somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুড়িয়ে পাওয়া শাক : ৩ = মালঞ্চ শাক / শান্তি শাক

২৬ শে জুন, ২০১০ দুপুর ১২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




স্থানীয় নাম :
সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার মাধাইনগর ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে স্থানীয় বাঙালিরা এই শাকটিকে শান্তি শাক নামে ডাকেন।
মৌলভীবাজার জেলায় এই শাক মালঞ্চ শাক নামে পরিচিত।

ব্যবহার :
মূলত: পাতা ও কচি ডাঁটা শাক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

কোথায় পাওয়া যায় :
বাংলাদেশের বিভিন্ন সমতল এলাকার গ্রামে পাওয়া যায়। শান্তি শাক গ্রাম বাংলার মানুষের একটি অতি প্রিয় উদ্ভিদ। সাধারণত বাড়ীর আশে পাশের ডোবা নালাতে এবং নিয়মিত বা অনিয়মিত পানি প্রবাহিত হয় এমন নরম মাটিতে এই শাক জন্মে। যেখানে জন্মে সেখানেই বিস্তৃতি দেখা যায়। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় এই শাকের বিভিন্ন নাম আছে।

দেখতে কেমন :
গাছটি মাটিতে বিছিয়ে থাকে এবং লম্বায় প্রায় চার/পাঁচ হাত হয়। বর্ষাকালে কিছূ অংশ মাটিতে ও কিছু অংশ পানিতে ভাসতে থাকে। পাত প্রস্হ পাঁচ/ছয় আঙ্গুল হলেই এই শাক খাওয়ার উপযোগী হয়। শাক হিসেবে গাছের আগা (সম্মূখভাগ) সংগ্রহ করার সাথে সাথে ছোট ছোট উপশাখা বের হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। গাছটির ফুলের রং সাদা ও ছোট আকারের ফুল গুলো কান্ডের সাথে লেগে থাকে। ফল সম্পর্কে স্থানীয়রা বলেন, এর বীজের রং কালো। তবে, তাদের মতে গাছটির কান্ডের শিকড় থেকেই নতুন গাছের জন্ম হয়। এই শাকের পাত প্রস্হ প্রায় দুই আঙ্গুল হয়। পাতার রং সবুজ ও কান্ড হালকা সবুজ রংয়ের হয়ে থাকে। বর্ষাকালে গাছগুলো বড় হয়ে থাকে এবং তখন পাতা গুলোও বড় হয়। ভরা বর্ষায় পানিতে ভেসে থাকা গাছের ডাঁটা গুলো বেশ মোটা ও ফাঁপা হয়ে থাকে। শীতকালে গাছগুলো অনেক ছোট হয়ে যায় এবং পাতা গুলোও ছোট হয়ে যায়। শীতকালের গাছের পাতা গুলো কালচে সবুজ রঙ ধারণ করে এবং পাতায় তেল চকচকে ভাব দেখা যায়। শীতকালে গাছগুলো অনেক নরম হয়ে যায়। এটি পরিবারের একটি সপুষ্পক বিরুৎ জাতীয় উভয়চর জলজ উদ্ভিদ। অঙ্গজ প্রজননের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি ঘটে। প্রাকৃতিক পরিবেশে এমনিতেই জন্মানো এই শাক চাষ করার কোনো ঘটনা জানা যায় না।

কখন পাওয়া যায় :
সারা বছরই এই শাক কম-বেশী পাওয়া যায়। তবে, জৈষ্ঠ থেকে আষাঢ় মাসে এই শাক বেশী পাওয়া যায়।

কিভাবে খাওয়া যায় :
গাছের উপরের দিকের পাতা, আগার দিকের কচি কান্ড পাতাসহ তোলা হয়। শাক তোলার পর তাজা শাক ভাল করে পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এই শাক অন্যান্য শাকের মত তেল, মরিচ, পেয়াজ, লবন দিয়ে ভেজে খাওয়া হয়। এলাকাভেদে রান্নায় হলুদ-মরিচ বা অন্য মশলা স্বাদ মতো মেশানো যেতে পারে। শাক মিষ্টি স্বাদ, ছোট মাছ দিয়ে এই শাক রান্না করে খাওয়া যায়।

উপকারিতা :
• শাক পেট ঠান্ডা রাখে এবং মুখে রুচি বাড়ায়।
• হজমে সহায়তা করে।

অন্যান্য :
এই শাক বেশী পরিমানে একটি এলাকা থেকে আহরন করা যায় বলে অন্য শাকের সাথে মিশিয়ে খুব একটা খাওয়া হয় না। গ্রামীণ পর্যায়ে এই শাক মূলত নারী ও শিশুরাই সংগ্রহ করে থাকে। গ্রামের দরিদ্র মানুষের জন্য এই শাক যেমন পরিবারের খাদ্য চাহিদা মেটায় একইভাবে তা পুষ্টি চাহিদাও দূর করে। স্থানীয় এলাকার সকল ধর্মের মানুষই এই শাক
খাবার হিসেবে গ্রহণ করে থাকে।

সতর্কতা :
• গাছে ফুল আসলে তখন সেই গাছের শাক খাওয়া হয় না, কেননা ফুল আসলে সেই গাছের শাক খুবএকটা স্বাদ হয় না।
• শাক তোলার পর বেশী সময় রাখা যায় না, তাজা থাকতে থাকতে রান্না করে ফেলতে হয়।
• পচাঁ ডোবা এবং ময়লা আবর্জনা ফেলা হয় যেসব জায়গায় সেখানকার শাক না খাওয়াই ভাল।
• রান্নার আগে শাক ভাল করে ধুয়ে নেয়া দরকার।
• শাক তোলার ক্ষেত্রে অবশ্যই এর বংশ যাতে একবারেই শেষ না হয়ে যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
• বর্ষাকালে অনেকে হেলেঞ্চা শাকের সাথে একে মিলিয়ে ফেলতে পারে। তাই সনাক্তকরণে সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়।
--------------------



কুড়িয়ে পাওয়া শাক : ১ শুষনি/শুনশুনি/আবুল ঘাস/ শুশুনি/শুনশুনিয়া শাক
Click This Link

কুড়িয়ে পাওয়া শাক : ২ = শ্বেতদ্রোণ/ দন্ডকলস/দল কলস/ ধুবরি/ দোর কলস/ কান শিশা/ কাউন শিশা/ ধুরপ/ দুলফি শাক : Click This Link




-----------------------------------------------------------------------------
তথ্যসূত্র : সিরাজগঞ্জ, মৌলভীবাজার এলাকার গ্রামীণ নারী এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল হার্বেরিয়াম।
United Nations Development Programme
-----------------------------------------------------------------------------
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০১০ দুপুর ২:৩০
১০টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×