somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তোমাকে ভালোবাসতে

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৭ রাত ১১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


“মাঝে মাঝে তোমার সাথে খুব প্রেম করতে ইচ্ছা হয়? তোমার বোঁচা নাকের উপর ছোট ছোট চোখ দেখে মায়াই হয়।আহারে এতোগুলো বছর গেলো একটা প্রেম করতে পারলানা ঠিকমত”।

আমি ফাইযার দিকে তাকিয়ে হাসি। ওকে বলি, “ভাই ক্লাস ফালায় তোমার এতো উপকার করি কোম্পানী দিয়ে, তাও এইভাবে অপমান করতেছো কেন?”

ফাইযা হাসতে হাসতে বলে, “এইটাইতো মজা। তুমি অপমান গায়ে মাখাও না তাই তো আরো মজা লাগে।আচ্ছা কয়টা বাজে এখন? আদনান এর আসার কথা আরোও পাঁচ মিনিট আগে। এখনো ছেলেটা আসলোনা। চলো তুমি আর আমি টিকেট কেটে চলে যাই। আজকে ও একা একা এখানে দাঁড়ায় থাকুক”।

আমি ঘড়ি দেখি। আমার এখন একটা টিউশনীতে যেতে হবে। চৈত্র মাসের খটখট রোদে ১.৩ কিমি হেটে গাধা ছাত্রীকে পড়াতে যেতে ভালো লাগেনা। ছাত্রী এগারো ক্লাসের, কিন্তু আচরণ নয় ক্লাসের মত। পীথাগোরাসের সূত্র আমি আজ পর্যন্ত তাকে ঠিকমত বুঝাতে পারিনি।সমস্যা হইছে মেয়ে কথাও বলেনা। আমি ওকে কিছু পড়ানোর পর যখন জিজ্ঞাসা করি, বুঝেছো? ও না বুঝলেও মাথা নেড়ে বলে, হ্যা।

হ্যা বলার সময় আবার কেমন করে যেন তাকায়, তখন একবারে বুকের মধ্যে লাগে। ছাত্রীর নাম রুমা।থাকে আমাদের বিল্ডিংয়ের দোতলায়। আমি ওকে বিজ্ঞানের বিষয়গুলো পড়াই। মাঝে মাঝে অন্য বিষয়ও দেখাতে হয় ওর মায়ের বিশেষ অনুরোধে। আমি অবশ্য কখনো বেতন বাড়ানোর বিশেষ অনুরোধ করিনি। আমার যে খুব টাকা পয়সার দরকার ব্যাপারটা কিন্তু তা না। আমি টিউশনীটা করি একটা ক্যামেরা কেনার দরকার তাই। আমার পছন্দ নাইকন ৭ সিরিজের একটা এসএলআর, সাথে একটা পোট্রেইট লেন্স। যদিও ল্যান্ডস্কেপ বেশি ভালো লাগে, কিন্তু একজনের ছবি তোলার খুব শখ। সারাদিন মনে হয় তার ছবি তুলি। অদ্ভুত তাকেই আজো বলা হয়নি।


এসব ভাবতে ভাবতে আদনান দুই হাতে দুইটা আইসক্রিম হাতে নিয়ে চলে আসলো। আমি ফাইযার দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে বললাম, “আমি তাহলে এখন যাই। তোমরা মুভি দেখো”।

ফাইযা আমার দিকে হালকা একটা হাসি দিয়ে দৌড়িয়ে আদনানের কাছে গেলো। আমি পেছন থেকে শুনলাম ফাইযা খেচ খেচ করছে আদনানের সাথে। ঠিক এই সময়টায় যখন ফাইযা রাগ করে চোখ বড় বড় করে কথা বলে তখন আমার ওর ছবি তুলতে খুব ইচ্ছা হয়। এরপর ও জোরে জোরে মাথা নাড়িয়ে আদনানের সাথে অভিমান করে। মাঝে মাঝে ওর চুল সামনে এসে পড়ে। ও তখন ওর বাম হাতটা নিয়ে চুল সরিয়ে মাথার পেছনে আর কানের পাশে নিয়ে যায়। কি সাধারণ একটা ব্যাপার। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় এর থেকে অসাধারণ কোন ব্যাপার হতেই পারেনা। আমি প্রায় দিন এমন করেই ওকে লুকিয়ে লুকিয়ে খেয়াল করি, আর এরপর আস্তে আস্তে সব কিছু থেকে নিজেকে উধাও করে নিই। ব্যস্ত শহরে আমার ছোট্ট অস্তিত্বটা লুকিয়ে ফেলতে একটুও বেগ পেতে হয়না। কিলবিলে আঁকাবাঁকা খানাখন্দ ভরা পথে আমি আমার একরাশ দীর্ঘশ্বাস নিয়ে কোথায় হারিয়ে যাই, তার খেয়াল কে রাখে?
ভার্সিটিতে লাস্ট ইয়ারে আমি তখন। ফাইযা আমার ক্লাসমেট এবং খুব ভালো বন্ধু। আদনান আমার ব্যাচমেট, তবে ও পড়তো অন্য একটা ভার্সিটিতে। ওরা দুজন ভার্সিটির ভর্তি কোচিং এ পড়ার সময় বন্ধু হয়। পরে বন্ধুত্বটা অন্য সম্পর্কে গড়ায়। তবে কেউ কাউকে তেমন করে সম্পর্ক দিয়ে বাঁধেনি, এমনটা ফাইযা আমাকে বলতো। কিন্তু আমি বেশ বুঝতাম ওদের ভালোলাগাটা। আমি ফাইযার চোখ পড়তে পারতাম যে! সাড়ে তিন বছর ধরে ওকে চিনি এইজন্যই কি ওকে এতোটা বুঝি? নাহ তা কিন্তু না। কাউকে কাউকে কেমন করে যেন আপনি না চাইলেও ঠিক ঠিক বুঝে ফেলবেন। এই মানুষগুলো কিছু বলার আগেই আপনার মনে হবে, আচ্ছা ও কি এই কথাটাই আমাকে বলবে?

আদনানের সাথে ওকে দেখলে আমার যতটুকু খারাপ লাগা দরকার, ততটুকু আসলে লাগেনা। কি হতো যদি ও আমার ভালোবাসা হতো? ওর হাতটা ধরার অধিকার পেতাম, হয়তো ও মন খুলে ওর অনুভূতিগুলো আমাকে জানাতো। হয়তো আমি ওর আঁকা বাঁকা চুলটা মাঝে মাঝে খুব যত্ন করে ওর কানের পাশে গুজে দিতে পারতাম।কোন কোন দিন হয়তো আবদার করে ওর চোখে আমার দুটো আঙ্গুল দিয়ে ছুঁয়ে দিয়ে বলতে পারতাম ভালোবাসি। ব্যস এই তো! কিন্তু আমার ওকে পাওয়াটা খুব জরুরী না। আমি যে সপ্তাহে একটাদিন হলেও ওর পাশে রিকশায় বসে কোথাও যাই, এটা আমার ভালো লাগে।তখন আমি ওর বাচ্চাদের মত কুচমুচ করে বলা নানান গল্প শুনি। ওর দিকে লুকিয়ে লুকিয়ে তাকাতে পারি। বিশ্বাস করুন, কাউকে পেয়ে যে ভালোবাসাটা ছোঁয়া যায় তাকে না পেয়ে এমন হাজারটা ভালোবাসা শক্ত করে অনুভব করা যায়। না পাওয়া ভালোবাসাটা আমার আকাশছোঁয়া ক্যানভাস, আমি ইচ্ছামতো তাতে রঙ মাখাই। আঁকা শেষ হলে, পুরো্টা জুড়ে ওই থাকে। আর আমি অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকি।এই সুখটা পাওয়ার জন্যই কেউ কেউ ভালোবাসার কথাটা হয়তো বলতে পারেনা।

দুদিন পর হঠাৎ কি হলো ফাইযা আমাকে এসে জিজ্ঞেস করলো, “কেন যেন মনে হয় তুমি আমাকে পছন্দ করো। কতটা করো বলো তো?”
আমি তখন আবিরের ক্লাস নোট তুলে নিচ্ছিলাম। ওর দিকে না তাকিয়ে বললাম, “এইটা কি বললা ভাই? তোমার বয়ফ্রেন্ড এমনিতে আমারে পছন্দ করেনা। জীবনে একটা আইসক্রিম সাধেনাই, অথচ তোমার জন্য দুইটা করে নিয়ে আসে। এইসব শুনলে সে তো আমারে জ্যান্ত কব্বর দিবে”।
ফাইযা আমার হাত থেকে কলম নিয়ে নিলো জোর করে। আমি ওর দিকে তাকালাম। বুঝতেছিনা কি বলতে চাচ্ছে ও। ও আবার জিজ্ঞেস করলো, “ঠিক করে বলো”।
আমি মাথা নেড়ে বললাম, “তোমাকে বন্ধু হিসেবে পছন্দ করি। এই তো ব্যাস। হঠাৎ এইসব জিজ্ঞেস করছো কেন?”
ফাইযা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, তুমি মাঝে মাঝে আমার দিকে কেমন করে যেন তাকাও! মাঝে মাঝে মনে হয় তুমি খুব দূর থেকে আমার চুলে হাত রেখে আছো। এরকম একটা ফীল হয়”।
আমি হাসতে হাসতে বলি, “উরিব্বাস। সর্বনাশ করছো তো। কালকে কোন রোমান্টিক হিন্দী মুভি দেখে আসছো? আমি পরের গার্লফ্রেন্ডের চুলে হাত দিয়ে প্রেম করবো, খায়া দায়া কি কাজ নেই নাকি?”

ও মনে হয় একটু কষ্ট পেলো। আমার পাশ থেকে উঠে চলে গেলো। তারপর আবার এসে বললো, “তুমি এইভাবে অপমান করলা কেন? সবাই আমার সাথে এমন করে কেন জানিনা? আর আমাকে বারবার ওর গার্লফ্রেন্ড বলো কেন? আমাদের মধ্যে একটা কিছু আছে, কিন্তু আমরা এইসব নিয়ে কোন সিদ্ধান্তে আসিনাই, তোমাকে বলেছি না?”
আমি মাথা নেড়ে আমার কাজে মনোযোগ দিলাম। আজকে বৃষ্টি হবে আমি শিউর।ছাতা ভুলে নিয়ে আসিনাই এই চিন্তায় মেজাজ বিগড়ায় আছে। ফাইযা মাঝে মাঝেই এইসব উদ্ভট কথা বলে। আমি পাত্তা দেই না। মেয়েটার মাথায় সমস্যা আছে তা প্রথম দিন থেকেই জানি।
হঠাৎ করেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো। আমি ফাইযাকে বললাম, “তোমার তো আজকে আর ক্লাস নেই। চলো নামায় দিয়ে আসি। আমার আবার রুমাকে পড়াতে যেতে হবে”।
ফাইযা কিছু না বলে আমাকে অনুসরণ করলো।আমি রিকশায় উঠে পর্দা ঠিক করতে করতে ওকে বললাম, “তোমার কি কোন কারণে মন খারাপ?”
ফাইযা আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো খুব মন খারাপ করে।আমি ওকে বললাম, “কি হয়েছে বলো? তোমাকে এতো বিষণ্ণ তো আগে দেখেছি বলে মনে পড়ছেনা”।
ফাইযা বললো, “আদনানের সাথে আর কখনো কথা হবেনা। দেখা হবেনা, এটা ভাবতেই কেমন যেন লাগছে”।
আমি বললাম, “ঝগড়া হতেই পারে। এইজন্য এতো সিরিয়াস হওয়ার কি আছে? আজকে রাতেই দেখবা তোমাকে ফোন করবে।কাল দুই হাতে চারটা আইসক্রিম নিয়ে মুভি দেখাবে সিনেপ্লেক্সে”।
ফাইযা হেসে বললো, “এমনটা হবেনা। ও আরেকজনকে পছন্দ করে। কাল রাতে ফোনে অনেক কথা হলো এ নিয়ে। আমাদের মধ্যে আসলে কোন কমিটমেন্টের ব্যাপার ছিলোনা। একজনের সাথে আরেকজনের সময় কাটাতে ভালো লাগতো, রাত জেগে কথা বলতে- জীবনের অভিজ্ঞতা শুনতে ভালো লাগতো।কথা ছিলো, কেউ কারো জন্য দায়বদ্ধ থাকবোনা। আগে ভাবতাম ও কখনো চলে গেলে আমার এমন কিছুই লাগবেনা। কিন্তু আসলে জানো খুব খারাপ লাগছে। মনে হচ্ছে আমিও ওর মত কাউকে পছন্দ করি।ওকে একটা শিক্ষা দেই, বুঝাই কেমন লাগে”।

ফাইযা কথা বলতে বলতে কেমন যেন হঠাৎ করে ফোঁপাতে শুরু করলো। আমি খুব অপ্রস্তুত বোধ করছিলাম। কারণ আমার ভীষণ খারাপ লাগছে। ওকে কখনো আগে এমন করে ভেঙ্গে পড়তে দেখিনি। আমি এই জীবনে প্রথম ওর হাত শক্ত করে ধরে বললাম, “কিচ্ছু হবেনা। তুমি সামলিয়ে উঠতে পারবে। আমি জানি তুমি অনেক শক্ত মেয়ে। সব ঠিক হয়ে যাবে দেখো”।
ফাইযাকে ওর বাসায় নামায় দিয়ে আমি খুব ক্লান্ত বোধ করছিলাম। আজকে আর টিউশনীতে যাবোনা। বাসায় যেয়ে শুয়ে থাকবো। ঘুম দরকার ঘুম। এতো মানসিক চাপ নেয়ার ক্ষমতা আমার ছিলোনা। ফাইযাকে আজকে এতো কাছ থেকে দেখলাম, ইচ্ছা করলেই আজকে ওকে বলতে পারতাম হয়তো- “আমি আছি না? তুমি আমাকে তোমার সব কথা বলো। আমি আমার ভেতরে একগাদা জায়গা রেখে দিয়েছি তোমার বলা প্রতিটা শব্দ জমা রাখবো বলে”।

অনেক রাতে ফাইযা আমাকে ছোট্ট একটা মেসেজ পাঠালো, “স্যরি”।
সারাটারাত আমার ঘুম হলোনা। মাথার মধ্যে সব উল্টোপাল্টা চিন্তা আমাকে পুরোটা সময় জাগিয়ে রাখলো। ঘুমাতে চেষ্টা করি আর বার বার ওর হাত ধরে থাকার কথা মনে পড়ছিলো।ওর হাতটা কতবার ধরতে মন চাইতো। আমি বোঝাতে পারবোনা ওই স্পর্শের উত্তাপ আমাকে কতটা ছিন্নভিন্ন করে দিতে পারে।

পরের দিন ওকে ক্লাসে না দেখে আমি ওর বাসায় চলে গেলাম। আন্টি আমাকে জিজ্ঞাসা করলো, “ওর কি হয়েছে সারারাত কিছু খায়নাই।পরীক্ষায় ফেল করেছে নাকি অন্য কোন ঝামেলা? আদনানেন সাথে ওর কোন সমস্যা? আমি জানতাম ওদের মধ্যে কোন একটা কিছু আছে। তুমি খুলে বলবে আমাকে। আমি ওকে এতোটা বিধ্বস্ত কখনো দেখিনি”।
আমি মাথা নেড়ে বললাম, “আন্টি আমি আসলে মিথ্যা বলতে পারিনা। কাল আমাকে যা বলেছে তাও আপনাকে বলতে পারছিনা। এটা ওর ব্যক্তিগত ব্যাপার, আমি ওর বন্ধু তাই শুধু খোঁজ নিতে এসেছি। আমাকে ক্ষমা করবেন”।
আন্টি হেসে আমার মাথায় হাত দিয়ে বললো, “আমার মেয়ের কোন সমস্যা হয়নি তো?ওর বাবা নেই, আমি ওর সব কিছু। ওর কোন সমস্যা হলে আমি বাঁচতে পারবোনা”।
আমি আন্টিকে হাসিমুখ ফিরিয়ে দিয়ে বললাম, “না না। ওরকম কিছু না। ও একটু আপসেট। ঠিক হয়ে যাবে”।

আমি ফাইযার জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর ওদের ড্রইংরুমের সাথে বারান্দায় যেয়ে একটু দাঁড়ালাম। ভালো লাগছিলোনা।একবার মনে হচ্ছে কোন দরকার ছিলোনা তো আসার।ওকে কি বলবো? কি বলবো যদি জিজ্ঞেস করে কেন এসেছি। যদি ও বিরক্ত হয়। আপন মানুষগুলোকে মাঝে মাঝে খুব ভয় লাগে। তাদের অবজ্ঞা, অবহেলাটা সহ্য করা যায়না যে তাই।
ফাইযা একটু পর যখন বারান্দায় আসলো, আমি ওর দিকে তাকিয়ে প্রায় মরেই গেলাম। ওর মুখ শুকিয়ে এইটুকু হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে যেন ভেতরের মানুষটা মরে গেছে। আমার দিকে তাকিয়ে ও আমার ওই দৃষ্টি দেখে কেঁদে বললো, “কিছু ঠিক হচ্ছেনা।কিচ্ছু না”।

আমি ওর কাছে যেয়ে ওর মাথায় হাত দিয়ে বললাম, “তুমি কেঁদোনা। আমার খুব খারাপ লাগে”। ফাইযাকে এভাবে দেখার জন্য আমি তৈরী ছিলাম না। ও আচমকা আমার কাঁধে মাথা রেখে বললো, “আমি কি খুব খারাপ মানুষ ছিলাম? নিজেকে খুব শক্ত ভাবতাম। কিন্তু আমি কতটা অসহায় আজকে বুঝলাম। নিজেকে খুব দুর্বল লাগছে”।

আমি নিজেকে কোনভাবে সামলিয়ে বললাম, “মাঝে মাঝে এমন হয়। আমরা যে এখনো মানুষ আছি এটা আমাদের বুঝতে হয় যে তাই। তুমি প্লীজ আর কেঁদোনা।আর কাঁদলে আমি তোমাকে বিয়ে করে ফেলবো”।
ফাইযা আমার দিকে অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে হেসে ফেললো।আমি ওকে নিয়ে ড্রইং রুমে বসি। ওর সাথে নানান আজাইরা হেনতেন প্যাচাল পাড়ি। যাওয়ার আগে ওকে বললাম, “তুমি অনেক স্পেশাল একটা মানুষ জানো?”
ফাইযা মাথা নেড়ে বললো, “জানি। নাহলে তোমার মত বন্ধু থাকতো না তো?”

ফাইযার সাথে আমি এরপর প্রতিটাদিন যতক্ষণ পারি ততক্ষণ কাটিয়েছি। তাকে জানার বাকি ছিলোনা, বোঝার বাকি ছিলোনা। আমি শুধু তার চোখের দিকে তাকিয়ে সব জানা বোঝাগুলোর রিভিশন দিয়েছি। একদিন সাহস করে বললাম, “আমার খুব ছবি তুলতে ভালো লাগে মানুষের চোখের। সেই চোখের ভাষা পড়তে ভালো লাগে। এমন একজোড়া চোখের সাথে প্রায় দিন কথা হয়, কিন্তু তার ছবি তোলার জন্য অনুমতি চাওয়া হয়নি”।
ফাইযা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, “ওয়াও। এইভাবে বললে যে কেউ রাজী হতে বাধ্য। কিন্তু আগে বলো সেই চোখের সাথে কি কথা হয়?”
আমি হাসিমুখে বললাম, “জিজ্ঞাসা করা হয় আপনি এতো সুন্দর কেন?”
ফাইযাকে প্রথম মনে হলো, লজ্জা পেলো। আমাকে বললো, “আবীর এইসব বলবানা। আমার লাজ লজ্জা একটু একটু আছে। তোমার বউকে বলবা”।
আমি বললাম, “আমি তো ভাবলাম তোমাকেই বিয়ে করবো”।
ফাইযা হেসে বললো, “আমি বোঁচা নাকের কাউকে বিয়ে করবোই না। অন্য মেয়ে দেখো”।
আমি ওর নাকে গুতো দিয়ে বললাম, “অন্য কাউকে চোখে পড়েনা”।
ফাইযা আমার নাকে গুতো ফিরিয়ে দিয়ে বললো, “তুমি বেশি রোমান্টিক। লুতুপুতু টাইপ। তোমাকে বিয়ে করাই যাবেনা”।

পরবর্তী একবছর প্রতিদিন নিয়ম করে তিনবেলা ফাইযাকে ফ্লার্ট করতাম এভাবে।ফাইযা হেসে উড়িয়ে দিতো। আমি সেই উড়ানো ধোঁয়াটাকে আরো গাঢ় করে তার অন্তরে ছড়িয়ে দিতাম। নাহ, আমাদের মধ্যে এমন কোন সম্পর্ক ছিলোনা। আমরা বন্ধু ছিলাম। কিন্তু আমি জানতাম, ফাইযাও জানতো আমি ওকে কতোটা চাই। ফাইযা এমন একজন ছিলো যার একটা বন্ধু হলেই চলে। ওর সব কথা কাউকে শোনানো দরকার, বোঝানো দরকার। আমি ভালো শ্রোতা ছিলাম না। কিন্তু ওর কথাগুলো শুনতাম, ওর এক্সপ্রেশনগুলো দেখতাম। একটা কথাও মনোযোগ দিয়ে শুনতে পারতাম না। কারণ ওর চোখের ভাষা পড়তে বেশি ভালো লাগতো যে তাই।ও কিন্তু কখনো আমাকে ওমন করে চেয়েছে বলে মনে হয়নি। আমি বুঝতাম ও আদনানকে ভুলতে চাইতো তাই হয়তো ও আরো বেশি করে ভাবতো। আমাদের ভেতরে কষ্টের দাগ লেগে গেলে সময়ের সাথে তা মুছে যায়, কিন্তু ব্যাথাটা যায়না। একদম না।

একদিন রাতে ওকে ফোন করলাম একটা নতুন ফার্মে জয়েন করবো জানাতে। ওকে ফোন করে বার বার ফোন হোল্ডে দেখে মেজাজ খুব বিলা হয়ে গেলো। ফোন ধরার পর ওকে জিজ্ঞাসা করলাম, “ভাই সমস্যা কি? একটা ভালো খবর দিতে ফোন করলাম, তোমাকে তো পাওয়াই যায়না”।
ফাইযা কিছু বললোনা। আমি এক মিনিট ভড়ভড় করে গেলাম, ও কিছুই বললোনা। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “সমস্যা কি? হেই হেই, তুমি কি মনের মানুষ পাইছো নাকি কোন? তার সাথে ফোনে আলাপ করছিলা?”
আমি হাসছি, ফাইযা চুপ করে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। আমি বুঝে ফেললাম ঘটনা কি। ওকে বললাম, “আদনান কি স্যরি বলেছে? আচ্ছা আমি নাহয় ফোনটা রাখি। স্যরি আমি বুঝিনাই ওর সাথে কথা হচ্ছিলো”।
ফাইযা বললো, “না ঠিক আছে। তুমি কিছু বলতে চেয়েছিলে?”
আমি বললাম, “আরে পরে বলা যাবে। তুমি ওর সাথে কথা বলো। এক বছর না জানি কত কথা জমা পড়ে আছে।আমি রাখি। পরে কথা হবে”।

ফাইযার সাথে এক সপ্তাহ আমার আর কথা হলোনা। ভার্সিটি শেষ হওয়ার পর আমি প্রতিদিন ওর সাথে কত কথা বলতাম। সপ্তাহে তিনদিন আমরা নানান ফুডশপে খাদ্য অভিযানে যেতাম। কোন খাবারটা কতটা ভালো তা নিয়ে পয়েন্ট দিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করতাম।ওর কোন ফুড আইটেম ভালো লাগলে আমার হাজার খারাপ লাগলেও বলতে হতো এইটাই সর্বসেরা খাবার। বুধবার রাতে যখন ও ফোন করে আমাকে জিজ্ঞেস করলো, আমি কেমন আছি, আমি কিছু না বুঝেই বললাম, “দেখা করবে একবার?”
ও বললো, “কালকে বসুন্ধরা সিটির সামনে এসো। তোমাকে শুভ জন্মদিন। একবার খবর নিলেওনা?”
অভিমান হলো, না লুকিয়েই জিজ্ঞেস করলাম, “তুমিও তো খোজ নাওনি? খুব ব্যস্ত ছিলে তাই না?”
ফাইযা মনে হলো কিছু বলবে। চেষ্টাও করলো। কিন্তু কিছু বলতে পারলোনা।শুধু ফোন রাখার আগে সব সময়ের মত ছোট্ট করে বললো, “স্যরি”।
আমি বসুন্ধরা সিটির সামনে ও যেই সময়ে বলেছিলো তার পাঁচ মিনিট আগে দাঁড়িয়ে থাকলাম। ফাইযা আমাকে দেখে বললো, “তোমার এই অবস্থা কেন? কতদিন গোসল করোনা”।
আমি হেসে বললাম, “আরেহ না। আজকে দুপুরেই গোসল করেছি। এখন দাঁড়ি রাখার নতুন স্টাইল বের হয়েছে তো। আমিও তাই একটু চেষ্টা করছি”।
ফাইযা আর আমি চুপ করে অনেকক্ষণ পান্থপথের রাস্তা ধরে হাটলাম। কিছু বলার ছিলোনা।ওই প্রথম মুখ খুললো। আমাকে আস্তে আস্তে বললো, “তুমি আমাকে অনেক পছন্দ করো তাই না?”
আমি বললাম, “হ্যা। পছন্দ করি। ভালোবাসি, অনেক বেশি। এতোটা কেউ বাসেনা”।
ফাইযা দাঁড়িয়ে গেলো। আমাকে বললো, “আমি জানিনা তোমাকে কিভাবে বলবো। কিন্তু তুমি জানো আমি কখনো তোমাকে ওইভাবে দেখিনি”।
আমি মাথা নিচু করে বললাম, “জানি। আমি কখনো বিনিময়ে কিছু চাই নাই তোমার কাছে।কখনো চাইবোনা জানো তো না?”
ও মাথা নাড়ে। আমাকে বললো, “আমি আদনানকে কখনো ভুলতে পারিনি। পারবো ও না। সেদিন রাতে ও যখন আমার কাছে হাউমাউ করে কেঁদে বললো আমাকে ছাড়া থাকতে পারবেনা আমি বুঝলাম আমাকে ওর দরকার, খুব দরকার।আমরা কখনো কোন কমিটমেন্টের মধ্যে যাইনি, সেদিন ওর কথা শুনে আমি ওকে কথা দিয়েছি ওকে ছাড়া কিচ্ছু ভাববোনা। আমার ভেতরে ওর জন্য এতো অনুভূতি ছিলো আমি নিজেও জানতাম না। আমি ওকে ছাড়া কাউকে চাইনি। কিন্তু তুমি আমার অনেক কাছের মানুষ। আমার অপরাধ হয়েছে। তুমি চাও আমাকে, এটা জানার পরও আমি তোমার থেকে দূরে থাকতে চাইনি।আমার আর কেউ ছিলোনা যে আমাকে তোমার মত করে বুঝতে পারে। আমি তোমার কাছে অনেক বড় অপরাধী, তাই না?”
আমি বললাম, “নাহ। তোমার কিসের অপরাধ। আমার...... একটা ভুল হয়েছে। আমার মধ্যে লোভ হয়েছিলো। আমি তোমাকে ভালোবাসার জন্য কাছে আসার চেষ্টা করেছি তা ঠিক না। তোমাকে পাওয়ার লোভ হয়েছিলো আমার। তোমার কোন দোষ নেই।সব কিছু এই লোভটা। প্রথম যেদিন তোমাকে দেখি, সেদিন থেকে তুমি আমার জন্য একদম অন্যরকম ছিলে।যখন দেখলাম তোমার কাউকে লাগবে নিজেকে বোঝানোর জন্য, আমি নিজেকে তোমার পাশে দেখার জন্য খুব অন্যায় করেছি।আমার মনে হচ্ছে আমি তোমাকে আসলে কখনোই চাইনি”।
ফাইযা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, “নাহ এইভাবে ভেবোনা”।
আমি ওর কথা শেষ হতে দেইনা। আমি ওর হাত ধরে বললাম, “ঠিক করে বলো তো তুমি কি আমাকে এখন ঘৃণা করো?”
ফাইযা কেঁদে দেয়। বলে, “এগুলো কি বলছো? মাথা ঠিক আছে? আমি তোমাকে কখনো ঘৃণা করতে পারবোনা”।
আমার মাথাটা আসলেও মনে হয় অন্যরকম হয়ে গিয়েছিলো। আমি মুখে একটু হাসি ফুটিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “আদনান পিছনে দাঁড়িয়ে আছে তাই না?”
ফাইযা আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো, “না ও রাত হয়ে যাবে ভেবে বাসায় পৌছিয়ে দিতে এসেছে”।
আমি বললাম, “ও কিছু বলেছে আমাকে নিয়ে?”
ফাইযা অনেকক্ষণ চুপ থেকে বললো, “বলেছে তোমার সাথে আর যেন কখনো কথা না বলি”।
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওর হাত ধরে বললাম, “ওহ ফাইযা! একটা কথা সবসময় মনে রেখো। আমি তোমার অস্তিত্বটাকেই অনেক ভালোবাসি। আর কিচ্ছু না। লোভ করে তোমাকেই হারিয়ে ফেলেছি। এখন আবার তোমার সাথে আমার যে চমৎকার সময়গুলো ছিলো সেগুলোকেই ভালোবাসবো।ছোট্ট ছোট্ট কিছু চমৎকার সময়গুলো আছেনা?! ওইযে সেদিন তোমার চুল আঁচড়িয়ে দিচ্ছিলাম, একদিন তোমাকে মাছের কাটা বেছে দিচ্ছিলাম তুমি খুশি হয়ে আমার গালে আলতো করে ছুঁয়ে দিলে এগুলোই আমার জন্য অনেক কিছু”।
ফাইযার হাত আমি ছেড়ে দেই। ও ছাড়েনা। আমাকে বলে, “আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমি জানিনা কি করবো। আমি কি অনেক খারাপ”।
আমি ওকে বলি, “মিথ্যা কথা।তুমি জানো তোমার কি করতে হবে। এইজন্যই আজকে তুমি আমার বিপরীতে দাঁড়িয়ে আছো। যদি জানতে আমার হাত ধরতে হবে তাহলে পাশে থাকতে। ফাইযা, কথা হবেনা।উহু আর না। সামনে আসবোনা। আর কখনও না। কোনদিন না”।

ফাইযাকে আমি কিছু বলতে শুনিনি। আর কিছু শুনতেও চাইনি। এই ছেড়ে আসার, না পাওয়ার কাহিনীটা অনেক পুরনো, ঠিক পরিচিত শহরটার মত। কাউকে চাইলে পেতেই হবে এমন তো কোন কথা নেই। কেউ কাউকে কথা দেয়নি। এই না দেয়ার অভিমানটা আমাকে বাধ্য করে একা হাঁটতে লক্ষ কোটি সব হারানো মানুষগুলোর পাশ দিয়ে একেবেকে। কত কথা জমা ছিলো, কিন্তু বলার মত কেউই নেই। তাই বোধহয় আজ শহরটা কথার বর্জ্যে আবর্জনাময় মনে হচ্ছে, অসভ্য নিষ্প্রাণ শহর। ফাইযাকে বলতে পারিনি, বোঝাতে পারিনি তাকে আমারও যে অনেক দরকার ছিলো। সবাইকে সব কথা সবসময় বলা যায়না যে। এটা মেনে নেয়ার শিক্ষাটা আজ পেলাম। মনে মনে জপছিলাম সব ঠিক আছে। কিন্তু আমি জানি আমার আত্নায় এখন একটা মাকড়সা জাল বুনেছে। কোণায় কোণায় তার নোংরা জালে আমাকে ঢেকে ফেলবে। আমি একদিন আমার দেহটা হারাবো। বেঁচে থাকবে শুধু অষ্টপেয়ে জন্তুটা আর জগতকে বলবে, আমিই সর্বময়।
প্রিয় পাঠক, ভালোবাসার গল্পটা এখনো শুরু করিনি। উপররে প্রথম অংশটুকু ছিলো, ভালোবাসতে শেখার। একে অবহেলা করার একটা ক্ষেত্র তৈরী করার। সেখানে বাসা বাঁধবে আর কেউ এটাই তো জগতের নিয়ম আদিকাল থেকে। আমিও তার থেকে ব্যতিক্রম ছিলোনা।আমার অবহেলার গল্পটা এখন বলবো।

ফাইযার সাথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবার পর আমি খুব কষ্ট হলেও নিজেকে গুছিয়ে নিচ্ছিলাম। আমার ঘাড়ে বিশাল দায়িত্ব। আম্মা, আব্বা আমার দিকে তাকিয়ে আছে ভালো কিছু করবো এটা ভেবে। আমার থেকে তাদের কোন চাওয়া পাওয়ার হিসাব ছিলোনা। তারা শুধু দেখতে চায় তাদের ছেলেটা নিজ থেকে এখন বাঁচতে পারবে। আমি তাদেরকে প্রতিদিন অভিনয় করে বুঝিয়েছি, আমি ভালো আছি। বাঁচার মত বাঁচা শিখে গিয়েছি। সেদিন বিকেলে ছুটির দিনে ছোট বোনের সাথে খেচ খেচ করছিলাম ওর বিবিএ পড়া নিয়ে। তার একটাই কথা, এই জীবনে বিবিএ থেকে কঠিন পড়া আর কিছুই না। বাকি সব ভুয়া।
আমি চিৎকার করে বলি, “ছাগী। তোর বিবিএর সব বই এক করলে আমার ইঞ্জিয়ারিং এর এক সাবজেক্টের পড়ার সমান হবেনা”।
মুনা আমার দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে বললো, “এমন ভাব করতেছো যেন বহুত পড়াশোনা আর বই পড়ে উদ্ধার করছো। সারাদিন শুধু কম্পিউটারে বসে সুন্দরীদের ছবি দেখতা”।
আমি ওর দিকে গা জ্বালানী হাসি দিয়ে বললাম, “এক কাজ কর, কাঠ কয়লা দিয়ে যে ফেসিয়াল মাস্ক বানানো যায় ওগুলো একটা ট্রাই করে সুন্দরী হওয়ার চেষ্টা কর। অনেকেই শুনলাম ট্রাই নেয়ার জন্য ইতোমধ্যে রামপালে বাসা ভাড়া নিছে। চিমনী দিয়ে ধুয়া বাড়াবে, সাথে সাথে সেইটা ঝাপায় পড়ে আগে মুখে মাখবে। শুনেছি এতে নাকি হারানো যৌবনও ফিরে পাওয়া যাবে”।

মুনা ভেংচি কেটে বললো, “বেশি কথা বইলোনা। হারিকেন ধরায় দেবো কিন্তু”।

আমিও হাসি, মুনাও হাসে। পেছন থেকে আব্বা এসে বলে, “এইসব বলেনা আব্বারা। দেশে এখন অনেক ধারাপাত চলছে। সব কিছুতে হ্যা বলতে হবে”।
আব্বা কথা বলতে বলতে আমার ছাত্রী রুমাকে দেখতে পেলাম। ও আগের বছর এইচএসসি পাশ করেছে, এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে মাইক্রোবায়োলজি নিয়ে। ওকে আগের বছরই পড়ানো ছেড়েছি। আমি জানিনা কিভাবে এই গাধী ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পেরেছে। ওর হাতে একটা বাটি দেখলাম। মাঝে মাঝেই ওর মা আমার মা এই সেই খাদ্য বিনিময় করে। আমি ওর মায়ের রান্না খেতে পারিনা। মহিলা প্রায়ই টিভি দেখে এই সেই রান্না করে আর আমাদের গিনিপিগ বানিয়ে খাওয়াতে চায়। আমি ওর মা কে দেখলেই বাথরুমে ঢুকে যাই। মাঝে মাঝে আন্টি বাথরুমের সামনে যেয়ে ডাকে, “আবির তোমার জন্য ঝিঙ্গা দিয়ে কোপ্তা বানায় আনছি”।
আমি ভয়ে ভয়ে বলি, “আন্টি পেট খারাপ। সময় লাগবে বের হতে। আপনারা শুরু করেন”।
রুমা আজকে এসে আমার পাশে দাঁড়িয়ে বললো, “ভাইয়া আম্মু আচার পাঠিয়েছে। কোথায় রাখবো?”
আমি ওর উদ্ভট প্রশ্নে হেসে দিলাম। বললাম, “তুমি আমাকে বলছো কেন? আম্মাকে দাও”।
ও ঝট করে দৌড় দিলো মনে হলো। যাওয়ার আগে শুধু তড়িঘড়ি করে বললো, “ও আচ্ছা”। তারপর একটু পর আবার আমার পাশে এসে দাড়ালো। আমি তখন পেপার পড়ছিলাম। পাশে মুনা মোবাইলে গুতাগুতি করছে। আমি ওর দিকে বিরক্ত চোখে তাকিয়ে বললাম, “কিছু বলবা”।
ও আমার দিকে শূণ্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো। কিছু বললোনা। একটু পর মুনার দিকে তাকিয়ে বললো, “মুনা এখান থেকে একটু যা। আমার উনার সাথে একটু দরকার আছে”।
মুনা মনে হলো জানে কি কথা হবে। ও রুমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু উচিয়ে একটা কিছু ইশারা করে চলে গেলো। আমি এইবার ভয় পেলাম। রুমার আমার প্রতি একটু দুর্বলতা আছে আমি আগে থেকেই জানতাম। কি না কি বলে ফেলে এই ভয়ে আমি ঢোক গিলে বললাম, “আমিও যাই তাহলে”।
রুমা বললো, “আপনাকে একটা কথা বলতে চাচ্ছিলাম। আমার অনেক সাহস লেগেছে এই কথাগুলো বলার জন্য। একটু বিরক্ত করি”।
আমি দ্বিতীয় ঢোক গিলে বললাম, “বলো”।
আমি ওর দিকে তাকাতে পারছিলাম না। ও আস্তে আস্তে বললো, “আমার একটা কাজিন দেশে আসবে দুইদিন পর। ওর সাথে আমার এনগেজম্যান্ট করাতে চায় আব্বু আম্মু”।
আমি হাসিমুখে বললাম, “ভালো তো। তোমার বাসায় প্রোগাম হবে?”
রুমা অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে বললো, “আমি ওকে বিয়ে করবোনা। কেন আপনি জানেন?”
আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, “কিছুটা জানি। কিন্তু আমি কিছু করতে পারছিনা”।

রুমা ওর নখ খুটতে খুটতে বললো, “আপনি কি করতে পারবেন জানিনা। আমি ওকে বিয়ে করবোনা। আমি যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি তখন থেকে আপনার কাছে পড়ি। তখন থেকেই আপনাকে ভালো লাগে। আমি কখনো কারো দিকে তাকাইনি, কাউকে ভালো লাগেনি। সম্ভবও না। আপনার আমাকে ভালোবাসার দরকার নেই।আমাকে একটু বুঝলেই চলবে”।
আমি রুমার দিকে তাকিয়ে ওকে কি বললো ভাষা খুজছিলাম। আমি কখনো ওকে ছাত্রী ছাড়া অন্য কিছুই ভাবিনি।ওকে কিছু না বুঝেই বললাম, “আমি স্যরি”।
ও কাঁদছিলো। আমার খারাপ লাগলো ওর কান্না দেখে। ও মাটির দিকে তাকিয়ে বললো, “লাভ নেই। আপনার কিছু একটা করতে হবে। আমি আর কাউকে চিনিনা আপনাকে ছাড়া”।
এই কথা বলে ও চলে গেলো।আমাকে কিছু বলার সুযোগ দিলোনা। আমি কিছু বলতেও পারতাম না। আমি ভাবিনি এমন কিছু একটা হবে। কিন্তু এইসব নিয়ে ভাবতে আমার ভালো লাগেনা। একজনকে চাইতাম, তার সাথে দেখা হয়না কথা হয়না। আমার আর ভালোবাসা নিয়ে আগ্রহ হয়না।

তিনদিন পর রুমার মা আমাদের বাসায় এসে আমাকে ডাকলো। বললো, “বাবা তোমার সাথে একটু দরকার ছিলো। আমার সাথে একটু দোতলায় আসো। রুমার বাবা তোমার সাথে কথা বলবে”।
আমি ভয়ে ভয়ে দোতলায় গেলাম। যেয়ে দেখি ঘরের জিনিসপত্র আওলাঝাওলা হয়ে আছে। রুমা সোফায় বসে কাঁদছে। রুমার বাবা খুব রেগে পাশের সোফায় বসে আছে। আমাকে দেখে খুব রেগে জিজ্ঞেস করলো, “তোমাকে বিশ্বাস করে আমার মেয়েরে পড়াইতে বলছিলাম এইসবের জন্য?”
আমি আঙ্কেলের গরম চোখ দেখে আরোও ভয় পেয়ে গেলাম। আমি ফ্যাসফ্যাস করে বললাম, “আমি কিছু বুঝতেছিনা। একটু খুলে বলবেন”।
আঙ্কেল সোফা থেকে উঠে এসে আমাকে একটা কষে চড় মারলেন। আমি ঘুরে পড়ে যাচ্ছিলাম। কোনরকমে সামলিয়ে বললাম, “আমাকে মারছেন কেন? আজব, আমি কি করলাম”।
আঙ্কেল খুব রেগে বললেন, “রুমা এই মুহূর্তে দুইজন বাসা থেকে বের হয়ে যা আমার। কোনদিন আমার সামনে আসবিনা।বের হয়ে যা!!”
রুমা মনে হয় প্রস্তুত হয়ে ছিলো। দৌড় দিয়ে পাশের রুম থেকে একটা ব্যাগ নিয়ে আমার হাত ধরে বললো, “চলেন”।
আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকলাম। মনে হচ্ছে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাবো। রুমা আমাকে জোর করে প্রায় বাসা থেকে বের করে নিয়ে এলো। আমি উপরে নিজের বাসায় যাওয়ার বদলে নিচে গেটের বাহিরে মাঠে যেয়ে দাড়ালাম। রুমা তখনো কাঁদছে। একবার মাথার ওড়না ঠিক করছে, একবার চোখ মুছছে। আমি অনেকক্ষণ পর জ্ঞান ফিরে পেয়ে বললাম, “এইটা কি হলো?”
রুমা আমার দিকে না তাকিয়ে বললো, “আপনাকে তো বলছিলাম আপনাকে ছাড়া আমি আর কাউকে চিনিনা, বুঝিনা”।
আমি মাঠে পা ছড়িয়ে বসে ভাবতে থাকলাম কি করা যায়। রুমাও আমার পাশে বসে পড়লো। আমি ওকে অনেকক্ষণ ভেবে বললাম, “বাসায় কি বলছো আমাকে নিয়ে?”
ও মাথা নেড়ে বললো, “বলা যাবেনা। পরে একদিন বলবো।এখন কি করবেন?”
আমি ঘাসের ডগা ছিড়ে মুখে দিয়ে চিবানোর চেষ্টা করলাম। শুনেছি ঘাসের ডগা চিবোলে বুদ্ধি আসে মাথায়। আমি বুঝতেছিনা আমার কি রুমাকে একটা চড় মারা উচিত নাকি ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ওর বাসায় ফেরত পাঠানো উচিত।
ও আমার হাত ধরে বললো, “আপনাকে মারলো আব্বু আমার খুব খারাপ লাগছে”।
আমি এই অসম্ভব কঠিন সময়েও হেসে বললাম, “ব্যথা কম, ভয় বেশি পেয়েছি। এখনো বুক ঢিপঢিপ করছে। সমস্যা হলো বুঝতেছিনা আমার বাসায় কি হচ্ছে? ইতোমধ্যে মনে হয় হুলস্থুল শুরু হয়ে গেছে। আব্বা তো আমাকে অপরাধ হোক আর না হোক বাসা থেকে বের করে দেবে”।

রুমা আমাকে বললো, “পানি খাবেন? আমার কাছে এক বোতল পানি আছে”।
আমি একঢোক পানি খেয়ে শান্ত গলায় জিজ্ঞাসা করলাম, “তুমি কি বলেছো আমাকে নিয়ে যে তোমার বাবা এত ক্ষেপে গেলো?”
রুমা আমার দিকে না তাকিয়ে ভয়ে ভয়ে বললো, “নোংরা কথা বলছি, এছাড়া উপায় ছিলোনা। আপনাকে এখন বলতে পারবোনা”।
আমি হতভম্ব হয়ে ওকে বললাম, “তোমার গালে চড় আর পিছনে লাথি মারতে ইচ্ছা হচ্ছে। আমি নিতান্ত ভদ্র মানুষ দেখে এটা পারছিনা। তুমি নিজে বাসা থেকে বের হয়েছো, আমাকেও বের করছো”।
রুমা আমার কথা শুনে ভয়ে কেঁদে দিলো। আমাকে বললো, “আমি তাহলে চলে যাই। আপনি আপনার বাসায় চলে যান। আমি না বুঝে অন্যায় করছি”।

আমি সত্যি সত্যি ওকে চড় মারতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু পারছিলাম না। যখন দেখলাম ও উঠে চলে যেতে চাচ্ছে আমি গম্ভীর হয়ে বললাম, “চুপ করে বসে থাকো। নাহলে সিরিয়াস চড় খাবা। পড়া না পারলে যেইভাবে ছোটকালে চড় মারতাম ওইরকম চড় মারবো”।
রুমা ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে কাঁদতে কাঁদতে বসে গেলো। আমি ওকে বললাম, “এখানে বসো। আমি বাসায় যেয়ে দেখি কি অবস্থা”।
আমি গেটের কাছে অপ্রকৃতস্থের মত হেটে গেলাম। গেট দিয়ে ঢোকার সময় দেখি রুমা আমার পিছন পিছন আসছে। আমি ওকে বললাম তুমি কই যাচ্ছো?”
রুমা মিন মিন করে বললো, “আমাকে কোথাও রেখে যাবেন না”।
আমি মাথা চুলকাতে চুলকাতে ওকে নিয়ে ভয়ে ভয়ে চারতলায় আমার বাসায় গেলাম। আমার বাসার দরজা তখন খোলা। আমার বাবা আর ওর বাবা দেখলাম ঘরে সোফার উপর বসে আছে।আমি একদম যেয়ে তাদের সামনেই পড়ে গেলাম। ভয়ে দৌড় দিলাম নিজের রুমে। রুমাও আমার পিছন পিছন এসে পড়লো। মা একটু পর আমার দরজার কাছে এসে ফিসফিস করে বললো, “আবির দরজা খোল। আমি একটু কথা বলি।কি করলি তুই কিছুই তো বুঝতে পারছিনা”।
আমি দরজা খুলে মা কে রুমে ঢুকিয়ে বললাম, “আম্মা আমি কিচ্ছু জানিনা। বিশ্বাস করো। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছিনা”।
মা খুব চিন্তিত মুখে বললো, “তোর বাবাকে ওর বাবা অনেক আজেবাজে কথা বলেছে তোর ব্যাপারে”।
আমি মাকে ভয়ার্ত কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলাম, “বাবা কি বলেছে?”
মা আমার মাথায় হাত দিয়ে বললো, “তোর বাবা উনাকে বলেছে আজাইড়া প্যাচাল না পাড়তে। উনি তোকে চেনে। তুই এইরকম ছেলে না”।

মা কথা বলতে বলতে বাবা এসে হাজির। আমাকে বললো, “আবির তুই কি রুমাকে পছন্দ করিস?”
আমি মাথা নেড়ে বললাম, “জ্বী না আব্বা”।
বাবা এরপর রুমার দিকে তাকিয়ে বললো, “রুমা তোমার বাবা যা বললো সেগুলো কি সত্যি? রুমা কিছু না বলে ভয়ে ঠকঠক করে কাপতে থাকলো।আমি জানি ও যদি এখন বলে সব ও ওর বিয়ে ঠেকানোর জন্য আর আমার সাথে থাকার জন্য বলেছে ওকে খুব বিপদে পড়তে হবে। আমি অনেকক্ষণ ভেবে বাবাকে বললাম, “বাবা আমি ওকে পছন্দ করি। এর বাহিরে আর কিছু না। ওর বাবা বাকি সব বানিয়ে বলেছে”।

সক্কালবেলা দ্বিতীয় একটা চড় খেয়ে নাস্তা না খাওয়ার দুঃখ ভুলে গেলাম। বাবা আর মা গুজুরফুসুর করে কি সব যেন কথা বললো। আমি সন্ধ্যা পর্যন্ত আমার রুমে ঘুমিয়ে থাকলাম। এতোটা স্ট্রেস নিয়ে আসলে আর জেগে থাকতে পারছিলাম না। আমাকে শাস্তিস্বরুপ দুপুরে খাবার দেয়া হয়নি। রুমা কই আছে জানিনা। মনে হয় মুনার ঘরে।

সন্ধ্যার পর বাসায় আমার মামা চাচা গোছের কিছু লোক আসলো।সাথে মাথায় টুপি দেয়া একজন হুজুর যা আমি দরজার ফাঁক দিয়ে দেখলাম। বুঝলাম ঘটনা খারাপ। রুমার বাবা মুখ কালো করে দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকলেন।আমি মা কে রান্নাঘরে যেয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, “মা তোমরা কাজী ডেকে নিয়ে আসছো কি আমার বিয়ে পড়ানোর জন্য জন্য?”
মা আমার দিকে তাকিয়ে তৃতীয় থাবড়টা দিলেন আজকের দিনের। তারপর বললেন, “কত স্বপ্ন ছিলো তোকে নিয়ে। তোর জন্য আমি আমার বান্ধবীর মেয়েটাকে দেখছিলাম। কত ভালো একটা মেয়ে ছিলো। এই বছর ভাবছিলাম তোর সাথে ওর বিয়েটা দেবো। এত সাহস তোর, আমাকে জিজ্ঞাসা করতে আসছিস তোকে বিয়ে পড়াবো কিনা? হারামজাদা।ভাগ সামনে থেকে”।
আমি রুমাকে দেখলাম মুনার রুমে বসে আচ্ছে চুপ করে। মুনা ওকে কি যেন দেখাচ্ছে।আমি রেগে রুমার হাত শক্ত করে ধরে আমার রুমে নিয়ে গেলাম। দরজা আটকে বললাম, “তুমি এখন সবার সামনে যেয়ে বলবে তুমি যা বলেছো মিথ্যা বলেছো। ঘটনা এতোদূর যাবে আমি বুঝিনাই। আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবোনা। তুমি কি করবা না করবা তুমি জানো। তুমি জাহান্নামে যাও, আমি কেয়ার করিনা”।

রুমার দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও নির্বাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে টপটপ করে।আমি ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে ছাদে চলে গেলাম।কিছু ভালো লাগছেনা। মনে হচ্ছে, শালার লাইফে এতো সমস্যা কেন? ছোট ছিলাম কত্ত ভালো ছিলাম। সব সমস্যার সমাধান ছিলো আব্বু আম্মুর কাছে। এখন যেই সমস্যা আমার না তাও আমাকে সমাধানের জন্য চেষ্টা করতে হয়। পারবোনা। আমি একদম পারবোনা।

ছাদে এসব ভাবতে ভাবতে যখন বসে আছি রুমা কখন যেন আমার পাশে এসে বসলো। আমাকে তাকাতে দেখে বললো, “চিন্তা করবেন না। আমি সবাইকে বলে এসেছি আমি মিথ্যাবাদী। আমি কখনো মিথ্যা বলিনাই এমন।কোন সাহস নিয়ে আমার মত একটা মেয়ে এত কিছু করে ফেললো , নিজের মাথাতেও ঢুকছেনা। কেমন একটা দুঃস্বপ্নের মত তাই না?”
আমি ওর কথা শুনতে চাচ্ছিলাম না।ওকে খুব বিরক্ত হয়ে বললাম, “আমার সমস্যা তুমি বুঝবেনা। যা করেছো ঠিক করোনাই। এখন আমার সামনে থেকে যাও। পারলে আর কখনো এসোনা”।
রুমা আমার দিকে তাকিয়ে আছে একপলকে, আমি বুঝতে পারছি। ও আস্তে আস্তে বললো, “আপনাকে একটু দেখে নেই ঠিকমত।আপনাকে এতো কাছ থেকে খুব দেখার ইচ্ছা ছিলো, সবসময়। আপনি আমাকে যখন পড়াতেন, আমি প্রায় দিন ভান করতাম কিছু বুঝিনা। এমনটা করতাম যেন আপনি আরো বেশি সময় পাশে বসে থাকেন”।
কিছুক্ষণ থেমে বললো, “আপনি ঠিক বলেছেন। আপনার সমস্যা আমি বুঝবোনা। আমার সমস্যাও আপনি বুঝবেন না। আপনি নিচে যান, আপনাকে সবাই খুজছে। একটা কথা দিয়ে যান শুধু। যদি কখনো আমার চেহারা মনে পড়ে তাহলে আমার আপনাকে ভালোবাসাটার কথা মনে রাখবেন। আমি যে আপনাকে কষ্টগুলো দিলাম এগুলো মনে রাখবেন না।নিজের সবচেয়ে প্রিয় মানুষটার ঘৃণা আমি মরে গেলেও সহ্য করতে পারবোনা”।

আকাশে তখন হাজার লক্ষ তারা। কেউ কেউ বলে তা অগুণিত, শত হাজার কোটি। আমি আমার চশমা চোখে দিয়েও গুনতে পারছিনা। রুমার কথা শোনার ভাবার আমার সময় নেই। আমার ভেতর যে অস্তিত্বটা নিজের সাথে ক্রমাগত যুদ্ধ করছে আমার তাকে শান্ত করতে হবে, আমাকে বোঝাতে হবে আমি কতটা ক্ষুদ্র এই আকাশের কাছে। শত কোটি তারার কাছে। বারবার হেরে যাচ্ছি। কারণ ভেতরে একজনের জন্য বিশাল একটা ভালোবাসা লুকিয়ে আছে। সেই ভালোবাসাটার কাছে এমন আরো কয়েকগুণ তারাও যে ক্ষুদ্র হয়ে পড়ে। রুমাকে ঠিক সেরকম মনে হচ্ছে। একটা বিশাল ভালোবাসা আমার মত মৃত মানুষের জন্য এতবছর ধরে লুকিয়ে রেখেছে। কি বোকা, তাই না? আমি রুমার হাত ধরে বললাম, “ছাদে বাউন্ডারী বিশাল বড়। তুমি লাফ দিয়ে মরতে পারবেনা। চলো আমার সাথে”।
আমি আরেকবার রুমার হাত ধরলাম, সেদিন রাত ১১ টায় তাকে তিনবার কবুল বলে বিয়ে করলাম।সবাই সেদিন অনেক খুশি। শুধু আমি ভেতরে ভেতরে মরে যাচ্ছি। রুমা, মেয়েটা অনেক ভালো। আর আমি শুধুই এক প্রতারক।ভন্ড।
রুমা বিয়ের রাতে আমার পাশে বসে আমার হাত ধরে বসে থাকে। আমাকে মিনমিন করে বলে, “আমার একটুও লজ্জা হচ্ছেনা আপনার হাত ধরে বসে থাকতে”।

আমি ওকে বলি, “তোমাকে একটা কথা বলবো। আমাকে দেখে খুব স্বাভাবিক মনে হলেও আমি খুব স্বাভাবিক না। আমি জানিনা হয়তো একদিন সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে। একদিন হয়তো আমি আবার কাউকে স্বাভাবিকভাবে চাইতে পারবো। আপাতত এখন সেই পরিস্থিতিটা নেই। তুমি আমার থেকে খুব বেশি প্রত্যাশা রেখোনা। হু?”
রুমা মাথা নেড়ে বললো, “কিছু লাগবেনা আপনি পাশে থাকলেই চলবে”।
আমি ওকে বললাম, “আমার আশেপাশে খুব একটা না আসলেই আমি খুশি হবো। এভাবে পাশে কাউকে দেখলে ভালো লাগেনা”।
রুমা হাত ছেড়ে দিয়ে দূরে চলে গেলো। কিছু বললোনা, আমি শুধু একটা দীর্ঘশ্বাসের শব্দ শুনলাম। আমি দূরে যেয়ে সোফায় শুয়ে পড়লাম। আমার উপর দিয়ে আজ এতো ধকল গেছে, শোয়ার আগেই ঘুমিয়ে গেলাম।আজ কারো স্বপ্নগড়ার দিন, কারো স্বপ্নভাঙ্গার।
রুমার সাথে আমার পরবর্তী তিন বছর সংসারটা খুব অদ্ভুত ছিলো। ও প্রতিদিন আমি ঘুম থেকে উঠার আগে এই সেই নাস্তা বানিয়ে রাখতো। আমি অফিসে যাওয়ার সময় ও আমার আশেপাশে থাকতো কোন একটা কিছুর অজুহাতে। আমি ওর সাথে খুব একটা কথা বলতাম না। মাঝে মাঝে ও সকাল সকাল বেড়িয়ে পড়তো ভার্সিটিতে ক্লাস থাকার জন্য। মা মাঝে মাঝে বলতো, “তুই এইরকম করিস কেন ওর সাথে? কথা বলিসনা ঠিকমত, কোথাও ঘুরাতে নিয়ে যাসনা! পছন্দ করে বিয়ে করেছিস। কোন সমস্যা থাকলে আমাকে বল”।
আমি মা কে কিছু বলতে পারতাম না। কি বলবো? আমি তো ইচ্ছা করে কিছু করিনাই। তবে মায়ের কথা শুনে আমি ওকে নিয়ে সমুদ্রের ধারে ঘুরতে গিয়েছিলাম। যেদিন প্রথম স্রোত কাটিয়ে সৈকত ধরে হাটছিলাম তখন খেয়াল করলাম ও সমুদ্র না দেখে আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে। আমি হেসে ওকে জিজ্ঞাসা করলাম, “আমাকে দেখছো কেন?”
ও লজ্জা পেয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে বললো, “আপনি আমার সমুদ্র তাই!”
আমি বললাম, “আমি হলাম ডেড সী। কোন স্রোত নেই। নির্জলা, নির্বিষ, নিরাকাংক্ষী। আমাকে দেখে লাভ নাই। আসল সমুদ্র দেখো”।
ও হেসে বললো, “এমন করে বলেন কেন সবসময়? কাউকে হারিয়েছেন তাই না? ভালোবাসতেন অনেক?”

আমি বললাম, “এ নিয়ে কিছু বলতে চাইনা।যেদিন মনে হবে ভেতরের আঘাতটা শুকিয়ে গেছে, না খোচালে আর ব্যথা হয়না সেদিন নাহয় আমরা এ নিয়ে কথা বলবো”।
রুমার দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও বড় বড় চোখ করে খুব আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে। শুনতে চাইছে আমিও কাউকে ভালোবাসতে পারতাম কিনা। মেয়েটা এতো সহজ ভাবে ওর চোখ দিয়ে সব বুঝিয়ে দেয়, কথাই বলতে হয়না। আমার ওর জন্য মায়া হয়।কিন্তু ভালোবাসাটা মনে হয় হয়না।আমি অন্য দিকে পাশ ফিরিয়ে তাকালাম।ঠিক সেইমুহূর্তে মনে হয় আমার নিঃশ্বাসটা কেউ চেপে ধরলো। সামনে ফাইযা হেঁটে যাচ্ছে, একবার মনে হয় আমাকে দেখলো। একটু হেসে আবার চলে গেলো। আমি একবার রুমার দিকে একবার সমুদ্রের দিকে তাকালাম। নাহ এইটা তো সিনেমা না যে দিনে দুপুরে আমি হারানো প্রেমিকাকে আশেপাশে ঘুরঘুর করতে দেখবো। আমি উঠে ফাইযা যেদিকে গেলো সেখানে হাঁটা দিলাম। রুমাকে বললাম যেন একটু অপেক্ষা করে।

একটু হেঁটে সামনে একটা ডাবের দোকানের সামনে ওকে দেখলাম। আমাকে দেখে অন্য দিকে চোখ ফিরিয়ে হাসলো।আমি সামনে এগিয়ে বললাম, “কেমন আছো? দেখা হওয়ার কথা ছিলোনা, কিন্তু হয়েই গেল”।
ফাইযা হেসে ফেললো। এক চুমুক ডাবের পানি খেয়ে বললো, “বউ নিয়ে খুব ঘুরছো?”
আমি হেসে বললাম, “মায়ের জোরাজুরিতে আসতে বাধ্য হলাম। তোমার সাথে মনে হয় প্রায় চার বছর পর দেখা হলো। স্বামীর সাথে এসেছো? আদনান তো না?”

ফাইযা আমার দিকে ভ্রু উচিয়ে তাকিয়ে বললো, “কি বলতে চাচ্ছো? এখনো ভাবো আমি ছেলেদের ধোঁকা দিয়ে বেড়াই হা?”
আমি অনেকদিন পর হো হো করে হাসলাম।বললাম, “তুমি এতো সুন্দর বলা যায়না কখন কে পটিয়ে ফেলে”।
ফাইযা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো, “আমাকে এখনো সুন্দর লাগে?”
আমি ওকে বললাম, “যাই। রুমা একা একা বসে আছে অনেকক্ষণ। মেয়েটা খুব সরল সোজা। একা থাকতে ভয় পায়”।
যাওয়ার আগে ফাইযাকে আমি কোথায় থাকি বলে চলে আসলাম। রুমা দেখলাম সমুদ্রের পার ধরে হাটছে। ওকে দৌড়ে যেয়ে বললাম, “স্যরি। পুরনো একজন বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে গেলো”।

রুমা আমার দিকে না তাকিয়ে পা দিয়ে বালু সরাতে সরাতে বললো, “একটা অদ্ভুত ব্যাপার জানেন। আমার সবসময় মনে হয় আপনি পাশেই দাঁড়িয়ে থাকেন। দূরে গেলেও। আমি হারিয়ে যাবোনা সমস্যা নেই। কোথাও যেতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন”।
আমি চশমার কাঁচটা পরিষ্কার করতে করতে বললাম, “আজ দুপুরে চলো কোরাল মাছের বারবিকিউ খাই। হোটেলের পাশেই একটা বারবিকিউ করে এমন একটা দোকান আছে। যাবে?”
ও বললো, “যেখানে নেবেন সেখানেই যাবো। না বলেছি কখনো?”
এর পরের দুদিন আমার সাথে ফাইযার আর দেখাই হলোনা। আমিও এই কয়েকদিন ঘুমাতেই পারলাম না। ওর সাথে আর কথা হবেনা, দেখা হবেনা মনে হলেই কেমন যেন লাগছিলো।কোথাও একটা ভুল হচ্ছিলো, আমি জানতাম।ওর সাথে দেখা হয়ার ইচ্ছাটা আমার জন্য যন্ত্রণাদায়ক ছিলো। আমি এখন অনেক ভিন্ন একটা পথে হাঁটছি। এই পথের প্রতিটা পাড়ে ওর ছবি টানানো, কিন্তু আমার দেখার অনুমতি নেই।

ঠিক যেদিন চলে যাবো সেদিন দেখলাম ফাইযা আমার হোটেলের লবিতে বসে আছে। আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমি ওর কাছে যেয়ে বললাম, “দেখা আবার হয়ে গেলো”।
ফাইযা আমাকে বললো, “তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। চলো ওদিকে যেয়ে একটু কথা বলি”।
আমি তাড়াহুড়ো করে বের হয়ে গেলাম। ওর সাথে দূরের এক সৈকতে যেয়ে বসে জিজ্ঞাসা করলাম, “কি বলবে?”
ফাইযা আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো বড় বড় চোখ করে। কতদিন ওর এই দৃষ্টি দেখিনি। আমি প্রায়ই অবাক হয়ে ভাবি ওর সাথে আমার সম্পর্কটা কি ছিলো। আমি কি সত্যিই ওর শুধু বন্ধু ছিলাম। যাকে এইভাবে পাগলের মত চাইতাম সে কি কখনো আমাকে একটুও ওভাবে চায়নি?এসব যখন ভাবছি তখন ফাইযা অনেকক্ষণের নীরবতা ভেঙ্গে বললো, “এখনো আমাকে মনে পড়ে তোমার?”
উত্তরটা কিভাবে দেবো জানিনা। ওকে বললাম, “তোমার নামটাও জানো ভুলে গেছি? কি যেন ছিলো?”
ও হাসছে, আমিও ওর দিকে তাকিয়ে হাসছিলাম। জিজ্ঞাসা করলাম, “বিয়ের পর জীবন কেমন কাটছে?”
ও অন্য দিকে তাকিয়ে বললো, “যদি বলি বিয়ে করতে পারিনি। কাউকে ঠিকমত ভালোবাসতেই পারিনি”।
আমি ওর দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম। ও একটু থেমে আবার বললো, “তোমার সাথে সেদিন শেষ দেখা হওয়ার পর আমার কিছু একটা হয়েছিলো। তুমি যখন দিনের পর দিন আমার সাথে ছিলে, আমার সব কথা শুনতে, আমার চোখের দিকে তাকিয়ে তোমার চোখ দিয়ে পাগলের মত ভালোবাসতে সেই সবকিছু একসাথে সামনে হাজির হয়ে গেলো। নিজের সাথে খুব যুদ্ধ করেছি। একসময় হাল ছেড়ে দিয়ে বলেছি, আর না। নিজের মত করেই এখন একটু বাঁচি না হয়”।
আমি হেসে বললাম, “আমার সাথে একবারো তো যোগাযোগ করোনি”।
ও বললো, “পারিনি। কি যেন একটা ভয় আটকে রাখতো। সত্যিই সাহস করতে পারিনি।আচ্ছা তোমার বউটাকে দেখলাম। কি চমৎকার দেখতে। চোখগুলো খুব মায়া মায়া। অনেক ভালোবাসো ওকে?”

আমি উত্তর দিলাম না। অনেক কথা মনে পড়ে গেলো। এই মানুষটাকে আবার এতো কাছ থেকে দেখবো ভাবতেই পারিনি।আমি ওকে ভালোবাসতাম, এখনো যে প্রচন্ড ভালোবাসি এটা বলার মত সাহস বা পরিস্থিতি কোনটাই আর ছিলোনা। হ্যা, ওকে বলতে চাচ্ছিলাম রাতে ঘুমাবার আগে খুব মনে পড়ে ওর আমার দিকে তাকিয়ে থাকা মুহূর্তগুলো। যার সাথে ভালোবাসাটা হয়, সে তাকিয়ে থাকলে আকাশটা খুব নীলচে হয়ে যায়। মাঝে মাঝে একগুচ্ছ মেঘ জানান দিয়ে যায়, ওর চোখে আয়না আছে। নিজের ভেতরের রূপটা দেখে নাও। কারণ অধিকারটা যে শুধু তোমার।

আমি দাঁড়িয়ে পড়ি। ফাইযাকে বলি, “আরেকদিন কথা হবে নাহয়। এখন যাই”।
ফাইযা আমার হাত ধরে বলে, “আরেকটু বসো। তোমাকে কতদিন পর দেখলাম। আমি ভেতর ভেতর একটা অন্য মানুষ হয়ে গেছি জানো। তোমাকে দেখে আবার নিজের পুরনো আমিটাকে কাছ থেকে অনুভব করছি।”
আমি আবার ওর পাশে বসলাম। কেউ কোন কথা বললাম না। অথচ সেই নিস্তব্ধতায় কত কথা, কত গল্প উড়ে বেড়াচ্ছিলো কাছ ঘেষে। ফাইযা আমার হাতটা ধরেই বসে থাকলো। মনে হচ্ছে যেন ও আমার ভেতরটা স্পর্শ করে আছে। যেই কথাগুলো ওকে বলা হয়নি সে সবগুলো অনুভব করছে। আমি আকাশটা যতক্ষণ দেখা যায় ততক্ষণ ওর পাশে বসে থাকলাম।
রাতে রুমাকে নিয়ে যখন বাসে উঠলাম, রুমা ওর ব্যাগ থেকে আমার জন্য একটা বাদাম চকোলেটের প্যাকেট বের করে বললো, “আপনার জন্য আলাদা করে রেখে দিছিলাম। আপনি তো রাতে তেমন কিছু খান নাই, দুটো চকোলেট দেই”।

মাঝে মাঝে রুমা আমার সাথে বাচ্চাদের মত করে।এই যেমন এখন করছে। আমি যদি ওকে এখন বলি, চকোলেট খাবো। সে কিন্তু আমাকে শুধু চকোলেট বের করে দিবেনা। সে মোড়ক ছিড়বে তারপর আমাকে ভয়ে ভয়ে বলবে খাইয়ে দেই? সে প্রায়ই আমার সাথে এমন করে। আমি ব্যাপারটায় একটু বিরক্ত বোধ করি। কিন্তু ওকে কিছু বলে মন ভাঙ্গিনা। আজকে মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। ফাইযাকে যাওয়ার আগে আমার ফোন নম্বর দিয়ে এসেছি। ও আমাকে বলেছে ঢাকা যেয়ে ফোন করবে। আমি বুঝতে পারছিলাম না ওর সাথে আবার এভাবে যোগাযোগ হওয়াটা কতটা শোভনীয়। কিন্তু আমি ওকে এড়াতে পারছিনা। খুব অস্থির লাগছে, ভয় হচ্ছে। রুমাকে কি বলা দরকার ফাইযার কথা? আমি কখনো এ প্রসঙ্গে ওর সাথে কথা বলিনি। মনে হয়নি কখনো বলার দরকার আছে।
আমি কিছু বলার আগেই রুমা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, “আপনাকে আমি ছেড়ে চলে যাবো। প্রায় তিন বছর অনেক কষ্ট করলেন আমার জন্য”।

আমি ওর দিকে অবাক হয়ে তাকালাম। ও কি ফাইযার কথা জানে? না বুঝতে পেরে জিজ্ঞাসা করলাম, “হঠাৎ কেন এমন বলছো?”
ও বললো, “আপনি যখন আপনার ল্যাপটপে প্রায়ই উনাকে দেখতেন আমি ভাবিনি সামনে উনি দেখতে এতো সুন্দর হবেন। আজকে একা হাঁটতে হাঁটতে আমি যখন সমুদ্রের ধারে বেড়াতে যাচ্ছিলাম তখন হঠাৎ দেখলাম আপনারা এক সাথে বসে আছেন। উনি যেভাবে শক্ত করে আপনার হাত ধরে বসে ছিলো আমার না দৃশ্যটা খুব সুন্দর লাগছিলো”।
আমি রুমার হাত ধরে ওকে বললাম, “আমি দুঃখিত তোমাকে কষ্ট দিয়ে থাকলে। তোমাকে আগে আমি ওর ব্যাপারে কিছু বলিনি”।
রুমা হেসে দিলো। বললো, “আপনি যখন ওর ছবির দিকে একপলকে তাকিয়ে থাকতেন আমি অনেক ভালোবাসা দেখতাম আপনার চোখে।এই ভালোবাসাটা আমার জন্য আপনার কখনোই হয়নি। যখন আপনার সাথে বিয়ে হলো, আমি কিন্তু একবারও ভাবিনি আপনার অন্য কাউকে ভালো লাগতে পারে। আমি একবারে স্বার্থপরের মত শুধু নিজের ভালোবাসার কথাই ভাবছিলাম। আপনি আমার জন্য অনেক করেছেন, আপনাকে ধন্যবাদ”।

আমি ক্লান্ত স্বরে বললাম, “আমি অনেক চেষ্টা করেছি। জানি তোমার সাথে অন্যায় করেছি। ওকে যখন থেকে ভালোবাসা ব্যাপারটা বুঝতে শুরু করেছি তখন থেকে চাইতাম। ওকে ভুলতে পারিনা। প্রতিটাদিন , প্রতিটামুহূর্ত ও আমার সমস্ত সত্ত্বায় আঘাত করে। আমি পালিয়ে বাঁচতে পারিনা। জানিনা কি করবো!”
রুমা বাসের জানালাটা হালকা একটু খুলে দিলো। আমাকে আস্তে আস্তে বললো, “আমার থেকে মুক্তি দিলাম। সে যদি এখনো আপনার জন্য অপেক্ষা করে, আপনার সুখী হতে বাধা কই?”

ঢাকায় পৌছালাম পরের দিন ভোর ছয়টায়। বাসায় যেয়ে দেখি মা অনেক কিছু রান্না করে রেখেছে। রুমা কিছু খেলোনা। আমার খুব ক্লান্ত লাগছিলো। একটু খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লাম। রুমাকে শুধু একবার বললাম কিছু খেয়ে নিতে। রুমা আমার দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বললো, “আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন। পাঞ্জাবী একটা স্ত্রী করে ওয়াড্রোবের সেকেন্ড ড্রয়ারে রেখে দিয়েছি। আজ শুক্রবার, জুম’আর নামাজ আছে”।
ঘুম থেকে যখন উঠলাম তখন বেলা একটা বিশ। আমি কোনরকমে ওযু করে নামাযের জন্য দৌড় দিলাম। বাসায় ফিরে রুমাকে ডাকলাম এক কাপ চা দেয়ার জন্য। মা এসে চা দিয়ে বললো, “রুমা ওর বাবার বাসায় গেছে। বললো, খুব জরুরী একটা কাজ আছে”।
আমি মাথা নেড়ে বললাম, “মা কিছু খেতে দাও। ভর্তা আছে?”
মা বললো, “না ভর্তা তো নেই। রুমা বলে গেছিলো তুই বাসায় আসলে ডাল আর ভর্তা চাইবি। আমি ডাল রান্না করে রাখছি, ভর্তাটা ভুলেই গেছি”।

আমি মার দিকে তাকিয়ে হেসে বললাম, “সমস্যা নাই। যা আছে তাই দাও। সকালে ঠিকমত নাস্তা করিনাই। খুব ক্ষুধা লাগছে”।
দুপুরে ভাত খেলাম, পেটটা ভরলো। কিন্তু কেন যেন মনটা ভরলোনা। নিজ ঘরে এসে শুয়ে পড়লাম। এই সময় রুমা আমাকে এক কাপ লেবু চা খাওয়ায়। তারপর আমার পাশে শুয়ে মোটা মোটা উপন্যাসের বই পড়ে। টেনিদা থেকে ফালুদা, অজিমভ বা সেল্ডন সবই সে পড়ে। আমি মাঝে মাঝে গল্প শুনতে চাইলে আমাকে শোনাতো। সারাটা বিকেল এই সেই ভাবতে ভাবতে কখন যে ওকে ফোন করলাম টেরই পেলাম না। ফোন ধরলে রুমাকে জিজ্ঞাসা করলাম, “তোমার বাসার সবাই ভালো?”
রুমা বললো, “হুম ভালো। আপনি খেয়ে নিয়েছেন?”
আমি বললাম, “রাতে তোমাকে নিয়ে আসতে হবে?
রুমা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, “আমি আর আসবোনা। আমাদের কথা হয়েছিলো বাসে, ভুলে গেছেন? ভালো থাকুন”।

আম কিছু বলার আগেই ও ফোন কেটে দিলো। মেজাজটা খুব খারাপ হয়ে গেলো। যাক গা, যে যার মত যা ইচ্ছা করুক। আমার যদিও অস্থির লাগছিলো। একবার মনে হলো, আচ্ছা ফাইযাকে একবার ফোন করি।তারপর ইচ্ছেটা আবার উবে গেলো। ভালোই আছে হয়তো।আচ্ছা রুমার সাথে একবার ফাইযার ব্যাপারটা ঠিকমত বুঝিয়ে বলা দরকার। ও হয়তো ভুল বুঝছে। আমার সাথে ফাইযার এখন আর সম্ভব না। আমি বিয়ে করে ফেলেছি, এখন আর পিছে ফিরে যাওয়া যায়না।

পরদিন সকালে রুমাদের বাসায় গেলাম। যেয়ে দেখলাম রুমা ওর মায়ের সাথে কি নিয়ে যেন হাসাহাসি করছে।আমার দেখে শ্বাশুড়ি আম্মা বললো, “আমার জন্য এত সুন্দর একটা শাল কিনলা তোমাকে অনেক ধন্যবাদ”।
আমি হেসে বললাম, “আম্মা আমি আর ও দুজনই পছন্দ করে কিনেছি। আব্বা কি বাসায়?”
উনি হেসে বললেন, “উনি আজকাল হোমিওপ্যাথির কোর্স করেন কোথায় যেন! সপ্তাহে পাচদিন অফিস আর দুইদিন এইসব আজেবাজে কাজ। আমার বলে এই যুবক বয়সে যদি এইসব না করে তবে কবে করবে? দেখো ৫১ বছরের বৃদ্ধ লোক এইসব পাগলামী করে বেড়ায়। বাবা সকালে নাস্তা করছো?”
আমি মাথা নেড়ে বুঝালাম খাওয়া হয়েছে। রুমার দিকে তাকিয়ে বললাম, “তোমার সাথে আজকে মার্কেটে যাবো দুপুরে। কিছু কেনাকাটা আছে”।
রুমা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো। ও আশা করেনাই আমি বাসায় আসবো। একটু গুছিয়ে নিয়ে মাথা নেড়ে বললো, “আচ্ছা”।
রুমার মা চলে গেলে আমি ওকে বললাম, “তুমি বোধহয় আমাকে ভুল বুঝতেছো। আমি তোমাকে বিয়ে করেছি, অন্য কারো কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য করিনি”।
রুমা আমাকে বললো, “এসব নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছা হচ্ছেনা। চা খাবেন?”

ও কখনো আমাকে এমন কঠিনভাবে কিছু বলেনি। আমি অবাক হয়ে ওর আরেকটা রূপ দেখছিলাম। ওকে বললাম, “তোমাকে কোন কিছু নিয়ে জোর করার অধিকার নেই। অনুরোধ করার অধিকার থাকলে বলবো, বাসায় চলো। তোমার সাথে কথা বলা দরকার”।
রুমা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, “আমাকে এখন প্রয়োজন মনে হচ্ছে, তাই না। আমরা একটা ভুল প্রায়ই করি জানেন। আমরা ভাবি, ভালোবাসলেই একজনের সাথে আরেকজন সারাজীবন একসাথে থাকতে পারে। ব্যাপারটা এমন না। শুধু ভালোবাসলেই তো একসাথে থাকা যায়না। ভালোবাসার মাঝে দায়িত্ব ব্যাপারটা থাকা লাগে। শুধু ভালোবাসলে চলেনা, ভালো রাখার দায়িত্বটাও নিতে হয়। আপনি সেটা কখনো নেননি”।

আমি একটু রেগে বললাম, “আমি তোমাকে কখনো বলিনি বিয়ের আগে যে তোমার দায়িত্ব আমার নিতে হবে। যখন তুমি তোমার বাসা থেকে আমার সাথে বেরিয়ে এলে, তখন আমি একজনকে ভালোবাসতাম। আমার মানসিক অবস্থা অন্য কাউকে ভালোবাসার, দায়িত্ব নেয়ার মত ছিলোনা”।

রুমা বললো, “ছিলোনা মানলাম। কিন্তু আপনি তো জানতেন, বুঝতেন আমি আপনাকে কতটা চাই। সেই চাওয়াটাকেও কখনো সম্মান করেন নাই।কোন সমস্যা ছিলোনা। আমি আপনার সব দায়িত্ব বুঝে নিয়েছিলাম। আমি ভার্সিটিতে সকাল আটটায় বেরিয়ে যাওয়ার আগে আপনার জন্য নাশতা বানিয়ে যেতাম। আপনি যে বাদামী আটার রুটি পছন্দ করতেন তা জেনে নিজে দূরের বাজার থেকে প্রতিসপ্তাহে কিনে আনতাম। আপনার কোন কোন খাবার পছন্দ, কোন রঙের জামা পছন্দ, কোথায় যেতে পছন্দ করতেন একটা কথাও আপনি আমাকে কখনো বলেননি। আমি নিজ থেকে শিখে নিয়েছি। কারণ আপনাকে ভালো রাখতে চাইতাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ হাত ধোয়ার গামছাটাও আমি আপনার জন্য যত্ন করে রাখতাম। গত তিনটা বছর আপনি আপনার মাঝে ডুবে ছিলেন। আর আমি আপনাকে আরো ভালোবাসছি। আশা করতাম, একবার হলেও যেই মেয়েটার ছবি প্রায়ই দেখতেন মনোযোগ দিয়ে সেই মনোযোগটা আমাকে দেবেন। কারণ আমি সত্যিই আপনাকে ছাড়া কাউকে চিনি নাই, জানি নাই, বুঝিনাই। কিন্তু কি হলো দেখেন না। ওই বয়সে তো অনেকেই অনেককে ভালোবাসতে পারে। কিন্তু আমি তো শুধু আপনাকে ভালোবাসিনাই, আপনার সব দায়িত্বগুলোও বুঝে নিছি। আমাকে একবার ভালোবাসতে মনে চাইলোনা?”

আমি রুমার হাত ধরে বললাম, “আমার ভুল হয়েছে। তুমি মাত্র কয়েকটা ঘন্টা ছিলেনা, আমার মনে হয়েছে আমার সব ওলটপালোট হয়ে গেছে। আমি ফাইযাকে ভালোবাসতাম, ওর সাথে একটা সুন্দর সময় কাটিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি ঠিক বলছো, ভালোবাসলেই তো হয়না। একজনের প্রতি দায়িত্ব নিতে হয়। তাই হয়তো কয়েকটা মুহূর্তেই মনে হলো, তোমাকে ছাড়া আমি কতটা ছন্নছাড়া। আমি নিজেও বুঝিনি আমি তোমাকে কতটা অনুভব করি। কাল রাতে তুমি পাশে শুয়ে ছিলেনা। ঘুমাতে পারিনি। মনে হয়েছে কি যেন নেই। এটা আসলে ভালোবাসা না। অন্য কিছু। আমি জানিনা কি। কিন্তু এটুকু বুঝতে পারছি, আমার তোমাকে খুব দরকার। সব কিছু থেকে অনেক বেশি”।
রুমা বললো, “আমি জানতাম আপনি আসবেন। একদিন বুঝবেন। কিন্তু আমার এখন খুব একা থাকা দরকার। আমি অনেক ক্লান্ত। আপনি আমাকে কয়েকটা দিন একা থাকতে দিন।মনটা শান্ত হলে আমি আপনাকে ফোন দেবো”।
আমি রুমার বাসা থেকে চলে আসলাম।বাসায় যেয়ে নিজের রুমে শুয়ে সব ভাবছিলাম।অর্ধেকটা জীবন পার হয়ে গেছে, কিন্তু পিছনে ফিরে তাকালে মনে হয় ভুল আর ভুল। অদ্ভুত ব্যাপার সেই সময় ফাইযার ফোন এলো। আমি ফোন ধরে জিজ্ঞাসা করলাম, “ভালো আছো?”

ফাইযা কিছু খাচ্ছিলো মনে হয়। আমাকে জিজ্ঞাসা করলো, “ঢাকায় যেয়ে আর যোগাযোগ করোনি কেন?”
আমি ওকে বললাম, “নিজের সাথে যোগাযোগ নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো।আগে সেটা ঠিক করছিলাম। তুমি কেমন আছো?”
ফাইযা হেসে ফেললো। আমাকে বললো, “কবি সাহিত্যিক হয়ে যাচ্ছো দেখি”।
আমি হাসির প্রত্যুত্তর দিয়ে বললাম, “পাপ করেছি। তোমাকে ভালোবেসে অপরাধ করেছিলাম, আর যে আমাকে সত্যিই ভালোবাসলো তার জন্য আমার ভেতরে যা ছিলো তা না বুঝে পাপ করেছি।আমার বউটা সত্যি কথাই বলেছে, শুধু ভালোবাসলেই হয়না। হাত ধরা জানতে হয়। তুমি একসময় আমার হাত ধরতে পারোনি। আর ও আমার হাতটা কখনোই ছাড়তে পারেনি। ফাইযা, আমি ফোনটা রাখছি। ভালো থেকো”।

ফাইযা কিছু বলার আগে ফোনটা রেখে দিলাম। একেবারে বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে থাকলাম। আমার মনে হচ্ছে, আমার জীবনের প্রত্যেকটা গল্পের সারমর্মটা আমি ঠিক বুঝেছি। আমি আমরা সবাই অল্প কিছুদিনের জন্য বাঁচি। মানুষ হিসেবে যখন বাঁচতে চাই তখন কাউকে ভালোবাসতে হয়।মৃত আত্না নিয়ে বাঁচা যায়না। আমি রুমাকে প্রতিদিন অবজ্ঞা করেছি, ওর ভালোবাসার অর্থ না বোঝার ভান করেছি কারণ আমি তো তখন বেঁচে ছিলাম না। কিন্তু ও ঠিক আমার অক্সিজেন হয়ে আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলো। আমাকে প্রায়রাতে ঠিক এই সময়ে গুনগুন করে কবিতা শোনাতো। সেই ছোট্টবেলার সোনার তরী কবিতাটা মাঝে মাঝেই ও আমাকে বলতো। আমার তখন নিজেকে একলা মাঝিটার মত লাগতো। অথচ খেয়াল করিনি আরেকজন একলা চলা মাঝি যে আমার পাশেই প্রতিদিন বাস করে। তার হৃদয়ের সব ভালোবাসা আমাকে, শুধু আমাকে বলতো গ্রহণ করার জন্য। রুমা যদি একবার এখন পাশে এসে বসে ওকে আমি খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে থাকবো। আমার মনুষ্য জীবনে যে ভালোবাসাটা আমাকে বাকিটা জীবন মানুষ হয়ে বাঁচতে দিবে তাকে স্পর্শ করার আনন্দটা কতটা মহান হতে পারে খুব বুঝতে পারছি। আমি জানিনা আমি কবে বিদায় নেব, তবে যতদিন বাঁচবো ততদিন আমি শুধু ওর জন্য মানুষ হয়ে বাঁচবো।

হঠাৎ শুনলাম দরজায় ঠকঠক শব্দ। বুঝতে পারলাম এটা রুমা ছাড়া আর কেউ না। দরজা খুলে দেখি ও হাতে চা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। লেবু চায়ের গন্ধ থেকেও ওর গায়ের গন্ধটা আমার কাছে তীব্র মনে হচ্ছে। স্বচ্ছ চায়ের কাপে কমলা রঙের আভাটা থেকে ওর চোখে মুখে খেলা করা কমলা রংটা আমার কাছে বেশি আপন মনে হচ্ছে। আমি রুমার হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে ওকে সত্যি সত্যি জড়িয়ে ধরি। ওকে জিজ্ঞাসা করি, “এতো ভালোবাসো কেমন করে? যখন একটু দূরে গেলে তখনি বোকা আমি তোমার শূণ্যতাটা বুঝলাম। সব অবুঝের মত আমিও অনেক দেরী করে বুঝলাম জানো”।
রুমা মনে হয় হতবিহবল হয়ে কিছু বলতে পারছিলোনা। আমাকে বললো, “ জানতাম আপনি আমাকে ছাড়া চলতে পারবেন না। তারপর একদিন দেখবো অযত্নে মরেই গেছেন। তাই আপনাকে দয়া করতে আসলাম। কি করবো তিনবার কবুল বলে বিয়ে করেছি”।
আমি বললাম, “তোমাকে আরেকবার বিয়ে করতে চাই।প্রতিদিন একবার করে তোমাকে ঘুম থেকে উঠে তোমাকে দেখবো আর তিনবার কবুল বলবো”।


রুমার দিকে তাকিয়ে দেখি ও কাঁদছে। আমাকে ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বললো, “আর কখনো আমি ছাড়া আর কারো হাত ধরবেন না কথা দেন। যদি আর এমনটা দেখি আমি একেবারে চলে যাবো”।
আমি ওর মাথায় হাত দিয়ে বললাম,” শুধু তোমার হাত ধরবো আর তোমার হৃদয়ে ছুয়ে থাকবো। আর কাউকে না”।


রুমাকে আজকে আমি চাঁদের আলোয় দেখি। আমি ঠিক জানি যখন চাঁদটা লুকিয়ে থাকবে তখনো ওর মুখের রুপালী আভাটা আমি ঠিক খুজে নিতে পারবো।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৭ রাত ১১:৪৫
৮টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×