somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফিরে পাওয়া ভালবাসা (শেষ খন্ড)

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১০:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১ম খন্ড

“হোয়াট” ? কথাটা সবাই একসাথে বলল ।
“কোথায় ?”
“ কদিন আগে আমাদের অফিসে যে নতুন ১০ জন জয়ে জয়েন করেছে । মেয়েটা তার মধ্যে আছে” ।
“তো আপনি কি করলেন?”
“কি করবো আমি? প্রথমে ভেবেছিলাম মেয়েটা আমাকে চিনতে পারবে না । কিন্তু সে আমাকে চিনেছে । এবং আগের মতই আমাকে দেখলে তার চোখমুখ শক্ত হয়ে যায় । তারমানে সে আমাকে এখানে ঠিক নিতে পারছে না। আমাকে দেখলে তার অস্বস্তি শুরু হয়। তাকে দেখলে আমিও সুস্থির থাকতে পারি না ।তাই আমি ঠিক করেছি আর চাকরি করবো না।“
রফিক ভাই বলল “চাকরি কেন ছাড়বে? তুমি তাকে বল তোমার কথা গুলো । তোমার ফিলিংস গুলো তাকে বোঝাও।“
“ না । সে আমাকে ঠিক পছন্দ করে না । বলে লাভ হবে না । সে বিব্রতই হবে কেবল।“
“ অপু ভাই” লিনা বলল “আপনি যদি আমার জন্য এরকম ভাবে দাড়িয়ে থাকতেন তাহলে আমি কবে আপনার গলায় ঝুলে পড়তাম । ঐ মেয়েটা আসলেই একটা ইডিয়েট । আচ্ছা মেয়েটার নাম তো আপনি এখন জানেন?”
“ হু জানি।“
“আমাকে নামটা বলেন কানে ধরে ঐ ইডিয়েট মেয়েটাকে নিয়ে আসবো আপনার কাছে।“
আমি হাসি । সাথে সবাই হেসে ওঠা । আড্ডা শেষ হয় ।
কি সেই দিন গুলো ছিল । আমার মনের মাঝে এখনও জলজল করে । সব কিছু শয়ে যাচ্ছিল তখনই দেখা হল আবার । আমার এখনও ঠিক বিশ্বাসই হয় না তনুকে আমি আবার দেখতে পাবো । আমার অফিসে আমার আন্ডারেই সে জয়েন করবে ।
তনু কি আমাকে পছন্দই করে না ! তাহলে এতো বিব্রত থাকে কেন আমার সামনে এলে । ঠিক ওকে আর বিব্রত করবো না । কিছুদিন পর চাকরি ছেড়ে দেব ।
পরদিন অফিসছুটির পর লিনা আমার কাছে এলো । ওর মুখটা কেমন হাসি হাসি ।
“কিছু বলবে?”
“হু” । ও হাসল । “আপনার সেই ইডিয়েট মেয়ের খোজ পেয়েছি” ।
আমি চমকালাম । “কিভাবে”?
লিনা আবার হাসল । “সে নিজেই বলেছে । আপনি চাকরি ছেড়ে দিবেন শুনে খুব আপসেট । আপনার সাথে কথা বলতে চায়” ।
আমি খানিকটা অবাক হলাম । আমি আনন্দিত হলাম খুব । লিনার সাথেই অফিস ক্যান্টিনে গেলাম । তনু বসে ছিল । খানিকটা মাথা নিচু করে । লিনা চলে গেল আমাদের রেখে । কিছুক্ষন কোউ ই কোন কথা বললাম না । আসলে কি বলবো বুঝতেই পাচ্ছিলাম না ।
তনুই আগে কথা বলল । “আপনি প্লিজ চাকরিটা ছাড়বেন না। আমার কারনে কেউ চাকরি ছেড়ে দেবে এটা ভাবতে আমার খুব খারাপ লাগছে” ।
“কি করবো বলুন ? পরিবেশটাই তো এমন হয়ে গেছে । আমার কারনে আপনি অস্বস্তিতে পড়ছেন । এটা ভাবতেও তো আমার ভাল লাগছে না” ।
মনে হল তনু কথা খুজে পাচ্ছে না যে কি বলবে । কিছুক্ষন পর আমি বললাম “আচ্ছা আপনি সেদিনের পর আর বাসস্ট্যান্ডে আসেন নি কেন?
তনু এই প্রথম আমার দিকে তাকাল । “আমরা বাসা বদলেছিলাম । আর কাল আপনি একটা কথা ঠিক বলেন নি” ।
“কোন কথাটা?”
“আমি আপনাকে দেখে বিরক্ত হতাম না” ।
কথাটা বলেই তনু মাথা মানিয়ে ফেলল । যেন খানিকটা বিব্রত হল । কিংবা লজ্জা পেল । আর আমি হলাম বিশ্মিত ! “সত্যি আপনি বিরক্ত হতেন না?”
তনু এবার মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিল । বলল “আমি প্রথমে বুঝতেও পারি নি । প্রথম প্রথম নিজের কাছেই মনে হত যে আমি বিরক্ত হচ্ছি । মনে হত একটা ছেলে কেন আমার পিছন পিছন প্রতিদিন আসবে । কিন্তু বাসা বদলানোর পর যখন আর আপনাকে দেখলাম না তখন আমার ভুল ভাঙ্গল । তখন মনে হচ্ছিল ঐ ছেলেটা কেন আমার পিছন পিছন আসছে না? কি অদ্ভুদ মানুষের মন ! আমি নিজের আচরনে নিজেই অবাক হচ্ছিলাম” ।
এইটুকু বলে তনু থামল । আমার কিছু বলা উচিত্ । কিন্তু কোন কথাই মনে আসছিল না ।
তনু আবার বলা আরাম্ভ করল । “তারপর এই অফিসে জয়েন করলাম । নিলা যখন আপনার কেবিনে নিয়ে গেল আমি এতো বড় একটা ধক্কা খেলাম । আপনিও বোধহয় অবাক হয়েছিলেন খুব তাই না?”
আমি বললাম “আমি কখনও ভাবতে পারি নি আপনার সাথে আবার আমার দেখা হবে । এখানে দেখা হবে” ।
তনু হাসল । “আমিও কি ভেবেছি । কিন্তু একটা ব্যপারে আমার খারাপ লেগেছে” ।
“কি? কোন ব্যপারে?”
“আমি এখানে জয়েন করার পরেও কিন্তু আপনি আমার সাথে একটা কথাও বলেন নি । সবার সাথে আপনি কি সহজ আচরন করতেন কেবল আমি আসলেই আপনার আচরন বদলে যেন । অবাক হতাম । খারাপও লাগতো । একবার সহজ ভাবে কি কথা বলে যেত না??”
আমি হাসি বোকার মত । তারপর আরকেউ কোন কথা খুজে পাই না । একটু পর তনু উঠতে চাইল ।
“যেতে হবে সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে” ।
আমি একটু হাসলাম । ও উঠে গেল ।
যাওয়ার আগে কেবল একটা কথা বলল “আপনি প্লিজ চাকরিটা ছাড়বেন না । প্লিজ” ।
ও চলে গেল । আমি বসে রইলাম কিছুক্ষন । তারপর কি মনে হল ক্যান্টিন থেকে বের হয়ে তনুর পিছু নিলাম ।
ঐ তো অফিসের সামনেই ও বাসের জন্য ওয়েট করছে । ওর পাশে গেলাম না । একটু দুরে দাড়াল । আজ বহু দিন পর আবার সেই অনুভুতিটা ফিরে এল । ঠিক আগে যেমনটা হত তনুর পিছু নেবার সময় হত। তনুর পিছন পিছন বাসে উঠলাম । আগের মতই ।
কিন্তু আজ একটা পরিবর্তন হল । আগে তনু মহিলা ছিটে বসত । আজও পিছন দিককার একটা ডাবল সিটে বসল । আমি পড়লাম দ্বিধায় ।
কি করবো এখন ? ওর দিকে চোখ পড়তেই ও হাসল । অদ্ভুদ এক চোখে হাসল । আমি আস্তে আস্তে গিয়ে ওর পাশের সিটটাতে বসলাম । জীবনটা হঠাত্ করেই কেন জানি বড় সুন্দর মনে হল ।
(সমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০১২ বিকাল ৩:১৮
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×