somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নূর মোহাম্মদ নূরু
নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের খ্যাতিমান ফরাসি লেখক জুল ভার্নের ১৮৮তম জন্ম বার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর খ্যাতিমান ফরাসি লেখক (Jules Verne) জুল ভার্ন। আইনবিদ হয়েও যার অন্তঃসত্তা একজন খাঁটি বিজ্ঞানী, অভিযাত্রী আর পর্যটক। আর্থার সি ক্লার্ক, এইচ জি ওয়েলস, আইজ্যাক আসিমভের মত সাহিত্যিক মহারথীদের মতে, "তিনি এমন একজন শক্তিশালী লেখক যার অবদান বিশ্ব সাহিত্যে অপরিসীম"। তার জাদুকরি লেখা জয় করেছে ভৌগোলিক সীমারেখার সকল সীমাবদ্ধতা। যুগ যুগ ধরে সুররিয়ালিস্ট এবং সায়েন্স ফিকশন ধারাকে প্রভাবিত করে করে চলেছে সমান দাপটে। যাকে অনায়াসে কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের মুকুটহীন সম্রাট বলা যায়। উড়োজাহাজ, রকেট কিংবা সাবমেরিনের বাস্তবিক ও ব্যবহারিক প্রয়োগের অনেক পূর্বেই তিনি মহাকাশ ভ্রমণ ও সমুদ্রের তলদেশে ভ্রমণের কল্পকাহিনী লিখেছিলেন। তার বিখ্যাত উপন্যাসগুলোর মধ্যে টুয়েন্টি থাউজেন্ড লিগস আন্ডার দ্য সি, টাইগার্স এন্ড ট্রেটস এবং অ্যা জার্নি টু দ্য সেন্টার অব দ্য আর্থ উল্লেখযোগ্য। কৈশর কিংবা যুবা বয়সে সেবা প্রকাশনি থেকে প্রকাশিত বাংলায় অনুবাদকৃত জুল ভার্নের কল্পকাহিনী পাঠ করেন নি এমন পাঠকের সংখ্যা সীমিত। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর পিতৃপুরুষ হিসেবেও স্বীকৃত জুল ভার্ন ১৮২৮ সালের সালের আজকের দিনে ফ্রান্সে করেন। আজ তাঁর ১৮৮তম জন্মবার্ষিকী। বিশ্বমাতানো কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের বিস্ময়কর অগ্রদূত জুল ভার্নের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।


(২৫ বছর বয়সে জুল ভার্ন)
জুল ভার্ন ১৮২৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ফ্রান্সের পশ্চিমে বিস্কে উপসাগরের তীরে অবস্থিত নঁত নামের বন্দর শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পুরো নাম জুল গার্বিয়েল ভার্ন (Jules Gabriel Verne)। তাঁর বাবা পিয়েরে ভার্ন, এবং মা সোফি অ্যালো দে লা ফুয়। জুল ভার্নের শৈশবকাল কাটে এখানকার বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে। তাঁরা গ্রীষ্মকাল কাটাতেন নঁতের কাছেই ব্রে শহরে। সেখানে ভার্ন ও তাঁর ভাই পল প্রায়ই এক ফ্রাঁ দিয়ে এক দিনের জন্য নৌকা ভাড়া নিতেন। ভার্নের মতে, নদীতে প্রচুর জলযানের চলাচলের দৃশ্য তাঁর কল্পনাশক্তির স্ফুরণ ঘটায়। ১২ বছর বয়সে জাহাজের কেবিনবয় হিসেবে কাজ নিয়ে বাড়ী থেকে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে মায়ের কাছে প্রতিজ্ঞা করেন এখন থেকে নিজের মনের মধ্যেই ঘুরে বেড়াবেন। বাবার ইচ্ছায় আইন বিষয়ে পড়াশুনা করে আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করে বেশ প্রসার লাভ করেন। অভিযানপ্রিয় জুল ভার্ন খুব দ্রুত বিরক্ত হন এ পেশার প্রতি এবং আইন ব্যবসা ছেড়ে ১৮৬৭ সালে আমেরিকাতে পাড়ি জমান ।


জুল ভার্নের সাহিত্যাঙ্গনে প্রবেশ ঘটে মঞ্চনাটক লেখার মাধ্যমে। তাঁর লেখা মঞ্চনাটক বেশ জনপ্রিয়তা পায়। তাঁর লেখা প্রথম বই বেলুনে পাঁচ সপ্তাহ অত্যন্ত অবাস্তব বলে কোন প্রকাশক ছাপতে রাজী না হওয়ায় তিনি রেগে গিয়ে এর পাণ্ডুলিপি আগুনে পুড়িয়ে ফেলার সময় তাঁর স্ত্রীর হস্তক্ষেপে তা রক্ষা পায়। পরে এ বইটি প্রকাশিত হলে রাতারাতি প্রচন্ড জনপ্রিয়তা পায়। ব্যক্তিগত জীবনে প্রচণ্ড ঘরকুনো এই লেখক তার বাড়ীর চিলেকোঠায় বসেই লিখে গেছেন বিশ্বমাতানো সব কল্পবিজ্ঞান কাহিনী। বিজ্ঞানমনস্কতা তার লেখার মূল উপজীব্য। সাবমেরিন,হেলিকপ্টার,বিমান,রকেট প্রভৃতি যুগান্তকারি আবিষ্কারের মূল প্রেরণা জুল ভার্নের রচনা। হয়তো অনেকেই জানেননা পরবর্তী বহু বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের পশ্চাতে রয়েছে জুল ভার্নের সায়েন্স ফিকশনের অবদান। আশ্চর্য হতে হয় উনবিংশ শতাব্দীতে যখন এমন যন্ত্রের কথা মানুষ ভাবতেও পারেনি তখন কিভাবে তিনি এসবের কথা লিপিবদ্ধ করেছেন। বিজ্ঞানীরাও তাই সঙ্গত কারনেই অপরিসীম শ্রদ্ধার চোখেই বিবেচনা করেন এই মহান সাহিত্যিককে। সাহিত্যের পরিসীমা অতিক্রম করে তার রচনাবলী যেন পথ নির্দেশ করে আধুনিক বিজ্ঞানকে। তাঁর অবিশ্বাস্য কাহিনীগুলি পড়তে পড়তে আমরা যখন মানসভ্রমনে বেরোই,ভাবতেও অবাক লাগে শুধুমাত্র নিজের ঘরে বসে এমন বর্ণনা কিভাবে সম্ভব।


জুল ভার্নের 'মিষ্টিরিয়াস আইল্যান্ডের' ক্যাপ্টেন সাইরাস হার্ডিং এর উদ্ভবনী শক্তির কারনে প্রত্যেক পাঠককেই প্রচন্ড ভাবে আকৃষ্ট করবে। খালি হাতে তিনি সব কিছু বানিয়ে ফেললেন! 'টুয়েন্টি থাউজেন্ড লীগস আন্ডার দ্য সী' তার আর একটি অবাস্মরনীয় উপন্যাস। তিনি সাবমেরিনের চিন্তাই শুধু করেননি, তার খুঁটিনাটি তথ্যও তিনি দিয়েছেন পাঠকদের। 'এরাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটটি ডেজ' তার আর একটি ক্লাসিক। সারা পৃথিবীকে আশি দিনে পর্যটন করা সম্ভব কিনা, এই নিয়ে দুই বন্ধুর বাজি থেকে যার উৎপত্তি। আর মাঝখানে সব মহাদেশেরই অসাধারন কিছু ঘটনা দিয়ে শেষ হয়েছে আরও একটি চমক দিয়ে। রওনা হওয়ার একাশি দিনের মাথায় পৌঁছেও বাজী জিতে গেলেন প্রফেসর। 'ফাই্ভ উইকস ইন এ বেলুন' তার ভ্রমনের আর একটি অসাধারন বর্ণনা। বেলুন প্রয়োজনমত ওঠানো নামানোর কৌশলটার কোনও তুলনা হয়না।


জুল ভার্নের উল্লেখযোগ্য রচনাবলীঃ ১। টুয়েন্টি থাউজ্যান্ড লীগস আন্ডার দ্য সী, ২। এ জার্নি টু দ্য সেন্টার অব দ্য আর্থ, ৩। অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেইজ, ৪। দ্য মিস্ট্রিয়াস আইল্যান্ড, ৫। ডিক স্যান্ড, ৬। টাইগার্স এন্ড ট্রেটস, ৭। এ ক্যাপ্টেইন অ্যাট ফিফটিন ইত্যাদি। বেস্ট সেলার হিসেবেও প্রচুর সাফল্য পায় এইসব রচনাবলী। বিশ্বব্যাপি তার পাঠক তৈরী হয়। জনপ্রিয়তাও পৌঁছে যায় তুংগে। অদ্যবধি তার এই বিপুল জনপ্রিয়তা অব্যাহত রয়েছে। পৃথিবীতে আগাথা ক্রিস্টির পরেই তাঁর লেখা সবচেয়ে বেশী বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ ও নানা সাহেবের ইতিহাস আশ্রিত তাঁর উপন্যাস "টাইগার্স এন্ড ট্রেটস"-এ অবিভক্ত ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নিখুঁত বর্ণনা পাওয়া যায়। তাঁর লেখা বেশ কিছু কাহিনী নিয়ে চলচ্চিত্র ও নাটকও নির্মিত হয়েছে। তাঁর সৃষ্ট চরিত্রগুলির মধ্যে ফিলিয়াস ফগ্‌, ক্যাপ্টেন নিমো, রোবার ও ক্যাপ্টেন হ্যাটেরাস উল্লেখযোগ্য। সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য ফ্রান্স সাহিত্য অ্যাকাডেমি তাঁকে "অর্ডার অব মেরিট" সম্মানে ভূষিত হন এবং ইংল্যান্ড রয়াল অ্যাকাডেমির সম্মানসূচক সদস্যপদ লাভ করেন। টাইম ম্যাগাজিন তাকে ১৯৯৬ সালে ঘোষণা দেয় সর্বকালের সেরা সায়েন্স ফিকশন রাইটার হিসেবে। সংগত কারনেই জুল ভার্ন এই স্বীকৃতির যোগ্য।


বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর এই লেখক ১৯০৫ সালের ২৪ মার্চ আমেরিকাতে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যকালে তার বয়স হয়েছিলো ৭৭ বছর। আজ এই লেখকের ১৮৮তম জন্মবার্ষিকী। বিশ্বমাতানো কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের বিস্ময়কর অগ্রদূত জুল ভার্নের জন্মবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৩০
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×