somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনাদৃত আলোকিত বিজ্ঞানী স্যার জগদীশচন্দ্র বসুর ৮০তম মৃত্যুৃদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিনা তারে বার্তা প্রেরণ সূত্রের উদ্ভাবক স্যার জগদীশচন্দ্র বসু একজন সফল বাঙালি বিজ্ঞানী। ২০০৪ সালের এপ্রিলে বিবিসি রেডিওর জরিপে তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে সপ্তম স্থান অধিকার করেন। তার গবেষণার প্রধান দিক ছিল উদ্ভিদ ও তড়িৎ চৌম্বক। তার আবিষ্কারের মধ্যে উদ্ভিদের বৃদ্ধিমাপক যন্ত্র ক্রেস্কোগ্রাফ, উদ্ভিদের দেহের উত্তেজনার বেগ নিরুপক সমতল তরুলিপি যন্ত্র রিজোনাষ্ট রেকর্ডার অন্যতম। ১৯৩৭ সালের আজকের দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ৮০তম মৃত্যুদিনে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়।

জগদীশ চন্দ্র বসু ১৮৫৮ সালের ৩০শে নভেম্বর তারিখে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবারের প্রকৃত বাসস্থান ছিল বর্তমান বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জ জেলার অন্তর্ভুক্ত বিক্রমপুর নামক স্থানের রাঢ়িখাল গ্রামে। তার বাবা ভগবান চন্দ্র বসু তখন ফরিদপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। ইংরেজ সরকারের অধীনে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থাকা সত্ত্বেও তিনি আর সবার মত নিজের ছেলেকে ইংরেজি স্কুলে ভর্তি করাননি। জগদীশ চন্দ্রের প্রথম স্কুল ছিল ময়মনসিংহ জিলা স্কুল। বাংলা স্কুলে ভর্তি করানোর ব্যাপারে জগদীশ চন্দ্রের নিজস্ব যুক্তি ছিল। তিনি মনে করতেন ইংরেজি শেখার আগে এদেশীয় ছেলেমেয়েদের মাতৃভাষা আয়ত্ব করা উচিত। ভাষার প্রতি বিশেষ মমত্ববোধ ছাড়াও ভগবান চন্দ্র চেয়েছিলেন তার পুত্র দেশের আপামর জনসাধারণের সাথে মিলেমিশে মানুষ হোক এবং তার মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত হোক। তার এই সিদ্ধান্ত কখনও পরিবর্তিত হয়নি। বাংলা স্কুলে পড়ার ব্যাপারটি জগদীশ চন্দ্রের জীবনে যেমন গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করেছে তেমনি বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করতেও সাহায্য করেছে। এর প্রমাণ বাংলা ভাষায় রচিত জগদীশের বিজ্ঞান প্রবন্ধগুলো। ১৮৮৪ সালে তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ট্রাইপোস’ পাশ করেন। দেশে ফিরেই জগদীশচন্দ্র কলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। কলেজে অধ্যাপনার ফাঁকে ফাঁকেই বিজ্ঞানের মৌলিক গবেষণায় মনোনিবেশ করেন। বিদ্যুৎ এবং আকাশ তরঙ্গ সম্বন্ধে গবেষণা করে তিনি অনেক নতুন তথ্য আবিষ্কার করেন। এসময় লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ‘ডক্টর অফ সায়েন্স’ উপাধিতে ভূষিত করেন। একই সময় তিনি বেতার যন্ত্রের উদ্ভাবন করেন। এরপর তিনি পদার্থ বিদ্যা ছেড়ে মনোনিবেশ করেন উদ্ভিদ বিজ্ঞানের প্রতি। তিনি প্রমান করেন উদ্ভিদ জড় পদার্থ নয়, এরও প্রাণ আছে।

জগদীশচন্দ্রবসু গাছের প্রাণ এবং মার্কনির আগেই রেডিও আবিষ্কার করেছিলেন বলে বাঙালি মহলে একটি ধারণা প্রচলিত আছে। প্রথম ধারণাটি একেবারেই ভুল। গাছের প্রাণ সম্পর্কে অনেক প্রাচীনকাল থেকেই পণ্ডিতেরা সম্পূর্ণ নিঃসংশয় ছিলেন। জগদীশ চন্দ্র কেবল প্রচুর পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করেছিলেন যে, উদ্ভিদ এ প্রাণী জীবনের মধ্যে অনেক সাদৃশ্য রয়েছে; এক কথায় উদ্ভিদজীবন প্রাণীজীবনের ছায়া মাত্র। দ্বিতীয় ধারণাটিও যে অর্থ বলা হয় সে অর্থে সঠিক নয়। মার্কনি আধুনিক ছোট বা শর্ট তরঙ্গ মাপের বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে দূরে বেতার সংকেত পাঠাতে সফল হয়েছিলেন যার ফলশ্রুতি হল রেডিও। কিন্তু জগদীশ চন্দ্র কাজ করেছিলেন অতিক্ষুদ্র তথা মাওক্রো বেতার তরঙ্গ নিয়ে যার প্রয়োগ ঘটেছে আধুনিক টেলিভিশন এবং রাডার যোগাযোগের ক্ষেত্রে।

বিজ্ঞানাচার্য তাঁর ৫৯তম জন্মদিবসে সারা জীবনের সঞ্চিত অর্থ দিয়ে কলকাতায় প্রতিষ্ঠা করেন বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’। ১৯২০ সালে তিনি রয়্যাল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন। তিনি বিজ্ঞান গবেষণায়ও প্রভূত সাফল্য অর্জন করেছিলেন যার জন্য তার সুখ্যাতি তখনই ছড়িয়ে পড়েছিল। বাঙালিরাও বিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে নিউটন-আইনস্টাইনের চেয়ে কম যায়না তিনি তা প্রমাণ করেন। জগদীশচন্দ্র যে গ্যালিলিও-নিউটনের সমকক্ষ বিজ্ঞানী তার স্বীকৃতি দিয়েছিল লন্ডনের ডেইলি এক্সপ্রেস পত্রিকা, ১৯২৭ সালে। আর আইনস্টাইন তার সম্পর্কে নিজেই বলেছেনঃ
“ জগদীশচন্দ্র যেসব অমূল্য তথ্য পৃথিবীকে উপহার দিয়েছেন তার যে কোনটির জন্য বিজয়স্তম্ভ স্থাপন করা উচিত "। বিজ্ঞান চর্চায় অসামান্য অবদানের জন্য স্যার জগদীশচন্দ্র ১৯১৬ সালে নাইটহুড, ১৯২০ সালে রয়েল সোসাইটির ফেলো, ১৯২৭ সালে ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেস-এর ১৪তম অধিবেশনের সভাপতি, ১৯২৮ সালে ভিয়েনা একাডেমি অফ সাইন্স-এর সদস্য, লিগ অফ ন্যাশন্‌স কমিটি ফর ইনটেলেকচুয়াল কো-অপারেশন -এর সদস্য এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ সাইন্সেস অফ ইন্ডিয়া-এর প্রতিষাঠাতা ফেলো সম্মাননায় ভূষিত হন। ১৯৩৭ সালের ২৩ নভেম্বর আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর কর্মময় জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। তাঁর চিতাভস্ম ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’ সংলগ্ন সর্বজনীন মন্দিরে সমাহিত করা হয়। আজ তাঁর ৮০তম মৃত্যুদিনে তাঁকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায় ।

সম্পাদনাঃ নূর মোহাম্মদ নূরু
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:০৯
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×