somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের শহীদ বিপ্লবী আসফাকউল্লাহ খান এর ১১৭তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে যারা জীবন দিয়েছেন তাঁদের মধ্যে আসফাকউল্লাহর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।আসফাকউল্লাহ খান ছিলেন বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভারতীয় মুসলিম যাকে ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ফাঁসি দেয়া হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিলো ২৭ বছর। মাতৃভূমির প্রতি তাঁর ভালোবাসা ছিলো অতুলনীয়। একজন হিন্দি কবি অগ্নিবেশ শুক্লা "আশফাক কী আখিরি রাত" নামে একটি দারুণ কবিতা লিখেছিলেন যেটাতে তিনি ভারতের এই মহান সন্তানের আবেগকে প্রকৃত অর্থেই ফুটিয়ে তুলেছেন। এক বন্ধুর বিশ্বাস ঘাতকতায় পুলিশের জালে ধরা পড়েন আসফাকসহ ১৯জন ধরা পরেন। তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা রুজু করা হয়। যা কাকোরী মামলা নামে পরিচিত। মামলার রায়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। কাকোরী মামলায় আসফাকসহ আরো তিন সাহসীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। তাঁরা হলেন, পণ্ডিত রামপ্রসাদ বিসমিল, আসফাকউল্লা খান, রাজেন্দ্র লাহিড়ী এবং ঠাকুর রোশন সিং। বাকি ১৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে চার বছর থেকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। আসফাকউল্লা খান এবং তাঁর সহকর্মীদের কাজকে সম্প্রতিকালে বলিউডের চলচ্চিত্র "রঙ দে বাসন্তীতে" আমির খানের চিত্রায়নে চিত্রিত করা হয়েছে। তাঁর চরিত্রে অভিনয় করেছেন কুনাল কাপুর। আজ এই বিপ্লবীর ১১৭তম জন্মবার্ষিকী। ১৯০০ সালের আজকের দিনে তিনি ভারতের উত্তরপ্রদেশের শাহজাহানপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের শহীদ বিপ্লবী আসফাকউল্লাহ খান এর জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।

বিপ্লবী আসফাকউল্লাহ খান ১৯০০ সালের ২২ অক্টোবর উত্তরপ্রদেশের শাহজাহানপুরে। তাঁর পিতা, শফিক উল্লা খান পাঠান পরিবারের মানুষ ছিলেন এবং তাঁর পরিবার সামরিক দিক দিয়ে বিখ্যাত ছিলো। তাঁর মায়ের দিক থেকে পরিবারটি ছিলো অধিক শিক্ষিত এবং অনেক আত্মীয় ব্রিটিশ ভারতের পুলিশ এবং প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর মা মাজহুর-উন-নিসা ছিলেন একজন ধার্মিক নারী। আশফাকউল্লা ছিলেন চার ভায়ের ভেতরে সবচেয়ে ছোট ছেলে। তাঁর বড় ভাই রিয়াসাত উল্লাহ খান ছিলেন পণ্ডিত রামপ্রসাদ বিসমিলের সহপাঠী। ১৯২০ সালে, যখন বিসমিল শাহজাহানপুরে আসেন এবং ব্যবসায় নিজেকে যুক্ত করেন, আশফাক বহুবার বিসমিলের সাথে সাক্ষাতের চেষ্টা করেন কিন্তু বিসমিল কোনো মনোযোগ দেননি। ১৯২২ সালে, যখন অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়, বিসমিল জনগণকে আন্দোলন সম্পর্কে বলার জন্য শাহজাহানপুরে সভা সংগঠিত করেন। আশফাক তাঁর সাথে জনসভায় সাক্ষাত করেন এবং নিজেকে তাঁর সহপাঠীর ছোটভাই হিসেবে পরিচয় দেন। কংগ্রেসের অসহযোগ আন্দোলন দেশজুড়ে বিপ্লবী ভাবধারার জোয়ার আনে। বিপ্লবীরা বুঝেছিলেন যে অহিংসার নরম কথার মাধ্যমে ভারতের স্বাধীনতা আসবে না এবং তাই তারা ভারতে বসবাসকারী ব্রিটিশদের ভেতরে ভীতির সঞ্চারের জন্য বোমা, রিভলভার এবং অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করতে চাইলেন। তাঁদের কার্যক্রম চালানো এবং অস্ত্রশস্ত্র কেনার উদ্দেশ্যে, বিপ্লবীরা ৮ই আগস্ট, ১৯২৫ তারিখে শাহজাহানপুরে একটি সভায় বসেন। সিদ্ধান্ত হয় যে তারা সরণপুর লখনৌ চলাচলকারী ৮-ডাউন প্যাসেঞ্জার ট্রেন বহনকারী সরকারি কোষাগার লুট করবেন। ৯ আগস্ট ১৯২৫ তারিখে কাকোরীতে আসফাকউল্লা খান এবং অন্য আটজন বিসমিলের নেতৃত্বে ট্রেন লুট করেন। হতচকিত ব্রিটিশ সরকার স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডকে তদন্তে নামায়। ২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯২৫ তারিখ সকালবেলা পণ্ডিত রামপ্রসাদ বিসমিল এবং অন্যান্য বিপ্লবীদের পুলিস গ্রেপ্তার করে কিন্তু আসফাক পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে মূর্ত সহায়তার জন্য লালা হর দয়ালের সাথে সাক্ষাত করতে চেয়েছিলেন। বিদেশে গিয়ে বিপ্লবীদের জন্য অর্থ সংগ্রহের পরিকল্পনা ছিল তাঁর। তিনি কীভাবে দেশ ত্যাগ করবেন তা বের করতে দিল্লি যান, সেখানে তিনি তার একজন পাঠান বন্ধুর সহায়তা নেন এবং সেই বন্ধুটিই বিশ্বাসঘাতকতা করে পুলিশকে জানিয়ে দেয় এবং আসফাককে পুলিস গ্রেপ্তার করে। আসফাকউল্লা খানকে ফৈজাবাদ জেলে প্রেরণ করা হয়। তার বিরুদ্ধে একটি মামলা রুজু করা হয়। যা কাকোরী মামলা নামে পরিচিত। তাঁর ভাই রিয়াসাত উল্লা খান কৃপা শঙ্কর হাজেলা নামে একজন সিনিয়র উকিল নিয়োগ করেন। মি. হাজেলা শেষ পর্যন্ত মামলাটি পরিচালনা করেন কিন্তু তাঁর জীবন বাঁচাতে ব্যর্থ হন। তাঁদের শাস্তি যাতে কম সেজন্য কংগ্রেসের তরফে পন্ডিত মোতিলাল নেহেরুর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু রক্তলোলুপ ব্রিটিশ সরকারকে নিরস্ত করা যায়নি। কাকোরী মামলা চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে শেষ হয়, তাঁরা হলেন, পণ্ডিত রামপ্রসাদ বিসমিল, আসফাকউল্লা খান, রাজেন্দ্র লাহিড়ী এবং ঠাকুর রোশন সিং। বাকি ১৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে চার বছর থেকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।

১৯ ডিসেম্বর ১৯২৭ সোমবার, আসফাকউল্লা খানকে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হয়। যখন তাঁকে শিকল থেকে মুক্ত করা হয়, তিনি ফাঁসির দড়ির কাছে যান এবং সেটিকে চুমু খেয়ে বলেনঃ “আমার হাত কোনো মানুষ হত্যা করেনি। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আল্লাহ্‌ আমাকে ন্যায়বিচার দেবেন।” অবশেষে তিনি স্পষ্টভাবে কলেমা উচ্চারণ করেন “লা ইলাহা ইল্লালাহু মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ”। তাঁকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয় এবং দেশ হারায় এক বীর বিপ্লবীকে। আজ এই মহান বিপ্লবীর ১১৭তম জন্মবার্ষিকী। ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের শহীদ বিপ্লবী আসফাকউল্লাহ খান এর জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

সম্পাদনাঃ নূর মোহাম্মদ নূরু
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩৭
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×