somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা ভাষায় ও সাহিত্যে গালাগালি--- আদি ও মধ্য কাল পর্ব

৩০ শে মার্চ, ২০০৮ রাত ১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইতোপূর্বে গালির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে লিখেছিলাম নিচের পোষ্ট টিতে।
স্ল্যাং ব্যবহারের পোষ্টমোর্টেম , স্ল্যাং যখন ভীষণ উপযোগী...
এবার বাংলা গালির বিভিন্ন কালের রমকফের নিয়ে কিছু প্রকাশের উদ্দেশ্য শুরু করছি এই শিরোণামের বক্তব্য---
বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন ইতিহাস ঘাটলে আমারা জানতে পারি যে আধুনিক যুগের পূর্বে বাংলা গদ্যের প্রমান প্রাপ্ত কোন বিকাশ ঘটেনি। ফলশ্রতিতে প্রাগ আধুনিক যুগের কথ্য বাংলার রূপ সম্পর্কে আমাদের ধারনা কখনই স্পষ্ট হয়না। তাই বিশাল এলকা জুড়ে ব্যবহৃত বাংলা ভাষাভাষি মানুষের ভাষায় কি ধরনের স্ল্যাং কোন এলাকা ভিত্তিতে কিভাবে ব্যবহৃত হতো সে সম্পর্কে ও স্পষ্ট ধারনা দেয়া সম্ভব নয়।
তবে আধুনিক যুগের আগের বাংলা সাহিত্য ঘেটে বিশেষজ্ঞরা যে সব আমাদের জন্য উপস্থাপন করেছেন তার বেশীর ভাগই আমার পাই ছন্দময় একটা ভাবে, কাব্য ধারায়। এবং সেই সব কাব্যে , ছন্দে , প্রবাদে, ছড়ায় , কবিতায় বা পুঁথিতে স্ল্যাং এর যে বিশদ ব্যবহার ছিল তা থেকে নিচে কয়েকটি মজার মজার উদ্ধৃত করার ইচ্ছা পূরণ করছি। ...

১। আপন পানে চায়না শালি
পরকে বলে টেবো গালি।

২। উটকপালি চিড়–ন দাঁতি
গোদা পায়ে মারব লাথি।

৩। দেখে দেখে লাগল ধাঁধাঁ
পেত্নির পায়ে শেকল বাঁধা।

৪। দোজবরে ভাতারের ছাগ
চতুর্দশীয় চোদ্দ শাক।

৫। মায়ে রাঁধে যেমন তেমন, বোনে রাঁধে ছাই
ওই আবাগি রেঁধে দিলে মধূর তরে খাই।

৬। হাগুন্তির লাজ নেই, দেখুন্তির লাজ।

৭। পুতের মুতে কড়ি, মেয়ের গলায় দড়ি।

৮। ফচকে রাঁড়ের চুলবুলানি, জোয়ান রাঁড়ের ছাতা
বুড়ো রাঁড়ের পুরানা কথা আধবয়সীর মাথা।

৯। সতি মাগীর তাঁতি নাঙ।

১০। এক বউ নাচনি, তায় খেমাটার বাজনি।

এজাতীয় দৃষ্টান্ত প্রাচীন প্রবাদে অজস্র এবং প্রবাদ বেশীর ভাগই ( প্রায় সবই) অতি প্রাচীন। প্রবাদগুলির স্রষ্টা শালিনতা রায় খুব একটা ভাবিত ছিলেন না। হতে পসে সময়টাতে এই নিয়ে ভাবিত হওয়ার কোন প্রয়োজনও তাদের ছিলনা। অথবা নাও হতে পারে। ইচ্ছাকৃতও হতে পারে। অবশ্য নানবিধ সামিিজক বিষয়ে কটা করাই তো প্রবাদের একটা বিশিষ্ট কুলণ। যৌনতা, প্রাকৃতিক কাজকর্ম, সামজিক ব্যাভিচার, গোপন যৌন সম্ভার ইত্যাদি নানা বিষয়ই প্রবাদের মধ্যে তাই প্রাধান্য পেয়েছে।

প্রবাদের মতো ছড়ায় প্রাচীন বা মধ্য যুগে গালির অতটা ব্যবহার না হলেও , উদাহরণ আছে ভরি ভরি। অষ্টাদশ শতকের একটা মেয়েলি ছড়ার উদাহরণ পড়লেই সেটা বুঝতে পারবেন।
উদাহরণঃ

আয়না, আয়না, আয়না।
সতিন যেম হয় না ॥
উদবিড়ালি খুদ খায়
স্বামী রেখে সতিন খায় ॥
খ্যাংরা খ্যাংরা খ্যাংরা
সতিনের মাথায় যেন উকুন আর ড্যাংরা।
বেড়ি বেড়ি বেড়ি।
সতিন আবাগি চেড়ি।
খোরা খোরা খোরা।
সতিনের মাকে ধরে নিয়ে যায় যেন
তিন মিনসে গোড়া।
হাতা, হাতা, হাতা,
খাই সতিনের মাথা ॥
থুৎকুড়ি, থুৎকুড়ি, থুৎকুড়ি,
সতিনের যেন হয় আটকুড়ি ॥
পাখি, পাখি, পাখি,
নিচের মল সতিন আমি উপর থেকে দেখি ॥

এনবার একটা প্রাচীন পুঁথির উদাহরণ দেই। রাজশাহীর সুপ্রসিদ্ধ সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ‘ বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি’ সংরক্ষিত পুঁথিগুলির মধ্যে ১৮২ সংখ্যক পুঁথিতে পাই---

যত্ন করি এই পুঁথি করিলাম লিখন।
ইহা যদি চুরি করি লয় কোন জন।
মাতা তার শূকরী হয় জনক শূকর।
ব্রক্ষ্মহত্যা আদি পাপ তাহার উপর।



এসব আলোচনা আর উদাহরণ থেকে বোঝা যায় বাংলা ভাষায় এবং সাহিত্যে স্ল্যাং এর ব্যবহার সুপ্রাচীন। তবে একটা বিষয় স্পষ্ট স্ল্যাং এর সাথে যৌনতার একটা সেই প্রাচীন আর মধ্যযুগেও ছিল, যেটা পরবর্তীতে উনিশ শতকের গবেষনা লব্ধ লিপিবদ্ধ ভাষার ইতিহাস এও আমরা দেখি।
সে সম্পর্কে পরবর্তীতে কিছু আলোচনা করার ইচ্ছা রেখে আপাতত এখানেই আপনাদের দৃষ্টি থামাচ্ছি।

( বিঃদ্রঃ উপরোক্ত আলোচনায় আমাকে সরাসারি সাহায্য করেছে যে বইটি তার নাম---‘ বাংলা স্ল্যাং , সমীক্ষা ও অভিধান’ লিখেছেণ অভ্র বসু, প্যাপিরাস প্রকাশন, কলকাতা)


সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০০৮ রাত ২:১২
৮টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×