somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেয়ার বাজার-৭ : ফেস ভ্যালু ১০ টাকার কেরামতি :)

১৩ ই মে, ২০১০ রাত ১১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[শেয়ার বাজার নিয়ে আমার ব্যাক্তিগত আগ্রহকে কান্দ্র করেই 'শেয়ার ব্যবসা' শিরোনামে একটি লেখা সিরিজ আকারে পোস্ট শুরু করি মাস তিনেক আগে। শুরুতে ২-৪ জনের কাছ থেকে উৎসাহ পেলেও সামগ্রিক ভাবে পাঠকদের তেমন সাড়া পাইনি; তাই অনেকটা অনিচ্ছাকৃত ভাবেই সিরিজটির সমাপ্তি টানি ৬ষ্ঠ পর্বে; অবশ্য একাডেমিক ব্যাস্ততা বেড়ে যাওয়া ও এর অন্যতম একটি কারন। তবে অবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়েছে শেষ এক-দেড়ে মাসে। এখন প্রতিদিনই ২-৪ টা ইমেইল আর ১-২ জনকে অনলাইন চ্যাটে এটেন্ড করতে হচ্ছে। সবার অনুরোধ রক্ষার্থেই মৃত সিরিজটির পুনঃউজ্জিবন ঘটাতে বাধ্য হলাম। এটি এখন থেকে 'শেয়ার বাজার' শিরোনামে প্রকাশিত হবে।]


বেশ কিছু দিন ধরেই শেয়ার বাজার '১০ টাকা ফেস ভ্যালু' জ্বরে আক্রান্ত। ঘটনার সূত্রপাত হয় অর্থ-বানিজ্য মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদিয় স্থায়ীকমিটি কর্তৃক সকল শেয়ারের ফেস ভ্যালু একই মানে নামিয়ে আনার সুপারিশ করাকে কেন্দ্র করে। যেহেতু বাংলাদেশের শেয়ার বাজারের বেশির ভাগ স্টক সিকিউরিটির ফেস ভ্যালু ১০০ টাকা, তাই শুরুতে প্রস্তার ছিল অন্যগুলের ফেস ভ্যালু ১০০ টাকায় রূপান্তর করার।

কিন্তু অর্থমন্ত্রী ও এসইসির ইচ্ছায় তা ১০ টাকায় নির্ধারনের পক্ষে মতামত আসা শুরু হয়। এর ফলে বাজারের অতিমূল্যায়িত শেয়ারগুলোর দাম সাধারন ক্ষুদ্র বিনীয়োগকারিদের হাতের নাগালে আসবে বলে মত প্রকাশ করা হয়। তাদের এই যুক্তির যেমন বাস্তব ভিত্তি রয়েছে তেমন উচ্চ মূল্যায়িত বাজারকে নিয়ত্রনের জন্য অন্যান্য শেয়ার বাজারেও একই প্রকৃয়া ব্যাবহৃত হয়েছে অতিতে।

ঘটনা এই পর্যন্ত আশা ব্যান্জ্ঞক হলেও গুজবসৃষ্টিকারী জুয়ারিদের সুদৃষ্টি (!) পড়ায় অতিদ্রুতই এ নিয়ে শুরু হয় ব্যাপক কান-কানি এবং 'ফেস ভ্যালু ১০ টাকা হলে ব্যাপক লাভ হবে' এই গুজবের কারনে হু-হু করে দাম বাড়া শুরু হয় ১০০ টাকা মূল্য মানের শেয়ারসমুহের। ঘটনার ব্যাপকতা ও ভয়াবহতা টের পেয়ে এসইসি 'কোন কম্পানি যেন ফেস ভ্যালু পরিবর্তন না করে' এই মর্মে রুল ইশু করে। কিন্তু সরিসায় থাকা ভুতের মতই এসইসি কিছু কম্পানিকে ভ্যালু পরিবর্তনের অনুমতি দিলেও অন্যকিছু কম্পানিকে কারন দর্শানোর নোটিশ পাঠায়।

এই দিকে ১০০ টাকার ফেস ভ্যালুর শেয়ারসমুহের দাম বাড়তেই থাকে। অপরদিনে কিছু কিছু কম্পানিও তাদের ফেস ভ্যালু পরিবর্তনের ঘোষনা দিয়ে মাঠ গরম রাখে। এর পেছনে কৃয়াশীল সেই বিশেষ চক্রের সপ্ন পুরন করতেই যেন তিন দিন আগে জারি হল অর্থমন্ত্রনালয়ের নির্দেশ - 'যে কোন কম্পানি চাইলেই নিজেদের ফেস ভ্যালু বদলাতে পারবে'।


আসুন দেখি শেয়ার এর ফেস ভ্যালু ১০০ টাকা থেকে ১০ টাকায় নামিয়ে আনলে কি কি ঘটবে

শেয়ার - ক
ফেস ভ্যালু- ১০০ টাকা
মোট শেয়ার- ১০,০০০
শেয়ার প্রতি আয়- ৫০ টাকা
বাজার মূল্য - ৬০০ টাকা
লট - ৫০

এখন এর ফেস ভ্যালু ১০ টাকায় নামালে যা ঘটবে

শেয়ার - ক
ফেস ভ্যালু- ১০ টাকা
মোট শেয়ার- ১,০০,০০০
শেয়ার প্রতি আয়- ৫ টাকা
বাজার মূল্য - ৬০ টাকা (ঐকিক নিয়মে হওয়া উচিত)
লট - ৫০ (৫০ টি হতে পারে আবার ৫০০ টি ও হতে পারে)

এর মানে দাড়াচ্ছে ফেস ভ্যালু পরিবর্তনের সাথে কম্পানির অর্থিক আয় বাড়া/কমার কোন সম্পর্ক নেই (শেয়ার প্রতি আয়)। সম্পর্ক আছে বাজার মূল্য পরিবর্তনের। গুজব সৃষ্টিকারীদের যুক্তি হল এত ভাল শেয়ার নিশ্বই ৬০ টাকায় বিক্রি হবে না; হবে আরো বেশি দামে এমনটি তা ৮০-৯০ ছাড়িয়ে ১৩০-১৫০ এর ঘরেও পৌছে যেতে পারে। আর এই বিপুল লেভের মোহে নতুন ও অগ্য বিনিয়োগকারীরাও ছুটছে পাগলা ঘোড়ার মত যার প্রকাশ ঘটেছে গত কাল রেকর্ড পরিমান ২০০০ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে।

খুব ছোট হলেও একই ঘটনা ঘটেছিল সম্ভবত ২০০৭ এর শেষ দিকে। ইসলামি ব্যাংক তাদের ১০০০ টাকা ফেস ভ্যালুর শেয়ারের ফেস ভ্যালু ১০০ টাকায় এবং লট ১ টি থেকে ১০ টি তে পরিবর্তনের ঘোষনা দেয়। গুজব ও প্রত্যাশার চাপে ৩-৪ দিনেই ৫৭০০-৫৭৩০ মূল্যের শেয়ারের দাম ৮০০০ টাকায় পৌছে। রেকর্ড ডেটের পর যখন বিভক্তিকরন শেষ হল তখন সেই শেয়ারের সর্বোচ্চ দাম উঠল ৬৫০ টাকা ! যা ১ মাসেই ৬০০ নিচে নেমে যায় :(

হ্যা ফেস ভ্যালু পরিবর্তনের কারনে ৫৭০ টাকার শেয়ার ৬০০ টাকায় বিক্রী হলেও তার স্থায়ীত্ব ছিল ১ মাস। সুতরাং যারা ৮০০০ টাকায় শেয়ার কিনেছিল তারা শেয়ার প্রতি লস দিল ৮০০-৬০০ =২০০ টাকা আর বিভক্তিকরনের পর পর যার শেয়ার কিনল তারা হারাল ৬৫০-৫৯০ = ৬০ টাকা।

এই মূল্য পতনের প্রধান কারন হল তখন শেয়ারটির আর্থিক ভিত্তি এতটা ভাল ছিল না যে এর দাম ৬০০ এর উপরে থাকবে যদিও এই শেয়ারটি ডিএসইর অন্যতম স্ট্রং ফান্ডামেন্টাল শেয়ারগুলর অন্যতম ছিল।

তাই এখন যারা গুজবের পেছনে ছুটছে অতি শিঘ্রই তাদেরকে শাপলা চত্তরে বা ডিএসইর সামনে মূল্যপতনের জন্য মিছিল করতে হবে। বিনিয়োগ যেহেতু আপনার সুতরাং লাভ-লোকসান দুটই আপনার। সুতরাং এখনই ভাবুন সাবধান হবেন, না কি কষ্টার্জিত টাকা হারিয়ে রাস্তা-ঘাটে আন্দলোন ভাংচুর করে হতাশা প্রকাশ করবেন।

শেয়ার বাজার বিষয়ক সকল পোস্ট একত্রে পেতে ক্লিক করুন
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০১১ সকাল ১০:০৪
১৪টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×