somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উৎসর্গ ত্রিশোনকু : মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বিষয়ে আপনার বিভ্রান্তি দূর হোক

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ ভোর ৫:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটি পোস্টে আমার একটি মন্তব্য প্রসঙ্গে আপনার বিপরীত মত লক্ষ্য করলাম। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক, যা আমি শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বলে উল্লেখ করেছি এবং ওসমানীকে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি বলেছি। এ নিয়ে আগে অনেক বিতর্ক হয়েছে এবং একটা সুরাহাতে আমরা পৌছেছিলাম। লিংক চেয়েছিলেন এখানে তার জিস্টটাই তুলে দিলাম।

মুক্তিযুদ্ধের সময় ওসমানী:
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতেই পাকিস্তানী একটি কমান্ডো বাহিনী বনানীতে ওসমানীর বাড়িতে হামলা চালায়। কিন্তু ওসমানী সৌভাগ্যক্রমে পালাতে পারেন। এরপর ছদ্মবেশে দীর্ঘপথ অতিক্রম কুমিল্লার সালদা নদীর অববাহিকায় পৌছে বিক্ষিপ্তভাবে যুদ্ধরত বাঙালী যোদ্ধাদের সংগঠিত করেন। ১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হলে ওসমানী এক্টিভ লিস্টে আহূত হন। ১২ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকারের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার নাম ঘোষণা করা হয়। এতে রাষ্ট্রপ্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বলে ঘোষনা করা হয়। এবং বাংলাদেশ সরকার এক ঘোষনায় ওসমানীকে মেজর জেনারেল পদে উন্নীত করে ১২ এপ্রিল থেকে মন্ত্রীর মর্যাদাসহ বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত করে। ১৯৭১ সালের ১১ জুলাই মুজিবনগরে উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে সশস্ত্র বাহিনীর সদর দপ্তর গঠন করা হয়। সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে ওসমানিকে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে নিযুক্তি দেওয়া হয়। তার পেশাগত ক্রমিক নম্বর ৮২১। একই বৈঠকে কর্ণেল আব্দুর রব সেনা প্রধান এবং গ্রুপ ক্যাপ্টেন একে খন্দকার উপ-সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ পান। ওসমানীর এ.ডি.সি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় লেফটেনেন্ট শেখ কামালকে (শেখ মুজিবের বড় ছেলে, পেশাভিত্তিক ক্রমিক নং-৮৬৫)। ব্যক্তিগত সহকারী ছিলেন অফিসার ক্যাডেট (৯৯৪) দেওয়ান গাউস আলী। ২১ নভেম্বর ‘৭১ বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ সিদ্ধান্তে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর সমন্বয়ে মিত্রবাহিনীর যৌথ কমান্ড গঠিত হয়। আর এই কমান্ডের অধিনায়ক ছিলেন লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা। ওসমানী ছিলেন তার অধীনস্থ। ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় পর্যন্ত এই কমান্ড কার্যকর ছিলো। পাকিস্তান সেনাবাহিনী অরোরার কাছেই আত্মসমর্পণ করে। প্রাসঙ্গিক তথ্য ১৫ ডিসেম্বর ঢাকার উপকণ্ঠে এসে ঘাটি গাড়া মিত্রবাহিনীর জেনারেল মানেক শ’র কাছে পূর্ব পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রধান লে. জেনারেল নিয়াজী এক টেলিগ্রাম পাঠিয়ে আত্মসমর্পণ করতে স্বীকৃতি জানান। মানেক শ আত্মসমর্পনের সময় নির্ধারণ করে দেন।

মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক প্রশ্নে তাজউদ্দিনের বক্তব্য :


উদ্ধৃতিটুকু নেওয়া হয়েছে নজরুল ইসলামের লেখা একাত্তরের রণাঙ্গন, অকথিত কিছু কথা বইটি থেকে : ... এসব কথার জবাব দেওয়ার এক ফাক দিয়ে আমি বললাম, ওরা (ভারতীয়রা) বলছে কেন আমরা আমাদের প্রধান সেনাপতিকে ভারতীয় সেনাধ্যক্ষের সমপর্যায়ে উন্নীত করি না।
এরপর আপনি কি বললেন? প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞাসা করলেন। আমি বললাম, এটা সরকারের ব্যাপার, আমি এ সম্পর্কে কিছু বলতে পারি না।
প্রধানমন্ত্রী বললেন, ঠিকই বলেছেন। তবে আপনারও তো এ সম্পর্কে কৌতূহল থাকতে পারে। শুনুন, ওসমানী সাহেব ভারতীয় সেনা প্রধানদের মতো পরিপূর্ণ সামরিক ব্যক্তি নন। তিনি একটি রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং জাতীয় পরিষদের একজন নির্বাচিত সদস্য। এসব বিষয় চিন্তা করতে হবে। যাক এসব কথা যেন আর কোথাও আলোচনা না করেন। তবে এটা নয় যে আমি চাই না তিনি জেনারেল পদে উন্নীত হোন। আগে দেশ স্বাধীন হোক।
এরপর এ প্রসঙ্গ ছেড়ে তিনি আমার সম্পর্কে কথা বলেন। বললেন, ওসমানী সাহেবের বক্তৃতা-ভাষণ ইংরেজী থেকে আপনার বাংলায় অনুবাদ দেখলাম। আপনি কমান্ডার ইন চিফের (সিএনসি) বাংলা অনুবাদ করেছেন সর্বাধিনায়ক। সিএনসির বাংলা তরজমা কিন্তু সর্বাধিনায়ক নয়, প্রধান সেনাপতি। আমাদের সরকার সামরিক নয়। সামরিক সরকারের প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান সেনাপতি একই ব্যক্তি থাকেন। এজন্য প্রধান সামরিক শাসক ও প্রেসিডেন্ট তিনবাহিনীর পুরো দায়িত্বে থাকেন। এজন্যই তখন সেনাবাহিনী প্রধানকে সর্বাধিনায়ক বলা হয়। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় তিনবাহিনীর তিনজন প্রধান থাকেন। রাষ্ট্রপ্রতি তিন বাহিনীর সমন্বয়ক হিসেবে তিনিই হন সর্বাধিনায়ক।


আরো পড়তে পারেন
আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে অনুপস্থিতি নিয়ে জেনারেল এমএজি ওসমানীর বক্তব্য

মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি মোহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানীকে নিয়ে কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা
: বাংলাপিডিয়া
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ ভোর ৫:৩৫
১৩টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×