১৯৬৩ সালে পেশাদার সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে যখন আত্মপ্রকাশ করেন তখন তাঁর বয়স মাত্র ৫! গাইতেন পারিবারিক গানের দল 'জ্যাকসন ফাইভ 'র হয়ে। একক শিল্পী হিসেবে গাইতে শুরু করেন ১৯৭১ সাল থেকে। নিজেকে চেনাতে খুব একটা সময় নেননি। সঙ্গীতশিল্পীর পাশাপাশি নৃত্যশিল্পী, গান লেখক,অভিনেতা, সমাজসেবক এবং ব্যবসায়ী হিসেবেও প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন।
বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রিত সঙ্গীত অ্যালবামের মধ্যে - [অফ দ্য ওয়াল (১৯৭৯),থ্রিলার (১৯৮২),ব্যাড (১৯৮৭), ডেঞ্জারাস (১৯৯১) এবং হিস্টরি (১৯৯৫)] ৫টি-ই তাঁর। এজন্য তাঁকে " পপ সম্রাট " উপাধি দেয়া হয়। তাঁকে এমজে(Mj) নামেও ডাকা হয়ে থাকে।
সঙ্গীত শিল্পীদের মধ্যে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছান মূলত ১৯৮০র দশকে। তিনি প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন সঙ্গীতশিল্পী যিনি এমটিভিতে এতো জনপ্রিয়তা পান। বলা হয়, তাঁর গাওয়া গানের ভিডিওর মাধ্যমেই এমটিভির প্রসার ঘটেছিলো। গানের তালে তালে তাঁর নাচের কৌশলগুলোও ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। জনপ্রিয় নাচের মধ্যে রোবোট, ও মুনওয়াক (চাঁদে হাঁটা) অন্যতম। মুনওয়াক আসলে হলো সামনের দিকে হাঁটার দৃষ্টিভ্রম সৃষ্টি করে পিছনে যাবার ভঙ্গিমা। তিনি পপ সংগীত এবং মিউজিক ভিডিওর ধারণা পাল্টে দেন। সারাবিশ্বের নৃত্যশিল্পীদের কাছে এখনও তিনি সমানভাবে জনপ্রিয়।
রক অ্যান্ড রোল হল অফ ফেইমে নির্বাচিত হয়েছেন দুইবার। বিশ্বের একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে গান লেখক,নাচের "আর এন বি" হল অফ ফেইমেও যায়গা করে নিয়েছেন। সঙ্গীত জগতের আর কেউ এত ক্যাটাগরিতে হল অফ ফেইমে নিজেকে নিতে পারেন নি। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুসারে মাইকেল সর্বকালের সবচেয়ে সফল শিল্পী - (১৩টি গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড, ১৩টি ১নম্বর একক সঙ্গীত, এবং ১০০ (১ বিলিয়ন) কোটিরও বেশি অ্যালবাম বিক্রি হয়েছে যা এবং হচ্ছে)।
"থ্রিলার"(১৮৮২) আজ পর্যন্ত ১১০ মিলিয়নের উপর বিক্রি হয়েছে যা সর্বোচ্চ বিক্রিত হওয়া এলবাম। বেশি বিক্রিত এলবামের তালিকায় ২য়- "ব্যাড" (১৯৮২) এলবামে আছে বিলবোর্ড চার্টে ১ নম্বর হওয়া ৫ টি গান। "ডেঞ্জারাস"(১৯৯১) এলবামের মাধ্যমে তিনি "নিউ জ্যাক সুইং" নামে নতুন একটা জেনার কে পপুলার করেন। "হিস্টোরি"(১৯৯৫) তাঁর নবম স্টুডিও এলবাম এবং এই পর্যন্ত ৩৩ মিলিয়ন(৬৬ মিলিয়ন ইউনিট), যা হচ্ছে এই পর্যন্ত ২ টি ডিস্ক সমন্বিত একটি এলবাম এর সবচেয়ে বেশি বিক্রিত এলবাম।হিস্টোরি একটি বহুল আলোচিত প্রতিবাদি এলবাম।তার ২ বছর পর ১৯৯৭ সালে তিনি রিলিজ করেন তার সর্বপ্রথম রিমিক্স এলবাম "ব্লাড অন দা ডান্স ফ্লোর:হিস্টোরি ইন দা মিক্স" যা এই পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বিক্রিত হওয়া রিমিক্স এলবাম(৬ মিলিয়ন কপি)। ২০০১ সালে রিলিজ করেন তার জীবনের ১০ম ও সর্বশেষ স্টুডিও এলবাম "ইনভিন্সিবল"। এটি থ্রিলার এর থেকেও তাড়াতাড়ি বিক্রি হচ্ছিল,কিন্তু "সনি মিউজিক " এর সাথে ঝামেলার কারনে তারা এই এলবামটি প্রোমোট করতে অস্বীকৃতি জানায়,তার পরেও এটি ১৩ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়। এটি এই পর্যন্ত সবচেয়ে ব্যয়বহুল এলবাম,শুধুমাত্র রেকর্ডিংয়েই খরচ হয় ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের উপরে। ২০১০ সালে বিলবোর্ড কর্তৃক একটি পোলে এই এলবামটি ২০০০-২০১০ সালের মধ্যে রিলিজ পাওয়া এলবাম এর সেরা এলবাম নির্বাচিত হয়।
এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি এওয়ার্ড ও নোমিনেশন পাওয়া তারকাও তিনি। গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড তাকে ভূষিত করেছে বিনোদন জগতের সবচেয়ে দানশীল মানুষ হিসেবে । তার দানকৃত অর্থের পরিমাণ ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের এর বেশি। সঙ্গীত, নৃত্য এবং ফ্যাশন জগতসহ ব্যক্তিগত জীবনের বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষাপটে চার দশকেরও অধিককাল ধরে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বৈশ্বিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছেন।
শুভ জন্মদিন !!! পপ সম্রাট মাইকেল জোসেফ জ্যাকসন .......
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৪:১৯