somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: কাক পক্ষীর ভালোবাসা।

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




কাকের ভালোবাসা:
জানালার পাশেই রাখা থাকে শুকনো ঘাস পাতাটা। প্রথমে চোখ গেলেও মন দেওয়া হয়নি। ব্যাপারটা প্রায় প্রতিদিন ঘটছে। ঠিক বুঝতে পারলাম না। প্রতিদিনই ভ্রুক্ষেপ না করে ঘাসপাতাটা ফেলে দেই। তারপর একদিন ভাবলাম হয়তো বাবুই কিংবা চড়ুই পাখি রেখে গিয়েছে। ছয় তলা ভবনের এই ফ্লাটে উঠার পর ভেবে ছিলাম বিড়াল আর পাখিদের বিরক্তি থাকবে না। মনে মনে একটু খুশি হয়ে ছিলাম। কিন্তু রান্না করতে গেলে দেখা যায় প্রায়ই কিছু কাক পাশের ভবনের ছাদ থেকে এইদিকে তাকিয়ে কা কা করতে থাকে।মনেহয় কোন কোন বখাটে ছেলের দল আমার রান্না নিয়ে তামাসা করছে। দুই একটা কাক আবার খাবার খাওয়ার জন্য এক ঝলকে আমার রান্না ঘরের গ্রিলে এসে বসে আবার উড়ে যায়। তাদের অভদ্র উৎপাতে প্রথম প্রথম ভীষন বিরক্ত লাগছিল।

কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যে অদ্ভুত একটা মায়া কাজ করতে লাগলো ।সে মায়াটা একটু একটু জাগতে থাকে মনের কোথাও। এক মুঠো খাবারের জন্য পাখিকূলের কি নিদারুন চাহনি। তাদের প্রয়োজনটা আমাদের বুঝানোর কতো যে প্রচেষ্টা। আমার ভিতরের মানবিকবোধের উদারতায় আমি আরও একটু সচেতন হয়ে উঠি। তাই একটু খাবার আমি গ্রিলের কাছেই একটা বাটিতে রেখে দেই। কখনও কখনও দুই একটা কাক গ্রিলে পা রেখে ভিতরে মুখ দিয়ে খাবার খেয়ে নেয়। আর প্রতিদিনই সকালে যে শুকনো ঘাস পাতাটা ওদের কেউ রেখে যায়।বাস্তবে আমি পাখিকূলের এই অভিনব ভালোবাসার বহি:প্রকাশ দেখে বিমুগ্ধ হলাম।আমার এই পাথর দেয়ালের নাগরিক জীবনের নি:সঙগতা হারাতে শুরু করে।মানব সমাজের পাওয়া না পাওয়ার অস্থিরতা আর যাপিত জীবনের জটিলতা আমার কাছে থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। আমার মন কিছুটা ওদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠে।মনের দরজা জানালাগুলো যেন ওদের জন্যই উন্মুক্ত রেখে দেই। প্রাপ্তি আকাংক্ষা হীন এই সম্পর্ক শুধু ওরা আর আমিই বুঝি। ওদের সবাইকে এক সাথে চিনে রাখা ভীষন কঠিন। আমি বুঝি ওরা আমাকে ওদের মতো করে চিনে।

বাইরের রিমঝিম বৃষ্টিজলে ভিজে ওদের কেউ না কেউ আমার বারান্দায় এসে বসবে। তারপরে কিছুক্ষন মাথা নিচু করে পাখা দুটো নিজের মধ্যে গুটিশুটি করে নিজের ভিতরে উস্নতা নিবে। কিছুটা সময় যাওয়ার পর পাখা দুটোকে ঝাড়া দিবে। তারপর একটু সময় নিয়ে ঘাড় বাঁকা করে আমার দিকে বিনয় নিয়ে তাকাবে। যেন আমাদের কতো দিনের পরিচয়।একটা ভাবের বিনিময়। একটা ভাষার বহি:প্রকাশ। বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ার পর মেঘমুক্ত খোলা আকাশে পাখা উড়াল দিবে। কি শান্তির আকাশ ভ্রমন।
এইতো গেলো শান্ত বিকেলের বিদায়। যখন সন্ধ্যা হয়ে আসে। আমি ঘর গুছাতে থাকি। বাইরের বারান্দার জামা কাপড় তুলতে গিয়ে দেখি দুই একটা দূর্বা ফুল বারান্দার কার্নিশ ঘেষে পড়ে আছে। বেগুনি আর হালকা গোলাপি রঙের ফুল ওদেরই কেউ মুখে করে এনে ফেলে গেছে। বোটা ছেড়া ফুল গুলোর গায়ে বৃষ্টিজল। কি সুন্দর ভালোবাসার নরম ছোয়াঁ। আমি মুগ্ধ হই আমার জীবনের প্রতি। এই কোলাহল আর জঞ্জালে ভরা পৃথিবীর প্রতি আমার ভালোবাসা গভীর হয়। বেচেঁ থাকার প্রতি তৃষ্ণা বেড়ে যায়।মানুষতো পারেনা গভীর জ্ঞানের তকমা নিয়েও পাশের মানুষের হৃদয় ছুয়েঁ দিতে।

আমার কি সৌভাগ্য! পাখিকূলের ভালোবাসা আমার তৃষ্ণাতুর হৃদয় কে সবসময় ভরপুর রেখেছে কি অদ্ভূত মুগ্ধতায়।
সকাল বিকেল আর সন্ধ্যা। ওরাই আমার চারপাশের পরিবেশটাকে এক অদ্ভুত আনন্দময় করে রেখেছে। আমি যা খাই ওরা কেমন করে নিজেদের অংশিদার করে নিয়েছে।ওদের বিনয় আর আন্তরিকতা যেকোন মানুষকে নাড়া দিবে।
সেদিন খাবার রান্না করার পর সাদা রঙের প্লাস্টিকের চামচ ভুল করে গ্যাস বার্নারের সামনেই রেখেছিলাম। সেটা দিয়ে হালকা কাজ যেমন চিনি লবন উঠানো কিংবা যেকোন খাবারের স্বাদ চেক করা হয়। হয়তো নুডুলস রান্নার পর কিছু নুডুলস চামচে লেগেছিল। হঠাৎ নিত্যদিনের ব্যবহার করা চামচটা কোথায় গেলো। এমন করে অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার কথা নয়। সারা বাসায় মানুষ মাত্র দুজন। আরেকজনের কিচেনে ঢোকার সময় নেই।তাহলে চামচটা কে নিবে। এই সেই করে সব জায়গা খুজেঁ ও পাওয়া গেলো না।

আমি মনে মনে অবাক হলাম। কেমন একটা দ্বন্দ্ব মনের মধ্যে কাজ করছিল। জিনিসটা যতোটা গুরুত্ব পূর্ন তারচেয়ে গুরুত্ব পূর্ন হলো বাসা থেকে হারানোর বিষয়টা। একটা সময়ে আমি ভেবে ক্লান্ত হয়ে গেলাম।প্রায় এক সপ্তাহ পর। সেদিন সকালে পাশের রুম থেকে কা কা শব্দ পেলাম। আমি বুঝেছি ওদেরই কেউ হয়তো খাবার খুজঁছে। নিজের টুকটাক কাজ শেষে কিচেনে গেলাম। আমার দুচোখ বিস্ময়ে ভরে গেলো। যে খাবারের ঝুড়িটাতে ওরা শুকনা ঘাসপাতা রাখে সেটারই পাশে সাদা প্লাস্টিকের চামচটা। ওদেরই কেউ মুখে করে চামচটা নিয়ে গিয়েছিল। এতোগুলো দিন এই চামচটা দিয়ে ওরাই বা কি করেছে। আর কেমন করেই মনে রেখেছে যে আমাকে চামচটা ফেরত দিতে হবে। কাকের এই ভালোবাসাময় বিনয় আর বিশ্বাস আমায় নতুন করে পৃথিবী দেখালো।আজও পৃথিবীর পথে বিশ্বাস, বিনয় আর বন্ধুত্ব আছে। তাই হয়তো প্রানীকূলের মাঝে প্রান আছে। বন্ধুত্বে বিশ্বাস আছে। আর সম্পর্কে সুখ আছে। ধাবিত সময়ের কাছে স্বপ্ন আছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:২৪
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×