এই পোস্ট লিখতে শুরু করার পর শুধু ভাবছি, প্রথম পাতায় কি এটা দেবো, না কি দেবো না । ব্লগের অনলাইন লিস্টে যেভাবে চৈত্র মাসের খরা চলছে মনে হচ্ছে যেন রমজান শেষ হবার পর ব্লগারগণ ব্লগিং ছেড়ে দিয়েছেন । আগে দেখতাম বিকেলবেলা সত্তর আশিজনের নামের পাশে সবুজ বাতি জ্বলছে, এখন সংখ্যাটা অর্ধেকে নেমে এসেছে ।
ঈদের ছুটিতে এখনো সবাই ব্যস্ত ? নাকি ব্লগে দেবার সেই সময়টা এখন ফুটবল খেলা দেখে সবাই কাটাচ্ছেন কে জানে ।
এনিওয়ে, মূল কথায় আসি ।
এবার ছুটিতে বাড়ি যাবার পর একটা চিন্তা এলো । আমি আমাদের পুকুর ঘাটে একা বসে ভাবছিলাম, গ্রামের বাড়িটা আমাদের কি কাজে লাগে ? শুধু ঈদের ছুটিতে দুই তিনদিন থাকার জন্য গ্রামের বাড়ি আসি আর সারাবছর বাড়িটাতে ঘুঘু চরে । আমার কল্পনার মাঝে ছেদ পড়ল বাবার কারণে । বাবা এসে জানতে চাইলেন আমি একা বসে কি ভাবছি । কোন রাখঢাক না করে বাবাকে বলেই দিলাম, বাবা আমাদের এতো বড় বাড়ির কি দরকার ছিল ? আমাদের সবার জন্ম হয়েছে শহরের হাসপাতালে, সবার বিয়ে শাদি হচ্ছে শহরের কমিউনিটি সেন্টারে, খুব সম্ভবত মারাও যাবো শহরের কোন এক হাসপাতালে । এই যে টিনের চালার এতো সুন্দর বাংলো ঘর, এখানে তো আমরা বাঁচিও না মরিও না । এই বাড়িঘরের কি দরকার ছিল ?
বাবা হেসে বললেন, মরার পর কবর দিতে হবে তো এই বাড়ির পাশের গোরস্থানে । মরার পর কুলখানি করার জন্য আত্মীয় স্বজন সবাই আসবে এই বাড়িতেই, তখন কেউ কমিউনিটি সেন্টারে যাবে না ।
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম, বুঝেছি বাবা, এই বাড়ি তাহলে তোমার জন্য, মায়ের জন্য, আর ভাইয়ার জন্য । তোমরা মরে গেলে এখানেই তোমাদের কবর হবে । আপাকে তো অন্য জায়গাতে বিয়ে দিয়ে দিয়েছ । সে এই বাড়িতে মরতে আসবে না । তার কবর হবে দূরে কোথাও । আমারও একই পরিণতি হবে, তাই না বাবা । তার মানে তো এই বাড়ি ঘর মোটেই আমার নয় ।
আমার কথা শুনে বাবা একদম চুপ হয়ে গেলেন । আমার চালাক বাবা তখন হয়ত মনে মনে একটা জুতসই উত্তর খুঁজছিলেন । নীরব বিকেল বেলা আমাদের নীরবতায় আরো নীরব হয়ে গেল । যেন আমরা বাপ বেটি কবরস্থানে বসে আছি, সেরকম চমৎকার নীরব পরিবেশ ।
আমি বেশিক্ষণ থাকিনি । বাবাকে পুকুর ঘাটে একা রেখে আস্তে উঠে ঘরে চলে গেলাম । আমার বাবা হয়ত তখনো বসে উত্তর খুঁজছিলেন ।
বাবা বাকপটু লোক । আমি জানি তিনি খুব শীঘ্রই আমার এই প্রশ্নের একটা ভালো জবাব দিবেন । হয়ত আজ কালের মধ্যেই তিনি আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে কিছু একটা বলবেন । দেখি, আমার চালাক পিতাজি আমাকে কি বলে সান্ত্বনা দেন ।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:০১