somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেয়েটির সাথে আমার বৃষ্টিতে ভেজার গল্প !! (শুরু)

২৭ শে মার্চ, ২০১২ রাত ১০:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই দুপুর বেলা এমন বৃষ্টি নামবে ভাবিনি । নিউ মার্কেটে এসেছিলাম । অনেক কষ্টে একটা রিক্সা পাওয়া গেল । কোন মতে পলিথিন দিয়ে ঢেকে ঢুকে যাওয়ার চেষ্টা করছি তবে খুব একটা লাভ হচ্ছে না । ভিজে যাচ্ছি ঠিকই । রিক্সা চলতে শুরু করলে বৃষ্টির ছিটেফোটা ঠেকানো কষ্টকর হয়ে উঠল ।
পুলিশ বক্সের কাছে এসে নিশাত কে দেখতে পেলাম । ছাতি নিয়ে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে । কিন্তু বৃষ্টির যা অবস্থা খুব একটা লাভ হচ্ছে না । অর্ধেকের বেশি এরই মধ্যে ভিজে গেছে । আর একটু দাড়িয়ে থাকলে সম্পুর্ণ ভিজে যাবে । আমি রিক্সা দাড় করালাম ওর সামনে । রিক্সার ভিতর থেকেই ডাক দিলাম ওকে । আমার ডাক শুনে খানিকটা চমকালো ।
আমি বললাম রিক্সায় “উঠে আসো । ভিজে যাচ্ছ” ।
“ না ঠিক আছে” ।
“না ঠিক নেই । অর্ধেক অলরেডি ভিজে গেছ । এভাবে আরো কিছুক্ষন থাকলে পুরো ভিজে যাবে । ঠান্ডা লেগে যাবে । উঠে এস” ।
“না আমি ঠিক আছি । রিক্সা নিয়ে চলে যাবো” ।
“ আরে পাগল হয়েছে ? যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে কোন রিক্সা যেতে চাইবে না । উঠে এস” ।
“না আমি আপনার সাথে যাবো না” ।
ও এই ব্যপার ! আমি রিক্সা থেকে নেমে এলাম । বললাম “আচ্ছা ঠিক । আমার সাথে যেতে হবে না । তুমি এই রিক্সা নিয়ে চলে যাও । ঠিক আছে ! নাকি তাও যাবা না” ।
নিশাত মনে হয় এটা আশা করে নি । আর কোন কথা না বলে রিক্সায় উঠে বসল । পলিথিন ঠিকঠাক করে নিল । তারপর কি মনে হল ওর ছাতিটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিল ।
বলল “আপনি ভিজে যাচ্ছেন” ।
আমি বললাম “আমি ভিজলে সমস্যা নাই” । তবুও নিলাম ।
রিক্সা চলতে শুরু করল । আমি দাড়িয়ে আছি । নিশাতের ছাতাটা হাতে ধরা । মেলতে ইচ্ছা করছে না । কেন জানি ভিজতে ইচ্ছা করছে । হটাৎ করে মনের মধ্যে একটা অদ্ভুদ চিন্তা মাথায় এল ।
নিশাতের সাথে এমন ভাবে যদি বৃষ্টিতে ভেজা যেত ! মন্দ হত না ।
আমি নিশাতের রিক্সা করে চলে যাওয়াটা দেখছি । ঐ দিকেই তাকিয়েই আছি । আমার কেন জানি মনে হচ্ছে নিশাত রিক্সার পেছন পর্দা তুলে ও আমার দিকে তাকাবে । এক ভাবে তাকিয়েই থাকলাম । কিন্তু আমার ধারনা সত্যি হল না । নিশাত ফিরে তাকালো না । মন খানিকটা খারাপ হল ।
নিশাত মেয়েটা এমন কেন ! একবার ফিরে তাকালে কি হত ! এই মেয়েটা আসলেই এমন । প্রথম যেদিন নিশাতের সাথে দেখা হয় কি ব্যবহারটাই না করেছিল !
নিশাত আমার বাড়িয়ালার মেয়ে । প্রথম যে দিন ওর সাথে দেখা হল যে ঝাড়িটাই না আমাকে মারল । সকাল বেলা মালপত্র নিয়ে বাসায় উঠেছি । সারা দিন গোছগাছে ব্যস্ত ছিলাম । সন্ধ্যার দিকে একটু অবসর নিলাম । যদিও তখনও অনেক কাজ বাকি ছিল । মন বলছিল একটু বিরতি নিতে । আমার ফ্লাটটা ছিল ছয় তলায় । তার উপরেই ছাদ । ছতলা বেয়ে নিচে নামার চেয়ে ছাদে যাওয়া টাই শ্রেয় মনে করলাম ।
ছাদে উঠে হাওয়া খাচ্ছি এমন সময় পেছন থেকে খুব কঠিন গলায় কেউ বলে উঠল “আপনি ছাদে কেন উঠেছেন” ?
পিছনে ঘুরে আমি অবাক না হয়ে পারলাম না । বিশ বাইশ বছরের একটা মেয়ে । গায়ের রং শ্যামলা । কিন্তু মুখে একটা মায়া মায়া ভাব ছিল । প্রথম দেখাতে যে কারো পছন্দ হবে । আমি ভাবতেই পারছিলাম না এই মায়া করা চেহারার মেয়েটা এতো কঠিন করে কথা বলতে পারে ।
মেয়েটা আবার বলল “আপনি কেন ছাদে উঠেছেন” ?
আমি ততক্ষনে সামলে নিয়েছি । বললাম “এমনি উঠেছি । হাওয়া খেতে বলতে পারেন” ।
“আপনি জানেন না ছাদে ওঠা নিষেদ ? বাবা আপনাকে বলে নি” ?
“কই আমি জানি না তো । আর ছাদে ওঠা নিষেদ এমন কোন সাইনবোর্ড ও লেখা নাই” ।
কোন জুটসই উত্তর না খুজে পেয়ে মেয়েটার মুখটা কেমন লাল হয়ে গেল । বলল “এখন বলছি এরপর থেকে আর ছাদে উঠবেন না । আরে কেন উঠবো না” ।
“এটা কোন কথা ? দেখেন আমি ছতলার বাপাসটা ভাড়া নিয়েছি । তারমানে ঐ ফ্লাটের সব কিছুই আমার আন্ডারে পড়ে । ছাদও পড়ে । সুতরাং আমি আসবো” ।
দেখলাম মেয়েটা মুখটা আরো লাল হয়ে গেল । ঘুরে যাওয়ার আগে বলে গেল “আপনি কিভাবে এ বাড়িতে থাকেন আমি দেখবো” ।
আমি বেশ মজা পেলাম । কি মেয়ে রে বাবা । বাসায় আসতে না আসতেই বাড়ি ছাড়ার হুমকি ! পরদিনই দেখলাম ছাদের দরজায় তালা মারা । আমার ছাদের ওঠার সমাপ্তি ঘটল । পরে খোজ নিয়ে জানলাম মেয়েটা বাড়ি য়ালীর মেয়ে । একমাত্র মেয়ে । নাম নিশাত । একটু বদমেজাজী । কি এক অজানা কারন বসত ছেলেদের একটুও দেখতে পারে না । কেন কে জানে !
বাসায় এসে গোছল সেরে ফ্রেস হয়ে নিলাম । নিশাতের ছাতাটা বারান্দায় মেলে দিলাম । ছাতা এই প্রথম খুললাম । ও যখন ছাতাটা আমাকে দিল কেন জানি খুব ভাল লাগল ।
আমি ভিজে যাচ্ছি বা ভিজে যাবো এই জন্য কি ছাতাটা ও দিল নাকি ওর জন্য রিক্সা ছেড়ে দিলাম তার প্রতিদান স্বরুপ আমাকে ছাতাটা দিল । দ্বিতীয়টা হবার সম্ভাবনাই বেশি । যাক তবুও তো মেয়েটার মাঝে কৃজ্ঞতা বোধ আছে । সে হিসাবে দেখতে গেলে মেয়েটা কিন্তু একেবারে খারাপও না । সবার সাথে ভাল ব্যবহার ই করে কেবর ছেলেদের উপরেই যত রাগ ওর । আমি এর আগেও লক্ষ্য করেছি ও ছেলেদের যথা সম্ভব এড়িয়ে চলে ।
কেন চলে ? নিশ্চই ওর জীবনে পুরুষ মানুষ নিয়ে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা রয়েছে । এবং ঘটনা ঘটেছে বেশ কচি বয়েসেই । আর তখন থেকেই ছেলে মানুষের প্রতি ওর এতো রাগ ।
সন্ধ্যার দিকে দেখলাম ছাদের দরজা খোলা । তারমানে নিশাত ছাদে উঠেছে । যাক একটু কথা বলা যাক । আজকে মনে হয় আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করবে না ।
নাকি করবে ? করতেও পারে । বিশ্বাস নাই ।
আমি আমার ছাতাটা নিয়ে ছাদে গেলাম । নিশাত ফুলের টবে পানি দিচ্ছিল । আমাকে দেখে সোজা হয়ে দাড়াল । মনে মনে আল্লাহ কে ধন্যবাদ দিলাম । যাক কিছু বলে নি ।
“ছাতা টা”।
নিশাত একবার ছাতার দিকে তাকাল । চোখে জিজ্ঞাসা । বলল “এটা তো আমার ছাতা না” ।
“হুম । তোমার না । আসলে তোমার ছাতাটা আসতে আসতে হারিয়ে ফেলেছি” ।
“হারিয়ে ফেলেছেন ? এই টুকু রাস্তা আসতে আসতে হারিয়ে ফেললেন” ?
“আসলে বাসে উঠেছিলাম তো । সিটের উপর রেখেছিলাম । নামার সময় আর নিতে মনে ছিল না” ।
নিশাত খানিক ক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থাকল । তারপর বলল “আসলে মিথ্যা কথা বললে অনেক ভেবে চিন্তে বলতে হয় । তা না হলে ধরা পড়ে যেতে হয়” ।
“না । আমি মিথ্যা কথা কেন বলল বল” ?
“অপু সাহেব আপনি যখন রিক্সা করে বাড়ির সামনে নামলেন তখন আমি আমার ঘরের জানলার কাছে বসে ছিলাম । আর আমার ঘরের জানলা থেকে আমাদের বাড়ির গেটটা পরিস্কার দেখা যায় । কে আসল না আসল কার হাতে কি আছে কি নিয়ে বাসার ভিতর ঢুকছে সব পরিস্কার দেখা যায় । ঠিক আছে” ।
আমি বোকার মত হাসার চেষ্টা করলাম । নিশ্চই একটা ঝাড়ি মারবে এখন । কিন্তু দেখলাম ঝাড়ি মারল না ।
বলল “জানতে পারি কেন মিথ্যা কথাটা বললেন” ?
আমি আসলে কি বলব বুঝতে পারছিলাম না । বুঝতে পারি নি এভাবে ধরা খেয়ে যাবো ।
নিশাত বলল “আচ্ছা তার আগে আর একটা প্রশ্নের জবাব দিন । ভর দুপুর বেলা ঐ কাজটা কেন করলেন । ও রকম বৃষ্টির মধ্যে নেমে গিয়ে আমাকে রিক্সাটা দিয়ে দেওয়াটা কেমন যেন লাগল আমার কাছে” ।
আমি কিছুক্ষন চুপ করে থাকলাম ।
তারপর বললাম “আসলে আমি বোঝাতে চেয়েছিল জগতের সব পুরুষ মানুষ খারাপ না । তুমি যদি আমার সাথে তখন রিক্সায়ও উঠতে তোমার প্রতি কোন খারাপ আচরন করতাম না” ।
নিশাত কিছু না বলে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল । আমি বললাম “দেখ নিশাত, জগতে যেমন খারাপ মানুষ আছে ভাল মানুষও কিন্তু আছে । মানছি পুরুষ মানুষকে নিয়ে তোমার জীবনে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে তাই বলে তুমি জগতের সব পুরুষ মানুষ কে খারাপ ভাববা এটা কিন্তু ঠিক না । সবাই কে একপাত্রে ফেলাটা বোকামি” ।
নিশাত তীব্র কণ্ঠ বলল “আপনাকে কে বলল যে আমার সাথে অপ্রীতিকর কিছু হয়েছে” ?
“কেউ বলে নি ? বলার দরকার কেন হবে ? তোমার সাথে আমার যতবার কথা হয়েছে অথবা আমি তোমাকে যতবার দেখেছি ততবারই আমার জন্য তোমার চোখে আমি তীব্র ঘৃণা দেখেছি । কিন্তু আমি এমন কেন আচরন কখনও আপনার সাথে করি নি । তাহলে কেন এমন আচরন আমার সাথে ? তারমানে কি দাড়ায় বল” ?
নিশাত টবে পানি দেওয়া বন্ধ করে নিচে চলে গেল । আমি দাড়িয়ে রইলাম । কেন জানি আমার কষ্ট হতে লাগল । দুপুর বেলা যখন নিশাতের রিক্সার চলে যাওয়া দেখছছিলাম যখন দেখলাম ও একটা বারের জন্যও পিছন ফিরে তাকাল না তখনও আমার কেন জানি এই কষ্টটা হচ্ছিল । এখনও ঠিক তেমনি একটা কষ্ট হচ্ছে । কেন হচ্ছে ?

পরের অংশ
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০১৩ রাত ১১:০৩
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×