somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেতা ও চলচ্চিত্র প্রযোজক মান্নার ৯ম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এস এম আসলাম তালুকদার যিনি মান্না হয়ে বিরাজ করছেন লক্ষ কোটি সিনেমা দর্শকের হৃদয়ে। বিশ বছরের চলচ্চিত্র জীবনে তিনি একশর বেশী পরিচালক এবং ষাট এর বেশী নায়িকার সাথে এবং চারশ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। ৮০র দশকে সুনেত্রা, নিপা মোনালিসা থেকে শুরু করে চম্পা, দিতি, রোজিনা, নতুন, অরুনা বিশ্বাস, কবিতা এর মতো সিনিয়র নায়িকাদের সঙ্গে অভিনয় করে যেমন সফল হয়েছিলেন তেমনি মৌসুমি, শাবনুর, পূর্ণিমা, মুনমুন, সাথী, স্বাগতা, শিল্পী, লিমা সহ এই দশকের নায়িকাদের সঙ্গে সফল হয়েছিলেন। ঢাকাই ছবির মহা নায়ক খ্যাত নায়ক মান্না নায়ক হয়েও সবচেয়ে বেশি গুন্ডার অভিনয় করেছেন। সবচেয়ে বেশি পুলিশের অভিনয়টাও তার ঝুলিতে। এছাড়া নায়ক মান্না গুন্ডামি এবং প্রেম সমানতালে চালিয়ে গেছেন। বিরল রেকর্ডের অধিকারী এই অভিনেতা মাত্র একচল্লিশ বছর বয়সে ২০০৮ সালের আজকের দিনে অসংখ্য ভক্তকে কাঁদিয়ে চির বিদায় নেন। আজ তার ৯ম মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুদিনে কিংবদন্তি এই নায়ককে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়।


মান্না, প্রকৃত নাম এস এম আসলাম তালুকদার ১৯৬৪ সালের ৬ ডিসেম্বর টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গায় জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকে সিনেমার প্রতি তাঁর ছিল প্রচণ্ড ঝোঁক। কলেজে পড়ার সময় প্রচুর সিনেমা দেখতেন। স্বপ্ন দেখতেন তিনিও একদিন অভিনয় করবেন। মান্না বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান এফডিসি আয়োজিত নতুন মুখের সন্ধানে কার্যক্রমের মাধ্যমে। মান্না অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্রের নাম নাম তওবা, কিন্তু প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রের নাম পাগলী। ১৯৯১ সালে মোস্তফা আনোয়ার পরিচালিত কাশেম মালার প্রেম চলচ্চিত্রে মান্না প্রথম একক নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন। এর আগে অভিনীত চলচ্চিত্রগুলোতে তিনি সহনায়ক হিসেবে অভিনয় করলেও চলচ্চিত্রগুলো ব্যবসা সফল ছিল। কাশেম মালার প্রেম ব্যবসা সাফল্য অর্জন করায় তার পক্ষে নায়ক হিসেবে পরের ছবিগুলোতে কাজ করা সহজ হয়ে যায়। কাজী হায়াৎ পরিচালিত দাঙ্গা, ত্রাস প্রভৃতি চলচ্চিত্রে অভিনয় করার মাধ্যমে অ্যাকশন হিরো হিসেবে মান্নার গ্রহনযোগ্যতা তৈরী হয়। দুঃখী, দরিদ্র মানুষের বন্ধু-প্রতিবাদী চরিত্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন মান্না। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি চলচ্চিত্র-বিষয়ক নানা কর্মকাণ্ডেও মান্নার ছিল অগ্রণী ভূমিকা। নব্বই দশকে অশ্লীল চলচ্চিত্র নির্মাণের ধারা শুরু হলে যে কজন প্রথমেই এর প্রতিবাদ করেছিলেন,তাদের মধ্যে নায়ক মান্না ছিলেন অন্যতম। সে সময় একমাত্র নায়ক মান্নার ছবিগুলোই ছিল প্রযোজক ও পরিচালকদের আশার আলো, ব্যবসায় টিকে থাকার সাহস। তিনি রীতিমতো যুদ্ধ করেছেন অশ্লীল চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে। এসব চলচ্চিত্রের নির্মাতাদের সঙ্গে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়েছিলেন। বাংলা চলচ্চিত্রের অন্ধকার কাটতে থাকে তাঁর দৃঢ় ভূমিকার কারণে। মৃত্যুর পূর্বপর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং মান্না একাই লড়ে গেছেন অশ্লীলতার বিরুদ্ধে । মান্না দাঙ্গা, লুটতরাজ, তেজী, আম্মাজান, আব্বাজান প্রভৃতি চলচ্চিত্রে চমৎকার অভিনয় এর মাধ্যমে জনপ্রিয়তার চূড়া ছুঁয়েছিলেন মান্না। তাঁর অভিনীত আম্মাজান চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশের সর্বাধিক ব্যবসাসফল ও জনপ্রিয় চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। ২০০৬ সালে "সেরা অভিনেতা" হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার লাভ করেন। মান্না শুধু চলচ্চিত্র অভিনেতাই ছিলেন না, তাঁর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে যতগুলো ছবি প্রযোজনা করেছেন, প্রতিটি ছবি ব্যবসাসফল হয়েছিল। ছবিগুলো হচ্ছে লুটতরাজ, লাল বাদশা, আব্বাজান, স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধ, দুই বধূ এক স্বামী, মনের সাথে যুদ্ধ, মান্না ভাই ও পিতা মাতার আমানত। বাংলাদেশের বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে তাঁর নাম স্মরণীয় হয়ে থাকবে। অভিনয়, সংলাপ বলার ধরন দিয়ে নিজস্ব একটা স্টাইল দাঁড় করিয়েছিলেন তিনি। তাঁর অভিনীত এমন কিছু ছবি আছে যার জন্য তিনি চিরদিনের জন্য দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। একটা সময় ছিল, যখন ছবিতে শুধু মান্না আছেন‍- এ কারণেই দর্শক হলে ছুটে গেছেন, তাঁর কারণেই ছবি ব্যবসাসফল হয়েছে। এমনও বছর গিয়েছে যেখানে সেরা ১০ টি ব্যবসা সফল ছবির নাম খুঁজলে দেখা যেতো সবগুলোই মান্নার ছবি। মান্না যে ছবিতে দুর্দান্ত, সেই ছবির কাহিনি যত গতানুগতিকই হোক না কেন, সেই ছবি ব্যবসা করবেই তাতে কোনো সন্দেহ নেই। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটনির্ভর ছবিতেও মান্না ছিলেন অনবদ্য।


জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা অবস্থায় ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৪৪ বছর বয়সে হঠাৎ মৃত্যুবরণ করেন মান্না। টাঙ্গাইল জেলায় অবস্থিত তার নিজ গ্রাম এলেঙ্গায় তাঁকে সমাহিত করা হয়। চিকিৎসকদের অবহেলার কারণে মৃত্যু হয়েছে, এমন অভিযোগে মান্নার স্ত্রী মামলা করেছিলেন, কিন্তু সময়ের ব্যবধানে সেই মামলাও চাপা পড়ে গিয়েছে, কোন সুরাহা হয় নি। জগতে কিছু মানুষ থাকেন, মৃত্যুর পর তাঁরা যেন সবার হৃদয়ে আরও বেশি ভালোবাসায় জড়িয়ে থাকেন। তাঁদের কোনো মৃত্যু হয় না। মানুষের মনে চিরকাল অমর হয়েই থাকেন তাঁরা। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে তেমনই একজন অভিনেতা মান্না। কিংবদন্তি এই অভিনেতার আজ তার ৯ম মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুদিনে তাঁকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়।

সম্পাদনাঃ নূর মোহাম্মদ নূরু
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৭
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×