somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মরিচখোর (রম্য)

২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

কয়েক বছর আগের ঘটনা। ইত্তেফাকের পূর্বপাশের হোটেলে দুপুরে ভাত খেতে বসেছি। যদিও দুপুরের খাবার খাচ্ছিলাম কিন্তু সময়টা দুপুর ছিল না। তখন বেলা পৌনে চারটা বাজে। বিকাল বেলাই বলা চলে। হোটেলে তেমন একটা ভিড়বাট্টা নেই। মাঝখানের ফাঁকা একটা টেবিলে বসে খাচ্ছি। এমন সময় আমার টেবিলের সামনের চেয়ারে মাঝ বয়সি এক ভদ্রলোক এসে বসলেন। পায়জামা পাঞ্জাবীর সাথে দলীয় পোষাক পরেছেন। পাবনা, সিরাজগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেন। তার পোষাক পরিচ্ছদ দেখে মনে হলো খুব বড় না হলেও ছোট খাটো রাজনৈতিক নেতা হবেন।

হাতমুখ ধুয়ে এসে আরাম করে বসলেন। আমি মাছ দিয়ে ভাত খাচ্ছিলাম। তিনিও নলা মাছ দিয়ে ভাতের অর্ডার দিলেন। আমার তখন অর্ধেক খাওয়া হয়েছে। বয় ভাত তরকারী দিয়ে গেলে উনি খাওয়া শুরু করলেন। ভদ্রলোকের খাওয়া দেখে আমার চক্ষু চড়ক গাছ। টেবিলে বাটি ভরা কাঁচা মরিচ ছিল। বাটি থেকে একটা করে কাঁচা মরিচ নিচ্ছেন আর ভাতের সাথে ডলে ডলে প্রতি লোকমায় একটা করে খাচ্ছেন।

উনার মজা করে মরিচ খাওয়া দেখে কৌতুহল বশতঃ বললাম, বড় ভাই, মরিচগুলো মনে হয় ঝাল কম?
আমার কথা শুনে উনি আরেকটা মরিচ ডলতে ডলতে বললেন, ঝাল নাই দেইখাই তো লোকমায় লোকমায় খাইতে পারতেছি, নইলে কি আর এত মরিচ লাগে?

তার কথা শুনে আমারও মরিচ খাওয়ার খুব শখ হলো। ঝাল যদি কম হয়, আর খেতে যদি মজা লাগে, তাহলে আর খেতে অসুবিধা কি? উনি পনেরো বিশটা খেলে আমার অন্তত একটা তো খাওয়া দরকার? তার মত করেই ভাতের সাথে মরিচ ডলে ভাতসহ মরিচ মুখে দিয়ে চিবাতে লাগলাম। কিন্তু দুই তিন চিবানি দিয়েই আমার মুখ হা হয়ে গেল, হা করা মুখ আর চাপাতে পারছি না। মরিচের ঝালের চোটে পুরো মুখ জ্বলতে লাগল। কুলাতে না পেরে মুখটা বোয়াল মাছের মত হা করে শুধু হু হা- - হু হা- - করতে লাগলাম। চোখ দিয়ে টপ টপ করে কান্না ছাড়াই জল গড়িয়ে পড়তে লাগল। তরকারী বাদ দিয়ে খালি শুকনা ভাত মুখে দিয়ে নাড়াচাড়া করতে লাগলাম। তারপরেও ঝাল যেতে চায় না। ভদ্রলোক যতটা মরিচ মজা করে খেলেন আমি মাত্র অর্ধেক মরিচ খেয়েই ঝালের চোটে তত ঢোক পানি গিলে ফেললাম। তারপরেও মুখ, পেট জ্বলতে লাগল।

দুই চোখের পানি নিয়ে হু হা হু হা করতে করতে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। ভদ্র লোক আমি ভাত খাওয়া বন্ধ করে তাকিয়ে আছি দেখে খাওয়ার মাঝেই পাতের দিক থেকে মুখ তুলে তাকালেন। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আশ্চার্য হয়ে বললেন, কি রে ভাই, একটু আগেই তো আপনারে ভাল দেখলাম, হঠাৎ করে কান্দা শুরু করলেন ক্যা! আপনার মনে আবার কি দুঃখ দেখা দিল?

তার কথা শুনে পিত্তি জ্বলে উঠল। মনে মনে গালি দিয়ে বললাম, আপনার মরিচ খাওয়ার চৌদ্দ গুষ্ঠি কিলাই। আপনার কথা বিশ্বাস করেই তো আমার এখন নিরবে কাঁদতে হচ্ছে।

মনে মনে যত গালিই দেয় না কেন মুখে হু-- হা-- হু-- হা-- ছাড়া কোন কথা বললাম না। ভদ্রলোকের কথার উত্তরে আমি কোন কথা বলছি না দেখে, নিচের দিকে মুখ করে তিনি আবার আস্ত মরিচ ডলে ডলে খেতে লাগলেন।

আমার পুরো ভাত খাওয়া আর হলো না। পাতে ভাত রেখেই উঠে হাত মুখ ধুয়ে নিলাম। টেবিলে এসে দেখি ভদ্রলোক সতেরো আঠারোটি মরিচসহ পুরো দুই প্লেট ভাত খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন। তার ভাব দেখে মনে হলো ভাত তরকারীর মত মরিচও একটা পেট ভরে খাওয়ার মত খাদ্য। অনেক লোককেই কাঁচা মরিচ খেতে দেখেছি, কিন্তু এই লোকের মত এত মরিচ খোর আর জীবনে দেখি নি।

টেবিলে বসে ঘনঘন পানি খেতে খেতে ভাবতে লাগলাম, যে লোক এত ঝাল মরিচ অনায়াসে গিলতে পারেন, সে লোক যদি নেতাগিরী করার সময় বক্তৃতায় এর ছিটেফোটাও উদগীরণ করেন, তাহলেও বিপক্ষ দল কথার ঝালের চোটে কুপোকাত হতে বেশি সময় লাগবে না। কিন্তু উনি বাস্তবে কি রকম নেতা সেটা জানার সৌভাগ্য আমার হয় নি। তবে তার মরিচ খাওয়ার কথা মনে হলে এখনও আমার চোখ দিয়ে জল টপ টপ করে গড়িয়ে পড়ে।

(ছবি ইন্টারনেট)
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৯
২৯টি মন্তব্য ২৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×