somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সূর্যগ্রহণ-চন্দ্রহণের সময় কেন নামাজ আদায় করা হয়?

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমাদের দেশে যখন সূর্যগ্রহণ প্রকাশ পায় তখন আমাদের উৎসবমুখর জনতা অত্যন্ত আনন্দ আর কৌতুহল নিয়ে তা প্রত্যক্ষ করে।
এবার আসুন,আমরা জানতে চেষ্টা করি এ সময় আমাদের প্রিয় নবী(সাঃ) কি করতেন।বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থ অধ্যয়ন করলে জানা যায়,সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের সময় রাসূল(সাঃ) এর চেহারা ভয়ে বিবর্ণ হয়ে যেত।তখন তিনি সাহাবীদের নিয়ে জামাতে নামাজ পড়তেন।কান্নাকাটি করতেন।আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন।

আরবীতে সূর্যগ্রহণকে 'কুসূফ' বলা হয়।আর সূর্যগ্রহণের নামাজকে 'নামাজে কুসূফ' বলা হয়।দশম হিজরীতে যখন পবিত্র মদীনায় সূর্যগ্রহণ হয়,ঘোষণা দিয়ে লোকদেরকে নামাজের জন্য সমবেত করেছিলেন।তারপর সম্ভবত তাঁর জীবনের সর্বাদিক দীর্ঘ নামাজের জামাতের ইমামতি করেছিলেনন।সেই নামাজের কিয়াম,রুকু,সিজদাহ মোটকথা,প্রত্যেকটি রুকন সাধারণ অভ্যাসের চেয়ে অনেক দীর্ঘ ছিল।

অবিশ্বাসী বিজ্ঞানীরা প্রথমে যখন মহানবী(সাঃ) এর এ আমল সম্পর্কে জানতে পারল,তখন তারা এটা নিয়ে ব্যঙ্গ করল(নাউযুবিল্লাহ)।তারা বলল,এ সময় এটা করার কি যৌক্তিকতা আছে?সূর্যগ্রহণের সময় চন্দ্রটি পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে চলে আসে বলে সূর্যগ্রহণ হয়।ব্যাস এতটুকুই! এখানে কান্না কাটি করার কি আছে?মজার বিষয় হল,বিংশ শতাব্দীর গোড়ার যখন এ বিষয় নিয়ে গবেষণা শুরু করল,তখন মহানবী(সাঃ) এই আমলের তাৎপর্য বেরিয়ে আসল।

আধুনিক সৌর বিজ্ঞানীদের মতে, মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহ দু'টির কক্ষপথের মধ্যবলয়ে রয়েছে এস্টিরয়েড(Asteroid),মিটিওরিট(Meteorite) ও উল্কাপিন্ড প্রভৃতি ভাসমান পাথরের এক সুবিশাল বেল্ট,এগুলোকে এককথায় গ্রহানুপুঞ্জ বলা হয়।গ্রহানুপুঞ্জের এই বেল্ট(Belt) আবিষ্কৃত হয় ১৮০১ সালে।এক একটা ঝুলন্ত পাথরের ব্যাস ১২০ মাইল থেকে ৪৫০ মাইল।



বিজ্ঞানীরা আজ পাথরের এই ঝুলন্ত বেল্ট নিয়ে শঙ্কিত।কখন জানি এ বেল্ট থেকে কোন পাথর নিক্ষিপ্ত হয়ে পৃথিবীর বুকে আঘাত হানে,যা পৃথিবীর জন্য ধ্বংসের কারণ হয় কিনা?


গ্রহানুপুঞ্জের পাথর খন্ডগুলোর মাঝে সংঘর্ষের ফলে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাথরখন্ড প্রতিনিয়তই পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে।কিন্তু সেগুলো পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে এসে জ্বলে ভস্ম হয়ে যায়।



কিন্তু বৃহদাকার পাথখন্ডগুলো যদি পৃথিবীতে আঘাত করে তাহলে কি হবে?প্রায় ৬৫ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীতে এমনই একটি পাথর আঘাত হেনেছিল।এতে ডাইনোসরসহ পৃথিবীর তাবৎ উদ্ভিদ লতা গুল্ম সব ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।উত্তর আরিজন(Arizon) -এ যে উল্কাপিন্ড এসে পরেছিল তার কারণে পৃথিবীতে যে গর্ত হরেছিল তার গভীরতা ৬০০ ফুট এবং প্রস্থ ৩৮০০ ফুট।


Aerial view of Barringer Crater in Arizona


বিজ্ঞানীরা বলেন,সূর্য অথবা চন্দ্রগ্রহণের সময় ঝুলন্ত পাথরগুলো পৃথিবীতে ছুটে এসে আঘাত হানার আশংকা বেশী থাকে।কারণ হচ্ছে,এসময় সূর্য,চন্দ্র ও পৃথিবী একই সমান্তরালে,একই অক্ষ বরাবর থাকে।


position of sun,moon and earth during Solar eclipse.

position of sun,moon and earth during lunar eclipse.

আগন্তুক গ্রহাণু S-M-E লাইনের অনুকূলে স্বল্প কৌণিক মান সৃষ্টি করে ধাবমান হওয়ার সময় ত্রয়ী বিন্দু শক্তি লাইন দ্বারা বিচ্যুত হয়ে সুজাসুজি পৃথিবীর দিকে তীব্র গতিতে ছুটে আসবে। পৃথিবীর ইতিহাসে সমাপ্তি রেখা টেনে দেবার জন্য এমন একটি ঘটনা যথেষ্ট! সূর্য কিংবা চন্দ্রগ্রহণ মূলতঃ আগন্তুক জ্যোতিষ্ক কর্তৃক পৃথিবীকে আঘাত করার সম্ভাব্যতা উদ্বেগজনকভাবে বাড়িয়ে দেয়া।

ফলে তিনটির মধ্যাকর্ষণ শক্তি একত্রিত হয়ে ত্রিশক্তিতে রুপান্ত্রিত হয়।এমনি মুহূর্তে যদি কোন পাথর বেল্ট থেকে নিক্ষিপ্ত হয় তখন এই ত্রিশক্তির আকর্ষণের ফলে সেই পাথর প্রচন্ড শক্তিতে,প্রবল বেগে পৃথিবীর দিকে আসবে,এ প্রচন্ড শক্তি নিয়ে আসা পাথরটিকে প্রতিহত করা তখন পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাড়াঁবে।ফলে পৃথিবীর একমাত্র পরিণতি হবে ধ্বংস।




একজন বিবেকবান মানুষ যদি মহাশূন্যের এ তত্ব জানে,তাহলে তার শঙ্কিত হবারই কথা।এই দৃষূকোণ থেকে সূর্য কিংবা চন্দ্রগ্রহণের সময় মহানবী (সা) এর সেজদাবনত হওয়া এবং সৃষ্টিকূলের জন্য পানাহ চাওয়ার মধ্যে আমরা একটি নিখুঁত বাস্তবতার সম্পর্ক খুঁজে পাই।।মহানবী(সাঃ) এর এ আমলটি ছিল যুক্তিসঙ্গত ও একান্ত বিজ্ঞানসম্মত।আসুন,অনাগত এরকম নাজুক মুহূর্তে আমরা আনন্দ উল্লাসে মত্ত না হয়ে,স্রষ্টার কাছে স্বীয় কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা চেষ্টা করব এবং তারই দরবারে সেজদাবনত হব।আল্লাহ্‌ আমাদের তাওফিক দান করুন।
৩৪টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×