somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সন্ধ্যায় আমার খবর আছে (শেষ পর্ব )

২০ শে নভেম্বর, ২০১১ রাত ৮:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১ম পর্ব
২য় পর্ব


আযান দিয়ে দিয়েছে । আমি টিএসসির সামনে দাড়িয়ে আছি । মীমের আসার কথা এখনই । জানি না ও কি বলবে ।
যদি অপমান করে ? নাহ ! ও এমন টা করবে না । চিন্তাটা মাথা থেকে বের করে দিলাম । ও এমন মেয়েই না । তবুও মন থেকে অস্বস্তি ভাবটা গেল না কিছুতেই । জানি না কি বিব্রতকর অবস্থা আমার জন্য অপেক্ষা করছে ।
অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই মীম চলে আসল । রিক্সায় করে । ওর হল এখান থেকে মাত্র ২/৩ মিনিটের হাটার পথ । তবুও রিক্সায় । রিক্সা আমার সামনেই থামলো । আমি খানিকটা অস্বস্তি নিয়েই ওর দিকে তাকালাম ।
ওকে রিক্সা থেকে নামতে না দেখে আমি বললাম “নামবে না ?”
“ তুমি উঠে আসো ।“
আমি ওর পাশে বসলাম । রিক্সা চলতে শুরু করল ।
“আমরা কোথায় যাচ্ছি ?”
“ চল, গেলেই দেখবা ।“
আমি চুপ হয়ে যাই । আবার সেই অস্বস্তিটা ফিরে আসে । ও যে কি বলবে কে জানে ? আল্লাহ মান ইজ্জত রক্ষা কইরো ।
মীম বলল “ কি এতো ভাবছো ? আর এরকম জড়সড় হয়ে বসেছো কেন ? ইজি হয়ে বসো । আর তোমার কি আনইজি লাগছে কোন কারনে ।“
“ না । আনইজি লাগবে কোন ? আনইজি লাগার কোন কারন নাই ।“
কিন্তু আমার কণ্ঠস্বরে কিছু ছিল । মীম হেসে ফেলল । আমিও খানিকটা হাসলাম বোকার মত । রিক্সা থামল লেক পাড়ের কোন একটা রেস্টুরেন্টের সামনে । কোন দিন আসিও নাই আমি এদিকটায় । আর কি এক বিদ্গুটে নাম রেস্টুরেন্টার, ঠিক মত উচ্চারনও করতে পারলাম না ।
“ এখানে কেন ?”
ও কেবল হাসলো । আমি বললাম “আজকের দিনে এরকম জায়গা গুলোতে খুব ভীড় থাকে ।“
ও আবার হাসলো । বলল “এসো তো ।“
এসব রেস্টুরেন্টে ঢুকতে আমার খানিকটা ভয়ই লাগে । আল্লাহই জানে cost কেমন হবে । মানিব্যাগে যা আছে তা দিয়ে মান সম্মান টিকবে ? কে জানে ? আবারও নিজের উপর খুব রাগ হল । কেন যে ঐ কাজটা করতে গেলাম । আজ আমার সত্যি সত্যি খবর আছে । হয় মীম বাঁশ দেবে নয়তো এই রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার বাঁশ দিবে ! ভয়ে ভয়ে রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম ।
ভেবেছিলাম খুব ভীড় হবে । কিন্তু একদম ভিড় নাই । অল্প কিছু জুটি বসে আছে প্রত্যেক টেবিলে । আর সব থেকে যে জিনিসটা আমার ভাল লাগলো সেটা হল আলো । সন্ধ্যা হলে যেমন আলো হয় চারিদিকে সে রকম আলো । বলতে হয় অদ্ভুদ এক আলো আধারির খেলা ।
মীম এক ওয়েটার কে যেন কি বলল । ওয়েটার টা আমাদের কে পিছনের দিককার একটা টেবিল দেখিয়ে দিল ।
টেবিলে বসতে বসতে বললাম “একদম ভীড় নেই তো ! আমি তো ভেবেছিলাম অনেক ভীড় হবে ।“
মীম আবার হাসলো । বলল “এটার কথা সবাই জানে না । আর এখানে আসার আগে বুকিং দিতে হয় ।“
আমি খানিকটা অবাক হলাম । আমার সাথে দেখা করার জন্য এতো আয়োজন !
মীম আমার মুখোমুখী বসে । এতোক্ষন পর মীম কে ভাল করে দেখার সুযোগ পেলাম । অন্য দিনের থেকে আজ ওকে একেবারেই অন্য রকম লাগছে । ও কখনই সাজগোজ সচেতন ছিল না । আজ ও বেশ ভালই সেজেছে । আর এই আলো আধারী পরিবেশে ওকে অদ্ভুদ সন্দর লাগছে । এতোক্ষন পর আমার মনে হল না আমি কোন ভুল করি নি । ওকে কার্ডটা দেওয়া মোটেই ভুল হয় নি ।
“অপু ! কি হল কথা বলছো না কেন ?”
“ তোমাকে দেখছি ।“
মনে হল যেন ও খানিকটা লজ্জা পেল ।
“আজ তোমাকে সত্যিই অন্য রকম সুন্দর লাগছে ।“
এবার ও সত্যি সত্যিই লজ্জা পেল । আমি খানিকটা চুপ করে থেকে আবার বললাম “মীম তুমি রাগ কর নি তো ?”
“ কেন ? রাগ করবো কেন ?”
“ না তোমাকে ও কার্ডটা দিলাম । তুমি হয়তো ভাবো নি !”
মীম কিছু সময় নিলো । তারপর আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল “ভাবি নি ঠিক । তবে মনের মধ্যে এমন একটা ইচ্ছা ছিল আমার অনেক দিন থেকেই ।“
আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম । বলে কি এই মেয়ে !
“মনে আছে তোমার আমি যখন মেডিক্যালে চান্স পেলাম না , তুমি আমাদের বাসায় গিয়েছিলে দেখা করার জন্য , আমি তখন কাঁদছিলাম । তোমাকে দেখে মনে হল যে হয়তো তুমি আমাকে বিদ্রুপ করার জন্য এসেছো কিন্তু তোমার কথাগুলো শুনে আমার খুব ভাল লেগেছিল । আমার তখন মনে হয়ছিল সত্যিই তো এখন আমি কার সাথে কম্পিটিশন করবো ? কার সাথে তর্ক করবো ? কার সাথে ঝগড়া করবো ? নিজেকে কেন জানি সেদিন বড় একা একা লাগছিলো । তারপর তোমার সাথে একসাথে ঢাকা আসা । ফোনালাপ । গল্প । সব কিছুই যেন স্বপ্নের মত ।“ একটানা কথা বলে মীম খানিকটা দম নিলো ।
আমি তাকিয়ে আছি ওর দিকে । এক বুক বিশ্ময় আর ভাল লাগে নিয়ে । বার বার মনে হচ্ছে এই মেয়েটা আমাকে ভালবাসে । চমৎকার এই মেয়েটা আমাকে ভালবাসে ।
“ এমন করে কি দেখছো আমার দিকে ?”
মীম অন্য দিকে মুখ ঘোরালো ।
“মীম একটা সত্যি কথা বলব ?”
“ বল ।“
“ আমার মনে হয়েছিল যে তুমি আমাকে খুব ঝাড়ি মারবে ঐ কাজটা করার জন্য । কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সাহস করে ঐ কার্ডটা না দিলে আমার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেত !”
“ ক্ষতি ?”
“ হু । তোমাকে পেতাম কিভাবে ?”
“ এখনও পাও নি বুঝছো ।“
“ পাই নি ?” বলে ওর হাত ধরলাম । ও হাত সরিয়ে নিলো না । নিজেও আমার হাতটা ধরলো আরো ভালভাবে ।
“অপু এই যখন ধরেছো বল যে কোন দিন এই ছেড়ে দেবে না !”
“ ভয় পেয় না । আমি ছেড়ে দেবো না ।“
কতক্ষন এভাবে ছিলাম কে জানে ওয়েটার মেনু এগিয়ে দিয়ে বলল
“স্যার কি আনবো ?”
মেনু আর প্রাইস লিস্ট দেখে আমার আবার সেই ভয়টা ফিরে এল । আজ সন্ধ্যায় সত্যিই আমার খবর আছে ।
(সমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০১২ সকাল ১১:০৩
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×