somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছেলেটি যেভাবে আমার দৃষ্টি আকর্ষন করতে সক্ষমহল (নিশির কথা)

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৪:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-ম্যাডাম আর কিছু দিবো ?
পিয়ন সলিম চা দেওয়ার পরেও চলে গেল না । দাড়িয়ে রইল ।
-কিছু বলবা ?
সলিমের মুখ দেখেই মনে হচ্ছিল যে কিছু বলবে । কিন্তু ঠিক যেন বলতে ভয় পাচ্ছে ।
সলিম বলল
-কালকের সেই সাহেব এসেছে ?
-কে ?
-ঐ, কাল যে এসেছিল আপনার সাথে দেখা করতে ।
মেজাজটা খানিকটা খারাপ হল । সলিম কে বললাম
-কাল আমি কি বলেছিলাম ?
সলিম খানিকটা কাচুমাচু হয়ে বলল
-আমি ওনাকে বলেছিলাম আপনি ওনার সাথে দেখা করতে চান না । তবুও খুব করে ধরলো !! আমি না করতে পারলাম না । বলল যে একটু কথা বলতে চায় ।
আপনা আপনি আমার মেজাজটা আরো খারাপ হয়েছে গেল ।
এই ছেলেটা পেয়েছে কি ?
নিজেকে কি ভাবে ?
সে যেমন টা ভাবে সব কিছু তেমনই হবে !
বললাম
-কোথায় আছে ?
-ম্যাডাম ওয়েটিং রুমে বসে আছে ।
ওয়েটিং রুমে গিয়ে দেখি ছেলেটা মাথা নিচু করে বসে আছে । আমাকে দেখেই উঠে দাড়াল ।
অপু কিছু বলতেই যাচ্ছিল কিন্তু ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বললাম
-কি পেয়েছেন আপনি ? এভাবে আমাকে বিরক্ত করার মানে কি ?
-আমি তো ..
-শুনুন আপনার কোন কথাই আমি শুনতে চাই না । আপনি এখন চলে যাবেন । আর কখনও আসবেন না ।
সলিম পিছনেই ছিল । সলিমকে বললাম
-এই লোকটাকে আর অফিসে ঢুকতে দিবা না । মনে থাকে যেন ।
আমি আর দাড়ালাম না । নিজের ডেস্কে ফিরে এলাম ।
আমার কেন জানি মনে হচ্ছে অপু এখনই চলে যাবে না । অফিসের বাইরে দাড়িয়ে থাকবে । কালকের মত করবে ।
কালকে যখন ওর সাথে দেখা করতে চাইলাম না অপু চলে গেল । ভেবেছিলাম চলে গেছে হয়তো । অফিস ছুটির পর যখন স্টাফ বাসে উঠব তখনই দেখলাম । অফিসের বাইরে যে বড় জারুল গাছটা আছে তার পাশে দাড়িয়ে আছে । তাকিয়ে আছে আমার দিকে ।
অপুর চোখে কেমন একটা বিষন্নতার ভাব, কেমন একটা অপরাধীর মত চোখ করে সে আমার দিকে তকিয়ে আছে ।
ছেলেটা কি সকাল থেকেই এখানে অপক্ষা করছিল ?
একবার মনে হল অপুকে ক্ষমা করে দেই কিন্তু পরক্ষনেই মনের অন্য পাশটা বিদ্রহী উঠল ।
কিছুতেই না !!
কিছুতেই ক্ষমা করা যাবে না ছেলেকে !
এই ছেলেটা ইচ্ছে করে আমাকে কষ্ট দিয়েছে । গত ছয়টা মাস কেবল এই ছেলেটার জন্য আমি মানষিক কষ্ট ভোগ করেছি ! এই ছেলেটাকে আমি কিছুতেই ক্ষমা করবো না ।
কাল তাই ওর দিকে না তাকিয়েই বাসে উঠে পড়েছিলাম ।
আজও কি ছেলেটা বিকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করবে ? করলে করবে না করলে করবে না !
আমার কি ?
আমি কেন ভাবছি এতো ।
কাজে মন দেওয়ার চেষ্টা করলাম । কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার ঘুরে ফিরে কেবল ঐ ফাজিল ছেলেটার কথাই মনে আসছে ।
যখন আগের অফিসে ছিলাম প্রতিটা সময় কেবল এই ছেলেটার কথাই ভাবতাম । ভাবতাম কেন ছেলেটা আমার সাথে এই রকম করে ! সবার সাথে কেমন স্বাভাবিক কেবল আমার সাথেই কেন এমন আচরন ?
আর এখনও একই কথা ভাবছি !!

আচ্ছা ছেলেটা কি সত্যি সত্যিই সরি ফিল করছে ?? একটা মানুষ তো ভুল করে ! আবার সেই ভুলের জন্য ক্ষমা চাইলে তাকে ক্ষমা করে দিতে হয় । কথাটা আব্বু বলেছিল ।
গত মাসে ঐ অফিস থেকে রিজাইন করার পর দিনই অপু বাসায় এসে হাজির । একদম সকাল বেলা । সকাল বেলা নাস্তা করতে গিয়ে দেখি আব্বুর সাথে বসে কথা বলছে । মনটা এমনতেই খারাপ ছিল অপুকে সকাল বেলা দেখে আরো খারাপ হয়ে গেল । আব্বুর সামনেই যা ইচ্ছা তাই বলে ছেলেটাকে বের করে দিলাম । আমি কেবল আমার অপমানের প্রতিশোধ নিতে চাইছিলাম । ছেলেটা মাথা নিচ করেই চলে গেল ।
আব্বু সে দিন অনেক অসন্তুষ্ট হয়েছিল আমার উপর । বলল যে
-এমন কেন করলি তুই ছেলেটার সাথে ?
-বাবা যেইটা জানবা না সেইটা নিয়ে কথা বলবা না । তুমি জানো না এই ছেলেটা আমার সাথে কি করেছে । আমাকে কত খানি ইনসাল্ট করেছে
-মানলাম করেছে কিন্তু ছেলেটা তো সরি বলতে এসেছে । ভুল মানুষ করেই । করবেই । কিন্তু কিন্তু সেই ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়াই হল মানুষের বৈশিষ্ট । আর ক্ষমা করাটাও মানুষ্যের পরিচয় ।

একবার মনেহল আব্বু কথাটা হয়তো ঠিক । কিন্তু নিজের মন কে কিছুতেই বোঝাতে পারছিলমা না । বারবার আমার ঐদিন গুলোর কথা মনে পরছিল । আমার দঃসহ দিন গুলোর কথা !
আচ্ছা ছেলেটা বলল যে আমার দৃষ্টি আকর্ষনের জন্যই নাকি সে এমনটা করেছে । এটা একটা কথা !! কারো দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য তাকে পুরোপুরি এভাবে উপেক্ষা করতে হয় !
আমি কিভাবে ভুলে যাবো??
না কিছুতেই ভুলবো না।
ছলেটাকে ক্ষমাও করবো না ।
কিছুতেই করবো না ।
তারপর থেকেই ছেলেটাকেই কেবল দেখতাম । আমার সাথে কথা বলতে চাইতো ! আমি কিছুতেই পাত্তা দিতাম না । এখনও দিবো না ।
কোনদিন দিব না !!

অফিস থেকে বের হতে হতে অন্ধকার হয়ে গেল । বাসে উঠতে যাবো ঠিক তখন আবার ঐ জারুল গাছটার দিকে চোখ গেল । ছেলেটা দাড়িয়ে আছে ! আমি নিশ্চিত ছেলেটা দাড়িয়ে আছে । যদিও খুব স্পষ্ট করে দেখা যাচ্ছে না কিন্তু আমি জানি ছেলেটা দাড়িয়েই আছে ।
আচ্ছা একবার কি শুনে নিবো ছেলেটা কি বলে ?
ছেলেটাতো মেন হয় প্রতিদিনই এখানে দাড়িয়েই থাকবে !!
না কি হবে শুনে ?
কিন্তু না শুনলে ছেলেটা তো আমার পিছু ছাড়বে না !
বাসের ড্রাইভা রকে বললাম যে আমার জন্য অপেক্ষা না করতে ! তারপর ছেলেটার দিকে হাটা দিলাম ।

রেস্টুরেন্টের টিমটিম আলো তে ছেলেটার চেয়ারা টা কেমন যেন লাগছে । বিষন্ন তবে অন্য দিনের তুলনায় কম !
আমি বললাম
-আপনাকে দেখছি আপনি কদিন ধরে কেবল আপনার পেছনে লেগে আছেন ? আপনা রআর কোন কাজ নাই ? অফিস যান না ?
ছেলেটা মাথা তুলে তাকালো !!
-আমি চাকরী ছেড়ে দিয়েছি !
এটা আমাকে খানিকটা অবাক করলো । বললাম
-কেন জানতে পারি ?
-আমার জন্য একটা মানুষ রিজাইন করেছে, আমার ভুলের জন্য । আমি কিছুতেই শান্তি পাচ্ছি না । বশ্বাস করবেন কি না জনি না গত একমাস ধরে আমি ঠিক মত ঘুমাতে পারি নি । কোন কাজ ঠিক মত করতে পারি নি । কি যে একটা পাপ বোধ নিয়ে ঘুরে বেরাচ্ছি আমি !!
আমার কথাটা কেন জানি সত্যই মনে হল । ছেলেটার চোখ কেমন বসে গেছে, চোখের নিচে কালিও পরেছে !
ছেলেটা বলল
-আমি এই অশান্তি থেকে মুক্তি চাই , আর যতদিন না আপনি আমাকে ক্ষমা করছেন ততদিন আমি শান্তি পাবো না । কিছুতেই শান্তি পাবো না ।
আমি বললাম
-আর আমি যে ভাবে দিন গুলো পার করেছি সে টার কি হবে । আমি বিনা কারনে কষ্ট পেলাম সেটার কি হবে ? দেখুন অপু সাহেব আমি ছোট বেলা থেকেই খুব জাদি টাইপের মেয়ে । আমাকে কেউ আঘাত দিলে আমি সহজে ভুলতে পারি না ।
-আপনি কি করতে বলেন আমাকে ? আপনি যা বলবেন তাই আমি করতে প্রস্তুত !!
আমি কিছু বললাম না । ভাবতে লাগলাম কি বলবো ?
কি করলে ছেলেটার উপর আমার রাগ কমবে ?
মাথা টাক করে ঘোল ঢেলে দিবো ?
নাকি সারা রাত বুড়িগঙ্গার পানিতে বসে থাকতে বলব ?
অথবা সবার সামনে কান ধরে উঠবস করটে বলবো
কি বলবো ?????
ছেলেটা তখন বলল
-আমি একটা কথা বলব ?
-বলুন?
-ঠিক খুজে পাচ্ছে না তো আমাকে কি শাস্তি দিবেন ? আমি একটা উপায় বলব?
-বলুন ।
-আপনি আমাকে বিয়ে করে ফেলুন !
-মানে ?
-আগে শুনুন ! বিয়ের পর আমার লাইফটা ভাজা ভাজা করে ফেলবেন আমি কিছু বলতে পারবো না । সব কিছু সহ্য করে নিতে হবে । ভাল বুদ্ধি না একটা । যে আপনাকে কষ্ট দিয়েছে তাকে সারা জীবন যন্ত্রনা দেওয়া পারমিট পেয়ে যাবেন !
-আপনার বক্তব্য শেষ হয়েছে । আমি আসি আমার এখানে আসাটাই ভুল হয়ে গেছে !
আমি উঠতে গেলেই অপু আমার হাত চেপে ধরলো !! বলল
-নিশি, আমি জানি আমি ভুল করেছি কিন্টু বিশ্বাস কর যাই করেছি কেবল মাত্র তোমার এটেনশন পাবার জন্য ! তোমার কাছে........। প্লিজ এভাবে যেও না ! আমাকে আর একটা বার সুযোগ দাও ! দেখ আমি ঠিক যেভাবে তোমাকে কষ্ট দিয়েছি তার থেকেও হাজার গুন ভালবাসা দিয়ে তোমার জীবনটা ভরে দেব ।
কেন জানি আমার দম বন্ধ হয়ে গেল অপু কথাটা শুনে । অপুর চোখ দুটো কেমন আকুল হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । আর যাই হোক ওখানে কোন ছলনা আমি দেখতে পেলাম না ।
অপুর চোখে কি পানি ?
ও কি কাঁদছে ?
আমি ক্ষ্যাল করলাম আমার চোখে পানি চলে এসেছে !
আমি কি কাঁদছি !
আশ্চর্য !!
বড় অদ্ভুদ মানুষের মন !!
আমি বসে পড়লাম আবার !!
বলল
-খুব জ্বালাবো কিন্তু ! কিছু বলতে পারবে না !
অপুর চোখ দিয়ে তখন পানি গড়িয়ে পড়লো । হেসে বলল
-একটা টু শব্দও কোনদিন করবো না !!


যেভাবে অফিসের আকর্ষনীর মেয়েটির দৃষ্টি আকর্ষন করতে সক্ষম হলাম !!
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১১:৪২
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×