somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

''হিন্দি সিরিয়াল ও আমার আত্মশুদ্ধি''

০৯ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ১০:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

''যাহা বলিব সত্য বলিব, সত্য ছাড়া মিথ্যা বলিব না''
এই ব্লগ লেখার আগে একটা সত্যা স্বীকার করে নেয়া ভালো, সেটা হচ্ছে আমিও এককালে হিন্দি সিরিয়াল দেখতাম।
কিন্তু আজকে পর্যায়ক্রমে হিন্দি সিরিয়াল দেখার কারন, এবং ফলাফল বর্ণনা করব।

হিন্দি সিরিয়াল দেখার কারন গুলো কি?
প্রথমত, আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষই হিন্দি সিরিয়াল দেখে অন্যের দেখাদেখি।আমি তখন তৃতীয় শ্রেনীতে পড়ি।
তখন আমার সমবয়সী খালাতো বোন আর আমার মামীকে হিন্দি সিরিয়াল দেখতে দেখে আমি নিজেও দেখা শুরু করি।
উপরোক্ত কারন আমাদের দেশের জন্য অনেক উপযোগী।তাছাড়াও অনেকে নিজেকে অন্যের সামনে স্মার্ট দেখাতে এই উপায় বেছে নেয়।অনেক কিশোর/কিশোরীরা পরিবারের অন্যের দেখাদেখি দেখে।আর অন্য একটি কারন হতে পারে হিন্দি ভাষা শেখা ও ইন্ডিয়ান সংস্কৃতি শেখার ইচ্ছা।

হিন্দি সিরিয়াল কেনো আকর্ষন করে?
হিন্দি সিরিয়াল এর বড় একটি আকর্ষন হল পোষাক।হিন্দি সিরিয়াল যারা দেখে তাড়া বেশিভাগই মহিলা/মেয়ে হয়, এবং তার বড় কারন পোষাক।
হিন্দি সিরিয়ালে সবসময় অভিনেতা অভিনেত্রীরা সেজে থাকে।আর তাছাড়া
হিন্দি সিরিয়ালে ওরা এক ধরনের কৌশল ব্যবহার করে যেটা আপনাকে প্রতি পর্ব দেখার উৎসাহ দেবে।তবে এই কৌশলএর ক্রেডিট আমি হিন্দি সিরিয়াল লেখকদের দেব না, দেব পরিচালক আর পরিবেশনকারীদের।সেই কৌশল হল, আপনি যদি হিন্দি সিরিয়াল দেখে থাকেন তাহলে খুব সহজেই বুঝতে পারবেন। হিন্দি সিরিয়ালকে চুইংগামএর মত টেনে বড় করা হয় যাতে অনেকদিন এক কাহিনী দিয়ে চলে। আর প্রতি পর্ব শেষ করা হয় এমন একটি পর্যায়ে যেখানে আপনার পরের পর্ব দেখতে প্রবল ইচ্ছা করবে।যার ফলে হিন্দি সিরিয়ালের প্রতি আসক্তি হয়।

হিন্দি সিরিয়াল দেখার ফলাফল কি?
প্রথমত, হিন্দি সিরিয়াল দেখলে আপনি বিনা পয়সায় কিভাবে ঝগড়া করতে হয় তা শিখতে পারবেন।দ্বিতীয়ত, কিভাবে বাবা-মাকে অপমান করতে হয়, কিভাবে প্রেম করতে হয়, কিভাবে শ্বশুর শ্বাশুরির সাথে ঝগড়া ও অশ্রদ্ধাশীল হতে হয়, কিভাবে স্কুল পালাতে হয়, কিভাবে সারাক্ষন সেজে থাকতে হয়, কিভাবে ঝামেলা করতে হয় অন্যদের সাথে, কিভাবে নিজে দোষ করে অন্যের ঘাড়ে চাপাতে হয়, কিভাবে মিথ্যা কথা বলতে হয় ইত্যাদি শিখতে পারবেন।
সাম্প্রতিক সময়ে পরকীয়া এবং ডিভোর্সের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পিছনে সামাজিক বিশ্লেষকরা হিন্দি সিরিয়ালের দিকেই ইঙ্গিত করেছেন।

অন্যদিকে কিছু ভালো জিনিষ শেখা যায় যা অধিকাংশ হিন্দি সিরিয়ালেই বিরল, যেমন কিভাবে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে হয়, কিভাবে আধুনিক হতে হয়, কিভাবে অন্যদেরকে ভালো মন্তব্য ও সান্তনা দিতে হয় ইত্যাদি।

এখন প্রসঙ্গে বলতে হয়, যারা মনে করে হিন্দি সিরিয়াল দেখলে স্মার্ট হওয়া যায়, তারা নিজেরাই জানেনা তারা কত বড় ভুল ধারনা নিয়ে বসে আছে!
এই হিন্দি সিরিয়ালগুলো না দেখে যদি আমরা নিজেদের দেশের নাটক গুলো দেখি তাহলে কাদের লাভ বলুন?
আর যারা মনে করে হিন্দি সিরিয়াল দেখার ফলে তারা সিরিয়ালের অভিনেতা অভিনেত্রীদের মত সাজতে পারবে, তাদের বলি আপনারা কি মনে করেন আপনাদের সোন্দর্য সারা জীবন টিকবে?
আপনারা চোখ খুলে একটু পৃথিবীকে দেখুন, আমি বলছিনা আপনারা সবাই সাজগোজ ছেড়ে দিন, কেনোনা একটা মানুষের রুচির পরিচয় দেয় তার পোষাক।কিন্তু পৃথিবীটা অনেক দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে,আর প্রতিটা মুহুর্তকে নষ্ট হতে দেয়া যাবেনা।একটা সময় আসবে আপনার জীবনে যখন আপনার কাছে সৌন্দর্যের কোনো দাম থাকবে না, তখন কেমন হবে বলুনতো? আর এই পৃথিবীতে নিজেকে সুন্দর/সুন্দরী হিসেবে সবার সামনে উপস্থিত করার চেয়ে বুদ্ধিমান/ বুদ্ধমতী হিসেবে পরিচয় দেয়াই ভালো, কেনোনা আপনার বুদ্ধি সারা জীবন টিকবে, সৌন্দর্য নয়।
ধরুন আপনি পড়ালেখা না করে হিন্দি সিরিয়াল নিয়েই বসে থাকলেন ঘন্টার পর ঘন্টা, আর ভবিষ্যতের কথাতো চিন্তা করার সময়ই নেই,কিন্তু আপনি একদিন বাবা/ মা হবেন।আর তখন কি আপনি সুন্দর/অসুন্দর, আপনি হিন্দি সিরিয়াল দেখেন বলে আপনার সন্তানরা আপনাকে সম্মান করবে?তখন ওরা আপনাকে সম্মান করবে আপনার ব্যাক্তিত্ব দেখে, আপনা মানসীকতা দেখে।
''আমাকে একটা ভালো মা দাও, আমি একটা ভালো জাতি দেব'' এই বাক্যটিতে খুব বিশ্বাসী আমি।আপনি আপনার সন্তানের সামনে বসে বসে হিন্দি সিরিয়াল দেখছেন, একবারও কি ভাবছেন সেটা আপনা সন্তানের উপর কি প্রভাব ফেলছে? আর ওরাতো ছোট ভালো আর মন্দের মধ্যে পার্থক্য কিভাবে বুঝবে ওরা?তাই আপনি যা করছেন তাই ওরা দেখাদেখি করছে কেনোনা ওদের মনে বিশ্বাস আছে আপনি যা করছেন তাই ঠিক।কিন্তু এর ফলাফলটা একবার ভাবুন, একদিকে ওরা আমাদের দেশের চ্যানেলগুলো দেখছেনা, আমাদের সংস্কৃতি ভুলছে অন্যদিকে ওদের মানসীকতার ওপর ভারতীয়দের মানসিকতার ছাপ পড়ছে।

যারা বলবেন হিন্দি সিরিয়াল দেখে হিন্দি ভাষা শেখা যায়, তাদের বলতে চাই আপনি কি বাংলা ভাষা পরিপুর্নভাবে জানেন? আর হিন্দি সিরায়াল গুলোতে ইংরেজী ভাষা ব্যবহার করা হয় বিছিন্নভাবে, তাই সম্পুর্ন ভাষা কোনভাবেই শেখা যায়না।তাছাড়া আমরা এমনিতেই বাংলা আর ইংরেজীতে যেভাবে কথা বলি তাতে কিছুদিন পর আমাদের বাংলা আর বাংলা আর বাংলা থাকবেনা মনে হচ্ছে, তার উপর আবার হিন্দি?

আসুন হিন্দি সিরিয়াল ছেড়ে আমরা নিজের দেশের নাটক গুলো দেখি, কেনোনা আমরা দেখলে নাটকগুলো নিয়ে আরও বেশি বিশ্লেষন হবে, আরও ভালো মানের নাটক তৈরী করতে উৎসাহ পাবে সবাই।আর যদি নাটক দেখার সুযোগ না পান অথবা নিরুৎসাহিত হন তবে বিভিন্ন খেলার চ্যানেলগুলো দেখুন, বই পড়ুন, পরিবারকে আরেকটু বেশি সময় দিন, বিভিন্ন কাজে পরিবারের সদস্যদের সাহায্য করুন, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিন, খবর দেখুন।

আমি যেভাবে হিন্দি সিরিয়াল দেখা ছাড়লাম
আমি বাংলাদেশে থাকা অবস্থায় প্রথম প্রথম হিন্দি সিরিয়াল দেখতে পারিনি কেনোনা আমাদের বাসায় তখনও ডিস ছিলনা।কিন্তু পরে ডিস আনার পর বাংলাদেশে থাকা অবস্থায় বেশ কিছুদিন দেখেছি।এরপর আমেরিকায় মাইগ্রেশন করার পর ইন্টারনেটেও দেখছি কিছুদিন পর।প্রথমত, একদিন হিসাব করে দেখলাম সিরিয়াল দেখতে আমার আনুমানিক এক ঘন্টা লাগে। এই এক ঘন্টায় যেসব কাজ আমি করতে পারি :
১. আমার ঘর ভ্যাকুয়াম করা/পরিষ্কার করা।
২. আমার ছোট বোনের হোমওয়ার্কে সাহায্য করা।
৩. আমার জামা আয়রন করা।
৪. আমার মাকে ঘরের কাজে সাহায্য করা।
৫. আমার হোমওয়ার্ক কর।
৬. আমার কাজিনদের সাথে ফোনে কথা বলা।
৭. আমার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া।
৮. বই পড়া।
৯.ঘুমান।
উপরে উল্লেখিত সব কাজের ভেতরে দুটি কাজ আমি এক ঘন্টায় বেশ ভালো ভাবেই করতে পারি।
আর হিন্দি সিরিয়াল দেখে ওদের পোষাক/সাজ নকল করার কোনো মানে হয় না, আমি নিজেই একাই একশ।
হিন্দি ভাষা শেখার কথা ভাবলাম, তখন মনে হল বাংলাদেশ থেকে আসার পর আমার বাংলার অবস্থা খুব করুন, বাংলা বই না পড়লে এতোদিনে উচ্চারণ ভুলে যেতাম।এখন আমার সম্বল হল অভিধান। ব্লগে লিখতে গেলে প্রতিদিন মনে হয় এই বানান ভুল হচ্ছে, ওটা ভুলে যাচ্ছি, তাই চাইনা হিন্দি শিখতে। যেদিন পারব নিজের ভাষা সম্পুর্ন ভাবে আয়ত্ত করতে, সেদিন অন্য ভাষা শিখব।
তাছাড়া আগামীতে স্প্যানিশ/ফ্রেন্চ/জারমান/ইটালীয়ান/ল্যাটিন/জাপানীজ এর ভেতরে একটা ভাষা শিখতে হবে, তাই তার আগেই বাংলা ভাষা ভালোভাবে আয়ত্ত করা দরকার।
আর এভাবেই হিন্দি সিরিয়ালকে আমার স্মৃতি থেকে দুর করে দিয়েছি, আপনারাও করুন!

ভালো থাকুন!
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ২:২৮
৪৪টি মন্তব্য ৪৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×