-কিরে তোর হাত থেকে তো অনেক রক্ত পড়ছে......
-তেমন কিছু না।বাদ দে......
-বাদ দিব মানে.......!!!!আমার সাথে চল....
-লামিয়া....প্যারা দিস না।সারাদিন প্যারার মধ্যে থাকি.....
-প্যারা দিলাম কই!!!!!!কোনো কথা না.....চল আমার সাথে.....
অবশেষে ওর কথার কাছে আমার পরাজিত হতে হল।আমাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেল।ব্যান্ডেজ করলাম হাতে।হাতে প্রচুর পেইন হচ্ছে।কিন্তু সেদিকে লক্ষ্য না দিয়ে আমি অন্যদিকে তাকিয়ে আছি।লামিয়া একটু পর পর ভ্রু কুচকে তাকাচ্ছে.....
-কিরে দোস্ত....এমন ভাবে ব্যান্ডেজ করলো....তোর কোনো পেইন হয় নাই.....?
-পেইনের অনুভুতি মরে গেছে।তাই পেইন লাগলেও মনে হয় না পেইন হইতাছে।
-তুই এমন কেন.....!!!?
-কেমন...!!!!!
-এই যে অনেক কঠিন প্রকৃতির!!!!!!!
-আমার জায়গায় অন্যকেউ থাকলে তারো এমনই হত.....
আমি দীঘশ্বাস ফেল্লাম।হাতটা মারাত্নক ভাবে কেটে গেছে।সকালে বাসা থেকে বের হবার সময় কেচিগেটে সাথে ধাক্কা খেয়ে হাত কেটে ফেলি।বাসে উঠার সময় সেইম জায়গায় আবার আঘাত পাই।কয়েকজন বলছিল ভাই আপনার হাত তো কেটে গেছে,ব্যান্ডেজ করেন।ধুর!!!!!এসব দিকে তাকানোর সময় নাই।
আমার ফ্রেন্ড অনেক।গুনে শেষ করা যাবে না।যেই কোনো এরিয়ায় বলতে গেলে আমার কোনো না কোনো ফ্রেন্ড আছেই।এখন হোক একটা বা দুইটা।তেমনই একজন লামিয়া।বাট মনে হয় ফ্রেন্ড থেকে একটু বেশি।
-দোস্ত তোকে একটা কথা বলি.....?(লামিয়া)
-আমি কি মন্ত্রী মিনিষ্টার যে পারমিশন নিচ্ছিস.......
-তুই একেক সময় একেক রুপ ধারন করোস কেন.....!!!!!
-মানে.....!!!!
-তোর সাথে বেশিরভাগ সময় থাকি তো.....বুঝি।
লামিয়া আর আমার পরিচয় অনেক আগে থেকে।ওর বাসা আর আমার বাসা একই জায়গায়।ওর সাথে আমার কিছু কিছু মিল আছে।যেমন:ও যে বল্ল আমার বহুরুপ আছে,ঠিক ওরও আছে।স্বীকার না করলে তো আর কিছু করার নাই।ওর কোনো ভাইবোন নেই আর আমারো।তাই হয়তো আমরা খুব তাড়াতাড়ি ক্লোজ হয়ে গেছি
-কিরে বল্লি না.....!!?
-কি বলুম.....
-তোর বহুরুপের কারন.....!!!!
-যেমন.....?
-যেমন মনে কর,এখন আমার সাথে আছিস...এখন একরকম।তোর ফ্রেন্ডদের সাথে যখন থাকিস তখন আরেকরকম......যখন বাসায় থাকিস তখন আরেকরকম......আবার যখন তুই একান্তই একা থাকিস...তখন আরেকরকম.......কাহিনি কি....!!!?
ওর কথা শুনে আমি খুবই অবাক হলাম।আসলেই কোনো কথা ফেলে দেওয়ার মত না।কিন্তু এত কিছু বুঝল কি করে!!!!!!
-কিছু খাইসোস........!!!!!
-মজা নিবি না।আমি সিরিয়াস.....আমি জানতাম মেয়েরা গিরগিটির মত রুপ বদলায়।এখন দেখি ছেলেরাও......
-সবাই এক না.....
-তাহলে তুই কি ভীনগ্রহ থেকে পয়দা হইছিস.......!!!?
-অই তোর সমস্যা কি.......কি হইছে তোর আজকে.....!!!!!!!
মুডটা খারাপ হয়ে গেল ওর।এর কারন ও হয়তো আমি জানি।কিন্তু কি দরকার এত কিছু জানার.......
.
.
-নিল.....আপনার রিজাইন লেটার......
-হঠাৎ.......!!!
-আপনার পদে আরেকজন দক্ষ লোক নিয়োগ দেয়া হবে.....
-আমার কি ঘাটতি আছে......!!!!
-নিল......আরগু করবেন না প্লিজ....উপরের অডার।আমাদের কিছু করার নেই.......
এভাবেই চাকরি টা চলে যায় ১ মাস আগে.....অনেক কষ্ট করে চাকরি টা পেয়েছিলাম।তাও শেষ।আমার ফ্যামিলির অবস্থা আমাদের ফ্যামিলির সদস্য ছাড়া কেউ বুঝে না।তাই বহুরুপ ধারন করে থাকি....কি দরকার....নিজের প্যারা অন্যজনদের সাথে শেয়ার করে তারে প্যারা দেওয়া......
বেশিরভাগ সময় একা থাকি.....জীবনের হিসাব মেলানোর চেষ্টা করি।কিন্তু বরাবরের মতই,
"আমার হেসাব মিলে না।"
ফ্রেন্ডদের সাথে যখন থাকি তখন ম্যাক্সিমাম ফ্রেন্ডরাই হয়তো আমার প্যারার খবর জানে না।আর জানলেই বা ওরা কি করতে পারে!!!!!তাই ওদের ভাল সময়গুলো আমার এই প্যারার কথা শুনাইয়া খারাপ করার কোনো মানেই হয় না।
-স্যার....একটা কথা বলি.....?(আমার স্টুডেন্ট)
-বল.....
-আমি কতগুলো কথা বল্লাম,আপনি শুধু হুম হুম করলেন......!!!!!!(কি কইছে আমি নিজেই ভুলে গেছি)
-বেশি কথা আমার পচ্ছন্দ না......
-আমি এত চুপচাপ থাকতে পারি না।
-ঠিক আছে.....সবাই তো সব কিছু পারে না।
-মানে.....
-মানে এই যে,আমি চাইলেও বেশি কথা বলতে পারিনা.....
-কই আমি ত দেখি,আপনার ফ্রেন্ডদের সাথে যখন আড্ডা দেন তখন প্রচুর কথা বলেন.....
-ঠিক প্রচুর না.......আর তাছাড়া মাঝে মাঝে আমি ব্রেক হইয়া যাই.....
-মানে বুঝলাম না.....
-এত কিছু বুঝতে হবে না।
সবাই সব কিছু বুঝলে তো হইছিলোই কাজ।
.
.
কয়দিন যাবৎ লামিয়ার আচরন টা চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে.....এখন কেমন যেন নমনীয়,লজ্জাভাবে কথা বলা,চোখের দিকে তাকিয়ে কথা না বলা আরো অনেক জিনিস আইডেন্টিটিফাই করলাম।বুঝি তো কেন এমন করে.....
অনেকের ধারনা,যারা কথা কম বলে তাদের নাকি জ্ঞান অনেক কম থাকে।আমি তাদের বলতে চাই,ইউ আর রং।ওদের মত চিন্তাশীল তুমি কখনো হতে পারবেনা।মানলাম তাদের উপস্থিত বুদ্ধি কম বা জড়তা কাজ করে বাট তাদের ভিতরে যে কি চলে তা স্বপ্নেও ভাবা দায়........
.
.
যা ভাবছিলাম তাই।লামিয়া আমাকে পচ্ছন্দ করা শুরু করছে বা আগে থেকেই করে।তুই থেকে তুমিতে নেমে গেছে।এখন কি আর বুঝার বাকি থাকে কিছু!!!!!!!
-নিল.....শুনো.....?
-অই.....তুই কি শুরু করসোস....!!!!!তুমি কইরা বলোস কেন!!!!!!!!
-তোমাকে না তুই করে ডাকলে ভাল লাগে না।তুমিতেই মানায়.....
-বুঝলাম কিন্তু লুলামি করোস কেন.....
-লুলামি কোথায় করলাম......!!!(লাজুক হেসে)
-এই যে কথা বলার সময় কেমন এক্সপ্রেশন ভাব নিয়ে কথা বলোস.......
-কেন তুমি বুঝো না.......!!!!!!!
আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকি.....ওরই বা কি দোষ!!!!!!পচ্ছন্দ করতেই পারে.....আমি প্রেম করুম না বলে কি ও প্রেম করবো না নাকি!!!!!""
কিন্তু এইগুলি তো আবেগ।এখন আবেগ আছে তাই সবকিছুই ভাল লাগে।যখন আবেগ চলে যাবে তখন এই লুলামিও চলে যাবে.......
-কিরে তুই এই টাইমে আমার বাসায়......?
-কেন আসতে মানা.....!!!?
-লামিয়া....লুলামি কথাবার্তা বলতে না করছি তোরে......
-আজিপ.....এইখানে লুলামির কি হল.....!!!
-কিছু বলার থাকলে বল....নাহলে বিদায় হ.....
-নিল....তুমি না.......অনেক পচা......
-উফ!!!!আল্লাহ........
-আচ্ছা....তুমি কি চিন্তা করছিলে.....?
-চিন্তা করতাছিলাম....আমার উপর ঠাডা কবে পড়বো.....
-ছি: এই গুলা বলতে নাই.......
নতুন নতুন সবার এমনই গেজাইতে ভাল্লাগে.....তারপর যখন মোহ শেষ,সব শেষ......
-চল না আজকে কোথাও ঘুরে আসি......!!?
-আমার কাছে টাকা নাই.....
-টাকা কে চাইছে.......!!!!
-সব জায়গায় টাকা লাগে....আর টাকা ছাড়া পুরুষ হাফ লেডিস হয়ে যায়......
-তোমার মন কি পাথর দ্বারা বানাইছে আল্লায়.....?
-মনে হয়......
-হায় রে.....!!!!চল তো.....
আমাকে জোড় করে উঠালো।মার সাথে আবার ওর ভালো খাতির....মাকে আগেই পটিয়ে রাখছে....যাতে পারমিশনের কোনো সমস্যা না হয়....
মেয়েগুলির একটা প্রধান সমস্যা,ভুল সময়ে ভুল মানুষের প্রেমে পড়ে.....তারপর বিয়ের পর আফসোস করে।
-কি ব্যাপার....এখন কি ভাবতাছো.....?
-কিছু না....
-আচ্ছা....তুমি কি কিছুই বুঝো না......!!!!!
-বুঝে সবাই.....তবে সব কিছু বুঝতে নাই......
-কেন.....
-এই আজাইরা কথার জন্য ডাকছোছ এইখানে......
কতক্ষন চুপ থেকে.....
-তোমার এই প্যারার লাইফের সজ্ঞগী করবা আমাকে.....?
-মানে.....!!!!!
-তোমার এই কঠিন হৃদয়কে কোমল করার অধিকার দেবে আমাকে......?
-তুই কি প্রপোজ করতাছোস নাকি.....?
-আই লাভ উ.......
উফ!!!!!ইমোশনালি ব্লাকমেইল.......
-আমি বাসি না.....
-কেন.....?আমি কি দেখতে খারাপ.....!!!!
-সেইটা না......দেখ লামিয়া.....এই পিনিক কয়দিন পরই চলে যাবে.....
-মানে.....
-মানে এই মোহ চলে যাবে যখন দেখবি অভাব তোর দরজায় কড়া নাড়তেছে।তখন আর এই আবেগ থাকে না.....
-আমি এতকিছু শুনতে চাই না.....ভালবাসো কি না.....!!?
-না বাসলে কি করবি......!!!!!
-কি আর করবো....!!!!চিরকুমারি হয়ে থাকবো......
-আমি যদি অন্য মেয়ে বিয়ে করি.....তখন....?
-আমি জানি,তুমি তা করতে পারবা না......(চোখে পানি)।আসি........
এভাবে আঘাত করাটা উচিত হয়নাই.....এটলিস্ট মেয়ে.....তার উপরে আবার প্রপোজ করছে.....কিন্তু আমার কি করা.....এইসব শুধু গল্পেই মানায়,রিয়েল লাইফে না।
.
.
অনেকদিন হয়ে গেল।লামিয়ার সাথে দেখা হয়না।আমারো একটা খারাপ অভ্যাস,কেউ নিজের থেকে কথা না বল্লে জীবনেও কথা বলি না।ক্যাম্পাসে দেখি মুখটা বিষন্ন করে রাখে.......
ক্যাম্পাস থেকে ফেরার সময় ভাবলাম,থাক আজকে ওর সাথে কথা বলি.....দেখি কিছু করা যায় কি না......
লামিয়া হয়তো বুঝতে পারছে যে আমি ওর ফলো করছি....দেখলাম বিষন্ন ভাবটা চলে গেছে......আমার দিকে তাকালো.............
নিললললল.........................
আহ!!!!!!!এতটুকু বুঝলাম কিছু একটা আমাকে ধাক্কা মেরেছে......দুনিয়াটা অসম্ভব ঘোলাটে লাগছে.....কিন্তু কোনো পেইন এখনো হচ্ছে না।আমি লামিয়ার দিকে তাকিয়ে আছি.....সে কি কান্না......আমি.............
.
.
চোখ খুলতে পারছি.... তার মানে এখনো মারা যাইনি.....কাহিনি কি!!!!!আল্লাহ কি আরো প্যারা দেওয়ার জন্য বাচাইয়া রাখলো......অদ্ভুদ....!!!আমি এখনো চিন্তা করছি....আমি আসলেই মানুষ নাকি সাইকো.......
আমার হাতের ডানপাশে লামিয়া শুয়ে আছে.....বামহাত টা নড়াতে পারছি না।স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে।নাহলে ওর চুল গুলো সরিয়ে ওকে ভাল করে দেখতাম.....
হঠাৎ ও জেগে উঠলো......আমার কাছে মনে হল ওর আশার প্রদীপ হঠাৎ জ্বলে উঠেছে.....আমি স্বভাবতই আগের মত কথা বলা শুরু করলাম.....
-কিরে লামিয়া....ঘুমাস না কয়দিন......
-.......(ফোপাচ্ছে)
-আচ্ছা....কোনো নদী কি ভরাট হইছে......!!!!
-মা..মানে....(অনেক কষ্টে)
-না মানে....তুই তো অনেক কান্না করতে পারিস....আমার এমন সিচুয়েশনে তো সাগর হয়ে যাওয়ার কথা......
-তুমি কি কখনো ভাল হবা না......!!!!!
-খারাপ ছিলাম কবে.....!!!!!
-তুমি অনেক খারাপ......এভাবে কারো দিকে তাকিয়ে রাস্তা দিয়ে হাটে....আমাকে কি দেখো নাই আগে.....!!!!!তুমি চাইলে তো আমি অনন্তকাল তোমার পাশে বসে থাকতে পারি....
-তোর লুলামি বাদ দিবি না.....!!!!!!
-........
-কি ভাবছিলি......আমি শেষ....!!!!ডেথ....!!!!!নাহ!!!!!আল্লাহ বাচাইয়া রাখছে বাকি জীবন তোর প্যারা নেওয়ার জন্য.....
-আমি তোমাকে প্যারা দেই.....!!!!
-দেস না...দিবি.....তোর এই পিনিক গেলেই তো প্যারা দেওয়া শুরু করবি.....
-আমার পিনিক যাবে না......
-সিউর তো.....
-১০০% সিউর....
-তাহলে তো তোকে তুমি করেই বলতে হয়......
-বল না প্লিজ......
-অনেক ভালবাসি তোমাকে.......
-তাই....!!!
-হুম......
-আমিও.....
-কি....?
-অনেক ভালবাসি তোমাকে........
প্যারা তো কত কিছুতেই নেই.....বাকি জীবন না হয় ওর প্যারা নেই.......