আছে, তাদের মায়ানমারে ফিরিয়ে নিয়ে পূর্ণবাসন দেয়া।
★রোহিঙ্গাদের জন্য ৫০ বছরের জন্য উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নেওয়া এবং বাস্তবায়নে ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহন করা।
★রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ঠেকাতে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া।
★আরাকানের উত্তরাঞ্চলে রোহিঙ্গাদের জন্য স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলের ব্যবস্থা করা।

তথ্য:
০১। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
০২। জেনোসাইড ওয়াচ।
০৩। Genocide and Gross Human Rights Violations in Comparative Perspective by Kurt Jonassohn, Karin Solveig
০৪। দ্যা স্টেটলেস।
৫। সচলায়তন ব্লগে আরো বিস্তারিত আছে রাজা ভাইয়ের ব্লগে।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৪
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×