somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

অন্ধবিন্দু
বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৯ (১) ও ৩৯ (২)(ক) এবং মানবাধিকার সনদ(UDHR) এর অনুচ্ছেদ-১৯ ও অনুচ্ছেদ-২৭ বিশেষভাবে উল্লেখপূর্বক; “অন্ধবিন্দু”- ব্লগ পাতাটির লেখককর্তৃক গৃহীত ও ব্যবহৃত একটি ছদ্মনাম মাত্র।

ইন্টারস্টেলার(২০১৪): মহাকাব্যিক প্রত্যাবর্তন

২১ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ক্রিস্টোফার নোলান হলিউড-জিনিয়াসদের একজন। দর্শক এবং মুভি ক্রিটিকদের হ্যান্ডশেক করাতে বিশেষ পারদর্শীও বটে। দেখেশুনে কাজ করেন; যাতে গুণমান প্রকৃষ্ট থাকে। ভাবসাবে মাস্টারমাইন্ড। এই প্রতিভাধর চলচ্চিত্র পরিচালকের এখন মধ্যবয়স। মেমেন্টো, ইনসোমনীয়া কিংবা ইনসেপশন দেখার পর সন্দেহ থাকার কথা না, জানার বয়স আরও বেশি। বয়স যখন সাত/আট, কুবরিকের “২০০১: এ স্পেস ওডিসি” বিশ্বের অগণিত দর্শকের মতো তার মনেও হয়তো বিস্ময়ের পালক রেখে গিয়েছিলো। সেই পালক আজ যখন ডানা মেলে, খোলা নীল আকাশ ছেড়ে মহাজগতে উড়তে লাগলো; তিনি বানালেন “ইন্টারস্টেলার”

সায়েন্স ফিকশন মুভি প্রচুর হচ্ছে তবে এই ছবিটি দেখার পর দর্শক অন্তত নড়েচড়ে বসবেন। গুরুকে স্মরণ করে শিষ্য যা নির্মাণ করলেন তা সত্যিই অবিশ্বাস্য দুর্দান্ত এবং সমৃদ্ধ। পরিচালনা করার কথা ছিলো স্পিলবার্গের, নোলানের কাজ দেখে স্পিলবার্গ কেনও, খোদ কুবরিক (বেঁচে থাকলে) যোগ্য উত্তরসূরির পত্রখানা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলতেন ওয়েলডান মাই বয়, ওয়েলডান। রাইট ভ্রাতৃদ্বয়ের মতো নোলান এবং জোনাথনের নির্মাণযাত্রা সায়েন্স এবং কল্প-বিজ্ঞানপ্রিয় সিনেমাপিপাসুদের মুখে মুখে উচ্চারিত হবে একদিন !

আইনস্টাইন আলোতে পথ দেখে দেখে হকিং ও সাগানের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সহকর্মী তাত্ত্বিক পদার্থবিদ কিপ থ্রন পদার্থ বিজ্ঞানের নির্যাস ঢাললেন- ব্লাকহোলস, রিলেটিভিটি, সিঙ্গুলারিটি, এক্সট্রা ডায়মেনশনস, সময়-প্রহেলিকা … পদার্থ, অপদার্থ। কল্পনা, স্বপ্ন-ভালোবাসা আর মানুষের কথা জুড়ে দিলেন তারা দু’ভাই। ৭০এমএম আইএমএএক্স’র বদৌলতে আগ্রহোদ্দীপক চিন্তা-বিশালতার সব দৃশ্য গ্রহণ করতে লাগলেন ’ভান হয়্তেমা। উত্থান-পতনের শব্দসুর বাঁধলেন হান্স জিমার; কখনো বিকট কখনো মধুর। ম্যাথু ম্যকোনওহে’র অধি স্বচ্ছন্দ অভিনয়। অ্যান হ্যাথঅ্যাওয়ে’র কোমল-খেয়াল। মাকেন্জি ফয়’র বেদনামগ্ন অভিব্যক্তি ১৬৯ মিনিটব্যাপী সিনেমায় দর্শকদের কেবল বিনোদন দিয়ে গেলোনা; মানবীয়-স্পন্দন স্নিগ্ধতায় সিক্ত করলো।

গল্পটা সাদামাটা এবং পরিচিত কিন্তু নোলান কবির মতো বলে গেলেন- “কোনো মেঘ-বিনির্মুক্তা তারকাসমুজ্জ্বলা রজনীতে গৃহের বাহির হইয়া গগনমণ্ডলের প্রতি একবার দৃষ্টি নিক্ষেপ করিলে, চিন্তাশীল ব্যক্তিমাত্রেরই মনে কতকগুলি চিন্তার উদয় হইবেই হইবে। যে-সকল অগণ্য জ্যোতিষ্কমণ্ডল দ্বারা নভস্তল বিভূষিত হইয়া রহিয়াছে, তাহারা কি শূন্য না আমাদের ন্যায় জ্ঞান-ধর্ম-প্রেম-বিশিষ্ট উন্নত জীবদ্বারা পূর্ণ? প্রাণস্বরূপ পরমেশ্বরের বিচিত্র অনন্ত রাজ্যের মধ্যে এমন কি কোনো স্থান থাকিতে পারে যেখানে প্রাণের চিহ্ন নাই?”

বহির্জাগতিক প্রাণ অন্বেষক, প্রাণ বাঁচাতে প্রাণ-বিসর্জন; বুদ্ধিমান প্রাণীরা পিছপা হলেন না। ইনডিউরেন্স নামক ঘড়ির মতোন যানে চেপে কুপার ছুটলেন। উদ্দেশ্য- মনুষ্যজাতির ভবিষ্যৎ অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্নে প্রত্যুত্তর চাই। দর্শক দেখলেন ক্ষুদ্রবিবর (আইনস্টাইন-রোজেন সেতু)থেকে কৃষ্ণ বিবরের কল্পিত/কৃত্রিম রূপ। যমজ কূটাভাসে সময়ের মজার খেলা। ইলেকট্রন প্রোটন নিউট্রনের দৃশ্যমান জগতের বাইরেও তাত্ত্বিকপদার্থ বিজ্ঞানের রঙ্গমঞ্চ ! সুন্দরী রমণী এবং জ্বলন্ত উনুনের কথা বলে আইনস্টাইন সাহেব যে সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছিলেন; তার প্রতিচ্ছায়া। ধিকিধিকি মেঘ, রুপোলী ধূসর পর্বত অথবা মহাতরঙ্গের বিপ্লব। যার ধাপে ধাপে শক্ত-সামর্থ্য অনুমান, গভীর উপলব্ধি রয়েছে তবে আবোলতাবোল ভাবা যাবে না। ফিকশন হলেও নির্মাতা অন্তত ফ্যাক্টস ও থিওরির ব্যাপারে যথাসম্ভব গদ্যময় থাকার চেষ্টা করেছেন। হার্ডকোর সায়েন্স ফিকশন আপাত: দৃষ্টিতে কঠিন হলেও এর উচ্চাভিলাষী বক্তব্য আগামীর জন্য পাথেয় হয়ে থাকে। মুভিটিতে দেখানো ব্ল্যাকহোলের কেন্দ্রে যে কঠিন ধাঁধায়(সিঙ্গুলারিটি বা অনন্যতা) স্থান-কাল(স্পেসটাইম) এর বিরোধ ঘটার কথা ছিলো; এ নিয়ে অবশ্য নোলান এবং কিপ দু’জনেই বেশ সমালোচনার মুখে পড়েছেন। নোলান আশাবাদী তাই কুপার অসীম ঘনত্বেও ভেসে থাকলেন এবং …..। (বিশদ ব্যাখ্যায় সিনেমার মজা নষ্ট করতে চাইছে নে-গো, এখানেই থামছি)




মানবপ্রেম ভালোবাসা এবং মহামাধ্যাকর্ষণের মধ্যকার অন্তরঙ্গতা টেনে পরিচালক সর্বময় পরিব্যাপ্তি ও অবিরাম সৃষ্টির জয়োগানে মোহাবিষ্ট করলেন দর্শকদেরকে। কিন্তু দর্শকগণ শুনেন দিয়ে মন, সাম্রাজ্যবাদ-জঙ্গিবাদের বিষাক্ত থাবায় যে বা যারা প্রতিনিয়ত অনাসৃষ্টি ঘটিয়ে চলেছেন তাদের শ্রবণেন্দ্রি় কী দৈর্ঘ্য প্রস্থ উচ্চতায় শান্তির বাণী শুনতে পান ? শুনতেই হবে কারণ-

" We've always defined ourselves by the ability to overcome the impossible. And we count these moments. These moments when we dare to aim higher, to break barriers, to reach for the stars, to make the unknown known. We count these moments as our proudest achievements. But we lost all that. Or perhaps we've just forgotten that we are still pioneers. And we've barely begun. And that our greatest accomplishments cannot be behind us, because our destiny lies above us. "

সাগান বললেন, প্রশ্ন করার সাহস ও উত্তরের গভীরতায় যেমন বিজ্ঞান- সত্তাটির বসবাস। ড. রবার্ট এইচ গডার্ড এর কথায় এটা আজকের আশা এবং আগামীকালের বাস্তবতা এবং গতকালের স্বপ্ন। আমাদের জগদীশচন্দ্র বসু প্রচেষ্টাবদ্ধ হলেন- কোনো চেষ্টাই একেবারে বৃথা যায় না। আজ যাহা নিতান্ত ক্ষুদ্র মনে হয়, দুইদিন পরে তা হইতে মহৎ ফল উৎপন্ন হয় …






(একটি তাৎক্ষনিক মতপ্রকাশ)
অন্ধবিন্দু | সামহোয়‍্যার ইন...ব্লগ
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:০৭
২৮টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×