যে দেশে বা ভাষায় নবী রাছুল নেই কুরআন মতে সে দেশে বা ভাষাভাষীদের শাস্তিও নেই। নবী রাছুল প্রেরণ ব্যতিরেকে কাউকেই শাস্তির আওতায় আনবেন না মর্মে আল্লাহ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ- “...কোন রাছুল না পাঠানো পর্যন্ত আমি কাউকেই শাস্তি দেই না ” (১৭:১৫)। এ প্রেক্ষিতে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আল্লাহ বাংলাদেশে যদি কোন নবী রাছুল না পাঠিয়ে থাকে তবে কোন বাঙ্গালীকে শাস্তির আওতায় আনতে পারবেন না। তাছাড়া কুরআনে আরবীয় নবী মুহাম্মদের নবুয়তী কর্মকাণ্ডের পরিসর সুস্পষ্ট বলা আছে। তাঁর দায়িত্ব ছিল কেবলই মক্কা ও আশে-পাশের আরব জনগণের কাছে বার্তা প্রচার করা:
অকাজা-লিকা আউহাইনা...। [৪২: শুরা-৭] অর্থ: এভাবেই আমি তোমার নিকট আরবি ভাষায় কোরান নাজিল করেছি,যাতে তুমি মক্কা ও তার আশ-পাশে যারা রয়েছে (আরব ভাষা-ভাষীদের) তাদেরকে সতর্ক করতে পারো।
এ কোরআন এমন গ্রন্থ, যা আমি অবতীর্ন করেছি; বরকতময়, পূর্ববর্তী গ্রন্থের সত্যতা প্রমাণকারী এবং যাতে আপনি মক্কাবাসী ও পাশ্ববর্তীদেরকে ভয় প্রদর্শন করেন। যারা পরকালে বিশ্বাস স্থাপন করে তারা এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তার স্বীয় নামায সংরক্ষণ করে (৬:৯২)।
অনারব জাতিসমূহ আরবী কুরআন পরিস্কারভাবে বুঝবে না। আরবদের কাছে অনারবী কুরআন যেমন অপ্রত্যাশিত তেমনি অনারবীদের কাছেও আরবী কুরআন অস্পষ্ট এবং লোকজনের প্রশ্ন করাটা স্বাভাবিক যে এর বাক্যগুলো আমাদের কাছে বোধগম্য করে পাঠানো হয়নি কেন? কী আশ্চর্য! দেশী রাছুল অথচ বিদেশী ভাষায় অহি!
অলাউ...আরাবিয়্যু। [৪১: হা মিম সাজদাহ-৪৪ ] অর্থ: আমি যদি এই কুরআনকে বিদেশি ভাষায় নাজিল করতাম তবে তারা অবশ্যই বলতো, ‘এর বাক্যগুলো আমাদের বোধগম্য করে পাঠানো হয়নি কেন? কী আশ্চর্য! আরব দেশি রাছুল আর বিদেশি ভাষায় অহি!
আরবী ভাষাভাষীগণের জন্য যেমন বাংলা ভাষা বুঝা কঠিন হবে তেমনি বাংলা ভাষাভাষীদের জন্যও আরবী ভাষার কুরআন-ঐশী শ্লোক পরিস্কারভাবে বুঝা সম্ভব নয় বিধায় কাউকেই দোষী সাব্যস্ত করা যায় না। কেননা যে বিষয়ে যার পরিস্কার জ্ঞান বা বুঝ নেই সে বিষয়ে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা সঙ্গত বা আইনসম্মত নয়। নবী রাছুলের মাধ্যমে ঐশী শ্লোক প্রেরণ না করে আল্লাহ কখনই কোন দেশে বা জনপথে শাস্তি দিবেন না:
আপনার পালনকর্তা জনপদসমূহকে ধ্বংস করেন না, যে পর্যন্ত তার কেন্দ্রস্থলে রাছুল প্রেরণ না করেন, যিনি তাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ পাঠ করেন এবং আমি জনপদসমূহকে তখনই ধ্বংস করি, যখন তার বাসিন্দারা জুলুম করে (২৮: ৫৯)।
কোন নির্দেশ পালন করার আগে জরুরী যে বিষয় তা হচ্ছে নির্দেশটি পরিস্কারভাবে বুঝা। বুঝার মাধ্যম হচ্ছে ভাষা। আর পরিস্কারভাবে বুঝার জন্য সবচেয়ে উপযোগী ভাষা হচ্ছে নিজ নিজ ভাষা। এজন্যই প্রত্যেক নবী রাছুলের নিজের জাতীয় ভাষাতেই আল্লাহর বাণী পাঠানো হয়, যেন নবী রাছুলগণ তাদের জাতির নিকট পরিস্কারভাবে বুঝিয়ে দিতে পারে।
অমা-আরছালনা...হাকীম। [১৪: ইব্রাহীম-৪] অর্থ: আমি প্রত্যেক রাছুলকেই তার নিজের জাতীয় ভাষাতেই অহি পাঠিয়েছি, যেন তাদের নিকট তা পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দিতে পারে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিভ্রান্ত করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন এবং তিনি পরাক্রমশালী ও বিজ্ঞানময়।
অতএব কুরআন মতে স্পষ্ট যে, বাঙ্গালী জাতিকেও আল্লাহ শাস্তি প্রদান করতে চাইলে বাঙ্গালী নবী রাছুল প্রেরণ করবেন। তাই বাঙ্গালী হিসেবে দাবী যে, বাঙ্গালীদের আল্লাহ প্রদত্ত শাস্তির ভয় দেখানোর আগে বাঙ্গালী নবী রাছুলগণের পরিচয় প্রকাশ এবং তাঁদের সাথে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা। কৃতজ্ঞতা:http://humanrelreformation.org/