‘যে শব্দ বা পদ ভদ্রলোকের কথ্যভাষায় ও লেখ্য ভাষায় প্রয়োগ হয়না এবং যাহার উৎপত্তি কোন ব্যক্তি বিশেষের অথবা দলবিশেষের হীন ব্যবহার হইতে তাহাই ইতর শব্দ (স্ল্যাং)’
স্ল্যাং সম্পর্কে এ জাতীয় সংগা খুবই অস্পষ্ট। সুকুমার সেন যত বড় ভাষাবিদই হোন না কেন, তার এই ক্ষুদ্রায়িত সংগার মধ্যে অনেক গুলো এমন শব্দ রয়েছে যা নিয়ে পৃষ্টার পর পৃষ্টা তর্ক করা সম্ভব।
প্রথমত বলব এই জেন্যে যে , সমাজের সব মানুষই কম বেশী এমন শব্দ ব্যবহার করে যা প্রথাবিরুদ্ধ , যা সহজ সংগাতে অব্যশই স্ল্যাং। কেউ কি আছেন বলতে পারবেন কথ্য রূপ ভাষাতে কখনই স্ল্যাং ব্যবহার করেননি। লেখ্যরূপের কথা আলাদা। সে কারনে উক্ত সংগায় ভদ্রলোকের কথ্য ভাষা না বলে ভদ্রলোকের শিষ্টালাপ মানে সুশীল আলাপ এর ভাষা বললে অস্পষ্টতা দূর হয় অনেকখানি এবং একপেশে সংগা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া যায় ভালো।
আবার হীন ব্যবহার কথাটাও ব্যবহার করে স্ল্যাং এর ব্যবহার নির্দিষ্টকরণ কাজটি যথার্থ নয়।
আবর স্ল্যাং মানেই ইতর শব্দ কেনো হতে যাবে , অনেক এমন স্ল্যাং আছে যা ইতরের বিরোধ শব্দও বটে।
বেশীর ভাগ ভাষাবিদই কিন্তু বলেছেন - সমস্ত স্ল্যাং কে অশ্লীল বলে অভিহিত করার প্রবণতা সংগত নয়। ’
বরং আমরা বলতে পারি স্ল্যাং এর একটা গুরুত্বপপূর্ণ অংশ হলো অশ্লীল শব্দ বা ভালগারিসম, এই ধরনের স্টেটম্যানকে মানা যায় বোধহয়। আসলে স্ল্যাং এর সীমানা এবং তার সংগা খুব একটা নির্দিষ্ট নয়।
তারপরও কমন সেনস বলে যে বিষয়টা মানুষের আছে তার থেকে অনেকসময় বুঝে নিতে হয।
স্ল্যাং যাই হোক না কেনো, কম বেশী আমরা সবাই বুঝি , গালি চেনেনা বা জানেনা বা বলেনা , এমন কেউ আছে বলে আমি জানিনা। আপনারা জানলে বলতে পারেন তার নাম। গিনিস বুকে নাম উঠানোর ব্যবস্থা আমার।
স্ল্যাং নিয়ে এত কথা বলার আসলে কোন দরকার ছিলনা। অন্তত ছুটির দিন এই সাত সকালে, দুটো কারন আমাকে এই নিছক আলোচনায় প্রলুব্ধ করলো। প্রথমটি , ব্লগের প্রথম পাতায় সাত সকালে ছাগলের লাদির মতো স্ল্যাং এর অবিন্যস্ত ছড়াছড়ি এবং দ্বিতীয়-ইদানীং ‘ বাংলা স্ল্যাং - সমীক্ষা ও অভিধান’ নামে অভ্র বসুর লেখা , কলকাতার একটি বই নিয়ে নাড়াচাড়া করতে থাকা।
ঐ বইটি মধ্যে অভ্র বসু স্ল্যাং ব্যবহারের বেশ কিছু কারন চিহ্নিত করেছেন। সেই আলোকে নিচে কিছু আলোচনা করার প্রয়াস খুঁজছি।
স্ল্যাং ব্যবহারের কারন অব্যর্থ ভাবে নির্ণয় করা অবশ্যই দুষ্কর। তবে স্বতন্ত্র ভাবে এবং ব্যবহার ইতিহাস বিচারে কিছু কারন হয়তো আমরা নির্ণয় করতে পারি। যেমনঃ
১। হৈ হুল্লোর অথবা ফুর্তি প্রকাশে
২। মজা করার জন্য।
৩। ভাষার অভিনবত্ব সৃষ্টিতে এবং একঘেয়েমি পুনরাবৃত্তি দূর করার জন্য। Brander Mathews এ সম্পর্কে বলেছেন,
‘It is the duty of slang to provide substitute words for the good words …which are worn out by hard service.’
৪। ভাষাকে সরস করা জন্য। এর ফলে ভাষায় একটি আকর্ষনীয় এভং চমকপ্রদ মাত্রা যোজিত হয়।
৫। বিশেষ ভাবে স্বতন্ত্র বা নিজস্বতা দেখানোর জন্য এবং দৃষ্টিকারার জন্য, বক্তা বা লেখক স্ল্যাং ব্যবহার করতে পারে। ( এই ব্লগে এই ব্যবহারটি ব্যপকতা পেয়েছে দারুন)
৬। বক্তব্যকে টানটান , সংপ্তি এবং র্চাঁচাছোলা করার জন্য এবং স্পষ্টবাদীতার ক্ষেত্রে ।
৯। নানরকম দুঃমোচনে স্ল্যাং এর বিশেষ ভূমিকা আছে। বিশেষত প্রেমের সম্পর্ক ভাঙন বা মারাত্মক শারীরিক অসুস্থতা বা কঠোর কোন শাস্তির কারনে। (এই ব্যবহারটিরও বেশ প্রয়োগ এই ব্লগে দেখা যায়।)
১০। প্রথাগত পরিবশে বা সভার গাম্ভীর্য ও অতিরিক্ত মাত্রা ভাঙার জন্য।
১১। যে বিষয়গুলো সম্পর্কে সামজিক কোন নিষেধ বা টেবু কাজ করে কিংবা যে বিষয়গুলো সামজিক জীবনে সহজ স্বীকৃতি পায় না. সে সমস্ত বিষয় নিয়ে কথা বলার সময় স্ল্যাং প্রয়োগের একটা বাড়তি প্রবণতা ল্ক্ষ্য করা যায়। এই কারনে সব ভাষতেই যৌণ স্ল্যাং খুব বেশী।
১২। বক্তা - শ্রোতা বা লেখক- পাঠকের মধ্যে সম্পর্ক স্পষ্ট করতে স্ল্যাং এর গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা থাকতে পারে। গোষ্ঠিগত স্ল্যাং এর দ্বারা লেখক পাঠক কে বা বক্তা শ্রোতাকে নিজস্ব পরিচয়ের দাম্ভিকতা তির্যতকভাবে জানিয়ে দিতে পারে।
১৩। অপমান, হেয় বা তাচ্ছিল্য করার জন্য। ঝগড়ায় যে কারনে স্ল্যাং প্রায় আবশ্যক ভূমিকা রাখে।
১৪। ব্যঙ্গ বিদ্রূপ করতে অথবা খোঁচা বা খোঁটা দিতে।
১৫। ভাষাকে তাৎক্ষনিক , সময়োপযোগী এবং বিষয়মুখী করে তুলতে।
১৬। বিরক্তি , ক্ষোভ, অসোন্তষ বা রাগ প্রকাশের ক্ষেত্রে স্ল্যাং ব্যবহার হয়।
১৭। সমাজের প্রতি বীতশ্রদ্ধা প্রকাশে।
১৮। স্ল্যাং ব্যবহার করে যৌণ উত্তেজনা সঞ্চার করা সম্ভব।