-তোমার কি মন খারাপ...?
-না।আমার মন খারাপ হবে কেনো!!!!!আমি খুব ফুরতিতে আছি।
-আমি চলে গেলে তোমার খারাপ লাগবে,আমি জানি।
-কচু খারাপ লাগবে।
আমি আর টিকতে পারলাম না।লামিয়ার সামনে আমার চোখের পানি দেখাতে চাই না।
-নীল.....?
-বল।
-আমার দিকে তাকাও।
-(চোখ মুছে)হুম বল।
-আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবা....?
-কেন ধরবো....?আমি বলেছি না,আমি তোমাকে ভালবাসি না...
-না বাস।একটু ধর প্লীজ।
আমি লামিয়াকে উঠিয়ে বসালাম।তারপর জড়িয়ে ধরলাম।আমার চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেছে।কন্ট্রোল করতে পারছি না।আগের দিনের কথা মনে করছি।।।।
ছোটকালেই মা মারা যায়।আদর,ভালবাসা বলতে যে কোনো জিনিস আছে তা কখনি বুঝতাম না।বাবা থেকেও নাই।সারাদিন অফিস,মিটিং,কাজ।বিশাল বাড়িতে আমি একাই থাকতাম।তাই আমার মেজাজ অলটাইম খারাপ হয়ে থাকত।
ইন্টার কম্পলিট করার পর একটি প্রাইভেট ভাসিটিতে এডমিট হই।নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়াতে বেশ কয়েকদিন লেগে গেল।তেমন কথা বলতাম না কারো সাথে।সবাই ভাবত বড়লোকের ছেলে বলে ভাব দেখাই।
আমাদের ডিপার্টমেন্ট এ কিছুদিন পর একটা মেয়েও এডমিট হল।যারা একটু বেশি কথা বলে তাদের কে এড়িয়ে চলতাম।মেয়ে হলে তো কথাই নাই।
তো ভাসিটিতে আমার হাতে গোনা কয়েকটা ফ্রেন্ড ছিল।তাদের মধ্যে নিলয় একজন।খুব ভাল ছেলে বাট gf এর অভাব নাই।
তো একদিন ক্লাস করতেছি হঠাৎ নিলয় খোচা দিয়ে বল্ল
-মামা,খেয়াল করছোত নি....?
-কি....?
-অই মাইয়ায় তোর দিকে তাকাইয়া আছে.....
-কোন মেয়ে..../?
আমি ঘাড় টা ঘুরাতেই দেখলাম চশমা পড়া একটি মেয়ে তাকিয়ে আছে।আমাদের ডিপার্টমেন্ট এর লাস্ট এ এডমিট হওয়া মেয়েটি।
-তাকিয়ে আছে,আমি কি করব....?
-গেজাবি....
-মানে....?
-মানে কথা বলবি।
-আজাইরা আলাপ বাদ দে।
-মামা মাইয়ায় কিন্তু অনেক সুন্দর।
ক্লাস শেষ করার পর বাইরে এসে দেখি গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে।আমার তো টেনশন নাই।গাড়ি আছে।কিন্তু গাড়ির সামনে যেতে যেতেই তো ভিজে যাব।
-এক্সকিউজ মি.....
তাকিয়ে দেখি সেই মেয়েটা।
-হুম বলুন।
-আরে আপনি করে বল কেন...?আমরা একসাথে পড়ি।তোমার কি ছাতা দরকার....?
-কিছুটা...
-ওকে চল।
আমি মেয়েটির ছাতার নিচে চলে আসলাম।তখনি আমার কেমন যেন ফিল হতে থাকলো।আমার গাড়ির সামনে এসে বল্লাম।
-চল,তোমাকে লিফট দেই...?
-না,থ্যাংক্স।আসি।
বাসায় এসে পড়লাম।তখন অই ফিল টা আসলেও এখন চলে গেসে।তাই ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরদিন লাইব্রেরিতেও দেখা হল।টুকটাক কথা বার্তা হল।এভাবে প্রায় বিভিন্ন সময় আমাদের দেখা হত।মেয়েটির সাথে অনেক ফ্রি হয়ে গেছি।
কিন্তু সমস্যা হল,আমার মনে হচ্ছে আমি ওর প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছি।এই হচ্ছে আমার লামিয়া,যার প্রতি প্রথমবারের মত বুঝতে পেরেছি যে আমি ওকে ভালবাসি।
তাই ওকে আমার মনের কথা জানাবো এই সিদ্ধান্তো নিলাম।
-লামিয়া,আজকে একটু ক্যাম্পাসে আসতে পারবে।??
-কেন বলো তো....?
-এমনেই।
-আচ্ছা।
লামিয়া আর আমি বসে আছি।
-হুম বল।কি এত জরুরি তলব....?
-আচ্ছা লামিয়া,আমাকে তোমার কেমন মনে হয়... মানে ভাল না খারাপ..?
-হঠাৎ এই কথা....?
-প্লীজ বল না।
-অবশ্যই খুব ভাল ছেলে।
-আচ্ছা,আমি....আমি.......
ইয়েস!!!!!!!!!!!!!!!!!
লামিয়ার ফ্রেন্ডস হঠাৎ করে চিৎকার করে উঠলো।আমি কিছু বুঝতে না পেরে ওদের দিকে তাকিয়ে আছি।লামিয়াকেও খানিকটা বিব্রত মনে হল।
-ইয়েস!!!তুই পেরেছিস।এবার আমাদের ট্রিট দে......
-ট্রিট মানে...(অবাক হয়ে জানতে চাইলাম)
-আরে তুমি তো মেয়েদের পাত্তা দাও না।তাই লামিয়ার সাথে বাজি ধরেছি।ও তোমার সাথে প্রেমের অভিনয় করবে।
আমি যেন আমার কানকে বিশাস করতে পারছি না।লামিয়ার দিকে তাকালাম।ও মাথা নিচু করে আছে।
-ওরা যা বল্ল তা কি সত্যি......?
-..........
-লামিয়া,ans my question....?
-আমি এমনটা চাইনি।
-তারমানে,ওরা যা বল্ল সব সত্যি...?
-..........
আমি উঠে দাড়ালাম।লামিয়া আমার হাত ধরলো।
ঠাস করে ওর গালে একটা চড় মারলাম।লামিয়ার গাল বেয়ে পানি পড়ছে।
-ফারদার,আমার সাথে যোগাযোগ করবে না।
বাসায় চলে আসলাম।আমার সাথেই কেন এমন হয়।
আমার জিবন আগে কি ছিল,মাঝাখানে কি হল আর এখন কি হয়ে গেল।
লামিয়ার সাথে এরপরো দেখা হয়েছে।আমাকে দেখলেই ছুটে আসে।আর বার বার সরি বলে।আমি পাশ কেটে চলে আসি।
তো একদিন ভাসিটি থেকে বাসায় যাচ্ছিলাম।আজ গাড়ি আনি নি।মনটাও খারাপ,তাই ভাবলাম হেটেই চলে যাই।কিছুদুর যাওয়ার পর ঈ দেখলাম এক জায়গায় ভিড় লেগে আছে।ভীড় ঠেলে সামনে যেতেই দেখি লামিয়া।
-লামিয়া,কি হইসে....?
-রিক্সা থেকে পড়ে গেছি।পা টা মচকে গেছে।
তারাতারি করে সি.এন.জি তে করে ওকে হাসপাতালে নিয়ে আসলাম।ডাক্তার বল্ল কিছুদিন এখানে থাকতে।
-আমার উপর কি এখনো রেগে আছো....?(লামিয়া)
-আজাইরা কথা বাদ দাও।ফোন করে তোমার বাসায় খবর জানাও।
-না।আগে তুমি বল আমার উপর রাগ নাই তো....?
-আমি যাই।
-যাই মানে.....আউউউউ
-কি হইছে।?
-তোমার জন্য ব্যাথা পাইলাম।এখন এটার কি হবে...?
ওকে তো আমি মনে মনে ভালবেসে ফেলেছি।কিন্তু এরকম একটা কাজ করলো যা আমি কখনোই ভুলতে পারবো না।
-আমি যাই লামিয়া।বাসায় যেতে হবে।
-কালকে আসবে কিন্তু।
-সরি।সময় হবে না।
-আমি জানি তুমি আসবে।
লামিয়া ঠিকি বলেছিল।আমি না এসে পারি নি।সকালেই একগুচ্ছ রজনীগন্ধা নিয়ে ওর কেবিনে আসলাম।এসে দেখি ওর মা বসে আছে।
-স্লামাইকুম আন্টি।
-ওয়ালাইকুম সালাম।তুমি....?
-জি,লামিয়ার ফ্রেন্ড।
-ও তুমি ওকে নিয়ে এসেছিলে হাসপাতালে....? কি বলবো বাবা,এই মেয়েটাকে নিয়ে আর পারা গেল না।
-মা......
-আচ্ছা আন্টি।আমি আসি।
-বস একটু।আমি একটু আসছি।
-আচ্ছা।
লামিয়া আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো।
-কি ব্যাপার....??আপনি না আসবেন না....?
-আন্টির সাথে দেখা করতে আসছি।
-ও তাই না....!!!!!ফুল ও আন্টির জন্য....?
-না......!!!!না মানে হ্যা।।।
-এদিকে আস।
আমি লামিয়ার কাছে গেলাম।
-ভালবাসো না......?(লামিয়া)
-না।
-সত্যিই না.....?
-না.........
-তুমি ভাবছ আমি তোমার সাথে অভিনয় করেছি!!!!আমি অভিনয় করি নি।আমি সত্যিই তোমাকে ভালবাসি।
-...........
-ঠিক আছে।তুমি আমাকে ভাল না বাসো কিন্তু আমার থেকে দুরে থেকো না।(ভেজা গলায়)
-আচ্ছা।ঠিক আছে।এখন আগে সুস্থ হও
দুদিন পরেই লামিয়া রিলিজ হল।আমাকে জোর করে ওর বাসায় নিয়ে গেল।সারাদিন ওর বাসায় আড্ডা দিলাম।
তারপর একদিন আমার বাসায় নিয়ে আসলাম।বাবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম।যদিও বাবা ততটা খুশি হয়নি।
তো বলাবাহুল্য যে লামিয়া আমার সাথে আবার ফ্রী হয়ে গেছে।আর বিভিন্ন ভাবে বুঝানোর চেষ্টা করে যে ও আমাকে ভালবাসে।তাই ভাবলাম আমিও জানিয়ে দেই।
এর কয়েকদিন পর লামিয়া আর আমি ক্যাম্পাসে বসে আছি।আগের সেই বিষন্ন ভাবটা কেটে গেছে।
-লামিয়া......
-হুম বল।
-আচ্ছা তুমি কেন এমন করলে আমার সাথে......?
-আবার এক কথা.....আরে...আমি বাজি ধরতে চাইনি।ওরা আমাকে জোর করেছে।আমি প্রেম টেম এ বিশাসী না।কিন্তু তোমার সাথে আমি খুব ভাল সময় কাটিয়েছি।
-আর এমন করবে না তো কখনো....?
-না।আই প্রমিজ।
-আচ্ছা,তাহলে সেদিনের কথা টা আজকে বলব।
-এই দাড়াও।আমি জানি তুমি আমাকে প্রপোজ করবে।কিন্তু আমার শর্ত আছে।
-কি...?
-আগে তোমার নাম চেঞ্জ করতে হবে।কি একটা নাম bstr.... উফ!!!!!
-আমার নাম নিয়া কি সমস্যা....?
-হুম আছে।তোমার নাম আজকের থেকে নিল।
-আজাইরা।
-আজাইরা না।।এখন তারাতারি প্রপোজ কর।
-i ভালবাসি U....
-হাহা.....ভালবাসি U too......
ব্যস!....এইভাবেই আমাদের নতুন জীবন শুরু হয়।এখন আমি অনেক উৎফুল্ল,অনেক বেশি হাসি-খুশি,অনেক বেশি চঞ্চল।সব লামিয়ার অবদান।
কিন্তু এই আনন্দ বেশি দিন টিকলো না।৩য় বষের ফাইনাল পরীক্ষার পরই লামিয়া আমার সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দেয়।ফোন দিলে ফোন ধরে না,দেখা করতে চায় না,আর সব সময় কেমন যেন গম্ভীর হয়ে থাকে।তাই ওর বাসায় গেলাম।
-আন্টি লামিয়া কোথায়...?
-ওর রুমে।
-কি হয়েছে ওর....?ক্যাম্পাসেও আসে না,ফোন দিলেও ধরে না.....!!!!!
আন্টি চুপ করে চলে গেলেন।এদের কাহিনি তো কিছু বুঝলাম না।লামিয়ার রুমে গিয়ে দেখি চুপ করে বসে আছে।
-লামিয়া....
-বল(আমার দিকে না তাকিয়ে)
-কি হয়েছে তোমার....?
-কই কিছু নাতো।
-আমার দিকে তাকাও
ওর দিকে তাকাতে আমি ভয়ংকর রকম অবাক হলাম।মুখ একদম শুকিয়ে গেছে,আগের সেই চঞ্চলতা নেই।
-কি হইছে তোমার...?
-নিল,আমাকে তুমি কতটুকু ভালবাস...?
-একটুও না।
-আমাকে তুমি ভুলে যাও।
-কেন...?আবার বাজি ধরেছিলে...?
লামিয়া হাসল।
-না।
-তাহলে...?
-আমার ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে।আমি আর ১ মাসের মত আছি।
আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম।কোনো কথাই বের হচ্ছে না।
-নিল,প্রমিজ কর।তুমি একটুকু কষ্ট নিবা না...?
-........
-নিল.....?
-চল।আমরা আজকেই বিয়ে করবো।
-কি.....!!!!!!!
-হ্যা।চল।
-এটা সম্ভব না।
ওকে আর কোন কথা বলার সুযোগ দিলাম না।তখনি ওকে নিয়ে কাজী অফিসে যাই এবং বিয়ে টা করে ফেলি।বাইরে এসে লামিয়া চুপচাপ হয়ে গেল।
-তুমি এমনটা কেন করলে..? আমি ১ মাসের জন্য আছি।আর......
ওর মুখে হাত দিয়ে চুপ করালাম।
-Sometimes 1 minute is so importants......
সেদিন ওকে নিয়ে সারাদিন ঘুরলাম।বিভিন্ন ভাবে ওর মন ভাল করার চেষ্টা করলাম।কিন্তু কোন লাভ হল না।
লামিয়ার বাবা মাকে জানিয়ে দিয়েছি যে আমরা বিয়ে করেছি।ওনারা কোন আপত্তি করে নি।তাই লামিয়াকে আমার বাসায় নিয়ে আসলাম।
-ও কে....?(বাবা)
-লামিয়া।আমার স্ত্রী।আজকেই বিয়ে করেছি।
-তুমি আমাকে না জানিয়ে বিয়ে করেছো...?
-কিছুই করার ছিল না।
-ঠিক আছে।
বিয়ের সাত দিন ভালই গেল।লামিয়াকে আগের মত হাসি খুশি দেখছি।এর মধ্যে লামিয়াকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম।কিন্তু তারা সব একই উত্তর জানালো।
২০ দিন হয়ে গেল।সময় গুলো এত তারাতারি কিভাবে চলে যায়।লামিয়ার অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে গেছে।তাই ওকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।মুখটা খুব মলিন হয়ে গেছে।
আস্তে আস্তে অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে।আমি অনেক ডাক্তারের কাছ নিয়েছি।কিন্তু কেউ কিছু করতে পারে নাই।
-নিল।ছাড়ো।তোমার বাবা এসেছে।
আমার যেন ঘোর কাটলো।আমি সরে এসে চেয়ারটায় বসলাম।
-বাবা,কখন এসেছো...?
-এইতো মাত্রই।একটু বাইরে আয়।
-আসছি।
বাবা বাইরে গেলেন।আমি লামিয়াকে শুইয়ে দিয়ে বাইরে আসলাম।
-দেখ।লামিয়ার কন্ডিশন ভাল না।আজকে রাতেই নাকি........
আর বল্ল না।থেমে গেল।
-আমি যাই।কাল সকালে ফোন করিস।লামিয়ার বাবা মাকেও বলে দিয়েছি।
-আচ্ছা।
সময় দেখলাম।বিকাল ৫ টা।লামিয়া আজ রাত পযন্ত আছে।এটা মেনেই নিতে পারছি না।নাহ!!!!আমাকে কন্ট্রোল করতে হবে।
গুটি গুটি পায়ে লামিয়ার কাছে গেলাম।ওর দিকে তাকিয়ে আরো মায়ায় পড়ে গেলাম।মেয়েটাকে একদম নিষ্পাপ লাগছে।
-নিল....
-বল।
-তুমি তো আমাকে ভালবাস না,তাহলে মন খারাপ করছো কেনো...?
-একদমই না।
-প্রমিজ কর,আমি চলে গেলে নিজেকে কষ্ট দিবা না...?
-আচ্ছা।
-ভালো একটা মেয়েকে বিয়ে করবা...?
-আচ্ছা।
-আর কখনো আমাকে ভুলে যাবা না...?
-আচ্ছা।(শীতল গলায়)
-ভালবাসি।
-আমিও।
লামিয়ার অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে গেল।লামিয়াকে ইমারজেন্সি তে নিয়ে যাওয়া হল।রাত ৩ টার দিকে আমাকে ছেড়ে চলে গেল।
আমাকে বলে গেছে যাতে আমি কন্ট্রোল করি।হ্যা,আমি কন্ট্রোল করছি।সকালে সবাই একে একে আসল লামিয়াকে দেখতে।আমি চুপচাপ বসে আছি।সবাই আমাকে সান্তনা দেবার চেষ্টা করছে।
লামিয়াকে আমার বাড়ীর সামনেই সমাহিত করলাম।একা ভয় পেতে পারে।।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৪১