ব্লগে সাইবার ক্রাইম নিয়ে আলোচনা নিয়ে অনেক কথাই বললেন। অনেকে আইনের কথাও তুললেন। আইন দিয়ে ব্লগ নিয়ন্ত্রণ ও ব্লগারদের কর্মকান্ড (কথিত ক্রাইম) লাগাম ধরা। দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অন্যা্ন্য পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে আর নেতাদের কথা শুনে অনেকে ভাবছেন সময় এখনই- করতে হবে সাইবার আইন। অন্যতম লক্ষ্য হয়তো ব্লগ। মন্ত্রী, ত্যানাদের আস্ফালন দেখে মনে হয় এমনই। যাই হোক ব্লগে আলোচনার জন্য একটা টপিকস নিয়ে সবাই ১০/১৫ জনকে নিয়ে একটি আড্ডা ছিল নির্মাণাধীন ব্লগ বাংলানিউজ২৪।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির দৃঢ় বিশ্বাস ছিল তিনি যা বলছেন তাই সঠিক, যদিও শেষে তার গলার সুর কিছুটা বদলে গেছে। মাহমুদ মেনন চাইছিলেন ব্লগে ক্রিমিনাল (ব্লগের দুষ্ঠু ছেলে) দের নিয়ন্ত্রণ ও বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে যাতে অনাকাঙ্খিত ঘটনা না ঘটে সেজন্য। তিনি বলছিলেন বিভিন্ন কথা। আলোচকরাও যেন এ বিয়সটা ভেবে কথা বলেন। যেহেতু অনুষ্ঠান লাইভ হচ্ছে। মূল কারণ ছিল বিডিনিউজ২৪ এর ব্লগের নাম আসা ও কয়েকজন ব্লগারের কিছু কমেন্টের কারণে। ব্লগকে নিয়ন্ত্রণ করার (মন্ত্রীর অনুকরণে বিডিনিউজ ব্লগের সম্পাদকের মন্তব্য) চিন্তার সমালোচনার কারণেও তিনি হয়তো নিজের গাঁ বাঁচাতে বলেছেন। তবে, বিডিনিউজ২৪ সম্পাদক সাইবার আইনের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে অপরাধসমূহ চিহ্নিত প্র্রতিরোধে এমনটা বলেছেন বলে শুনেছি।
সামহোয়্যার ইন সর্বাধিক ব্লগার ও একটি বড় কমিউনিটি ব্লগের কর্ণধার হিসেবে জানা´র কথা আমার ভালই লেগেছে। তিনি ব্লগারদের বক্তব্য নিয়ন্ত্রণ করার কথা উঠার সাথে সাথে প্রতিবাদ করে বলেছেন, যে আলোচনা যেভাবে চলছে সেভাবেই চলুক। ব্লগে এখনো সাইবার ক্রাইমের মতো কোন কিছু ঘটেনি। একথা সবারই ছিল। মাহবুব মুর্শেদ ব্লগারদের জন্য কোন ধরনের আইনের বিরুদ্ধে। তিনি ব্লগের বিরোধিতা ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিডিনিউজ মডারেটর ও ব্লগটির সম্পাদকের আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন। আসিফ মহীউদ্দিন সাইবার আইন, সাইবার ক্রাইম ও ব্লগ নিয়ন্ত্রণ এসব টপিকের সবগুলোর সাথেই দ্বিমত পোষণ করে ব্লগারদের স্বার্থ রক্ষার জন্য যে কোন ধরনের নিয়ন্ত্রণ ও আইনের বিপক্ষে।
সরকারের ইশারা ইঙ্গিতে সাইবার আইন ও ব্লগে সাইবার ক্রিমিনাল খোঁজা অথবা সাইবার ক্রাইম নিয়ে আইন ও নীতিমালা এসব করার বিরোধিতা আসিফসহ মুর্শেদ, শামীমসহ আরো কয়েকজনের ছিল। জানা, রিয়াজ ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্টদের রাষ্ট্রীয় নির্যাতন, গ্রেফতার এসব বিষয়ক ধারা তথ্য প্রযুক্তি আইন থেকে বাদ দেয়ার কথা বলছিলেন।
একরামুল হক শামীম আইনের লোক হিসেবে আইন, আইনের প্রয়োজন আদৌ আছে কিনা, ভবিষ্যতে হওয়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বলছিলেন। তার মূল কথা হলো এখনই দেশে ব্লগিং যে অবস্তায় বিশেষ করে কমিউনিটি ব্লগিং নিয়ে সাইবার আইন করার কোনো প্রয়োজন আপাতত নেই। ব্লগকে আইন দিয়ে বেঁধে ফেলার বিরোধিতা ছিল তার বক্তব্যে।
পারভেজ আলম অত্যন্ত যুক্তিপূর্ণ ও সহজ ভাষায়, কম কথায় বলেছেন যে, ব্লগে এমন কিছুই হয় নাই যেজন্য আইন দিয়ে নতুন করে একটি অস্ত্র তুলে দিয়ে ব্লগারদের কন্ঠ রোধ করতে হবে।
অতিথি কাতারে সাব্বিন নামে যে আইসিটি এডিটর ছিলেন তার আসলে ব্লগ নিয়ে কতটুকু জ্ঞান আছে সেটাই প্রশ্নবোধক।
সাইবার আইনের সাথে ব্লগও কেন আইনের কাতারে গিয়ে কন্ঠরোধের নতুন উদ্যোগ হবে সেটাই আমর বোধগম্য নয়। ব্লগ নীতিমালা, মডারেশনসহ অন্যান্য বিষয় দেখলেও দেখা যায় দেশের কমিউনিটি ব্লগ এখনো আস্থার জায়গাতেই আছে। আইন করে ব্লগিং নিয়ন্ত্রণ ও ব্লগারদের জন্য আইনী, পুলিশী ব্যবস্থার কি প্রয়োজন আছে!!মনে হয় না।
একজন বলছিলেন, কলাবাগান থানায় পুলিশ নাকি নিজেদের ওয়েব এড্রেস ও পাসওয়ার্ডও সাতে দিয়ে রেখেছে। সেটা পরীক্ষা করে দেখা গেছে সেই পাসওয়ার্ডও ঠিক। এই যদি দেশের পুলিশ হয় , তাদের দিয়ে কি হবে ব্লগিং নিয়ন্ত্রণ ও সাইবার আইন কার্যকর!!!!! সংসদে নেতা নেত্রীরাও গালাগাল করেন, ব্লগেও মত বিনিময়ের কোথাও কোথাও গালি আসলেও আসবে। সেটার জন্যও কি আইন লাগবে! বন্ধ করতে!! মনে হয় না।
ব্লগার, বিশেষ করে ব্লগের মডারেটরদের অনেকেই তা মনে করেন না! কেউ কেউ বলেছেন, কমিউনিটি ব্লগের বাইরে কিছু কিছু ব্লগ নামের ওয়েবসাইট তথ্য প্রযুক্তি আইনের আওতায় আসে, তাদের নিয়ন্ত্রণ করা যায়। হাজার হাজার আইন যেখানে পড়ে আছে, কাজের চেয়ে অকাজ, আইনের নামে বেআইনি কাজ, কোথাও্র বা বেশিরভাগ বা সব জায়গায় প্রয়োগের নামে অপপ্রয়োগ হচ্ছে, সেগুলো ঠিক করলেও নতুন করে সাইবার ক্রাইম খোঁজার জন্য আইনের দরকার আছে!! আমার মনে হয় নাই। ব্লগকে আইন দিয়ে, সাইবার ক্রাইম হচ্ছে বলে ব্লগার, ব্লগ, ব্লগের নীতিমালা, ব্লগিং কমিউনিটি, বাংলা ব্লগিংকে অপমান করার কোন মানে হয় না।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১:৪৫