somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নূর মোহাম্মদ নূরু
নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরের ভয়াল স্মৃতি বিজড়িত ১৫ নভেম্বর আজ

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজ ১৫ নভেম্বর ভয়াল ঘুর্ণিঝড় সিডরের দশম বার্ষিকী। ২০০৭ সালের এই দিনে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ সামুদ্রিক ঝড় সিডর আঘাত হানে বরিশাল, বরগুনাসহ দেশের উপকূলীয় এলাকায়। ২০০৭ সালের ১৪ নভেম্বর সারাদেশের আকাশ ছিল মেঘলা। আবহাওয়াবিদরা প্রথমে ৫ নম্বর সংকেত দিতে থাকেন। রাতে তা ৮নং বিপদ সংকেত গিয়ে পৌছে। ১৫ নভেম্বর সকালে ঘোষণা করা হয় সিডর নামের ঘূর্ণিঝড় ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে বাংলাদেশের উপকূলে। দুপুর নাগাদ তা বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করবে। ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত। ৫ টা নাগাদ হিরণ পয়েন্টে থাকা ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির ওয়্যারলেসের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় যোগাযোগ। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সমুদ্র থেকে উপকূলে উঠতে শুরু করে সিডর। রাত ১০ টার দিকে প্রবল বাতাসের সঙ্গে যুক্ত হল ১২-১৫ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস। অবশেষে এটি বাংলাদেশের আঘাত হানে ১৫ নভেম্বর রাত ৯টায়। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল পিরোজপুর, মংলা, বরগুনাসহ বেশকিছু অঞ্চল ঘুর্ণিঝড় সিডর আঘাত হানে। ঘণ্টায় ২৪০ কিলোমিটার বেগে সিডরের তাণ্ডবে আর ধেয়ে আসা ১২ ফুট উচু জলচ্ছাসে নিমিষেই উড়ে গেল ঘর-বাড়ি, গাছ-পালা। মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে তরতাজা সাড়ে পাঁচশত জীবন। পিরোজপুর জিয়া নহরের একটি গ্রামেই মারা যায় ৫৭জন। বঙ্গোপসাগরের সব পানি যেন যমদুত হয়ে ভাসিয়ে নিল হাজার হাজার মানুষ। মাত্র কয়েক মিনিটে লন্ড ভন্ড হয়ে গেল গোটা এলাকা। পরের দিন দেখা গেল চারদিকে শুধুই ধ্বংসলীলা। উদ্ধার করা হল লাশের পর লাশ। দাফনের জায়গা নেই, রাস্তার পাশে গণকবর করে চাপা দেওয়া হল বহু হতভাগার লাশ। স্বজন আর সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেল উপকুল এলাকার কয়েক লাখ মানুষ। সিডরের ছোবলে দক্ষিণের উপকুলীয় জেলাগুলো পরিণত হয়েছিল মৃত্যুপুরীতে। সিডরের দিন জলোচ্ছ্বাসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল বাগেরহাটের সুন্দরবন সংলগ্ন শরণখোলা উপজেলা।


সরকারি-বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী সে সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৩০ জেলার ২০০ উপজেলা। সরকারিভাবে মৃতের সংখ্যা বলা হয় ৩,৩৬৩। অপরদিকে মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার বলে জানায় রেড ক্রিসেন্ট। পাথরঘাটাসহ গোটা উপকূলের রাস্তাঘাট, ব্রিজ, ঘরবাড়ি, গৃহস্থালি, গাছপালা, হাঁসমুরগি, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা সব লণ্ডভণ্ড করে দেয় সিডর। মানুষ অসহায়ের মতো শুধু চোখ দিয়ে দেখেছে। প্রতিরোধ করার মতো কিছুই তাদের ছিল না। সময়ের আবর্তনে বছর ঘুরে আজ আবার এসেছে সেই দিন। দীর্ঘ ৭ বছর অতিবাহিত হলেও অনেকে হারানো স্বজনদের এখনও ফিরে পায়নি। অনেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেনি।


প্রতিবছর এই দিন আসলে প্রিয়জনকে হারা মা্নুষ এখনো বুক ফাটা কান্নায় ভেঙ্গে পরেন। সিডরের ক্ষত চিহ্ন বহন করে চলেছেন অনেকে। স্মৃতিচারণায় উপকূলের বাতাসে ভাসছে চাপা কান্না আর দীর্ঘশ্বাস। সিডরে নিখোঁজ হওয়া পাথরঘাটার শতাধিক জেলে এখনও ভারতের উড়িষ্যা কারাগারে আটক রয়েছে। তবে যারা সিডরের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেচে আছেন তাদের মধ্যে অনেকেই নিজেদের যোদ্ধা বলে দাবি করেন। কেননা সিডরের পর উপকুলীয় অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া আইলা ও নারগিস নামের ঘুর্ণিঝড়কে মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছেন। "প্রতিবছর উপকূলের মানুষ এই দিনটিকে সিডর দিবস হিসেবেই পালন করে থাকে। উপকূলের মানুষ চায় ১৫ নভেম্বর সরকারিভাবে সিডর দিবস পালিত হোক"। আমাদের প্রত্যাশাও তাই। ১৫ নভেম্বর পালিত হোক সিডর দিবস হিসেবে।
সম্পাদনাঃ নূর মোহাম্মদ নূরু
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×