somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুই আত্নার দূরত্ব বৃদ্ধি।

০২ রা অক্টোবর, ২০১৫ রাত ২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কক্সবাজার বাস টার্মিনাল। দুপুর তিনটা। ঈদের ৩য় দিন। ছুটি শেষে সবাই ব্যস্ত নগরীতে যাওয়ার অপেক্ষায়। চারদিক লোকে লোকারণ্য। চারদিকেই হাহাকার। টিকিটের হাহাকার। গ্রামের এক বড় ভাই নাকি সকাল আট টায় এসে দুপুর বার টায় টিকেট পেয়েছে। আমার কি হবেরে মনু! সাথে আছে টিটু। বিমান বাহিনীতে ট্রেনিংরত। মজা করে তাকে আমি পাইলট ডাকি। রক্তের সম্পর্কে সে আমার ভাগ্নে আর আত্নার সম্পর্কে বন্ধু। তার তো রাত নয়টার ট্রেন ধরতে হবে। কাল থেকে যে ট্রেনিং শুরু। এর আগেই চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে পৌছাতে হবে। শেষে বাসের ইঞ্জিন বক্সই ভরসা।

বাস ছাড়তে আরো বিশ মিনিট বাকি। একটু পাশ ফিরে ঘুরতেই দেখি পাইলট সাহেব গায়েব। অনেক খোজে পরে কোণের দিকের একটা দোকানে খুজে পেলাম। হাতে তার লাল গোল্ড লিফ। কড়াটা আর কি।
- কিরে ব্যাটা, না বলে এদিকে চলে আসলি কেন? তুই তো মোবাইল বাড়িতে রেখে এসেছিস। এখানে না পাইলে তোরে খোজতাম কিভাবে! মোবাইল থাকলে কল দিয়ে খোজতে পারতাম। তাও তো নাই।
- (লম্বা একটা টান দিয়ে) আজব এক বাহিনীতে ট্রেনিং করতেছি। মোবাইল সাথে রাখার পারমিশন নাই।
- তো কি হইছে! নাহলে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার ইচ্ছা আছে নাকি। এত চিন্তিত কেন আজকে? বি এন্ড এইস থেকে সোনালী পাতায় প্রমোশন হইছে দেখতেছি!
- বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় আম্মার সাথে একবার কথাও বলতে পারি নাই। আম্মা অফিসে ছিল। আম্মার নাম্বারে ফোন করে পাইনি। একবার কথাও বলতে পারি নাইরে মামু।
- এত চিন্তা কেন রে! ট্রেনিং এর আর মাত্র দুই মাস বাকি। এর পর র্যা ঙ্ক পেয়ে গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
- দোয়া কর মামু।

বাস ছেড়ে দিয়ে অনেক দূর চলে এসেছে। এতক্ষনে যেখানে পৌছার কথা তার আরো অনেক পিছে বাসটা। বৃষ্টির আশির্বাদ আর স্থানীয় সরকারের অনীহার আশির্বাদপুষ্ট সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। মায়ের সাথে একবার কথা বলতে না পারাতে আমার ভ্রমনসংগীর মন খারাপের কাছে সড়কের খারাপ অবস্থা কিছুই না। ইঞ্জিন বক্সের উত্তাপ শরীরের অবস্থা আরো খারাপ করে দিচ্ছে।
- এই পাইলট, নতুন ব্রিজের কাছাকাছি চলে এসেছি। কই নামবি তুই?
- ব্রিজের পরের মোড়েই নেমে যাব।
- ঠিকাছে, তাহলে তুই নেমে যাইস। এদিক থেকে স্টেশন বেশি দূরে না। সিএনজি একটা নিয়ে চলে যাইস। আমি সোজা চলে যাব।

এই মুহুর্তে পাইলটের মুখটা বেশি অন্ধকার মনে হল। মনের ভেতর যে মেঘগুলো জমেছে তারই ছাপ পড়েছে হয়ত। পাইলটের মনের অবস্থা আমার বুঝতে সমস্যা হল না। আমার অর্থকষ্টের দিনগুলো তার সাথেই কাটিয়ে দিয়েছি বলা যায়। তার অবস্থাও তখন আমার চেয়ে ভাল ছিল তা না। ভার্সিটি ভর্তির চেষ্টা চালাচ্ছিলাম তখন আমরা দুজনে। রাতের জোছনাগুলো আমাদের কষ্টের সাক্ষী হয়েছে। রাতের রাস্তার ল্যাম্পপোস্টগুলো আমাদের অভিমানগুলো নেব নেব বলে আর নেইনি। আমার খারাপ সময়ে পাশে পাওয়া এই বন্ধুর মন খারাপে আমি স্থির থাকি কেমনে!

ব্রিজের পরের মোড়ে সে নেমে গেল। আমার সোজা চলে যাওয়ার কথা। সে গাড়ি খুজতেছিল। পেছনে ফিরতেই আমাকে দেখে চমকে গেল।
- কিরে মামু, তুই নেমে গেছিস যে?
- আজকে টিউশনে যাওয়ার কথা ছিল। যাইতে ইচ্ছা করতেছে না আর। তাই নেমে গেলাম। চল, স্টেশন যাওয়া যাক। তোকে বিদায় দিয়ে আসি।

স্টেশনের আধো আলোয় এই দুই বন্ধুর দুঃখগাথা এক জনের থেকে আরেকজন নিতে থাকল। স্টেশনের আবছা এই আলো, প্লাটফর্ম দুই বন্ধুর মন খারাপের সাক্ষী হয়ে রইল। দুইজনের হাতে ধরে থাকা বস্তু থেকে ধোঁয়ার নিঃসরন যেন ইটভাটার চিমনি থেকে বের হওয়া ধোঁয়া। গাঢ় কালো ধোঁয়া। মনের কষ্টগুলো নিকোটিনের সাথে মিশিয়ে যেন পুড়িয়ে ফেলতে চায় দুজন। ট্রেন ছাড়ার আর তিরিশ মিনিট বাকি। আমি উঠে পড়লাম।
- মামু তুই বস তো একটু। আমি মোবাইলে রিচার্জ করে আসতেছি।
- এখন আবার কার লগে কথারে ব্যাটা! তাড়াতাড়ি আয়।

ফিরে এসে মোবাইলটা তার হাতে দিলাম। বাকি তিরিশ মিনিট যা ইচ্ছা করুক সে।

- এই ধর মামু। ট্রেন ছাড়তে আরো প্রায় তিরিশ মিনিট সময় আছে। যার সাথে ইচ্ছা কথা বল। তোর মা’র নাম্বার ডায়াল লিস্টে রাখা আছে। কল দে।
- তুই কি আম্মার সাথে আমার কথা বলায় দেওয়ার জন্যই টিউশনে না গিয়ে এদিকে চলে আসছিস!!!!!! আস্ত এক বদের হাড্ডি তুই। কোন দিন কি আর ভাল হবি নারে?
- আরে মামু, কল দে তো তোর মা’রে। কল দে তাড়াতাড়ি। আবার কবে না কবে মায়ের সাথে কথা বলবি তার হিসাব আছে? কল দে। মন ভরে কথা বলে নে।

এর পর দুইজন কিছুক্ষন নীরব। পাইলটের চোখ অশ্রুসজল। খাঁটি বন্ধুত্বের অনুভুতি অশ্রুসজল চোখে ধরা পড়ে। আমার সামান্য প্রচেষ্টা এমন আহামরি কিছু না। যাকে আমি আমার দুর্দিনে পাশে পেয়েছি তার সাথে তার মায়ের কথা বলিয়ে দেওয়াটা এত আহামরির কিছু না। পাইলটের এত কৃতজ্ঞতাবোধকে গুলি মারতে মন চায়।
সময় চলে যায়। মায়ের সাথে ছেলের কথা শেষ হয়। ট্রেনও ছেড়ে যায়। পাইলট কাল থেকে বিমান বাহিনীর বেসে ট্রেনিং করবে আর আমি মেসে ট্রেনিং করব। কাল থেকে দুইজনের জীবন দুরকম হয়ে যাবে অল্প কিছু সময়ের ব্যবধানে। অবচেতন মনে ইচ্ছা জাগে, বন্ধু আমার তো কাল থেকে রাইফেল কাধে নিয়ে ট্রেনিং করবে। আবার কবে দেখা হবে তার সাথে! তার রাইফেলের টার্গেট হয়েও যদি তারে দেখতে পেতাম!!!!!!!!!!!!!!!!!!
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:৫৭
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×