“বলতেই হবে । আজ কোন ছাড়াছাড়ি নাই” ।
সবাই এক সাথে বলে । আমি সাহায্যের আশায় রফিক ভাইয়ের দিকে তাকাই ।
কিন্তু তিনিও আজ সবার সাথে সুর মেলান ।
“আচ্ছা বাবা বলছি । কিন্তু এটা এমন কোন বিশেষ কিছু না । খুব সিমপল একটা গল্প” ।
লিনা বলল “ কোন সমস্যা নাই অপু ভাই । আমরা তবুও শুনবো” ।
তারপর সবার দিকে তাকিয়ে বলল “কি শুনবো না ?”
“ শুনবো”। সবাই একসাথে বলে উঠল ।
আমি চট করে তনুর দিকে তাকালাম । ও কোন কথা বলে নি ।
এখানে সবাই আমরা কলিগ । একই গ্রুপের । বেশ কয়েক দিন ধরে আমরা সবাই একটা এসাইনমেন্ট নিয়ে কাজ করছিলাম । কাল সেটা একসেপ্ট হয়েছে । এই জন্য আমাদের গ্রুপ লিডার আমাদের কে ট্রিটে নিয়ে এসেছে ।
আর এখানে সবাই আমাকে ধরছে আমার ভালবাসার কথা শোনার জন্য । আগে বেশ কয়েক বার আমি এড়িয়ে গেছি । কিন্তু এই মনে হয় পার পাবো না ।
রফিক ভাই বলল “আজ শেয়ার করেই ফেলল” ।
আমি আমার গল্প শুরু করি ।
“তিন সাড়ে তিন বছর আগের কথা । তখন আমি ভ্যগাবন্ডের মত ঘুরে বেড়াই । পড়ে লেখা শেষ , বাপের হোটেলে খাই কোন চেন্সন নাই । সারাদিন খাইদাই আর ঘুরে বেড়াই” ।
সবাই তাকিয়ে আছে আমার দিকে । কিন্তু তনু তাকিয়ে আছে অন্য দিকে ।
“এক দিনের কথা । বাসা থেকে বের হয়েছি । নিউমার্কেট যাবো বলে । বাসস্ট্যান্ডে দাড়িয়ে আছি বাসের জন্য । এমন সময় একটা মেয়েকে দেখলাম দাড়িয়ে আছে ঠিক রাস্তার অপজিটে । বলবো না যে সে বিশ্ব সুন্দরী ছিল । কিন্তু তার চেহারার মধ্যে কেমন একটা কোমলতা ছিল । আমি চোখ ফেরাতেই পারলাম না । অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম বুকের ভেতর কেমন যেন এক অনুভুতি হচ্ছে । এটাকে উপেক্ষা করার ক্ষমতা আমার নাই । আমি যন্ত্রের মত রাস্তা ক্রস করে ওপারে চলে গেলাম । যাওয়ার কথা ছিল নিউ মার্কেট চলে গেলাম মহাখালি” ।
“এরপর ঐ একই কাজ । মেয়েটার জন্য বাসস্ট্যান্ডে ওয়েট করা । একই বাসে করে মহাখালি যাওয়া । তারপর ফিরে আসা । এই মোটামুটি দিনের রুটিং আমার । মেয়েটা মনে হয় মহাখালিতে কোন একটা কিছুতে কোন কোর্স করতো । আমি সিওর ছিলাম না । কেবল জেনেছিলাম সপ্তাহে তিন দিন মেয়ে টা সকাল নয়টা সাড়ে নয়টার মধ্যে বাস স্ট্যান্ডে আসতো । তারপর শুরু হত আমাদের সরি আমার স্বপ্নের বাস জার্নি” ।
আমি একটু চুপ করলাম ।
“থামলেন কেন ?” লিনা বেশ অধর্য্য ।
“বলছি তো । দম নিতে তো দিবেন” । আমি আবার বলা শুরু করলাম ।
“ মেয়েটা প্রথমে কিছু লক্ষ্য না করলেও পরে ২/৩ সপ্তাহের মধ্যে ঠিকই ক্ষ্যল করলো যে আমি তার পিছু নিয়েছি । প্রথম প্রথম কিছু না হলে পরে দেখতাম আমাকে দেখলেই তার চোখমুখ শক্ত হয়ে যেত । ইস্পষ্টই সে বিরক্ত । আমার এরকম আচরন সে মোটেই পছন্দ করছে না । কিন্তু আমার তখন অবস্থাটা খারাপ । মেয়েটাকে না দেখে থাকতে পারি না । কি অদ্ভুদ তাই না ?”
“ মেয়েটার নাম পর্যন্ত আমি জানি না কিন্তু কি অদম্য এই আকর্ষন । তারপর একদিন মেয়েটা নির্দিষ্ট সময়ে বাসস্ট্যান্ডে এলো না । পর পর তিন দিন এলো না । আমার অবস্থা তখন কি বলব । মনে হলে হয়তো শরীর খারাপ । অথবা কোর্সের সময় বদলিয়ে নিয়েছে । কিন্তু সে আর এল না । পরের তিনটা মাস আমি ঐ বাস স্ট্যান্ডে প্রতি দিন মেয়েটার জন্য ওয়েট করে থাকতাম । সকাল থেকে সন্ধ্যা । কিন্তু সে এল না । যেন একেবারে গায়েব হয়ে গেল আমার জীবন থেকে ।“
“ বাবা মনে হয় কিছু একটা আচ করতে পেরেছিলেন । আমাকে বড় চাচার বাসায় পাঠিয়ে দেন কলকাতায় । এক রকম জোর করেই । কলকাতায় সময় কাটাতেই এমবিএ তে ভর্তি হয়ে যাই । তারপর এই অফিস ।“
“ গল্প শেষ !” লিনা বলল “ আপনি আর কোন দিন তার দেখা পান নি না ?”
আমি হাসলাম । বললাম “আর একটু বাকি আছে গল্পের” ।
“বাকি আছে ?”
“ তারপর ?”
“ কিছুদিন আগে মেয়েটার সাথে আমার আবার দেখা হয়েছে” ।
“হোয়াট” ? কথাটা সবাই একসাথে বলল ।
“কোথায় ?”
(চলবে)