- এই যে, এই মেয়ে!
থতমত খেয়ে উঠল।নিজের উপর বিরক্ত হই মাঝে মাঝে। এত কর্কশ গলা ঈশ্বর কেন যে দিল? এতো দেখছি কাঁপছে। আবার মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। অস্বস্তিকর। কোমল গলায় কিভাবে কথা বলতে হয় তাও তো জানিনা।
- তুমি প্রত্যেকদিন আমাদের বারান্দায় কি দেখ?
- (নিশ্চুপ)
- কথা বলছোনা কেন? অদ্ভুত তো!
মনে হচ্ছে এখনি কেঁদে ফেলবে।বোবা নয়তো? চারমাস ধরে একই কাহিনী। আসবে,খানিক থামবে আর বারান্দায় তাকিয়ে থাকবে। আর চোখে চোখ পড়লেই কুকড়ে যাবে।কি সমস্যা? আয়নায় উল্টেপাল্টে নিজের চেহারা পরখ করলাম।রুক্ষই বটে। আমাকে দেখেনা সিউর। বারান্দায় তো তেমন আহামরি কিছুই নেই। ওহ! খরগোশ গুলো।
- খরগোশ তোমার পছন্দ? চাইলে নিতে পারো। এক জোড়া দিয়ে দেব?
এ তো দেখি মাথাও নাড়ে না।ধুর!
- আচ্ছা কাল এসো। এক জোড়া রেডী করে রাখব। দেখতেই পাচ্ছো অনেক আছে।
বলে সরে এলাম।খাম্বার মত স্থির থাকলে কতক্ষন কথা বলা যায়? ধুর!
পরের দিন এল। তার উতসুক চোখ এদিক ওদিক ঘুরছে। পথ আটকাতে হবে। নইলে না নিয়েই চলে যাবে। অদ্ভুত একটা কারেক্টার!
- এই নাও। কি খাওয়াতে হয় জানতো? না জানলে আমার মায়ের কাছ থেকে জেনে নিও।ইয়ে,,,মানে,,,ঘাস টাস খায় বোধয়।
মেজাজের উপর ভাল্লুক থাবা মারছে। এ মেয়েতো হাত বাড়াচ্ছে না।আগের সেই ভঙ্গি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অতঃপর সামনে রেখেই মাথা নাড়তে নাড়তে চলে এলাম।
অফিসের কাজে সাতদিনের জন্য কুড়িগ্রাম যেতে হল।ফিরে এসেই পড়লাম গ্যাড়াকলে। আমার স্বাধের ব্যাচেলর লাইফের উপর মায়ের নজর পড়েছে। অনেকক্ষণ ঝগড়ার পর বারান্দায় এসে সিগারেট ধরালাম। একটা স্বস্তির টান দিতেই দেখলাম মহীয়সী দাঁড়িয়ে আছেন। সেই ভঙ্গি, সেই কুকড়ে যাওয়া।
- কি ব্যাপার, আরো চাই? আগের গুলো টেকেনি? চাইলে নিতে পারো।
জানি কোন লাভ নেই। কথা বলবে না। একটা দীর্ঘশ্বাস বেরুল মুখ দিয়ে। চমকে ফিরে তাকালো সে। দেখলাম ওর চোখে জল টলমল করছে। একে ডাক্তার দেখানো দরকার। এত সুন্দর একটা মেয়ে,এমন অদ্ভুত আচরন করে,,,,,,, ব্যাপারটা ভাবালো অনেক।বাসায় ফিরতে মা শুরু হল।
- তাহলে তুই বিয়ে করবিনা?
- না।
- আমার বাকী জীবন তোর জন্য রান্না করে যাবে নাকি? আমার কপালে কি সুখ নেই আর?
- সবার কপালে সুখ হয়না মা।
- তুই ডিসিশন না পাল্টালে জলই ছোব না।তুই আমাকে চিনিস। তোর পছন্দের কেউ থাকলে বল?
- সবসময় চাপাও খালি। ভাল্লাগে না আমার।
এই রে! পছন্দের কেউ? স্মৃতি হাতড়ে কোন মেয়ের ছবি,,,,,,,,,,, অহ, ধুর! মা যে কি করে? নাক মুখ কুচকে বললাম,
- আচ্ছা যাও। তুমিই জিতলে।আচ্ছা মা একটা মেয়ে প্রায়ই বারান্দায় তাকিয়ে থাকে। যাওয়ার সময়। কে ও?
- তোর পছন্দ?
- তোমাকে কিছু বললেই,,,,,,,
- আরে রাগিস কেন? মেয়েটা অনেক ভাল জানিস। পাশের বাসায় থাকে। অনার্স পড়ছে ইংরেজী নিয়ে।
আর শোনার ইচ্ছা হল না। অনেক কাজ পড়ে আছে।
দুদিন পর বিকেল বেলা। কলিং বেলের শব্দে ঘুম ভাঙল। এই সময় কে এল। ঘুম কাতর চোখে দরজা খুললাম। খুলেই হকচকিয়ে গেলাম।জোম্বী মানবী কি করছে এখানে? মনে হল দূরপথ থেকে আওয়াজ ভেসে এল,
- দুদিন বারান্দায় আসেন নি যে?
বলেই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। আমি স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলাম।