somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুগল্পঃ আটা ময়দা সুজি

১১ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১০:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সুমন অনেকটা সময় বসুন্ধরা সিটিতে বসে আছে । অন্য সময় হলে হয়তো সে বিরক্ত হয়ে যেত কিন্তু আজকে তার মোটেই বিরক্ত লাগছে না । বরং অপেক্ষা করতে ভাল লাগছে । জীবনে প্রথম কোন মেয়ের জন্য সে অপেক্ষা করছে এখানে। আইরিনের সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ার পর এই প্রথম তারা এক সাথে কোথাও দেখা করতে যাচ্ছে । বাসার কেউ জানে না । অনেকটা লুকিয়ে প্রেম করে দেখা করার মত অনুভুতি হচ্ছে ।

বাসা থেকেই আইরিনকে পছন্দ করা হয়েছে । প্রথমে একটু ছবি দেখানো হয়েছে । তারপর যেদিন দেখতে যাবে সেদিনই ওদের একটু কথা হয় । তাও আবার সবার সামনে । সুমনের আইরিনকে দেখে বেশ ভালই লাগে । মেয়েটা দেখতে বেশ সুন্দর তবে সুমনের কেন জানি মনে হল কিছু একটা ঠিক নেই । কিছু একটা সমস্যা আছে ! তবে চারিদিকের পরিবেশ এমনই ছিল যে সব কিছু ভুলে গেল মুহুর্তেই । সুমনের ইচ্ছে ছিল আইরিনের সাথে আরও কিছু সময় কথা বলে কিন্তু সে সুযোগ তাকে আর দেওয়া হল না । তাই আজকে অফিস থেকে বের হয়ে আইরিনের নাম্বারে ফোন দিল ও । বলল যে দেখা করতে চায় । তবে বাসায় কাউকে যেন এই দেখা করার কথা না বলে ও । তাহলেই হবে । আইরিনই রাজি হয়ে গেল । বলল যে ও একটু পরেই বাসা থেকে বের হচ্ছে !

তারপর থেকেই সুমন অপেক্ষা করেই আছে । বসুন্ধরাতে এই সময় প্রচুর ভীড় । মানুষ যেন আসছে আর আসছে । সুমন আবারও একটু এদিক ওদিক দেখতে লাগলো কিন্তু আইরিনের কোন দেখা নেই । মেয়েটা এতো সময় নিচ্ছে কেন ? এতো তো সময় লাগার কথা না !
ফোন দিতে যাবে ঠিক সেই সময়েই আইরিনের ফোন এসে হাজির । ফোনটা টা রিসিভ করলো । হ্যালো বলেই বলল, কোথায় আপনি ?
আইরিন বলল, "আপনি কোথায় ? আমি তো চলে এসেছি । আট তলাতে ।"
"আমিও তো আট তলাতে ।"
"কোথায় আছেন আপনি ?"
"আপনি যেখানে আছেন আমাকে বলেন আমি আসছি ।"
আইরিন বলল, "দেখেন সিনেপ্লেক্সের টিকিট কাউন্টারের সামনে । নীল রংয়ের ড্রেস পরে আছি ।"

সুমনের মনটা আনন্দে ভরে উঠলো । ঐ তো দেখা যাচ্ছে মেয়েটাকে । নীল রংয়ের সেলোয়ার কামিজ পরা ! আরেকটু এগিয়ে গেল । কিন্তু যখনই মেয়েটা একটু ঘুরলো তখনই সুমনের চোখ চরখগাছ ! এই মেয়ে কে ? আইরিন নাকি ?
কি সর্বনাশ ! এই মেয়েকে তো তারা সেদিন দেখে নি ।

কোথাও কি ভুল হচ্ছে ! হতে পারে । সুমন তখনই একটু আড়ালে চলে গেল পাশের বড় দোকানটার ! তারপর নিশ্চিত হওয়ার জন্য আবারও ফোন দিল । দেখলো হ্যা মেয়েটাই ফোন রিসিভ করলো ! মানে এই মেয়েটাই আইরিন !
সুমনের কানে তখনও ফোনটা রয়েছে । ফোনের ওপাশ থেকে তখনও আওয়াজ আসছে, হ্যালো কই আপনি !

সুমন কিছু শুনতে পেল না যেন । তখনই বুঝে গেল সেদিন আসলে কি ঠিক মনে হচ্ছিলো না । সেদিন যখন মেয়ে দেখতে গেছিলো তখন আইরিন ভারী মেকাপ দিয়ে এসেছিলো ওর সামনে । মনে হচ্ছিলো যেন পুতুলের সামনে বসে আসলে । সব আসলে কৃত্রিম । কিছুই সতয় নয় ! এতো বড় বাটপারি ! সুমন শুনেছিলো মেকাপ দিয়ে নাকি দিনকে রাত আর রাত কে দিন বানানো যায় কিন্তু ব্যাপারটা যে এমন হবে সেটা বুঝতেই পারে নি । কি মেয়ে দেখে এসেছিলো আর এই মেয়ে কে ? আইফোনের প্যাকেটে ওয়াল্টনের ফিচার ফোন পাওয়ার মত ।

সুমন তখনই ফোন বন্ধ করে দিল । আর এখানে থাকা যাবে না । এখানে পালাতে হবে । কেবল এখান থেকেই না এই মেয়ের কাছ থেকে পালাতে হবে ! কিন্তু যখন দোকানের আড়াল থেকে বের হয়ে এল তখন আইরিন ওকে দেখে ফেলল । ওর নাম ধরে ডাক দিতেই সুমন যেন চমকে উঠলো । তারপর আর কোন দিকে না তাকিয়ে সোজা দোড় দিল সিড়ির দিকে । কিভাবে যে গেট দিয়ে বের হয়ে এল সেটা কেবল ও ই জানে । সিএনজি কিংবা রিক্সার জন্য অপেক্ষা না করে দৌড়েই রাস্তা পার হয়ে পান্তপথ সিগনালের কাছে চলে এল । চলন্ত এক বাসে উঠে পড়লো ।

তারপর থেকেই মনে মনে সিন্ধান্ত নিলো ছবি দেখে আর মেয়ে পছন্দ নয় । আগে সরাসরি মেয়েকে দেখতে হবে তারপর কথা বার্তা এগোবে ! তা না হলে খোলসের ভেতরে কি থাকবে কে জানে ! বিয়ের পর দিন সকালে সে কোন ভাবেই হার্ট এটাকের শিকার হতে চায় না !
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১০:৪৬
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×