somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যেভাবে অফিসের আকর্ষনীর মেয়েটির দৃষ্টি আকর্ষন করতে সক্ষম হলাম !!

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৮:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



নিশি ঠিক আমার সামনেই বসে আছে । কিছু বলতে চায় কিন্তু কিভাবে বলবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না । ওর মুখের ভাব দেখেই আমি বুঝতে পারছি যে ও খানিকটা অস্থি বোধ করছে ।
আবার প্রশ্নটা না করেও থাকে পারছে না ।
আমি বললাম
-কি যেন বলবেন বলেছিলেন ?
নিশি হাসলো । সুন্দর হাসি !
-আসলে.......
নিশি চুপ করে গেল । আবারও কি যেন ভাবছে ।
নিশি আর আমি একই অফিসে কাজ করি । মোটামুটি একই ডিপার্টমেন্টে । বিভিন্ন দরকারে নিশিকে আমার কাছে আসতে হয় আবার আমাকেও ওর কাছে যেতে হয় !
আজকে লাঞ্চের পর বস আমাদের দুজন কে মিরপুরে এই বেড়িবাধের কাছে একটা লোকেশন দেখতে পাঠিয়েছে । দুজন মিলে সব রিপোর্ট তৈরি করতে করতে বিকাল হয়ে গেল । বাড়ি যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলাম তখনই নিশি বলল
-খুব কি কাজ আছে এখন । রিপোর্ট তো কাল জমা দিতে হবে, তাই না ?
-কাল দিলেই হবে । কেন ?
-খুব ব্যস্ত না হলে বেড়িবাধের ঐদিকটাতে যাই । ওখানটা বেশ সুন্দর ! আর আমার কয়েকটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিল । যদি ব্যস্ততা ....
-না তেমন কোন ব্যস্ততা নাই । আর সাথে তো অফিসের গাড়ি আছে । সমসয়া নাই ।
নিশির মুখটা একটু উজ্জল হয়ে উঠল । নিশির মনে ক্ষীন সঃন্দেহ ছিল যে আমি রাজি হব কিনা । কারন ওর প্রতি আমার যে উপেক্ষিত আচরন ছিল তা থেকে আমার রাজি না হয়ে চলে যাওয়ারই কথা ছিল ।
একদিন অবশ্য গিয়েও ছিলাম ।
বেশিদিনের আগের কথা না । এই তো মাস খানেক আগের কথা ! নিশির জন্মদিনের পার্টি ছিল । নিশি সবাইকেই দওয়াত দিল । নিজ মুখে আমাকেও আসতে বলল । কিন্তু আমি গেলাম না ।
সেই দিন আমি গেলাম না ।
একবার ভেবেছিলাম যাই । কিন্তু তারপর মনে হল যাবো না । কারন যে প্রোজেক্ট আমি হাতে নিয়েছি সেটাতে ক্ষতি হতে পারে !!

নিশি আবার আমাকে বলল
-আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞস করবো অপু সাহেব ?
-করুন ।
-সত্যি সত্যি জবাব দিবেন কি ?
-কেন দেব না ? বলুন ।
নিশি আবারও কিছুক্ষন চুপ করে থাকলো !! তারপর বলল
-আমার কোন আচরনে কি আপনি আপনি ক্ষ্ট পেয়েছেন ? অথবা আমি কি আপনাকে কষ্ট কিংবা আপনার সাথে কোন খারাপ বিহেইব করেছি ?
-এই কথা কেন বলছেন ?
-না আগে বলেন ?
-না । করেন নি । কেন বলুন তো ?
আমি খুব ভাল করেই জানি নিশি আমার কাছে এই প্রশ্ন কেন করছে ।
-তাহলে আপনি আমার সাথে এমন কেন করেন ?
আমি খানিকটা হাসার চেষ্টা করলাম । মুখে কেমন একটা বিব্রত ভাব আনার চেষ্টা করলাম কিন্তু বুকের ভিতর কেমন একটা উত্তেজনা বোধ করছিলাম । তাহলে ......।
অবশেষে সেই দিনটা আসছেই.....।
নিশি বলল
-আপনি ঐ দিন ইচ্ছা করে আমার জন্মদিনের পার্টিতে আসেন নি ।
-না । আমার কাজ ছিল । আমি আসতে চেয়েছিলাম ।
-মিথ্যা কথা ! আপনার কোন কাজ ছিল না ।
আমি আর কিছু বললাম না । কারন কথা সত্য !
নিশি আবার বলল
-আমি যেখানে থাকি আপনি সেখানে যান না । আমি খুব ভাল করে দেখেছি অফিসের সবাই যেখানে আড্ডা দেয় আমি যদি সেই আড্ডায় যাই আপনি উঠে যান । আমি আগে থেকে থাকলে আপনি সেখানে যানই না । এটা কেন??
আমি আবারও চুপ করে থাকি !! কোন কথা বলার নাই ।
নিশি বলল
-তারপর আপনার উপহার ! আপনার ড্রতে সবার নাম উঠে কেবল আমার নাম উঠে না ।

আমাকে অফিসে সবাই মোটামুটি পছন্দ করে । এই পছন্দের নেপথ্যে হল এই উপহার । আমি প্রতি সপ্তাহে কাউকে না কাউকে কিছু একটা গিফট দেই । বেশি হাইফাই কিছু না । ছোটাখাটো জিনিস । প্রতিবার কারো ভাগ্যে জোটে । এমন কি অফিসের বসও পায় ।
এখন প্রতি বৃহস্পতিবার এলেই সবাই অপেক্ষা করে থাকে যে আজ কে পাবে ? এবং কি পাবে ?
সবাই ই আমার কাছে গিফট পেয়েছে কেবল নিশি পাই নি । ব্যাপারটা প্রথম প্রথম কেউ লক্ষ্য না করলেও এখন সবাই ব্যাপারটা ধরে ফেলেছে যে নিশির নাম কখনই উঠে না ।
আমার এক সহকর্মী তো কারনটা জিজ্ঞেসই করে ফেলল । আমি বললাম যে আসলে আমি লটারী করে নাম তুলি তো । ওর নাম না উঠলে আমি করবো ?

আমি বলার চেষ্টা করলাম
-আসলে আপনার নাম ল.......
আমার কথা শেষ করতে পারলাম না নিশি বলল
-জাস্ট স্টপ ইট !! আমার কাছে মিথ্যা বলার দরকার নাই । আমার নাম উঠে নাই বা আপনি আপনি আামকে দিতে চান না এটা আমার কোন দুঃখের কারন না । কিন্তু আমি কেবল কারন জানতে চাই । কেন ? কারনটা বলেন । আর কিছু আমি জানতে চাইবো না ।
নিশি চুপ করলো । আমিও চুপ করলাম ।

কোন মেয়ের দৃষ্টি আকর্ষন বিশেষ করে সুন্দর ও আকর্ষনীয় মেয়ের দৃষ্টি আকর্ষন করার সাধারনত দুইটি উপায় আছে । প্রথমটি হল সারাক্ষন মেয়েটির আশেপাশে ঘুর ঘুর করা । এমন একটা ভাব করা যেন দুনিয়ার সব কাজ থেকে ঐ মেয়েটি সব থেকে গুরুত্ব পুর্ন !
কিন্তু সব ক্ষেত্রে এই উপায় টা যে কাজে লাগে তা কিন্তু নয় । মাঝে মাঝে ঝামেলা হয়ে যেতে পারে !! যেমন ঐ মেয়ে যদি চালু কিসিমের হয় তাহলে আপনার খবর আছে !
আর অন্য উপাটি হল ঐ মেয়েটিকে সম্পুর্ন ভাবে উপেক্ষা করা । সে যা আপনার সামনে আছে এটা একেবারে ভুলে যাওয়া । এই পদ্ধতিতে ফল আসতে একটু দেরি হয় কিন্তু ফলাফলে সফলার ভাগ মোটামুটি শতভাগ । কিছু কিছু ব্যতীক্রম অবশ্য আছে । তা বড়ই নগন্য !
যা হোক আসল কথায় আসি । আমিও একটা মেয়ের দৃষ্টি আকর্ষন করতে এই দুইটি পদ্ধতির একটা অবলম্বন করেছিলাম । এবং ফলাফল আজ আমার সামনে । আজকে সেই গল্পই বলব !

নিশি আবার বলল
-এটা নিয়ে অফিসে কি পরিমান আলোচনা হয় আপনি জানেন । নিজের কাছে খুব খারাপ লাগে । এই রকম পরিবেশে আমার পক্ষ আর কাজ করা সম্ভব না । আমি ঠিক করেছি আমি চাকরীটা ছেড়ে দিবো । কেবল কারন টা জানতে চাই । আর কিছু না । অল্প কয়দিনের মধ্যে আপনার অপছন্দের মানুষটা আপনার সামনে থেকে চলে যাবে ! প্লিজ কারনটা বলুন ! প্লিজ !

কি?
নিশি চাকরী ছেড়ে দিবে ?
হায় হায় !!
তাহলে আমার কি হবে ?

-বলবেন প্লিজ !
আমি বললাম
-বিকজ...........আমি আপনাকে পছন্দ করি তাই !
নিশি অবাক হয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো আমার দিকে । তারপর বলল
-কি বললেন আপনি ? আপনি আমাকে পছন্দ করেন ।
-জি ! আমি যা করেছি তা কেবলই আপনার দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য ! এন্ড আই থিংক আই সাকসিড !
নিশি আবারও আমার দিকে তাকিয়ে থালো কিছুক্ষন । বলল
-হ্যা আপনি সফল ! কিন্তু একজন মানুষকে যে আপনি বিনা কারনে এমন ভাবে কষ্ট দিয়েছেন , মানুষিক কষ্টে রেখেছেন এটার কি হবে !
আমি নিশির দিকে তাকিয়ে দএখি ওর চোখ পানি জমতে শুরু করছে ।
-আপনি কি জানেন আমি কেবল রাতের পর রাত এই ভেবেছি যে আমি আপনার সাথে কি খারাপ ব্যাহার করেছি ! কত রাত আমি জেগে থেকেছি কেবল এই একটা প্রশ্নের জবাব জানার জন্য । কিন্তু কোন উত্তর পাই নি । আর আপনার কাছে এটা ........।
নিশি আর কোন কথা বলতে পারলো না । ওর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো !
আমি কেবল তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে ! এই কয়দিনের ভিতর আমার এই প্রথম নিজের কাছে খুব খারাপ লাগলো । আমি কেবল এতো দিন নিশি দৃষ্টি আকর্ষের চেষ্টা চালিয়েছি । এটার ফলে নিশির মনের উপর কি চলবে বা ওটা নিশি কিভাবে নিবে এটা আমি কোন দিন ভাবি নি ।
এখন মনে হচ্ছে যে কাজটা আমার মোটেও উচিৎ হয় নি ।
নিশি চোখ দিয়ে পানি পরতেই লাগলো !!
আসার পথেও ও কোন কথা বলল না ।

পরদিন সকাল বেলা অফিসে এসে শুনি যে নিশি রিজাইন করছে !! কেন জানি নিজের কে বড় অপরাধী মনে হল !! বড় বেশি অপরাধি !!


১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×