লন্ডনের একটা ভয়ংকর বোকামীর গল্প আজ বলতে ইচ্ছা করছে। ২০০৭ সালের কথা। আমি ভীষন একা হয়ে পরেছিলাম। পরিচিত জনদের থেকে অনেক দূরে মোটামুটি বাঙ্গালী বিবর্জিত স্থানে বাস করি। মাঝেই মাঝেই মন খারাপ করে বসে থাকতাম। আমার সঙ্গী ছিল ইন্ডিয়ান এক মেয়ে। সে অনলাইনে চ্যাটিং করত। বড় ভদ্র মেয়ে ছিল। সকালে খুব ভোরে উঠে পড়তে বসত। কম করে ২ ঘন্টা পড়া-শুনার পর যেত ক্লাশে। ক্লাশ শেষে লাইব্রেরীতে বসে পড়া-শুনা করে ঘরে ফিরত। কিছু খেয়ে একটু বিশ্রাম করেই আবার পড়তে বসত। আর আমি ফাকিবাজ দিন ভর চুপচাপ বসে থাকতাম মন খারাপ করে। ক্লাশে যেতাম না। পড়া-শুনার তো ধার দিয়েও যেতাম না। ভাগ্য ভাল তখন পোষ্ট গ্রেডের ছাত্রী। আর আমার সঙ্গীনী আন্ডার গ্রেডের।
যা হোক, ওর এত বিষদ বর্ননা দেয়ার কারন হচ্ছে, সেই বেচারী আমার একাকীত্ত্বে অস্থির হয়ে আমাকে শিখিয়ে দিল কি করে ইয়াহুর চ্যাট রুমে যাওয়া যায়। আমি কৃতজ্ঞ এই জন্য ওর কাছে। ইয়াহু তে সে সময় অসম্ভব ভাল কিছু ভাই আর বন্ধু পেয়েছিলাম। যাহোক, সেই মেয়ে আমার সঙ্গী ছিল ৩ মাস। তারপর সে বাসা বদল করল। বিশাল বাসায় আমি একেবারে একা।
একদিন দুপুরে চ্যাটিং করছি, হঠাৎ লন্ডন প্রবাসী এক স্বদেশির সাথে কথা হচ্ছে। মনে পরে সেদিন বৃষ্টি হচ্ছিল। কিছুক্ষন কথার পর ফোন নম্বর বিনিময় হল। সে আবদার করল তাকে খাওয়াতে হবে। এই এক ব্যপারে আমার কখনই না ছিল না। আমার বাসায় কেউ আসত না। তাই কাউকে খাওয়ানোর কথায় আমি লাফিয়ে উঠলাম। বললাম, চলে এস, আমি রান্না করে খাওয়াবো। ওর বাসা থেকে আমার বাসা মোটামুটি ২ ঘন্টার পথ। তখন দুপুর ১টা বাজে। রওনা করলে অনেকক্ষন গল্প করার অবসর পাওয়া যাবে, এই ভেবে আসতে বলা।
আমি রান্না শুরু করলাম। পোলাও, বীফ বল, কই মাছ ভুনা, চিংরির মালাই কারী, চিকেন টিক্কা, তাড়কা ডাল করলাম। তারপর থেকে তাকে ফোন করছি, সে বলছে সে আসছে। আমার অপেক্ষার পালা শুরু হল। সন্ধ্যা যখন ৭ টা, আমি মহা বিরক্ত। এখনও আসছে না, কখন আসবে, কখন খাবে, কখন যাবে। রান্না সব ঠান্ডা হয়ে গেছে।
সেই মহাশয় রাতের প্রায় ৯টায় এসে হাজির। আমি তো রেগে আগুন। এত রাতে এসেছে, এখন খেয়ে কখন যাবে। আমি বকা-ঝকা করতে করতে তাকে নিচের বাস স্টপ থেকে উপরে নিয়ে এলাম। এনেই ওকে বসিয়ে খাবার গরম করে দিলাম। সে আমাকে বলছে, এত তাড়াহুড়ার কি আছে। আমি তো অবাক। তাড়াহুড়া করব না? “তুমি তাড়াতাড়ি বের না হলে ট্রেন পাবে না। যাবে কি করে?” সে অবাক হল। “যাব মানে? আমি তো ভাবলাম আমি আজ থাকব এখানে”। আমি
আমি কথা না বাড়িয়ে আগে খেতে দিলাম তাকে। খাইয়ে বললাম এবার বিদায় হও। ও আবারও অবাক। “সত্যিই চলে যাব?”। “যাবে না!? আমি একা থাকি এই বাসায়। তোমাকে কেন থাকতে দেব?” ও বলছে আমরা গল্প করি, পরে আমি পাশের ঘরে থাকলাম। আমি বললাম, প্রয়োজন নেই। গল্প করার জন্য আর একদিন সকাল সকাল এস। আজ যাও। চল আমি এগিয়ে দিচ্ছি। পরে তাকে আমি ট্রেন স্টেশন অবদি এগিয়ে দিয়ে এসেছিলাম।
সে যাওয়ার পর আমি ভীষন ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কত্ত বড় বোকামী হয়ে যাচ্ছিল। অজানা অচেনা একটা ছেলে এই রাতে এসে বলছে আমার বাসায় থাকবে। আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরার জোগাড়। সেদিন টের পেয়েছিলাম, রাখে আল্লাহ মারে কে!!!
পরে অবশ্য সেই বান্দার সাথে আর কথা হয়নি কোনদিন। আল্লাহর রহমত।