-কিরে তোর কি হইছে রে.....?
-কিছু না।
-কিছু তো একটা হইছে.....বলে ফেল।
-বা*** কথা কস.....!!!!!!তোরে আমার কইতেই হইবো.....!!!!!কোন দেশের প্রধানমন্ত্রী তুই......!!?
-কি রে....!!!!তুই এইভাবে কথা বলছিস কেন....!!!!কোনো সমস্যা হইছে.....
-সমস্যা হোক আর না হোক,আমার সমস্যা আমি সমাধান করুম।তোর বা*** লেকচার ভাল লাগে না।তুই যা এখান থেকে.......
আমার কথা শুনে রাফি চলে গেল।আমি আমার মত বসে আছি।মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রনা।না....মাথা ব্যাথা না....কষ্টের যন্ত্রনা।
মিডল ক্লাস ফ্যামিলিতে জন্ম নেওয়া পাপ....আমি এটাই মনে করি।মিডল ক্লাস ফ্যামিলির ছেলেগুলি শুধু বুঝে Fucking লাইফের মিনিং।আমি তাদের একজন......
আল্লাহর কাছে আমার একটাই প্রশ্ন....তিনি কি বেছে বেছে মিডল ফ্যামিলির জন্য সিষ্টি করেন.....!!!!!!!হয়তো মরার পর উত্তর টা পাব।
ধুর!!!!!আমি আবার এইসব ভাবছি.....এই কারনেই হয়তো চোখ গুলা ভিজা।কখন যে কি হয় কিছুই বুঝি না।হয়তো বা মস্তিকের স্নায়ু গুলো অনুভুতিহীন হয়ে গেছে।
আমি যেখানে বসে আছি তা ফুটপাত।মানে রাস্তায় বসে আছি।এই কারনে হয়তো অনেকে আড়চোখে তাকাচ্ছে আমার দিকে।কিন্তু কেউ কিছু জিজ্ঞেস করে না।এই হচ্ছে বাজ্ঞালি জাতির নেচার।শুধু শুধু প্যারায় পড়তে চায় না।
২ দিন ধরেই রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছি।অনেকের মনে হয়তো বা প্রশ্ন জাগতে পারে...আমার কি বাড়িঘর নাই....!!!!!? হাহ!!!!!!!আছে.....বাট লাইক এ হেল........
মার অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বাসা থেকে বের হয়ে গেছি।নাহ....শারিরিক না,মানুষিক।আমার ধারনা এই কারনে আমারর স্নায়ু গুলো অনুভুতিহীন হয়ে গেছে।
২দিন ধরে কিছু খাওয়া হয় নাই।ভাবলে তো আর চলবে না....পেট তো আর তা মানবো না।আমি ভাবি,শুইয়া থাকি বা খাড়াইয়া থাকি তাতে পেটের কোনো আসে যায় না।পেট শান্তি কইরা তারপর বাকি কাজ।
পকেট হাতাইলাম।১০ টাকার ২টা নোট,৫০ টাকার একটা নোট,আর ১০০ টাকার ৩টা নোট আর কিছু খুচরা পয়সা।মোট কত টাকা আছে হিসাব করে বের করতে পারলাম না তবে মনে হল সল্প পরিমান টাকা আছে।
চায়ের দোকানে গেলাম।দুইটা রুটি কিনে খাওয়া শুরু করলাম।আমার খাওয়া দেখে অনেকে তাকিয়ে আছে।কেউ হয়তো ভাবছে আমি পাগল।আমি স্বাভাবিক ভাব দোকানদার কে বল্লাম
-মামা,রুটি তো ভালই।
-আরেক টা দিমু....?
-না মামা।আর টাকা নাই
-আমার পক্ষ থেকে একটা খান।
-যদি পারেন একটা বিড়ি দেন।বিড়ির পিপাসা ধরছে।
দোকানদার রুটি আর সিগারেট দুইটাই দিল।আমি তার কাজ দেখে অবাক হয়ে গেলাম।এভাবে অপরিচিত কাউকে এভাবে আপ্যায়ন করে না।হাহ!!!!আপ্যায়ন.......!!!!রুটি দিয়া আপ্যায়ন....!!!!!আমি সত্যি মনে হয় পাগল হয়ে গেছি.....
-আচ্ছা মামা,আপনার এই দোকান দিয়েই কি পরিবারের যাবতীয় খরচ চালান....?
-হ....তাইলে আর কেমনে চালামু...."!!!এই দোকানই আমার ভরসা।
-পরিবারে কে কে আছে...?
-আমি,আমার বউ,আর একখান মাইয়া।
-ও আচ্ছা,আপনাদের মধ্যে কি ঝগড়া হয় না....অভাব অনটনের মধ্যে তো ঝগড়া বেশি হয়।
-আমার বউয়ের চাহিদা খুব কম।আর আমারে খুব ভাল কইরা বুঝে।এই কারনে তেমন কোনো সমস্যা হয় না।মাইয়া আমার খুব লক্ষী।
আমি একটা দীঘশ্বাস ফেল্লাম।
-আচ্ছা মামা।আসি।আপনার সাথে কথা বলে অনেক ভাল লাগল
আমি উঠে চলে আসলাম।কিছু একটা করা দরকার।বাসায় তো আর কখনো ফিরে যাব না।একটা কাজ খুজতে হবে।
বাবা মার মধ্যে ঝগড়া ছাড়া আর কখনো কিছু দেখিনি।আর অভাব অনটন তো আছেই।অনেক কষ্টে এস.এস.সি কম্পিলিট করেছিলাম তাদের টাকায়।তারপর থেকে নিজের পড়ালেখার খরচ নিজেই চালাতাম টিউশনি করে।এভাবে ইন্টার শেষ করে অনাসে উঠলাম।টিউশনি চলে গেল আর সেই সাথে শুরু হল মার খোটামুলক কথা।
টাকা পয়সাটাই কি জীবনে সব....!!!!!টাকাই কি জীবনে সুখ এনে দেয়....!!!!!
হয়তো বা হ্যা....হয়তো বা না......
-হ্যালো.....
-কিরে....তোর কয়দিন ধরে খবর নাই...!!!!কোথায় হাওয়া হয়েছিস....!!!!
এই একটা মেয়ে...জীবনে সুখ মনে হয় আর কিছুই পায় নাই।মা বাবার আদরের দুলালি।যখন যা চায় তাই পায়।তাহলে কি দাড়ায়,ওদের টাকা আছে বলেই ওরা এত সুখি....!!!!!!তাহলে কি টাকাই সব.....!!!!!
-কিরে কথা বলছিস না কেন.....!!!?
মেয়েটা আমাকে ফোন করেছে।ভাসিটির সেরা মেয়ে।যেমন রুপ তেমনই ব্রিলিয়ান্ট,যাকে এক কথায় বলা যায়,"God Gifted ".কত ছেলে যে এই মেয়ের প্রতি ক্রাশ খাইছে।আমারো খাওয়ার কথা ছিল,কিন্তু যেখানে ভাত খেতে পারি না সেখানে ক্রাশ খেয়ে কি হবে....!!!!
-কিরে....তুই কি কথা বলবি....?
-হুম...বল....?
-তোর কন্ঠ এমন লাগছে কেন....!!!!!আর এত শব্দ কিসের....!!!!
-আমি কি বিদেশ থাকি যে সব নিরব থাকবো....!!!
-উফ!!!!তোর সমস্যা কি...!!!অলটাইম আমার সাথে এইভাবে কথা বলিস কেন....!!!!
-দেখ লামিয়া.... আমি সারাদিন অনেক প্যারায় থাকি।তুই দয়া করে আর প্যারা দিস না।
-ওকে চিল......!!!!!!!তোকে না খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।আমার সাথে একটু দেখা কর না....!!?
-তোর এই লুলামি কথা শোনার মুড এ নাই।তুই দয়া করে ফোন টা রাখ।
-নিল...আমি এই জায়গায় তোর জন্য অপেক্ষা করব(একটা জায়গার নাম বল্ল)।তুই না আসলে কিন্তু আমি এখান থেকে যাব না।এইবার ভেবে দেখ।রাখি......
মেজাজ টা বিগড়ে গেল।মেয়েজাতির উপর কেন যেন ঘিনা জমে গেছে।
লামিয়া একটা বেঞ্চে বসে আছে।ওর দিকে তাকিয়ে একবার নিজের দিকে তাকালাম।একদম বেমানান লাগছে আমাকে।চলে যেতে চাইলাম কিন্তু আবার ভাবলাম এই মেয়েটা যা জেদি।আমার উপর রাগ করে এখানেই বসে থাকবে।আমার জন্য আরেকজন কষ্ট পাক তা চাই না।
-কিরে বল...ডাকছিস কেন.....?
আমার দিকে তাকিয়ে হাসি দিল আবার মুখ টা মলিন হয়ে গেল
-তোর মুখটা এত শুকনো লাগছে কেন....!!সারাদিন কিছু খাস নাই....?
-আজাইরা আলাপ বাদ দে।কাজের কথা বল।
-আন্টির সাথে রাগারাগি করে বাসা থেকে বের হয়ে গেছিস,তাই না...?
আমি অবাক হয়ে গেলাম
-তুই জানলি কেমনে...?
-এমনেই।কালকে সকালে এই ঠিকানায় চলে যাবি।
আমার হাতে একটা কাড ধরিয়ে দিল
-কি এটা...আর কোথায় যাব....?
-নিল...লাইফ টা অনেক কঠিন বাট মানুষ চাইলে এই কঠিন কে সহজ করতে পারে।জীবনে চলার জন্য যেমন টাকা প্রয়োজন তেমনি আদর ভালবাসাও প্রয়োজন।আমি বুঝতে পারছি তোর মার কাছে টাকাটাই মেইন কারন তার টাকার খুব দরকার।
-জিলাপির মত কথা প্যাচাইতাছোত কেন....!!?
-তুই বুঝবি না।তোর বিদেশ যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।কাল ওইখানে গেলে তোকে সব বুঝিয়ে দিবে।আমি আসি....
আমি অবাক হয়ে ওর গমন পথের দিকে তাকিয়ে থাকলাম।
(মনটা খুব খারাপ ছিল,তাই রিয়েলিটি নিয়ে কিছু লেখতে চাইসিলাম।বাট লেখা আস্তে আস্তে সেই লাভের দিকেই চলে যায়।তাই আর লিখলাম না।তবে আসলেই টাকা আর লাভের ডিফারেন্স করা যায় না।লাইফে টাকার যেমন দরকার তেমন......থাক।তবে আমার মতে টাকার ভ্যালু বেশি)
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:৩২