somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বন্ধুত্বের ঝালাই করণ

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ইদানিং কেন জানি বন্ধুদের মাঝে গড়া সম্পর্কটা একটু ঝালাই করতে ইচ্ছে করছে। জীবনের পুরো হিসাবের খাতায় কত শত বন্ধুর নাম লিখেছিলাম আর এখনও কত জনের নামই বা নতুন করে লিখতে হচ্ছে, লিখতে হবে। আগের দিনে হাজার মাইল পাড়ি দেওয়া নৌকার মাঝিরা কতশত ঘাটে তাদের নৌকা নোঙ্গর করে শতশত মানুষের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলত কিন্তু ক’জনের সাথেই বা মাঝির সুসম্পর্ক টিকে থাকতো। আমাদেরও হয়েছে মাঝির মত অবস্থা। জীবনে কত ধরনের বন্ধু পেয়েছি, কত ধরনের সম্পর্কই যে ছিল তাদের সাথে। কেউ খুবই কাছের বন্ধু, কেউ শুধু কাছের বন্ধু, কেউ দুরের বন্ধু, তবে সবাই আমরা বন্ধু। সময়ের সাথে সাথে বন্ধুদের সাথে সম্পর্কেরও পরিবর্তন হয়, হচ্ছে। এক সময়ের কাছের বন্ধু কেন জানি নতুন জল আসা হাওয়রে তলিয়ে যাওয়া ঘাসের মত হারিয়ে যাচ্ছে।
ছোটবেলায় যে বন্ধুটি ছাড়া একটি মুহুর্তও কাটাতে পারতাম না, তাকে ছাড়া এখন দিব্যি চলে যাচ্ছে জীবন। স্কুলে যাওয়া, বাজারে যাওয়া, মাঠে যাওয়া, মাছ ধরতে যাওয়া এমনকি এক সাথে ঘুমাতে যাওয়ার জন্য কতবার মায়ের সাথে মিথ্যা বলেছি। বন্ধুটির সঙ্গ কেমন জানি চুম্বকের মত আকর্ষণ করতো আমাকে। আর এখন, সেই টান আর আগের মতো নেই । হয়তো বা চুম্বকের ন্যায় আমার মনেও খুব করে মরচে ধরেছে।
উচ্চতর স্বপ্ন নিয়ে যখন উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হলাম তখন জীবন খাতায় আরো কিছু বন্ধুদের নাম লিখে নিলাম। বিকেলে নদীর পার ধরে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে কত পথ যে হেটেছি তার হিসাব নেইনি কখনো। ফিরেও তাকাইনি কত পথ ফেলে এসেছি। শুধু বিকেলের আযান অথবা ঘন্টাধ্বনি কানে আসায় মনে হয়েছে এখন বাড়ী ফেরা উচিত। কালের স্রোতে ভেসে এই বন্ধুরাও জানি কে, কোথায় তাদের মনের বসত গড়েছে তা জানা নেই।
দুই বছরের কলেজ জীবনে অনেক বন্ধুর নাম মনের ভিতর লম্বা-শক্ত পিন দিয়ে গেঁথে রেখেছিলাম। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে আড্ডা, স্যারের বাসায় পড়ার ফাঁকে আড্ডা, থাকার মেসে আড্ডা, সবকিছু স্বপ্নের মতই মনে হত। তাছাড়া মনে উকি দেওয়া প্রেমের অঙ্কুরোদম বার বার বিনষ্ট করেছি নিজের স্টেইনলেস স্টিলের ছুরি দিয়ে। তাতে কষ্ট পেয়েছি অনেক, তবে রক্ত বের হয়নি। বিদায় বেলা আমার ডাইরিতে বন্ধুদের লিখা- ‘বন্ধু, ভুলে যাস না’ শব্দ চারটিতে এখন মরচে ধরেছে অনেক।
ভার্সিটিতে পেয়েছি নতুন বন্ধুত্বের স্বাদ, নতুন অনুভুতি। কার কোথায় বাড়ি, কার কী ধর্ম-কর্ম সেদিকে কারো খেয়াল নেই, তার প্রয়োজনও নেই। কারণ এখানে সবার কাছে সব কিছুই নতুন। নতুন সিলেবাস, নতুন খাদ্য-বাস, নতুন পরিবেশ, নতুন রাজনীতি আর এগুলো নিয়ে সবার নতুন ভাবে পথচলা। গভীর রাতে বন্ধু ফোন দিয়েছে চা খাবে, বের হয়েছি আগ-পিছ না ভেবেই। আমি কাঠাল পছন্দ করি তাই প্রিয় বন্ধু রাতের বেলা কাঠাল নিয়ে এসেছে আমার জন্য, আমিও ইচ্ছেমত খেয়েছি। আরেক বন্ধুর ইচ্ছে হলো মধ্যরাতে রাস্তার পাশে থাকা ভ্যান-এর উপর বসে গল্প করবে, চা এ চুমুক দিবে ; তাতে আমারও ‘না’ নেই। জীবনের সব চাওয়া-পাওয়া-হারানোর গল্প শুনেছি, শুনিয়েছি একের পর এক। ঘড়িতে সময় দেখিনি। সময় চলে গিয়েছে আমাদের হাজারো সব গল্পের ফাঁক দিয়ে। আমার অগোছালো বিছানা পরম যতেœ গুছিয়ে দিয়েছে বন্ধু, ছেঁড়া বিছানা চাঁদর একটানে ছিড়ে নতুন চাঁদর কিনে দিয়েছে আমার প্রিয় বন্ধু। বাথরুমে পড়ে থাকা ভেজানো কাপড় বন্ধু আমার কখন যে ধুয়ে দিয়েছে তা টেরও পাইনি। বন্ধুদের সাথে নিয়ে সাগর পাড়ে সূর্যাস্ত দেখতে গিয়ে রাতের খাবার খেতে ভুলে গিয়েছি বার বার। এই বন্ধুদের ছাড়া একটা মুহুর্তও চলবে না- এমনই ছিল মনে। তবে এই মধুর সম্পর্কেও মরিচা ধরেছে আজ।
তাই ইচ্ছে করে কামড় খেয়ে লেগে থাকা সেই মরিচায় স্বচ্ছ ঝালাই করা দরকার, নতুন রং লাগিয়ে রাঙ্গানো দরকার। সবাইকে আবার নতুন করে কাছে পাওয়া দরকার।
তবে, হাজারো ব্যস্ততায় মোবাইলের রিংটোন শুনে যখন কোন প্রিয় বন্ধুর নাম মোবাইল ডিসপ্লেতে আলো জ্বেলে জ্বলে উঠতে দেখি তখন আমার হৃদয় কোনেও এক ধরনের সুখের ঝিলিক অনুভব করি। বড় ভালো লাগে তখন। আর বলতে ইচ্ছে করে- বন্ধু, মিস করছি খুব।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×