somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Orca বা Killer whale, বাংলায় শিকারী তিমি

২১ শে অক্টোবর, ২০১০ রাত ২:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


"Orca"- যেটাকে আমরা সাধারণত শিকারী তিমি বা Killer whale বলেই চিনি। অনন্য এই প্রানীটি মূলত ডলফিন ফ্যামিলির অন্তর্গত, বৈজ্ঞানিক নাম Orcinus orca। স্প্যানিশে এদেরকে বলা হত ballena asesina বা assassin whale শুধুমাত্র এদের আক্রমণাত্মক স্বভাবের কারণেই। তবে মানুষকে আক্রমণ এরা করে এরকম প্রমাণ খুব কম, যদিও এরা অন্য জাতের তিমিদের হরহামেশাই শিকার করে থাকে(এমনকী নিজের চেয়ে কয়েকগুণ বড় তিমিদেরকেও)। ল্যাটিন শব্দ Orca এর মানে দাঁড়ায়, "the shape of a barrel or cask"। এদের শরীরের আকৃতির কারণেই এমন নাম আসতে পারে। শরীরের উপর অংশ কালো ও নিচে শাদা। তবে ডর্সাল ফিনের কিছু অংশ, তলদেশ, নিচের চোয়াল এসব এলাকায় খানিক ধূসর ও হলদে ছাপ থাকতে পারে।


যদিও অন্য তিমিদের তুলনায় ছোট, কিন্তু স্তন্যপায়ী শিকারী প্রানীদের মধ্যে সর্ববৃহৎ আকৃতি হল এদের। পুরুষদের দৈর্ঘ্য ৫.৮ থেকে ৬.৭ মিটার এবং মেয়েদের ৪.৯-৫.৮ মিটার পর্যন্ত দেখা যায়। এদের ওজন সাড়ে পাঁচ হাজার কিলোগ্রামের উপরেও হতে পারে(পুরুষদের ক্ষেত্রে)। তবে সবচেয়ে বড় পুরুষ শিকারী তিমি দেখা গেছে ৯.৮ মিটার এবং ওজন দশ হাজার কিলোগ্রাম। এদের শরীরের রঙ মসৃণ কালো এবং শাদা মিলেয়ে হয়। স্ত্রী প্রজাতিদের আয়ুষ্কাল হতে পারে ৫০, সর্বোচ্চ ৭০-৮০ বছর। পুরুষদের ক্ষেত্রে সেটা অনেক কম সর্বোচ্চ ৫০-৬০ বছর। তবে বন্দীদশায় এদের জীবনকাল অনেক কমে যায়।

এরা খুবই সংঘবদ্ধ এবং সামাজিক প্রাণী। এদেরকে পড(pod) বা ছোট ছোট সমাজে ভাগ হতে দেখা যায়। এদের অনেক পরিবারই থাকে মাতৃপ্রধান। আবার কয়েকটা পড মিলে এদের সাব-পড ও তৈরী করতে দেখা যায়। সাধারণত একটা পডে ৫-৩০ টি তিমি থাকে, তবে আলাস্কা বা এন্টার্টিকাতে শ'খানেকের উপর তিমিকে সংঘবদ্ধ থাকতে দেখা গেছে। সময়ের সাথে কোন একটা পড ভেঙ্গে ভেঙ্গে বিস্তৃত হয়ে অনেকগুলো পড মিলে একটা ক্ল্যান(clan) তৈরী হয়। তবে ব্রিডিং সিজনে বিভিন্ন পডের মধ্যে সদস্যদের অদলবদল হতে দেখা যায়। এদের প্রজন সময় হল শীতকাল থেকে বসন্তের শুরু পর্যন্ত, উষ্ণতর সামুদ্রিক এলাকায়। এদের গর্ভধারণকাল ১৬-১৭ মাস পর্যন্ত। শিশু শিকারী তিমি জন্ম নেবার দশ সেকেন্ডের মধ্যেই সাঁতার শুরু করে দেয়, মা এসময় সাহায্য করে ভেসে থাকতে ও শ্বাস নিইতে। মা ও শিশুকে এক বছর বা তারও বেশি সময় একসাথে থাকতে দেখা যায়।

(মা ও শিশু Orca)

এরা সাধারণত ধীরে সাঁতার কেটে থাকে, ঘন্টায় ১৩ কিলোমিটারের মত। তবে কিছু সেকেন্ডের জন্য ঘন্টায় ৪০-৪৫ কি.মি. পর্যন্ত যাবার ক্ষমতা রয়েছে এদের।

এই দাঁতওয়ালা তিমিদের ভোকাল কর্ডে ল্যারিঙ্কস নেই। ধরে নেয়া হয় এরা শব্দ করে এদের nasal sacs এবং "ব্লো-হোল" এলাকায় বাতাস সংকোচনের মাধ্যমে। নির্দিষ্ট ক্ল্যানগুলোর ডায়ালেক্ট এর মধ্যে মিল খুঁজে পাওয়া যায়, যেগুলো বছরের পর বছর পরবর্তী প্রজন্মগুলো ইনহেরিট করে থাকে। এদের ব্লো-হোলের সংখ্যা একটিই। এরা শব্দ তৈরী, অনুসরণ এবং এর প্রতিফলনের উপর নির্ভর করে দিকনির্দেশনা, যোগাযোগ, ঘোলা বা অন্ধকার গভীরতায় শিকার এসব করে।

মানুষের পর এদের বাসস্থান সম্ভবত সবচে বেশি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় আর্কটিক এবং এন্টার্কটিক অঞ্চলেই। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ইষ্ট কোষ্ট বা পূর্ববর্তী উপকূলীয় এলাকাগুলোতে, হুয়াই, অষ্ট্রেলিয়া, বাহামা, মেক্সিকান উপসাগর এসব এলাকায় এদের দেখা যায়।


killer whale দের মাইগ্রেশন নির্ভর করে থাকে এরা যেসব প্রাণী শিকার করে তাদের মাইগ্রেশন রুটের উপর। কানাডার পূর্বদিকে এদের দেখা যায় সিল এবং rorqual তিমিদের মাইগ্রেশন অনুসরণ করতে। আবার উত্তর-পূর্ব আটলান্টিকে এদের দেখ যায় হেরিং মাছদের অনুসরণ করতে। তবে বেরিং, Chukchi এবং Beaufort সমুদ্র অঞ্চলে এরা উল্লেখযোগ্য হারে মাইগ্রেশন রুট নির্ধারণ করে ভাসমান আইস প্যাকগুলোর গতিপ্রকৃতির দেখে।

এদের সংখ্যা কত সেটা নির্দিষ্ট করে বলাটা বেশ কঠিন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এন্টার্টিক রেঞ্জে এদের সংখ্যা সত্তর হাজার থেকে এক লক্ষ আশি হাজার ধরা হয়ে থাকে ধরা হয়। যেখানে অন্যান্য এলাকায় এদের সংখ্যা খুব বেশি নয়।

যেকোন প্রজাতির তিমি ঘুমায় কখন এবং কিভাবে সে নিয়ে অনেক গবেষণা চলে আসছে। ধারণা করা হয় ডলফিনের মতোই গভীর নিদ্রা কোন নির্দিষ্ট সময়ে এদের মগজের যে কোন একটি হেমিস্ফিয়ারে ঘটে। তবে এরা স্বল্পদৈর্ঘের বা ঘণ্টা আষ্টেকের বিশ্রামও নিতে পারে, এ সময় এদের ধীরে সাঁতার কাটতে দেখা যায়, তখন এরা মিনিটে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩-৭ বার ছোট ডাইভ দিয়ে থাকে গভীরে মিনিট তিনেকের জন্য ডাইভ দেবার আগে।


এই তিমিটি যথার্থই শিকারী এবং এটি সাধারণত হাঙর, সী-গাল, সিল, স্কুইড, অন্যান্য ছোটজাতের তিমি, কাছিম, অক্টপাস, পেঙ্গুইন ইত্যাদি শিকার করে থাকে। সম্ভবত BBC: Planet Earth ডকুমেন্টারির কোন এক পর্বে দেখেছিলাম Orca দের একটা প্যাককে কোন এক স্পার্ম তিমির মা ও শিশুকে আক্রমণ করতে। শিকারে সফল হলে শেষ পর্যন্ত কেবলমাত্র শিশু স্পার্ম তিমির নিচের চোয়াল খেতে দেখেছিলাম। তবে সাধারণত এরা দলবদ্ধ না হয়ে নিজের চেয়ে বড়ো আকৃতির কোন প্রাণীকে আক্রমণ করে থাকে না।

(একটা ডলফিনকে আক্রমণোদ্যত এক শিকারী তিমি।)

তবে কি কি শিকার করবে এটা অনেকখানিই নির্ভর করে ওদের বাসস্থান, মাইগ্রেশন ও অন্যান্য ব্যাপারগুলোর উপর। তবে এন্টার্কটিকা অঞ্চলে এদেরকে দেখা যায় পেঙ্গুইন বা সিল শিকার করতে। অন্যান্য তিমিদের মধ্যে মিঙ্ক তিমি এবং ধূসর তিমির মতো বৃহদাকৃতির প্রজাতিকেও এদের শিকার করতে দেখা গেছে। তবে বৃহদাকৃতির কোন প্রাণী শিকার করতে এরা কয়েক ঘণ্টার মত সময়ও নিতে পারে। এক্ষেত্রে শিকার অনবরত সাঁতার কেটে কেটে ক্লান্ত হওয়া পর্যন্ত এরা অপেক্ষা করে।


তবে এরা যেসব স্তন্যপায়ী প্রজাতি নিয়মিত শিকার করে থাকে এদের মধ্যে রয়েছে, সিল, সী লায়ন, ওয়ালরাস, সী-অটারস(সম্ভবত একধরণের সামুদ্রিক ভোঁদড়) ইত্যাদি। এরা একদিনে এদের শরীরে ওজনের ৩%-৪% খাবার খেয়ে থাকে। তবে এদের খাদ্যাভাস এতৈ বৈচিত্র্যপূর্ণ যে এদের দেখা গেছে "গ্রেইট হোয়াইট শার্ক" পর্যন্ত শিকার করতে! তবে, শিকারের আকৃতি যত বড় হয়, শিকারী তিমিরা শিকারের শরীরের তত কম অংশ খেয়ে থাকে।


আবার অনেক সময় এদেরকে দেখা যায় শান্তিপূর্ণভাবে অন্যান্য সামুদ্রিক প্রানীদের সাথে থাকতে। কখনও এদেরকে ডলফিনদের সাথে মাছ শিকার করতে, হাম্পব্যাক তিমিদের সাথে সী লায়ন শিকার করতে কিংবা "ষ্টেলার সী লায়ন"-দের সাথে সাঁতার কাটতেও দেখা গেছে!

শিকারী তিমিদের বুদ্ধিমান প্রানী হিসেবেই ধরা হয়, যদিও কোন প্রজাতির বুদ্ধিমত্তা নিরুপণের মতো উন্নতি আমরা করি নাই এখন পর্যন্ত। তবে এদের সামাজিকতা, জটিল পারিবারিক ও সামাজিক অবকাঠামো এসব পর্যবেক্ষণে এদেরকে বুদ্ধিমান প্রানী হিসেবেই প্রমাণ করে।

সামগ্রিকভাবে এদের অবস্থা নিরুপণ করা কঠিন হলেও বেশ কিছু এলাকায় খাদ্যাভাব, শিকার, বাসস্থানের অভাব, পরিবেশ দূষণ এসব কারণে এরা বিপন্ন হয়ে পড়ছে। ২০০৫ এর শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রে শিকারী তিমিদের বিপন্ন প্রজাতিদের তালিকায় নেয়া হয়।


সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০১০ রাত ৯:০৪
৩৮টি মন্তব্য ৩৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×