somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাবাই

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“আমার যেন পাহাড় দেখতে বেশ ভালো লাগে”, কথাটা বলে আমি ক্রিশ্চিয়ানার দিকে তাকাই। ও তখন মনোযোগ দিয়ে তার ধরা মাছগুলো গুনছিলো। ক্রিশ্চিয়ানাকে আমি সংক্ষেপে ক্রিশি বলে ডাকি। ক্রিশি আমি মিনেসোটার যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পি.এইচ.ডি করছি সেখানে এডমিশন অফিসার। তার কোন স্বামী সন্তান অথবা এডপ্টেড চাইল্ড নেই এবং সে অত্যন্ত রুপবতী। কিন্তু আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর প্রতি প্রেম প্রেম ভাব আনতে পারিনি। ক্রিশিও আমাকে পছন্দ করে খুব একটা তা মনে হয়না। আমরা দুজন ভালো বন্ধু, তাই এই উইকেন্ডে আমরা একসাথে আমাদের এলাকার একটি ফিশ পার্কে এসেছি মাছ ধরতে। ফিশ পার্কের মালিক একজন ইতালিয়ান, কিন্তু ইংরেজী বেশ চোস্ত বলে। কিন্তু সে অত্যন্ত কৃপণ এবং টাকার হিসাব বেশ ভালো বুঝে।

ক্রিশি অনেকক্ষণ পর আমার দিকে তাকিয়ে বললো, “অন্তু(আসলে সে আমার নামের উচ্চারণ করে আন্টু) তুমি একজন বেহায়া অকর্মণ্য মানব এটা কি জানো?”
আমি মাথা নেড়ে বলি, “মাছ ধরতে আমার ভালো লাগেনা, তুমি আমাকে জেকে রাউলিং এর বাচ্চাদের জন্য লেখা একটা বই ধরিয়ে দাও। আমি নাহয় সেটাই পড়বো, কিন্তু ফিশিং ইজ নট মাই কাপ অফ টি”।
ক্রিশি মাথা নেড়ে বলল, “কিন্তু তুমি আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? আমি মনোযোগ দিতে পারছিনা। তুমি আমাকে লজ্জা দিচ্ছো”।
আমি হেসে বললাম, “আমি তোমার দিকে তাকালে লজ্জা পাবার কি আছে। তুমি পুরা আমেরিকায় সবচেয়ে সুন্দরী যদিও একটু বেশি বকবক করো, তোমার দিকে কি আমি তাকাতে পারিনা”?
ক্রিশি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, “আমি একটা খুব খারাপ কাজ করবো এখন। কিছু মনে করোনা”।
ওর কথা শেষ হওয়ার আগে খেয়াল করলাম আমি পানিতে পড়ে গেছি। সে সমানে চিৎকার করে আমাকে আজেবাজে গালাগালি করে বলছে, “আমি অনেক বকবক করি তো এখন ঠান্ডা পানিতে মাছের সাথে বকবক করো”।
আমি ওর দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমাকে নৌকায় উঠতে সাহায্য করার জন্য বললাম। কিন্তু সে আমার দিকে এমন কৌতুকভরা চাহনী দিলো মনে হলো যেন বলছে, “হালার পো মুড়ি খা”।
হালার পো থেকে একটা তত্ত্বকথা পাঠকের সাথে শেয়ার করার ইচ্ছা হলো। মেয়েদের হালা বা শালা কোনটাই থাকতে পারেনা। এই জন্য তারা যে কতটা দুর্ভাগ্যবান তারা নিজেও জানেনা। দেবর ননদ দিয়ে শালার অভাব পূরণ করা যায়না। আমার পরলোকগত স্ত্রী সুজানার দুই ভাই ছিলো। বিয়ের আগে আমি এদেরকে অপছন্দ করতাম প্রচন্ড মাত্রায়। আমার বিয়ের রাতের ঘটনাটাই একটু শেয়ার করি নাহয় পাঠকের সাথে।

সেই রাতে আমি ভয়ে ঘামতে ঘামতে যখন সুজানার পাশে বসলাম তখন ও খুব বিরক্ত হয়ে আমার দিকে তাকালো। আমি বললাম, “সুজানা এক গ্লাস পানি খাবো”।
সুজানা আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টি দিয়ে বললো, “যাও বাহিরে চাপকল আছে একটা, ওখান থেকে নিয়ে নাও”।তার রাগার কিছু উপযুক্ত কারণ ছিলো। আমি বিয়ের রাতে তাকে নীল পদ্ম দেবো বলে কথা দিয়েছিলাম। কিন্তু ওইটা তো ভাব ধরে প্রেম করার সময় বলেছিলাম, সিরিয়াসলি বলিনাই। নীল পদ্ম এই দেশে কোন হালায় জন্মাতে দেখছে আমার জানা নেই। পাঠক জানলে আমাকে লোকেশনটা একটু জানাবেন।
আমি হাসিমুখে বললাম, “ইয়ে মানে এখন রুম থেকে বের হতে কেমন লাগবে! তোমার ভাইরা তো আমার খুব বিচ্ছু প্রকৃতির, ওরা যদি কোন ফাজলামি করে”।
সুজানা আমার দিকে আরো কঠিনভাবে তাকিয়ে বললো, “একটা ভাই কলেজে পড়ে, আরেকটা পড়ে ক্লাস টেনে। তাদেরকে এতো ভয় পাও লজ্জা করেনা?”
আমি ইতস্তত করে রুম থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে বের হলাম। আমার আসলে শুধু যে পানি পিপাসা পেয়েছিলো তা না। আমার খুব বাথরুম ধরেছিলো, তাও আবার ১ নাম্বার। বিয়ের রাতে এরকম যাতা অবস্থা আগে কখনো কারো হয়েছে বলে মনে হয়না। আমি বাহিরে যেয়ে দেখি আমার শালারা দুইজন দুই হাতে লাঠি নিয়ে বসে আছে। আমি হাসিমুখে ওদের কাছে যেয়ে বললাম, “কেমন আছো তোমরা?”
অনিন্দ্য যেটা ছোট ওটা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, “ভাইয়া আপনি কি বাথরুমে যাবেন?”
আমি মাথা নেড়ে বললাম, “আরে না। আমি একটু বাতাস খেতে আসছি। ভেতরে কারেন্ট নাই। গরম লাগে তো”।
অনিন্দ্য হেসে বললো, “পাহাড়ি এলাকায় এই সময় তো আসলে বিদ্যুৎ পাবেন না।পানি খাবেন ভাইয়া?”
আমি হেসে বললাম, “তা একগ্লাস দিতে পারো”।
আমি খুব ভয়ে ভয়ে ছিলাম। এর আগেরবার ওরা আমাকে পানি দেয়ার সময় পানির গ্লাসে ছোট ছোট তেলাপোকা ছেড়ে দিয়েছিলো। যতবার আমি সুজানার সাথে দেখা করতে আসতাম ওরা আমার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে পাহাড়ি ভাষায় বিড়বিড় করতো। প্রথম যেদিন সুজানা পরিচয় করিয়ে দিলো ওদের সাথে সেদিন অনিন্দ্য আর কৌশল দুজনই আমাকে একা ডেকে বিশাল থ্রেট দিয়েছিলো। ওরা বলেছিলো ওদের বোন সামনে ছিলো বলে কিছু বলেনি। আরেকবার ওর বোনের সাথে দেখলে টেংরী ভেঙ্গে দিবে।

যাই হোক সেই বিব্রতকর বাসর রাতে বাথরুমের ভয়ংকর বেগ নিয়ে আমি যখন এক গ্লাস পানি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম তখন হঠাৎ মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো। আমি পানি মুখে দিয়ে বললাম, “কৌশল খুব বমি আসছে রে। তোদের বাথরুমে নিয়ে চলতো একটু বমি করে আসি। আমি ভয়ে ভয়ে ওদের দিকে তাকালাম। অনিন্দ্য বললো, আমাদের বাসার বাথরুমে পানি নেই। আমি আপনাকে প্রাকৃতিক বাথরুমে নিয়ে যাচ্ছি চলেন”।

তাদের সহযোগিতায় আমি সদ্য পাশ করা তড়িৎ প্রকৌশলী খোলা মাঠে পুকুরপাড়ে যেয়ে প্রাকৃতিক কর্ম সাড়লাম। দুই শালা আমাকে দূর থেকে মনের মাধুরী মিশিয়ে গান শুনালো। মাঝে মাঝে লাঠি দিয়ে ঠকঠক আওয়াজ করে এলাকাবাসীকে বললো, এখানে তাদের দুলাভাই টাট্টি করছে। কেউ যেন এখন না আসে। আমি মান ইজ্জত সব হারিয়ে যখন বাসর ঘরে পৌছালাম তখন সুজানা আমার জন্য বিস্কুট আর কিছু আঙ্গুর নিয়ে আসছে। আমাকে দেখে বললো, “ক্ষুধা লেগেছে?”
আমি অপমানে কান্না কান্না কন্ঠে বললাম, “নাহ!”
আমি সেই রাতে সুজানাকে আমার জীবনের সকল অদ্ভুত অদ্ভুত ইচ্ছাগুলো বললাম। আমি আমার জীবনের সব কষ্টগুলো বললাম। ও বড় বড় চোখ করে সব কথা খুব মন দিয়ে শুনলো।আমাকে বললো, “এভাবে প্রতিদিন এক গাদা কথা বলবা। আমার তোমার কথা শুনতে ভালো লাগে। আর আমি ছাড়া আর কারো সাথে এত কথা বলবে না। রাজী?”
আমি ওর হাত ধরে বললাম, “রাজী রাজী রাজী”।

সুজানার সাথে আমার বিয়ের পর আমি অনেকের থেকে অনেক কথা শুনেছি। অনেক আত্নীয় সরাসরি বললো, আমি কেমন করে উপজাতীয় একটা মেয়েকে বিয়ে করলাম?
আমি কাউকে কিছু বলতাম না। মাঝে মাঝে দেখতাম সুজানা একা একা কাদে। একদিন খুব দুঃখ করে জিজ্ঞাসা করলো,”আমি তোমাদের বাঙ্গালীদের মত দেখতে না বলে সবাই এমন অবহেলা করো কেন?”
আমার ওর চোখে পানি দেখে নিজেরই কান্না পেয়ে গেলো। আমি শক্ত করে ওর হাত ধরে বললাম, “কারণ তুমি এত্ত এত্ত স্পেশাল যে সবাই তোমাকে হিংসা করে। দেখো তো এত সুন্দর চোখ আর কারো আছে কিনা। আর এইরকম দশ বারোটা দাত আলতো করে বের করে আর কেউ এমন হাসতে পারে?”

সুজানার সাথে পরিচয়ের গল্পটা পাঠককে বলা দরকার। গল্পটা এতোটাই অবিশ্বাস্য যে পাঠক ভাবতে পারেন আমি চাপা মারছি। কিন্তু ব্যাপারটা তা না। আমি তাকে অনেক চেয়েছিলাম, এবং আমি খুব ভাগ্যবান সেটা তাকে বোঝাতে পেরেছিলাম। ২০০৪ সালের নভেম্বরের দিকে আমি ও আমার আরো কিছু বন্ধু মিলে আরেক বন্ধু অনিকের বাসায় ঘুরতে যাবো বলে ঠিক করলাম। অনিক থাকতো চিটাগাং শহরের আগ্রাবাদের দিকে। সেখানে পৌছুলাম যেদিন, তার দিন দুয়েক পরে অনিক আমাদের বলতো শাটল ট্রেনে চড়িয়ে চিটাগাং বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যাবে। শুনেছি সবুজে ঘেরা এতো সুন্দর অভ্যর্থনা আর কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া যায়না। সেখানে পৌছানোর পর মনে হলো, এ কোন সবুজ পৃথিবীতে এলাম। পাহাড় আর সবুজ বৃক্ষে ঘেরা এমন একটা জায়গায় পড়তে পারলে মন তো এমনিই উদার হয়ে যাবে।

আমার সাথে মিস সুজানা ভদ্র চাকমা এর পরিচয় ঠিক সেদিন হয়। সেদিন আকাশ জুড়ে কালো মেঘ ছিলো।কিন্তু তাকে দেখার আগে বৃষ্টি খুব আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিলো। শাটল ট্রেনের গরমে হাপাতে হাপাতে আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌছালাম তখন রহিম মামার চটপটির দোকানের সামনে ও দাঁড়িয়ে ছিলো।আমার বন্ধু অনিক টেনে গেটের ভিতর নেয়ার অনেক চেষ্টা করলো, কিন্তু আমি যেতে পারছিলাম না। আমি এক দৃষ্টিতে সুজানার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। এমন আশ্চর্য শান্ত চোখ কতকাল দেখিনি, ভাবিনি এমন করে কেউ হাসতে পারে। এটাকে কি অচ্ছুৎ যৌবনের বাধাভাঙ্গা মুগ্ধতা নাকি আজীবন কাউকে পাশে চাওয়ার আকাঙ্খা বলবো বুঝতে পারছিলাম না। আমি সুজানার দিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলাম এবং জীবনের সবচেয়ে বড় সাহসের পরিচয় দিয়ে তার সাথে কথা বললাম। একটুও ইতস্তত বোধ হয়নি, গলা কাপেনি, কুন্ঠার লেশমাত্র ছিলোনা। তার চোখে চোখ দিয়ে আমি জিজ্ঞেস করলাম, “আপনি এতো সুন্দর কেন?”
সুজানা আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকলো। এভাবে অযাচিত আক্রমণ আশা করেনি, ভাবেনি আমার মত উশকোখুশকো চুল আর ছোট ছোট চোখের কেউ এমন কতে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে পারে। সুজানার হাতে চটপটি ছিলো, সে সেইটা কাপা কাপা হাতে বেরসিক দোকানদারকে দিয়ে বললো, আমি বিকেলে টাকা দিয়ে যাবো।

এই কথা বলে ছুটে চলে যেতে চাইলো।আমি প্রায় জ্ঞান হারালাম তার কথা শুনে।স্থির করলাম তার সাথে কথা বলতে হবে। কত কথা জমে আছে সেই কবে থেকে, কাউকে বলা হয়নি। আমি ওর পিছু পিছু ছুট দিলাম। পাশে যেয়ে তার সাথে তাল মিলিয়ে হাটতে হাটতে বললাম, আস্তে হাটুন। বৃষ্টিতে রাস্তা খুব পিচ্ছিল হয়ে আছে। পড়ে গেলে আমি অনেক ব্যথা পাবো। আচ্ছা আমি যে বাংলায় কথা বলছি তা কি বুঝতে পারছেন?

সুজানা দাঁড়িয়ে গেলো। আমার দিকে ভয় ভয় চোখে তাকিয়ে বললো, “ছাগল”।
আমাকে বলা তার এই প্রথম শব্দটা কতটা রোমান্টিক ছিলো তা পাঠকের সাধ্য আছে কিনা বুঝার তা জানিনা। আমার জন্য সেই শব্দটা ছিলো পৃথিবীর সেরা শব্দচয়ন, কখনোও ভাবিনি এমন করে কেউ আমাকে ডাকতে পারে।আমার এই ভাবাভাবির মধ্যে সে গলা কাপিয়ে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করলো, “আমার কাছে কি চান?”
আমি সম্বিত ফিরে পেয়ে বললাম, “আমি জানতে চাই আপনি এতো সুন্দর কেন? আমি কাল রাতে ঢাকা থেকে চিটাগাং এসেছি। আজ ভেবেছিলাম আপনাদের সুন্দর বিশ্ববিদ্যালয়টা ঘুরে দেখবো, কিন্তু এখন আর কিছু দেখতে ইচ্ছা হচ্ছেনা।আমি যে সাহস করে আপনাকে এত কিছু বলছি এটা আমি নিজেও বিশ্বাস করতে পারছিনা। আমি কি আপনার সাথে আরো কথা বলতে পারি?”
সুজানা মাথা নাড়িয়ে বললো, “না পারেন না। আমি আপনাকে চিনিনা এবং এইরকম অসভ্যের মত কেউ কারো সাথে কথা বলেনা”।
আমি খুব হতাশ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম। আমার পাশে প্রীতিলতা হল এবং তার গৌরবজ্জল ইতিহাস। সেইসময় ওই স্নিগ্ধ নাম না জানা অপ্সরীকে মনে হচ্ছিলো প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। ১৯১১ সালে জন্ম নেয়া সেই বিপ্লবী নারী যিনি নিজের দেশটাকে খুব ভালোবাসতেন। ২১ বছর বয়সে স্বাজাত্যবোধের কারণে সে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিল কিন্তু আজ এত বছর পরেও তার জ্বলজ্বলে বিপ্লবী চোখের কথা কেউ ভুলতে পারেনা।
আমি প্রায় আধাঘন্টা বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। পুরোটা সময় জুড়ে উথাল পাথাল বৃষ্টি হচ্ছিলো। আমি মনে করার চেষ্টা করছিলাম কোন বাংলা ছবিতে যেন এমন একটা ভয়ংকর রোমান্টিক দৃশ্য ছিলো। আমি আসলে এতোটাই ঘোরের মাঝে ছিলাম যে এইসব আজেবাজে চিন্তা থেকে বের হতে পারছিলাম না। আমার বারবার মনে হচ্ছিলো, আরেকবার যদি ওকে দেখা যায়। আমার পাশে দিয়ে শত শত ছাত্রছাত্রী হেটে যাচ্ছিলো, কেউ কেউ আমাকে হয়তো পাগলও ভাবছিলো।আর সেই মেয়েটা ছাগল। আমাকে অবাক করে দিয়ে মেয়েটা একটু পর আমার পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছিলো। আমি আমতা আমতা করে বললাম, “প্রীতি একটু শুনবেন?”
মেয়েটা দাঁড়িয়ে আবার আমার কাছে ফিরে এলো এবং আমাকে অবাক করে দিয়ে বললো, “প্রীতি ৫০ বছর আগেই মারা গেছে। আমার নাম সুজানা, আর আপনি এখনো ছাগলের মত কাজ করছেন। একা একা এভাবে অসহায়ের মত বৃষ্টিতে ভিজছেন। আসেন আপনাকে এক কাপ চা খাওয়াই”।
আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞতায় হাত কচলাতে থাকলাম। পরবর্তী জীবনে আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, “সুজানা আমাকে সেদিন ফিরে এসে চা খাওয়ানোর মত অদ্ভুত কাজটা করলে কেন?”
প্রীতি বলেছিলো, “তুমি আমার দিকে এমন করে তাকায় ছিলা আমি নিজেও ঘাবড়ায় গেছিলাম। আমি যখন তোমাকে ধমকায় চলে যাচ্ছিলাম তুমি বাচ্চাদের মত চোখ পানি ভর্তি করে আমার দিকে তাকায় ছিলাম। খুব মায়া লাগলো, তাই আবার আসলাম। বুঝছো বোকা ছাগল?”
যাইহোক, সেদিনের পর থেকে দিন রাত আমি সুজানা চাকমার আশপাশ ঘুরঘুর করতাম। সে মাঝে মাঝেই বিরক্ত হয়ে বলতো “আমার সাথে এতো ঘেষাঘেষি করেন কেন?”
আমি ২৮ দাত বের করা ক্যাবলামার্কা হাসি দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকি। পুরো একটা সপ্তাহ আমি তার পাশে পাশে ঘুরলাম। তাকে কতবার মনে মনে বললাম, তোমাকে এতো মনে লাগে কেন? সাহস করে একটাবারো কতটা ভালো লাগে এই ক্ষুদ্র সময়ে তা বলতে পারিনি। একদিন তার আঙ্গুলে আমার আঙ্গুলের ছোয়া লাগলে আমার ভেতরটা ধক করে উঠে। মনে হচ্ছিলো এই স্পর্শটা আমার কাছে খুব পরিচিত। একটুও মনে হয়নি এমনটা হওয়ার কথা ছিলোনা। আমি সুজানার সাথে চটপটি খাই, ওদের ক্যান্টিনের পানি ডাল আর মাইক্রো সাইজ মুরগীর রান খাই, তবে সবচেয়ে বেশি ক্রাশ খাই। উঠতে বসতে চলতে ফিরতে, প্রতিটা মুহূর্তে। কখন যে আমার এক সপ্তাহ কেটে যায় আমি টেরও পাইনা। বন্ধুদের সুজানা থেকে দূরে রেখেছিলাম। কারণ আমার হারামী টাইপ বন্ধুগুলা অবশ্যই আমার কুখ্যাত কাহিনী তার কাছে অর্থসহ ব্যাখ্যা দিতে পারে।তবে শেষের দিনে একটা ফর্মাল পরিচয় হয়েই গেলো। বন্ধু অভি আমার ব্যাপারে বললো, “ভাবী ছেলে খুব সুবিধের না। এর আগে তিনটা ছ্যাকা খেয়েছে। একটু ভাবনা চিন্তা কইরেন”।
সুজানা আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বললো, “আমাকে ভাবী ডাকছে কেন? আপনি ওদের কি বলছেন?”

আমি তাড়াতাড়ি বন্ধুবান্ধব থেকে বিদায় নিয়ে এবং অভির পশ্চাতে চিপায় যেয়ে লাথি মেরে সুজানার সাথে পতেঙ্গা সী বিচে চলে গেলাম। সুজানা চুপ করে একটা বড় পাথরের উপর দাঁড়িয়ে ছিলো। সমুদ্রপারের ঢেউ ছড়ানো সমীরণে দাড়িয়ে আমি একসময় সাহস করে ওকে বললাম, “একটা কথা বলি?”
সুজানা কিছু না বলে চুপ করে মাথা নাড়লো নিচের দিকে তাকিয়ে। আমি পাচ মিনিট চুপ করে থাকলাম। বারবার চাইলেও বলতে পারছিলাম না যে আমি তাকে খুব চাই। আচ্ছা কেমন করে এমন একজনকে যাকে সাতদিন আগেও চিনতামনা তাকে পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথাটা বলা যায়?আমি একসময় তাকে বললাম, “আমার তোমাকে খুব ভালো লাগে। ভালোবাসা টাইপ আর কি! বুঝছোনা?”
সুজানা আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বললো, “ওইটাতো ছাগলের মত দাঁড়িয়ে যখন কাদো কাদো চোখে বৃষ্টিতে ভিজছিলেন তখনই জানি। আমি তো ভাবলাম আপনি বলবেন, চলো বিয়ে করি?”

আমি ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম তখন পৃথিবীর সব মুগ্ধতা ভালোবাসা, চাওয়া পাওয়ার ব্যকুলতা নিয়ে। এমন করে কেউ হাসতে পারে, কথা বলতে পারে, ভালোবাসার মানুষের কখনোও না বলা ভালোবাসাকে সম্মান জানাতে পারে - আমার মনে হয় না। ও শ্রেষ্ঠ ছিলো, আমার ভালোবাসার পরী ছিলো। চার বছর পর আমার বিয়ে করা বউ ছিলো। ঠিক এমন করে একটা ভালোবাসার জন্ম হয়েছিলো।আমার কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভালোবাসা।

বিয়ের সময় সমস্যা হয়নি তা কিন্তু না। ওর কথা জানানোর পর আমার বাবা আমার সাথে দুমাস কথা বলেননি। আমার মা দুই মিনিট। তৃতীয় মিনিটে মা আমার কাছে কানে কানে প্রশ্ন করলেন, “মেয়ের নাক কি বেশি বোচা?”
আমি মাকে ছবি দেখালে মা বললেন, “মাশাল্লাহ মেয়ে সুন্দর আছে। তোর বাবাকে নিয়ে চিন্তা করিসনা। আমি তাকে ম্যানেজ করে ফেলবো। একমাত্র ছেলের পছন্দ, ফেলে দিতে পারবেনা”।

সুজানার বাসায় সবাই ওকে বেশ বকাঝকা করেছে বলেই মনে হয়। কিন্তু আমি যেদিন প্রথম ওদের বাসায় গেলাম সবাই আমাকে খুব খাতির করলো আমার বিচ্ছু শালাদ্বয় ব্যতীত। ওর মা একটা কলেজে পরাতেন, ওর বাবা ছিলেন সরকারী কর্মকর্তা। আমার সাথে হাত মিলিয়ে ওর বাবা খুব স্বাভাবিক প্রশ্ন করলেন কিছু। সবশেষে বললেন, “বাবা তোমার বাসায় যদি আপত্তি থাকে তাহলে আমি অনুরোধ করবো তোমরা আর এগিয়োনা। আমার মেয়েটাকে আমি অনেক যতনে মানুষ করেছি। ওকে ভালো মানুষ বানিয়েছি, আমি খুব চাই ও আরো পড়াশোনা করুক, আমার মত সরকারী চাকরী করুক। কিন্তু সব থেকে বেশি চাই তার জন্য একটা সুন্দর পরিবার”।

আমি মাথা নেড়ে বললাম, “আঙ্কেল পরিবার বলতে আমি বুঝি ও আর আমি। আপনি নিশ্চিত থাকেন ওকে আমি সে হিসেবে সবচেয়ে সুন্দর একটা পরিবার উপহার দেবো। আর আমার মা বাবা খুব সাদাসিধে মানুষ।উনাদের শুধু একটাই দাবী, মেয়ের নাক খাড়া হতে হবে।গায়ের রঙ ফর্সা”।
আমার শ্বশুর প্রথমে বুঝেননি আমি কি বলেছি। বুঝতে পেরে ভদ্রতার মাথা খেয়ে উনি বেশ উচ্চস্বরে হেসে দিলেন। সুজানার মাকে ডেকে বললেন, “ছেলে পছন্দ হয়েছে। বিয়ের আয়োজন করো”।
আমার আত্নীয় স্বজন অনেকে ধর্ম নিয়ে সংস্কৃতি নিয়ে নানান আলোচনা সমালোচনা করেছিলো। কিন্তু আমি এসব পাত্তা দেইনি। আসলে সময় ছিলোনা। আমার সকল সময় ফুরিয়ে যায় ভালোবাসতে বাসতে, শুধু তাকে।

আমার অনেক কথা বলা বাবা দুমাস আমার সাথে যখন কথা বার্তা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলেন তখন প্রায় দিন আমি বাবার পাশে বসে খবর দেখা শুরু করলাম। বাবাকে দেশ ও জাতির অধপতন নিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে এই সেই বলতাম। একদিন বাবা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “তুই এতো কথা বলিস কেন আজকাল?”
আমি হাসিমুখে বললাম, “বাবা ইয়ে মানে একটা সংবাদ ছিলো। তোমাকে নানান ভাবে বলতে চেয়েও বলা হচ্ছিলোনা তাই ইনবিন করছিলাম”।
বাবা আবার টিভি দেখায় মনোযোগ দিলেন। মজার ব্যাপার হলো বাবা আমার সাথে কথা না বললেও সুজানার সাথে এই সেই হেন তেন নানান গল্প করেন। বেশিরভাগ চাকমা সংস্কৃতি নিয়ে। বাবার তাতে বিশাল আগ্রহ। আমি আবার মূল কথায় ফেরার আপ্রাণ চেষ্টা চালালাম। বাবাকে একসময় বললাম, “বাবা ইয়ে মানে আমিও তো বাবা হইতে যাচ্ছি”। বাবা কিছুক্ষণ কোন কথা বললেন না। টিভির দিকে তাকিয়ে থাকলেন, তারপর আমার দিকে হঠাৎ করে তাকিয়ে বললেন, “এইটা কি করছোস হারামজাদা?”
আমার মনে হয়না দুনিয়ার কোন পিতা তার সন্তানকে এত চমৎকার একটা সংবাদে এমন করে গালি দিতে পারেন। যাই হোক বাবা মাকে ডেকে বললেন, “আমার নাতি আসতেছে। এই হারামজাদা এখনও কোন চাকরী করেনা ঠিকমত। দেখো এখনও হাফ প্যান্ট পরে আছে। ওরে নিয়ে আমি করবোটা কি?”
আম্মা আগেই জানতেন। আমার বাবাকে বললেন, “ওরে কান ধরায় বারান্দায় দাড়া করায় রাখতেছি। আপনে যান বাজার করে নিয়ে আসেন। আজকে একটু ভালো খাই আমরা আসেন”।
বাবা ১১ কেজি ছানা আর আধা কেজি দই নিয়ে আসলেন। আম্মা জিজ্ঞাসা করলেন “দই এতো কম কেন?”
আব্বা বললেন, “টাকায় হয়নাই। ছানা এতো বেশি আনছি সেটা তো চোখে পড়লোনা”।

আমি আর সুজানা একজন আরেকজনকে ভালোবাসতাম।সারাদিন ভালোবাসতাম, অভিমান করতাম, ঝগড়া করতাম, তারপর আবার ভালোবাসতাম। বাবু যখন মায়ের পেটে প্রায় পাচ মাস ঠিক তখন সুজানা কেমন যেন হয়ে গেলো। একদিন রাতে হঠাৎ করে দেখি ও একা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ওর পাশে যেয়ে দাঁড়িয়ে বললাম, “ঘুম আসছেনা?”
সুজানা আমার দিকে তাকালে আমার ভেতরটা ধক করে উঠলো। ওর এমন শুকনো মুখ আমি আগে কখনো দেখিনি। ওর গালে হাত দিয়ে বললাম, “কি হয়েছে? মন খারাপ?”
সুজানা মাথা নাড়িয়ে বললো, “খুব ভয় হচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে আমি মরে যাবো। বাচ্চাটাকে আমার আর দেখা হবেনা”।
ও ওর পেটে হাত দিয়ে হঠাৎ করে কেদে ফেললো। আমি ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম, “আরে কি বলো এসব। আমি আছি না? তোমার কিছু হওয়ার আগে আমি মরে যাবো রে ভাই। আসো আমার সাথে বারান্দায় আসো। চলো আমরা একটু গল্প করি। আজকে রাতে নাহয় আর নাই ঘুমালাম”।
আমি খেয়াল করলাম বারান্দায় যেতেই সুজানার চোখ মুখ কেমন অন্ধকার হয়ে গেলো। ভয়ে ভয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে বললো, “তোমাকে একটা কথা বলা দরকার। আমি আগে বলিনি”।

আমি মাথা নেড়ে বললাম, “বলো না। তোমার সব কথা শুনবো”।
সুজানা আমার কাছে বসে আস্তে আস্তে বললো, “বাবা ২০০৫ এর দিকে রাঙ্গামাটিতে বদলী হয়েছিলেন। আমি তখন সেখানে একটা কলেজে চান্স পেয়েছিলাম। সে কলেজে আমার সাথে একটা ছেলে পড়তো। শাখাওয়াত নামের সেই ছেলেটা প্রতিদিন আমাকে একটা করে চিঠি লিখতো।প্রতিদিন একটা করে ফুল উপহার দিতো। আমার ওকে খুব ভালো লাগতো। একদিন একটা চিঠিতে লিখলো ও আমাকে খুব ভালোবাসে। আমার সাথে থাকতে চায়, বড় হলে বিয়ে করতে চায়। আমি ওকে ভয়ে তখন কিছু বলিনি, কিন্তু আমি এমনটাই চাইতাম জানো। একদিন আমিও ওকে ভালোবাসার কথা বললাম। আমরা অনেকদিন লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করতাম, একজন আরেকজনকে চিঠি দিতাম। তারপর একদিন ও আমার উপর অনেক রাগ করলো। বললো, ও আমাকে অনেক কষ্ট দিবে। সেইদিন সন্ধ্যায় জানতে পারলাম ও একটা পাহাড় থেকে পড়ে গেছে। ওর লাশ পাওয়া যায় চারদিন পর। আমি অনেকদিন মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম”।
আমি মাথা নেড়ে বললাম, “সুজানা তুমি আমাকে ছেলেটার কথা আগে বলেছো”।
সুজানা আমতা আমতা করে বললো, “আজকাল কিছু মনে থাকেনা। কিন্তু তোমাকে কি এটা বলেছি যে আজকাল তুমি যখন আমার পাশে থাকোনা তখন ও আমার পাশে বসে থাকে। এই একটু আগে তুমি যখন ঘুমিয়ে ছিলে ও আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে বলছিলো এই বাচ্চাটাকে ও মেরে ফেলবে।তোমাকেও মেরে ফেলবে। ও এখনও ঘরে আমাদের বিছানার উপর বসে আছে। আমার খুব ভয় লাগছে জানো। খুব ভয় লাগছে”।

সেদিনের পর থেকে সুজানা দিনদিন কেমন যেন বদলিয়ে যেতে থাকলো। আমার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে থাকে মাঝে মাঝে। সেই চোখে ঘৃণা থাকে, ক্রোধ থাকে-কিন্তু ভালোবাসাটা কোথায় যেন হারিয়ে যায়। আমি সুজানার জন্য অফিস থেকে প্রায় দিন আগে আগে এসে পড়ি।ওর হাত ধরে বাসার পাশের মাঠটায় হাটি। ওকে বলি , “আমি আছি তো সবসময় এই দেখো।তুমি ভয় পাচ্ছো কেন?”

সুজানার চোখ থেকে ভয় যায়না। ও ওর চুলে হাত দিয়ে আচড়াতে আচড়াতে বলে, “আমাদের বাবুটার নাম কি রাখবো? আমার কোন নাম পছন্দ হয়না”।
আমি হেসে বলি, “বাচ্চাটা দুনিয়াতে আসার পর ওকে দেখে আমরা ঠিক করবো না হয়”।
সুজানা হঠাৎ হঠাৎ করে খুব কাদে, পাগলের মত কাদে। ওর পেটে আমার হাত রেখে বলে, “বাচ্চাটা খুব ভয় পেয়েছে। ওই শয়তানটা আজকে আবার এসেছিলো তুমি যখন ঘুমিয়ে ছিলে। আমাকে এসে বলে যেদিন বাবু দুনিয়াতে আসবে সেদিন তুমি আর বাবু দুইজনকে মেরে ফেলবে”।

আমি সুজানাকে নিয়ে বেশ কয়েকজন মানসিক ডাক্তারের কাছে গেলাম। সবাই একই কথা বলে, ও মানসিকভাবে খুব বিপর্যস্ত। হয়তো সেটা প্রেগন্যান্সির জন্য।ওকে অনেকরকম ঘুমের ওষুধ দেয়া হয়। কিন্তু তাতে কোন লাভ হলোনা। ওর ডেলিভারীর সাত দিন আগে এক রাতে আমার হাত ধরে খুব কান্না শুরু করলো। আমি তখন ঘুমিয়ে ছিলাম। ধড়মড় করে উঠে বসে বললাম, “কি হয়েছে?”
সুজানা আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বললো, “তোমাকে অনেক ভালোবাসি জানো?”
আমার ওর দিকে তাকিয়ে নিজেরও খুব কান্না পেয়ে গেলো। আমি বললাম, “জানি তো। তুমি এই পৃথিবীর সব কিছু থেকে আমার আপন। তোমার কি হয়েছে বলো তো? কতদিন পর তুমি আমাকে এমন করে বললে। মনটা কি এখন ভালো?”
সুজানা আস্তে আস্তে বললো, “আমি যদি মারা যাই আমাদের বাবুটাকে তুমি আমার আদরটাও দিবা”।
আমি ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম, “তুমি আমাকে রেখে কোথাও যেয়োনা। তোমার কিছু হবে না। আমরা তিনজন খুব মজা করে দিন কাটাবো, অনেক ঘুরবো। তোমার না থিম্পুর পাহাড়ে ঘোরার ইচ্ছা খুব। আমি তোমাকে সবখানে নিয়ে যাবো”।

সুজানা আমাকে বললো, “আজকাল জানো আমি সারাদিন বাবুকে নিয়ে ভাবি। মনে হয় ও যেন আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।আমাকে তোমার মত ভালোবেসে বলে, মা তুমি আমাকে রেখে কিন্তু কোথাও যাবেনা। কিন্তু আমি জানি আমার উপায় নেই”।

সুজানা এটুকু বলে আমার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেলো। আমি সেই নির্ঘুম রাত্রির প্রতিটাক্ষণ একটাই কথা ভেবেছি, আমি এই জীবনে কি অপরাধ করলাম যে আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটা আজ এভাবে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে।

আমাদের মেয়েটা জন্ম নেয়ার পর সুজানা আমার সাথে একটাও কথা না বলে বিদায় নিয়েছিলো, জীবন থেকে পৃথিবী থেকে ভালোবাসা থেকে, এই পৃথিবীতে তার সবচেয়ে কাছের মানুষটা থেকে। আমি সারারাত হাসপাতালে ওর নির্জীব আদলের পাশে বসেছিলাম। ওর গালে হাত দিয়ে বলেছিলাম, “একটাবার শেষ নিঃশ্বাস নেয়ার আগে আমার কথা মনে করছিলা? তুমি কি আমাকে মাফ করছো? আমি তোমার কষ্ট প্রতিটাদিন দেখছি। কিচ্ছু করতে পারিনাই। তুমি প্রতিদিন না খেয়ে না ঘুমিয়ে কোনরকমে বেচে ছিলা। আমি শুধু তাকায় তাকায় দেখছি। তুমি কি আমাকে ক্ষমা করছো?আমার সবুজ পাহাড়ের রাজকন্যা তুমি কি আমার দিকে একটাবার তাকাবা?”

এরপর আমার পুরো পৃথিবী ছিলো আমার মেয়ে। আমার মেয়ের নাম আরিবা।আরিবা জন্মের পর থেকে কিচ্ছু খেতে চাইতোনা। আমার মা সারাদিন ওকে কোলে নিয়ে ঘুরতো আর আমার বাবা পিছে পিছে। মা ওকে নিজের বুকের সাথে না লাগিয়ে কখনো ঘুমাতেন না।বাবা একটু পরপর বলতেন আমার নাতিনটা ঠিকমত খেয়েছে। আমার বাবা খুব কঠিন মানুষ। কিন্তু প্রায় দিন দেখতাম উনার চোখে ফুলে আছে। মাঝে মাঝে উনি আরিবাকে বুকের সাথে লাগিয়ে চোখের পানি ফেলতেন। আমার মেয়েটা এতো দুর্বল ছিলো যে ও ঠিকমত মুখ হা করতে পারতোনা। প্রথম ছয় সাত মাস আমি কতবার যে ওকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়েছি হিসেব নাই।এখন ওর বয়স সাড়ে সাত বছর। আমার মেয়েটা যখন পাশ দিয়ে হেটে যায় তখন অদ্ভুতভাবে আমি সুজানার গন্ধ পাই।দুইবছর হলো যুক্তরাষ্ট্রে এসেছি। বাবা মা একপ্রকার জোর করে পাঠিয়ে দিয়েছেন। ইন্ধন জুগিয়েছে আমার ছোট ফুপু। উনি মিনেসোটায় আমার পাশে থাকেন। আমার মেয়েটা সারাদিন উনার সাথে কি নিয়ে যেন কুটুর কুটুর কথা বলে। আরিবার সব ঠিকঠাক, সমস্যা শুধু ওর কথা বলায়। ও মাঝে মাঝে ঠিকমত কথা বলতে পারেনা। এই সমস্যার জন্য ওকে আমার এখানে স্কুলে ভর্তি করাতে খুব সমস্যা হয়েছিলো। কিন্তু এখন আরিবা ক্লাসের ফাস্ট গার্ল, ছোট ছোট কবিতাগুলো ওর মত এতো সুন্দর করে কেও আবৃত্তি করতে পারেনা। ওর প্রিয় কবিতা কবর। এই ছোট্ট বয়সে এমন একটা কবিতা পছন্দ করার কারণ অবশ্য আমার জানা নেই।

আজ সকালে আরিবা আমার কাছে এসে বললো, “বাবাই বাবাই কালকে আমার আব্বু-আম্মু দিবস স্কুলে। তুমি যাবে?”
আমি আমার মেয়েকে কোলে নিয়ে বললাম, “অবশ্যই যাবো মা। তুমি কোন কবিতা পড়ে শোনাবে?”

আরিবা মাথা নেড়ে বললো, “না বাবাই না। আমি তো কবিতা শোনাবোনা। আমি আমার বাবা মাকে নিয়ে আমার মনের কথাগুলো বলবো। তুমি কি আমাকে লিখে দিবে?আমি তো আম্মুর কথা কিছু জানিনা”।

আমি ওর দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম। এই অল্প বয়সে মেয়েটাকে কেন এতো কষ্ট পেতে হচ্ছে আমি জানিনা।আমি এটাও ভাবছিলাম সুজানা কেমন হতো মা হিসেবে। আমি আস্তে আস্তে বললাম, “মা তুমি মায়েরা যেমন হয় ঠিক তেমন করে লিখবে।সে তোমাকে কেমন করে আদর করতো সেভাবে লিখবে। আমি তোমাকে মাঝে মাঝে রাতে তোমার আম্মুর যে গল্পগুলো বলি সেগুলোকে মনে করে ভেবে ভেবে লিখবে। আমি তোমাকে কিছুই লিখে দেবোনা। তাহলে সেটা তো আমার লিখা হয়ে যাবে। তুমি লিখবে তোমার মত।তুমি যেমন করে ভাবো ঠিক তেমন করে। ঠিক আছে মা?”

আরিবা মাথা নেড়ে টুক করে একটা হাসি দিয়ে আমাকে হাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরে বললো, “বাবাই তুমি একগাদা অলস। আজ তোমার ছুটির দিন আর বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলা তাই তুমি আমাকে সময় দেবেনা তাই না?”
আমি হতভম্ব হয়ে বললাম, “মামণি তুমি ঠিক বলছো। যখন আমাদের দেশের নাম কোথাও দেখি তখন সব কাজ ফেলে দিতে হয়। আগে দেশ, তারপর সব কিছু। ঠিক না মা?”
আরিবা আমার হাত নিয়ে খেলতে খেলতে বললো, “বাবাই আমিও আজকে খেলা দেখবো। তুমি আমাকে অরেঞ্জ জুস বানিয়ে দেবে? সোডা অল্প একটু দিও”।

আমি আরিবার Parents Day তে সেজে গুজে উপস্থিত হয়েছি। ওর ছোট্ট স্কুলের শেষ মাথায় গেটের কাছে একটা স্টেজ বানানো হয়েছে। এই স্কুলে সব মিলিয়ে ৫০০ বাচ্চা পড়ে যাদের বাবা মায়েদের বেশিরভাগ এশিয়ান। আমার সবচেয়ে বেশি পছন্দ চাইনীজদের। এরা কথা কম বলে আর খুব মূল্যবোধ নিয়ে চলে। কিন্তু ওদের প্রিয় খাবার বানরের মাথা শুনে আমি আমার মেয়েকে সাবধান করে দিয়েছি, “মা জীবনে আর যাই করো চাইনীজ কোন ছেলেকে পছন্দ করবানা। আমি আত্নহত্যা করবো”।
আরিবাকে আজকে পরীর মত সাজিয়ে দিয়েছে ছোট ফুপু। ওর গায়ে দেয়া কুইন ব্লু ড্রেসটা ওকে উপহার দিয়েছিলাম এই বছরের ঈদে। আরিবা দাবী করেছে ওর বিয়ের সময় যেন এই জামাটাই ওকে পরিয়ে দেয়া হয়। কারণ রংটা ওকে বিমোহিত করেছে ওর ভাষায়। আমি হেসে বলেছিলাম, “মা বিয়েতে তুমি তোমার মায়ের শাড়িটা পরবে না?”
আরিবা মন খারাপ করে বললো, “দুইটাই পরবো। সকালে একটা, দুপুরে একটা”।

প্রায় এগারোটা বেজে গেছে। আরিবার ক্লাসের বেশ কয়েকটা ফুটুফুটে বাচ্চা নিজেদের মা বাবার সম্পর্কে এতো সুন্দর সুন্দর কথা বললো, আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম।সেই সাথে চিন্তা করছিলাম আমার মেয়েটা কি বলে। ও নিজে থেকে এতো সুন্দর করে কি কিছু বলতে পারবে? একটু পর ও স্টেজে এলো। আরিবা আমার দিকে হাত নাড়িয়ে মাইক্রোফোনে ওয়ান টু থ্রি বলে চুপ করে সবার দিকে তাকিয়ে থাকলো। আমি দাঁড়িয়ে ওকে হাততালি দিয়ে সাহস দিলাম। সবাই আমার দিকে weird look দিলো। কিন্তু তাতে আমার কিছু যায় আসেনা। একসময় আরিবা সাহস করে ওর কথা বলা শুরু করলো যেগুলো আমার কখনো শোনা হয়নি।

“বাবাই বলে আমার বলা প্রথম শব্দ মা। এটা একটা বাংলা শব্দ এবং অন্য কোন ভাষায় এই শব্দটাকে এতো সুন্দর করে বলা যায়না। কিন্তু আমার মা অনেক আগেই পরীর দেশে চলে গেছে উড়ে উড়ে তাই আমি আমার বাবাইকে মা বলে ডাকতাম। আমি আমার মায়ের কথা বাবার গল্পে শুনেছি, কিন্তু সেগুলো আমি ঠিকমত বুঝিনা। আমার কাছে মা বলতে বাবাইকেই বুঝি। তাই আমাকে যখন বাবাই আর মার কথা বলতে বলা হবে আমি শুধু আমার বাবাইয়ের কথা বলবো। বাবাই আমাকে একগাদা ভালোবাসে, কিন্তু সে অনেক দুষ্টু। তার দুষ্টুমি দুই একটা উদাহরণ দিচ্ছি। সব বাবা মা বাচ্চাদের জন্য চকোলেট আইসক্রিম কিনে দেয়। আমার বাবাই এগুলো কিনে কিন্তু সব নিজে খেয়ে ফেলে। সেদিন আমি স্কুল শেষে বেলজিয়াম হ্যাজার্ড খেতে চেয়েছিলাম। আমার বাবাই নিজের জন্য আর আমার জন্য দুটো কিনে। কিন্তু পরে আমার থেকে কেড়ে নিয়ে অর্ধেকটা খেয়ে ফেলে। রাতে অবশ্য আমাকে এক কন্টেইনার সুইস বেরী কিনে দিয়েছিলো। যদিও পরদিন ঘুম থেকে উঠে দেখি অর্ধেক বাবাই খেয়ে ফেলেছে। আমার অবশ্য বাবাইকে খেতে দেখলে খুব মায়া হয়। বাবাই কিছু ব্যাপারে অনেক ভালো। বাবাই আমাকে কুকিং শিখিয়েছে। আমি এখন মামলেট করতে জানি, কফি বানাতে পারি। বাবাই যখন ক্রিকেট খেলা দেখে আমি বাবাইকে মাঝে মাঝে লেমন টি বানিয়ে খাওয়াই। বাবাই আমাকে রাতে প্রতিদিন ঘুম পাড়িয়ে দেয় পরীর গল্প বলে। সব গল্পে পরীর নাম আমার মায়ের নামে হয় – সুজানা। এবং সব গল্পে বাবাইকে রাক্ষস খোক্কস ধরে নিয়ে যায় আর আমার মা-পরী যেয়ে তাকে বাচায়। আমি জানিনা কেন এমন হয়।

আমার খুব কষ্ট হয় যখন বাবাইয়ের চোখে পানি দেখি। মার কথা বললেই বাবার চোখ ঘোলা ঘোলা হয়ে যায় আমি খেয়াল করেছি। তাই আমি খুব কম মায়ের কথা বাবাইকে বলি।বাবাই বাসায় এসে আমাকে চেচিয়ে চেচিয়ে ডাকে এবং যখন আমাকে দেখতে পায় তখন এতো সুন্দর করে হাসে আমার মনে হয়, বাবাই থেকে বেশি কেউ আমাকে ভালোবাসতেই পারেনা। বাবাই আমি যা চাই সব কিনে দেয়। মাস দুয়েক আগে আমি একবার খুব অসুস্থ হয়ে গেলাম। বাবাইকে বললাম, আমি মরে যাচ্ছি। আমাকে একটা নীল জুতো কিনে দাও।এটা আসলে আমার ট্রিক্স ছিলো। আমি অসুস্থ হলে বাবাইয়ের কাছে এই সেই অনেক কিছু চাই। বাবাই আমার কথা শুনে বাচ্চাদের মত কাঁদতে কাঁদতে রাত ১২টার দিকে কোত্থেকে যেন সত্যি সত্যি নীল জুতো নিয়ে এলো। আমি ঠিক করেছি বাবাইকে আর এমন কষ্ট দেবোনা।

কিন্তু আমি আমার মাকেও অনেক মনে করি। আমি শুধু তার ছবি দেখি। আমি বাবাইকে কখনো বলিনি যে প্রতিরাতে ঘুমানোর আগে আমি মায়ের একটা ছবি দেখে চুমু দেই।কারণ আমার মনে হয় মাও আমাকে বাবাইয়ের মতই ভালোবাসতো”।

আরিবা হঠাৎ কথা বলা বন্ধ করে কাঁদতে থাকলো। ও বেশি ইমোশনাল হয়ে গেলে ঠিকমত কথা বলতে পারেনা। তোতলাতে থাকে। আমার তখন চোখ ভরা পানি আমার মেয়ের গল্প শুনে। আমি দৌড়িয়ে স্টেজে উঠে আমার মেয়েকে কোলে নিয়ে বললাম, মামণি আমি আছি তো। আমি তোমার বাবাই, তোমার মাও আমি। তোমার সব কথা বলো। কিচ্ছু হবেনা। বলো।

আরিবা আর কিছু বলতে পারলোনা। ওর চোখের পানি থামাতে যেয়ে আমি নিজেও কেদে দিলাম। এতোগুলো লোকের মাঝে এটা খুব বিব্রতকর অবস্থা। কিন্তু আমার মেয়েটা কাঁদলে আমার নিজেরও কেমন যেন কান্না পায়।অনেক কষ্টে ওর কান্না থামলে ও আস্তে আস্তে মাইকের সামনে যেয়ে বলে, আমার মা আর বাবাইকে আমি অনেক ভালবাসি। তারা আমার বুকে বাস করে। বাবাই বলে বিয়ের পর আমি আর ওর সাথে থাকতে পারবোনা। আমি ঠিক করেছি তাই বিয়ে করবোনা। আমি বাবাইয়ের সাথে থাকতে চাই।আমি আর কিছু বলবোনা”

এর ১৬ বছর পর আমি যখন আরিবাকে বিয়ের জন্য নিজে মঞ্চে যেয়ে বসিয়ে দিয়ে আসি তখন আরিবা আমার দিকে তাকিয়ে বলে, “বাবাই আমি শাওনকে রাজি করিয়েছি ঘরজামাই হওয়ার জন্য। তুমি কি এই গর্দভটাকে আমার সাথে পালতে পারবে?”
আমি হেসে বললাম, “এখন তোমরা আমাকে পালবে। আমার এখন অবসর। অনেক অনেক অবসর”।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:১৪
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না পারার কষ্টটা সমালোচনার কোন বিষয়বস্তু নয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গতকালের একটি ভাইরাল খবর হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হলো না ২০ প্রার্থীর !! অনেক প্রার্থীর কান্নাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান এর নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞান বিতরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×