রাস্তার নিয়নবাতির আলোয় চারদিক আলোকিত হয়ে আছে।এমন না যে আজকেই বেশি আলোকিত।তবে আমার কাছে আজকেই বেশি উজ্জল মনে হচ্ছে।ব্যস্ত শহরের সবাই ব্যস্ত নিজেদের নিয়ে।জীবিকা নির্বাহের তাগিদে সেই সকাল থেকে রাত অবধি কতই না পরিশ্রম করছে মানুষ।এটা কি শুধুমাত্র আপনজনের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য??আমার জানা নাই।
রাত ১২ টা বেজে গেছে।ব্যস্ত নগরি এখন অনেকটাই শান্ত।একটু আগের কোলাহলময় পরিবেশটা এখন নেই।তাই এই সময়টাই আমার কাছে খুব ভাল লাগে।দিনের আলো এখন বিরক্তি লাগে।
পকেটে মোবাইল টা ভাইব্রেট করছে।জানি কে ফোন করেছে।কিন্তু কেন এরকম করছে আমার জানা নাই।
-হ্যালো....(আমি)
-........
-ফোন কি রেখে দেব....?
-এখনো বাসায় আসেন নি.....?
-বাসায় আসার তো খুব একটা প্রয়োজন মনে করছি না।
-আপনার না হতে পারে কিন্তু অন্যজনের তো হতেও পারে......
-দেখো তিয়ানা,তোমাকে আমি আগেও বলেছি এখনো বলছি। i am not interested....
বলেই রেখে দিলাম।মায়ায় জড়িয়ে কোনো লাভ নেই।এই জিবনের সাথে আর কাউকেই জড়াতে চাই না।কিন্তু এই মেয়েটা নাছোরবান্দা,কিছুতেই বুঝতে চায় না।
মেয়েটির নাম তো আগেই বল্লাম,তিয়ানা।নামের মত মেয়েটাও অনেক কিউট।আমি যে বাসায় ভাড়া থাকি,ওই বাসার বাড়িওয়ালার মেয়ে।বেশিরভাগ সময় আমি ঘুমিয়ে কাটাই,আর রাতে বের হই।তবে আমি এরকমটা ছিলাম না।
ছোটকাল থেকেই আমি খুব মেধাবী ছাত্র ছিলাম।ভাসিটিতে ছিলাম সবার পছন্দের কারন আমাকে ছাড়া কোন আড্ডাই জমতো না।সারাক্ষন সবাই কে মাতিয়ে রাখতাম।
আমার বন্ধুদের মধ্যে সবাই রিলেশন করতো,শুধু আমি বাদে।ব্যাপারটা এমন না যে আমি মেয়েদের কাছ থেকে দুরে থাকতাম।আমার অনেক মেয়ে ফ্রেন্ডও ছিল।ওরা যে খুব সুন্দর না তাও না।আমি আসলে মনের মত কাউকে পাচ্ছিলাম না।ওদের মধ্যে কেউ বলতো,"দোস্ত,আয় আমরা প্রেম করি।"আমি হাসি।
তো এইভাবেই দিন যাচ্ছিল।কিন্তু যা হবার তাই হল।আমার ক্রাশ খাওয়ার দিন এল।
ক্যান্টিনে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম।হঠাৎ করে একটি মেয়ের আগমন
-এক্সকিউজ মি.....?(মেয়েটা)
আমি একপলক তাকালাম।চোখে চশমা,হাতে বই,চুল গুলো ছাড়া,পিংক কালারের ড্রেছ.....ও মাই গড।
-জি বলুন(আমার এক ফ্রেন্ড বল্ল)
-ইংলিশ ডিপার্টমেন্ট টা কোন দিকে বলতে পারেন....?
-ফাস্ট ইয়ার....?
-জি।
-অই Bstr(আমাকে দেখিয়ে বল্ল)নিয়া যা।
-থ্যাংক্স।
মেয়েটা হেটে আমার দিকে আসল।
-চলেন ভাইয়া।
আমার কানে যেন ভেসে এল,"I love u."তাই বল্লাম
-too u..
-সরি....!!!!!
-না কিছু না।চলেন....
মেয়েটাকে দিয়ে যখন আসলাম তখন মোটামুটি ঘোর কেটেছে।বন্ধুরা আমায় দেখে হাসাহাসি শুরু করল।
-কিরে মমিন,কাইত হইয়া গেছত মনে হয়....!!?
-জানি না মামা।
সেই থেকে যে মেয়েটা মাথায় ভর করল,আর কিছুতেই নামাতেই পারি না।সারাদিন ওর কল্পনা।
পরদিন ভাসিটি গিয়ে ওর ডিপার্টমেন্ট এ দাড়িয়ে থাকলাম।ভাবখানা এমন করে রইলাম যে হাওয়া খেতে এখানে এসেছি।
একটু পর মেয়েটা আসল।
-আরে ভাইয়া কেমন আছেন...?
-আছি কোন রকম।
-মানে.. ?
-কিছুনা।তোমার নামটা কি!!!!?
-লামিয়া।আপনি Bstr,রাইট..?
-হুম
-আচ্ছা আসি।আমার ক্লাস আছে।
-আচ্ছা।
মেয়েটি চলে গেল।মনে হল আমার শরিরের কোন অংশ আমায় ত্যাগ করল।
আজ আর ক্লাস করতে ভাল লাগল না।বাইরে বসে আছি।
-কিরে দোস্ত,মন খারাপ কেন...?(ফারিয়া)
-আমি ফাইসা গেসি...?
-কেমনে.....?
-লামিয়া।
-লামিয়া!!!! ওই চাশমিস!!"?
-হুম।
-তুই জানস,ওর জীবনে বই ছাড়া ২য় কোনো ব্যক্তি নাই!!!?
-কস কি!!!?
-হুম।আর ওর বাবা খুব সেন্সিটিব।
-তাইলে আমি শেষ।
মনটা আরো খারাপ হয়ে গেল।তাই বাসায় চলে গেলাম।কয়েকদিন আর ক্যাম্পাসে আসলাম না।
বেশ কয়েকদিন পর একটু হাটতে বের হলাম।কি মনে করে যেন হাটতে হাটতে ক্যাম্পাসে চলে আসলাম।লামিয়া আমাকে দেখে প্রায় ছুটে আসল
-কি ব্যাপার!!!!আপনাকে কয়েকদিন ধরে দেখছি না।শরির খারাপ নাকি...?
-না.....এমনি আসি নি।
-এমনি আসেন নি নাকি অন্যকোন কারন...?
আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালাম।অদ্ভুদ!!!!!!সব বুঝে গেল নাকি......?
-আপনার কি কোনো কাজ আছে.....?
-কেন বলো তো....?
-এমনি।হঠাৎ আপনার সাথে একটু ঘুরতে ইচ্ছা করল।
আমি এবার মনে মনে খুব খুশি হলাম।রিক্সা ঠিক করলাম।আমি আর ও পাশাপাশি বসে আছি।
-আপনার নাকি চাশমিস মেয়ে অনেক পচ্ছন্দ....!!"?
এই যা!!!!!নিশ্চয়ই অই হারামি ফারিয়া বলছে
-কে বল্ল তোমাকে.....?
-সেটা জানা কি খুব দরকার....?যেটা বল্লাম সেটার উত্তর দেন।
-উমম!!!!!!কিছুটা।
-আমিও তো চাশমিস,তাহলে.....?
দেখলাম লামিয়া মিটিমিটী হাসতেছে।
-আমি কিছুই বুঝলাম না।
-ঢং!!!!!না বুঝার ভান করেন কেনো।বল্লেই তো পারেন আপনি আমাকে পচ্ছন্দ করেন।আমি কি খেয়ে ফেলব নাকি আজপ!!!!!?
আমি ঢোক গিলে বল্লাম
-ইয়ে মানে.....
-কিয়ে মানে.....!!!?
-না,ভেবেছিলাম আবার কি মনে কর।
-তাহলে কি এখন আমি প্রপোজ করবো...?
-কর.....
-ধুর আমি গেলাম।
বলেই লামিয়া রিক্সা থেকে নেমে গেল।কেমন যেন আনন্দ হতে লাগল।মনে হচ্ছে আগামীকাল ঈদের দিন।
ফারিয়াকে ফোন দিলাম
-কিরে হারামি,তুই কি প্যাচ লাগাইছোট!!!!...?
-আরে দোস্ত,তোর রাস্তা ক্লিয়ার করে দিলাম।এখন তো আমাদের ট্রিট দেওয়ার কথা।
-তোরে পাইয়া লই।লামিয়ার নাম্বার দে।
অতপর রাতে ফোন দিলাম।দুইবার ফোন দিতেই ধরলো
-হুম বলেন......?
-আমার নাম্বার তোমার কাছে আছে....!!!!!!?
-হুম....তো....?
-না কিছুনা।কেমন আছো...?
-এইটা জানার জন্য ফোন দিছেন....?
-না মানে কালকে দেখা করতে পারবা...?
-কোথায়....?
-স্প্রিং রেস্তোরেন্টে....?
-আচ্ছা।
অতঃপর পরেরদিন দেখা করলাম।চাশমিস লামিয়া কে আরো বেশি জটিল লাগছে
-হাই.....
-.........
-মন খারাপ...?
-কাজের কথা বল...
-না মানে,সেদিনের conversation টা তো কম্পলিট হয়নি....
-ও....আচ্ছা।তাহলে কম্পলিট করো।
-তোমার বাবা নাকি অনেক সেন্সিটিব...!!???
-হ্যা....তো....?
-তাহলে কেমনে কি!!!
-কি কেমনে কি!!!!
-মানে তিনি তো মেনে নিবেন না....?
-সেটা পরের কথা।এখন তোমার কথা বল।
-আমি তো প্রথম দিনেই শেষ।
-প্লীজ,একটু ক্লিয়ার করে বল,নাহলে আমি চল্লাম।
-আচ্ছা,বলতেছি।এত অস্থির কেন...?
-হুম বল।
আমি একটু দম নিলাম।
-I love u..........
লামিয়া একটু তাকিয়ে থাকল আমার দিকে।
-যাক।বললা তাহলে.....
যাক লামিয়া এক্সসেপ্ট করছে।কিন্তু আমি তো লামিয়ার বাবার কথা চিন্তা করছি।
ভাসিটিতে প্রায় সবাই জেনে গেল আমার আর লামিয়ার রিলেশনের কথা।সবাই আমাকে নিয়ে মজা করতো
-কিরে মমিন,তুই বলে প্রেম করবি না...?তা এখন কি করলি..!?
এখন আর ওদের সাথে কথায় পেরে উঠি না।আমাদের আড্ডায় এখন লামিয়াও যোগ দেয়।
তো এইভাবে চলতে থাকে দিন। লামিয়া ৩য় বষে উঠল,আর আমার অনাস ফাইনাল ইয়ারের ২ মাস বাকি।তো একদিন লামিয়া আমাকে ফোন দিয়ে বলল ইমারজেন্সি দেখা করতে।নির্ধারিত জায়গায় গিয়ে দেখলাম ও আমার আগেই বসে আছে
-কি ম্যাম,এত জরুরি তলব...?
-বাবা বিয়ে ঠিক করেছে।
-তাই!!!!!আহ!!!!কত্তদিন পর দাওয়াত খাব।
-নিল,আমি ফান করছি না
bstr নাম টা লামিয়ার পচ্ছন্দ না।তাই নিল বলেই ডাকে
-আমিও ফান করছি না।বিদায় করে দাও
-এবার আর পসিবল না।
-তাহলে...?
-তুমি আমার বাবার কাছে প্রস্তাব নিয়ে যাও।
-পাগল নাকি....আমি এখনো বেকার।কোন মুখে যাব...?
-তাহলে চল পালিয়ে বিয়ে করি...?
-তাও পসিবল না।
-তাহলে কি করবা...?
-তুমি তোমার বাবার পচ্ছন্দ অনুযায়ী বিয়ে কর।
-নিল, এইটা বলতে পারলা..?
-Don't u see...?i have no other option....
-এইটাই তোমার শেষ কথা...?
-হুম।
-আচ্ছা ভাল থাকো।
অই ছিল লামিয়ার সাথে আমার শেষ কথা।তারপর মোবাইল টা পানিতে ফেলে দেই।আগের বাসাটাও পরিবর্তন করি।
তাই এখন দিনের আলো সহ্য হয় না।তাই এখন আগের মত নাই আমি।কিন্তু ঝামেলা শুরু হইসে এই মেয়েটাকে নিয়ে।
সবসময় খবরদারি করে।ও চাইছে আমার জীবনের মোড় ঘুরাতে.............(চলবে)
(গল্প টার পর্ব করার কোন ইচ্ছা ছিল না।কিন্তু অনেক বড় মনে হওয়ার কারনে আরেকটা পর্ব করতে হবে)