somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেয়েটির সাথে আমার বৃষ্টিতে ভেজার গল্প !!

১২ ই জুন, ২০১৩ রাত ১১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই দুপুর বেলা এমন বৃষ্টি নামবে ভাবিনি । নিউ মার্কেটে এসেছিলাম । অনেক কষ্টে একটা রিক্সা পাওয়া গেল । কোন মতে পলিথিন দিয়ে ঢেকে ঢুকে যাওয়ার চেষ্টা করছি তবে খুব একটা লাভ হচ্ছে না । ভিজে যাচ্ছি ঠিকই । রিক্সা চলতে শুরু করলে বৃষ্টির ছিটেফোটা ঠেকানো কষ্টকর হয়ে উঠল ।
নাহ ! আজকে খবর আছে ! বৃষ্টির পানি আমার একদম গায়ে সহ্য হয় না ! বৃষ্টিতে ভিজলেই আমার জ্বর চলে আসে । আমি রিক্সাওয়ালা কে জোরে চালাতে বললাম !
পুলিশ বক্সের কাছে এসে নিশাত কে দেখতে পেলাম । ছাতা নিয়ে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে । কিন্তু বৃষ্টির যা অবস্থা খুব একটা লাভ হচ্ছে না । অর্ধেকের বেশি এরই মধ্যে ভিজে গেছে । আর একটু দাড়িয়ে থাকলে সম্পুর্ণ ভিজে যাবে । আমি রিক্সা দাড় করালাম ওর সামনে । রিক্সার ভিতর থেকেই ডাক দিলাম ওকে । আমার ডাক শুনে খানিকটা চমকালো ।
আমি বললাম রিক্সায় “উঠে আসো । ভিজে যাচ্ছ” ।
-না ঠিক আছে ।
-না ঠিক নেই । অর্ধেক অলরেডি ভিজে গেছ । এভাবে আরো কিছুক্ষন থাকলে পুরো ভিজে যাবে । ঠান্ডা লেগে যাবে । উঠে এস ।
-না আমি ঠিক আছি । রিক্সা নিয়ে চলে যাবো ।
-আরে পাগল হয়েছে ? যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে কোন রিক্সা যেতে চাইবে না । উঠে এস ।
-না আমি আপনার সাথে যাবো না ।
ও এই ব্যপার ! আমি রিক্সা থেকে নেমে এলাম । বললাম
-আচ্ছা ঠিক । আমার সাথে যেতে হবে না । তুমি এই রিক্সা নিয়ে চলে যাও । ঠিক আছে ! নাকি তাও যাবা না ।
নিশাত মনে হয় এটা আশা করে নি । আর কোন কথা না বলে রিক্সায় উঠে বসল । পলিথিন ঠিকঠাক করে নিল । তারপর কি মনে হল ওর ছাতাটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিল । বলল
-আপনি ভিজে যাচ্ছেন ।
আমি বললাম
-আমি ভিজলে সমস্যা নাই ।
তবুও নিলাম ছাতাটা ।
রিক্সা চলতে শুরু করল । আমি দাড়িয়ে আছি । নিশাতের ছাতাটা হাতে ধরা । মেলতে ইচ্ছা করছে না । কেন জানি ভিজতে ইচ্ছা করছে । হটাৎ করে মনের মধ্যে একটা অদ্ভুদ চিন্তা মাথায় এল ।
নিশাতের সাথে এমন ভাবে যদি বৃষ্টিতে ভেজা যেত ! মন্দ হত না ।
আমি নিশাতের রিক্সা করে চলে যাওয়াটা দেখছি । ঐ দিকেই তাকিয়েই আছি । আমার কেন জানি মনে হচ্ছে নিশাত রিক্সার পেছন পর্দা তুলে ও আমার দিকে তাকাবে । এক ভাবে তাকিয়েই থাকলাম । কিন্তু আমার ধারনা সত্যি হল না । নিশাত ফিরে তাকালো না ।
মন খানিকটা খারাপ হল ।
নিশাত মেয়েটা এমন কেন ! একবার ফিরে তাকালে কি হত ! এই মেয়েটা আসলেই এমন ।

প্রথম যেদিন নিশাতের সাথে দেখা হয় কি ব্যবহারটাই না করেছিল !
নিশাত আমার বাড়িয়ালার মেয়ে । প্রথম যে দিন ওর সাথে দেখা হল যে ঝাড়িটাই না আমাকে মারল । সকাল বেলা মালপত্র নিয়ে বাসায় উঠেছি । সারা দিন গোছগাছে ব্যস্ত ছিলাম । সন্ধ্যার দিকে একটু অবসর নিলাম । যদিও তখনও অনেক কাজ বাকি ছিল । মন বলছিল একটু বিরতি নিতে ।

আমার ফ্লাটটা ছিল ছয় তলায় । তার উপরেই ছাদ । ছতলা বেয়ে নিচে নামার চেয়ে ছাদে যাওয়া টাই শ্রেয় মনে করলাম ।
ছাদে উঠে হাওয়া খাচ্ছি এমন সময় পেছন থেকে খুব কঠিন গলায় কেউ বলে উঠল
-আপনি ছাদে কেন উঠেছেন ?
পিছনে ঘুরে আমি অবাক না হয়ে পারলাম না । বিশ বাইশ বছরের একটা মেয়ে । গায়ের রং শ্যামলা । কিন্তু মুখে একটা মায়া মায়া ভাব ছিল । প্রথম দেখাতে যে কারো পছন্দ হবে । আমি ভাবতেই পারছিলাম না এই মায়া করা চেহারার মেয়েটা এতো কঠিন করে কথা বলতে পারে ।
মেয়েটা আবার বলল
-আপনি কেন ছাদে উঠেছেন ?
আমি ততক্ষনে সামলে নিয়েছি । বললাম
-এমনি উঠেছি । হাওয়া খেতে বলতে পারেন ।
-আপনি জানেন না ছাদে ওঠা নিষেদ ? বাবা আপনাকে বলে নি ?
-কই আমি জানি না তো । আর ছাদে ওঠা নিষেধ এমন কোন সাইনবোর্ড ও লেখা নাই ।
কোন জুটসই উত্তর না খুজে পেয়ে মেয়েটার মুখটা কেমন লাল হয়ে গেল । বলল
-এখন বলছি এরপর থেকে আর ছাদে উঠবেন না ।
-আরে কেন উঠবো না । এটা কোন কথা ? দেখেন আমি ছতলার বাসাটা ভাড়া নিয়েছি । তারমানে ঐ ফ্লাটের সব কিছুই আমার আন্ডারে পড়ে । ছাদও পড়ে । সুতরাং আমি আসবো ।
দেখলাম মেয়েটা মুখটা আরো লাল হয়ে গেল । ঘুরে যাওয়ার আগে বলে গেল
-আপনি কিভাবে এ বাড়িতে থাকেন আমি দেখবো ।
আমি বেশ মজা পেলাম । কি মেয়ে রে বাবা । বাসায় আসতে না আসতেই বাড়ি ছাড়ার হুমকি !
পরদিনই দেখলাম ছাদের দরজায় তালা মারা । আমার ছাদের ওঠার সমাপ্তি ঘটল । পরে খোজ নিয়ে জানলাম মেয়েটা বাড়িওয়ালীর মেয়ে । একমাত্র মেয়ে । নাম নিশাত । একটু বদমেজাজী ।
কি এক অজানা কারন বসত ছেলেদের একটুও দেখতে পারে না । কেন কে জানে !

বাসায় আস্তে আস্তেই জ্বর চলে এল । ফ্রেস হয়ে বিছানায় শুয়ে পরলাম ! তার আগে নিশাতের ছাতাটা বারান্দায় মেলে দিলাম । ছাতা এই প্রথম খুললাম । ও যখন ছাতাটা আমাকে দিল কেন জানি খুব ভাল লাগল ।
আমি ভিজে যাচ্ছি বা ভিজে যাবো এই জন্য কি ছাতাটা ও দিল নাকি ওর জন্য রিক্সা ছেড়ে দিলাম তার প্রতিদান স্বরুপ আমাকে ছাতাটা দিল । দ্বিতীয়টা হবার সম্ভাবনাই বেশি । যাক তবুও তো মেয়েটার মাঝে কৃজ্ঞতা বোধ আছে । সে হিসাবে দেখতে গেলে মেয়েটা কিন্তু একেবারে খারাপও না ।
সবার সাথে ভাল ব্যবহার ই করে কেবর ছেলেদের উপরেই যত রাগ ওর । আমি এর আগেও লক্ষ্য করেছি ও ছেলেদের যথা সম্ভব এড়িয়ে চলে ।
কেন চলে ?
নিশ্চই ওর জীবনে পুরুষ মানুষ নিয়ে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা রয়েছে । এবং ঘটনা ঘটেছে বেশ কচি বয়েসেই । আর তখন থেকেই ছেলে মানুষের প্রতি ওর এতো রাগ ।

পরদিন শরীর একটু ভাল হল ! সন্ধ্যার দিকে দেখলাম ছাদের দরজা খোলা । তার মানে নিশাত ছাদে উঠেছে । যাক একটু কথা বলা যাক । আজকে মনে হয় আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করবে না ।
নাকি করবে ? করতেও পারে । বিশ্বাস নাই ।
আমি আমার ছাতাটা নিয়ে ছাদে গেলাম । নিশাত ফুলের টবে পানি দিচ্ছিল । আমাকে দেখে সোজা হয়ে দাড়াল । মনে মনে আল্লাহ কে ধন্যবাদ দিলাম । যাক কিছু বলে নি ।
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই আমাকে অবাক করে দিয়ে নিশাত বলল
-আপনার জ্বর এসেছিল !
-এই তো ! বৃষ্টিতে ভিজলেই জ্বর আসে আমার । বৃষ্টির পানি সহ্য হয় না একদম !
নিশাত আর কিছু না বলে পানি দিতে লাগলো আবার ! আমি বললাম
-ছাতা টা।
নিশাত একবার ছাতার দিকে তাকাল । চোখে জিজ্ঞাসা । বলল
-এটা তো আমার ছাতা না ।
-হুম । তোমার না । আসলে তোমার ছাতাটা আসতে আসতে হারিয়ে ফেলেছি ।
-হারিয়ে ফেলেছেন ? এই টুকু রাস্তা আসতে আসতে হারিয়ে ফেললেন ?
-আসলে বাসে উঠেছিলাম তো । সিটের উপর রেখেছিলাম । নামার সময় আর নিতে মনে ছিল না ।
নিশাত খানিকক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থাকল । তারপর বলল
-আসলে মিথ্যা কথা বললে অনেক ভেবে চিন্তে বলতে হয় । তা না হলে ধরা পড়ে যেতে হয় ।
-না । আমি মিথ্যা কথা কেন বলল বল ?
-অপু সাহেব আপনি যখন রিক্সা করে বাড়ির সামনে নামলেন তখন আমি আমার ঘরের জানলার কাছে বসে ছিলাম । আর আমার ঘরের জানলা থেকে আমাদের বাড়ির গেটটা পরিস্কার দেখা যায় । কে আসল না আসল কার হাতে কি আছে কি নিয়ে বাসার ভিতর ঢুকছে সব পরিস্কার দেখা যায় । ঠিক আছে ?
আমি বোকার মত হাসার চেষ্টা করলাম । নিশ্চই একটা ঝাড়ি মারবে এখন । কিন্তু দেখলাম ঝাড়ি মারল না ।
বলল
-জানতে পারি কেন মিথ্যা কথাটা বললেন ?
আমি আসলে কি বলব বুঝতে পারছিলাম না । বুঝতে পারি নি এভাবে ধরা খেয়ে যাবো ।
নিশাত বলল
-আচ্ছা তার আগে আর একটা প্রশ্নের জবাব দিন । ভর দুপুর বেলা ঐ কাজটা কেন করলেন । ও রকম বৃষ্টির মধ্যে নেমে গিয়ে আমাকে রিক্সাটা দিয়ে দেওয়াটা কেমন যেন লাগল আমার কাছে ।
আমি কিছুক্ষন চুপ করে থাকলাম ।
তারপর বললাম
-আসলে আমি বোঝাতে চেয়েছিল জগতের সব পুরুষ মানুষ খারাপ না । তুমি যদি আমার সাথে তখন রিক্সায়ও উঠতে তোমার প্রতি কোন খারাপ আচরন করতাম না ।
নিশাত কিছু না বলে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল । আমি বললাম
-দেখ নিশাত, জগতে যেমন খারাপ মানুষ আছে ভাল মানুষও কিন্তু আছে । মানছি পুরুষ মানুষকে নিয়ে তোমার জীবনে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে তাই বলে তুমি জগতের সব পুরুষ মানুষ কে খারাপ ভাববা এটা কিন্তু ঠিক না । সবাই কে একপাত্রে ফেলাটা বোকামি ।
নিশাত তীব্র কণ্ঠ বলল
-আপনাকে কে বলল যে আমার সাথে অপ্রীতিকর কিছু হয়েছে ?
-কেউ বলে নি ? বলার দরকার কেন হবে ? তোমার সাথে আমার যতবার কথা হয়েছে অথবা আমি তোমাকে যতবার দেখেছি ততবারই আমার জন্য তোমার চোখে আমি তীব্র ঘৃণা দেখেছি । কিন্তু আমি এমন কেন আচরন কখনও আপনার সাথে করি নি । তাহলে কেন এমন আচরন আমার সাথে ? তারমানে কি দাড়ায় বল ?
নিশাত টবে পানি দেওয়া বন্ধ করে নিচে চলে গেল । আমি দাড়িয়ে রইলাম । কেন জানি আমার কষ্ট হতে লাগল । দুপুর বেলা যখন নিশাতের রিক্সার চলে যাওয়া দেখছছিলাম যখন দেখলাম ও একটা বারের জন্যও পিছন ফিরে তাকাল না তখনও আমার কেন জানি এই কষ্টটা হচ্ছিল । এখনও ঠিক তেমনি একটা কষ্ট হচ্ছে । কেন হচ্ছে ?

তারপর থেকেই একটা পরিবর্তন আসলো ! ছাদের দরজায় আর তালা মারা থাকতো না ! আমি যখন ইচ্ছা তখনই আসতে পারতাম । বিকেল বেলা আসতাম বিশেষ করে ! ঐ সময়ে নিশাত আসতো । চুপচাপ ওর ফুল গাছ গুলোতে পানি দিতো । আমি দাড়িয়ে দেখতাম । টুকটাক কথাও বলতাম ! আগের মত আর রাগত স্বরে কথ বলতো না । এটা ভাল লাগতো !

একদিন একটা বোকার মত কাজ করলাম । নিশাতের বাবার কাছে নিশাতের বিয়ের প্রস্তাব পাঠালাম !
নিশাতের বাবা আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল
-তুমি ছেলে হিসাবে ভাল ! চাকরিও কর ভাল ! তবে ?
-তবে ?
ভদ্রলোক কিছুটা ইতস্তত করলেন ! আমি বললাম
-চাচা ! আপনি আমাকে খোলাখুলি বলতে পারেন ! কোন সমস্যা নাই ।
-তা তো বলাই উচিৎ ! আসলে নিশাত পুরুষ মানুষ একদম সহ্য করতে পারে না ! পুরুষ মানুষ বলতে কেবল আমি আছি ! এমন কি আমাদের পরিবারের কোন পুরুষ আত্মীয় আমাদের বাসায় আসে না । আসতে পারে না নিশাতের জন্য !
-কেন ? আশ্চার্য ! কারন কি ?
ভদ্রলোক তবুও চুপ করে রইলেন ! আমার মনে হল তিনি বলতে চান না ! আমি আর কিছু জিজ্ঞেস করলাম না ! কিছুক্ষন চুপ করে বসে থাকার পরে যখন উঠে যাব তখনই নিশাতের বাবা মুখ খুলল
-আসলে নিশাতের তখন এগারো বছর বয়স ! ও ক্লাস সেভেনে পর‌তো ! তখন কার একটা ঘটনা !
-কি ঘটনা ?
-আমার এক চাচাতো ভাই এসেছিল গ্রাম থেকে ! আমাদের বাসাতেই থাকতো ! আমি তো সব সময় অফিসেই থাকতাম । একদিন কি কাজে নিশাতের মা বাইরে গিয়ে ছিল ! বাজারে মনে হয় তখনই নিশাত কে একা পেয়ে.......
-আঙ্কেল থাক । বলতে হবে না । আমি আর শুনতে চাই না ।
দেখলাম ভদ্রলোকের চোখে পানি !
-সেদিনের পর থেকে নিশাত একদম বদলে গেল । আমার হাসি খুশি মেয়েটা একদম নিস্চুপ হয়ে গেল ! কিছুদিন তো যে কোন ছেলে মানুষ দেখলেই ভয় পেত । একটু বড় হলে পুরুষ মানুষের প্রতি তার এক তীব্র ঘৃণা জন্মে ।
আমি চুপ করে বসে রইলাম । নিশাতের বাবাও চুপ করে বসে রইলো । আমার যাবার সময় হলে আমি উঠে দাড়ালাম ।
-তবুও একবার নিশাত কে বলে দেখবেন ! যদি ও রাজি হয় !
নিশাতের বাবা একটু অবাক হল আমার কথা শুনে !
তারপর বলল
-আচ্ছা ! দেখি !

ঐ দিন রাতের বেলা আমার ঘরে কড়া নড়লো ! ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি দশটার কাছাকাছি বাজে । এই রাতের বেলা কেউ আসার কথা না আমার কাছে । দরজা খুলেই দেখি নিশাত !
-তুমি !
-আপনার সাথে কথা আছে !
আমার মনটা খুশি হয়ে উঠল ! মনে মনে বললাম তোমার সাথেও আমার কথা আছে সুন্দরী ।
কিন্তু কিছু বললাম না ! নিশাত বলল
-ছাদে আসেন !


-আপনি বাবার কাছে কি বলেছেন ?
ছাদে আসতে না আসতেই নিশাতের প্রশ্নের বান । ওর কন্ঠটা বেশ তীব্র শোনাচ্ছিল ! আমি বললাম
-কেন ?
-কেন না ! কি বলেছেন ?
-আমি যতদুর জানি তুমি জানো ! কেন আবার জানতে চাইছো ?
-কেন বলেছেন ?
-দেখ এই প্রশ্ন করা অবান্তর । আমি কি খারাপ কিছু বলেছি ? আমি কাকে পছন্দ করবো না করবো এটা একান্তই আমার ব্যাপার । এটার জন্য আমি কারো কাছে কিছু বলতে বাধ্য না । আমি প্রপোজ করেছি তুমি চাইলে মানা করে দিতে পারো !
-তা তো দেবোই ! কোন পুরুষ মানুষকে আমি সহ্য করতে পারি না ! ওরা মানুষ না ! ওরা ....
-জানোয়ার ?
নিশাত আমার কথার জবাব দিল না । আমি বললাম
-তোমাকে আমি বুদ্ধিমান ভেবেছিলাম । কিন্তু তুমি তো বেশ বোকা !
-মানে কি ?
-না যে মেয়ে মাত্র একটা পুরুষ মানুষ দিয়ে পুরা পুরুষ জাতিকে সে তো বোকা ! আসলে বোকা, মহা বোকা ! বোকার রাজা ! আরে রাজা না ! রানী ! তুমি বোকার রানী ! মহা রানী !
নিশাত আমার দিকে তাকিয়ে কঠিন করে বলল
-আপনার কি মনে হচ্ছে আমি আপনার সাথে আমি ইয়ার্কী মারছি !
-মারো দেখি ! তখন তোমাকে কেমন লাগে একটু জানতে ইচ্ছে করছে ! সারাক্ষন এমন গম্ভীর হয়ে থাকো !
নিশাত আর কোন কথা বলতে পারলো না ! চলে গেল !

আমি দাড়িয়েই রইলাম ! কেন জানি মনে হল এই মেয়েকে বিয়ে করতেই হবে !
যেমন করেই হোক !

পরদিন সকাল বেলা হাজির হয়ে গেলাম ওদের বাসায় ! আমাকে দেখে ওর বাবা মা দুজনেই অবাক ! আমি একটু সহজ গলায় বললাম
-আন্টি আজকের সকালের নাস্তাটা আপনাদের সাথে করতে পারি ? কেন জানি বাসার কথা খুব মনে পড়ছে । সকাল বেলা সবাই এক সাথে নাস্তা করা হয় না ! বহুত দিন !
প্রথমে অবাক হলেও নিশাতে মা আনন্দের সাথে রাজী হয়ে গেলেন !
সকাল বেলা নাস্তা খাচ্ছি তখনই নিশাত এসে হাজির !
আমাকে দেখে খুব বেশি অবাক হল ! তার থেকেও অবাক হল আমি যখন বললাম
-আরে ! এতো দেরি করে কেউ ! তোমার ক্লাস আছে না ! দেরী হয়ে যাবে । আন্টি জলদি নাস্তা দেন ওকে ।
নিশাত গম্ভীর মুখে নাস্তা খেতে লাগলো ! কোন কথা বলল না !

বাইরে এসেও যখন ও রিক্সা খুজতেছিল আমি ওর পাশে দাড়িয়ে পরলাম !
-আমি ......।
-চুপ কোন কথা না !
-আরে !
-আপনার কোন কথা শুনতে চাই না ! শুনেন আপনি আমার পেছন পেছন আসবেন না !
-আরে ! ভাল বুদ্ধি দিয়েছো তো ! আমি তোমার পেছন পেছন আসতাম না ! অফিসে যেতাম । তবে এখন আসতে হবে মনে হচ্ছে !
নিশাত রিক্সা নিয়ে চেল গেল ! আমিও ওর পিছু নিলাম ! ওর ভার্সিটি পর্য্ন্ত গেলাম !
নিশাত আমার দিকে গম্ভীর ভাবে তাকিয়ে চলে গেল ভিতরে !
আমার কেন জানি একটা পাগলামি করতে মন চাইলো ! ঐ খানেই বসে রইলাম ! যতক্ষন না নিশাত ক্লাস শেষ না করে আসে !
অফিসে ফোন করে দিলাম । অসুস্থ !

নিশাত বাইরে বের হল প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা পরে ! আমাকে দেখে আসলেই অবাক হল ! আমাকে এই ভাবে বসে থাকতে দেখবে আশা করে নাই !
পরদিনও তাই করলাম ! ওর পেছন পেছন আসি ! বসে থাকি মাঠের ভিতর । তারপর আবার ওর পেছন পেছন বাসায় যাই !
নিশাত গম্ভীর মুখেই থাকে !
আল্লাহ ! এই মেয়ে কি একটুও পরিবর্তন হবে না ?

সপ্তাহের শেষ দিনে একটু বিপদে পড়ে গেলাম ! তুমুল বৃষ্টি আরাম্ভ হল ! এবার ভাবলাম বিল্ডিংয়ের ভিতরে যাই !
গেলাম না ! মাঠের ভিতরেই বসে বসে ভিজতে লাগলাম !
কিছুক্ষন ভিজার পরেই মনে হল জ্বর আসবে । আমার ঠান্ডা পানি একদমই সহ্য হয় না !
হঠাৎ করেই পেছন থেকে কে যেন মাথার উপর ছাতা ধরলো !
তাকিয়ে দেখি নিশাত । মুখটা সেই গম্ভীর হয়েই আছে !
-হাই !
-ঢং করবেন না ! বৃষ্টিতে ভিজলে না আপনার জ্ব র আসে ?
-আসে তো !
-তাহলে কেন ভিজছেন ?
-বৃষ্টিতে ভিজলে কেবল জ্বর আসে না তুমিও আসো ! সেদিনও এসেছিল আজকেও !

আমি হঠাৎ করেই নিশাতের কাছ থেকে ছাতা নিয়ে নিলাম !
-কি করছেন ?
-আজকে একটু ভিজি তোমার সাথে ?
কিছু একটা বলতে গিয়েও নিশাত বলল না ! আমি বললাম
-কেবল এই টুকু ! একটা বৃষ্টি আমি তোমার সাথে ভিজতে চাই ! আর কিছু না !
নিশাত আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন ! তারপর বলল
-আপনার জ্বর আসবে !
-কোন সমস্যা নাই ! তোমার সাথে এক মিনিট বৃষ্টিতে ভেজার জন্য হাজারটা দিন জ্বরে ভগতে রাজি আছি !
কেন জানি নিশাত অবাক হয়ে আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো ! সেই চোখে আগের মত আর ঘৃণা নাই ! আমি খুব সাহস করে বললাম
-হাতটা কি একটু ধরতে দিবে ?
-জি না !
-একটু ! ঘড়ি ধরে এক মিনিট !
-হাত ধরে কি হবে ?
আমি প্রশ্নের জবাব দিলাম না ! সাহস করে ওর হাত ধরেই ফেললাম !

বৃষ্টির বেগ যেন বাড়তেই থাকলো ! বারান্দায় দাড়িয়ে থাকা কিছু অবাক চোখ আমাদের দিকে তাকিয়ে রইলো ! তাদের মনে হয়তো একটাই প্রশ্ন যে মেয়েটা এতোদিন একটা ছেলের সাথে একটু কথাও বলে নাই আজকে কিভাবে একটা ছেলে হাত ধরে বৃষ্টিতে ভিজতেছে !
আশ্চার্য !!


Click This Link
১৭টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×