দীর্ঘদিন ধরে internet জগতে অনেক নাস্তিক ভাইদের সাথে আমার উঠাবসা।
কয়েকটি প্রশ্ন তারা আমাকে প্রায়ই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে করেন। উত্তর দিতে দিতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়ছি।
তাই ভাবলাম একটা Note লিখি যেখানে নাস্তিক ভাইদের কিছু Common প্রশ্নের জবাব দেয়া থাকবে।
আগ্রহী সকলে ওখান থেকে প্রশ্নের উত্তর গুলি জেনে নিবেন।
নাস্তিক ভাইদের প্রথম প্রশ্নটি হল ; আমরা আল্লাহ সুবহানাতায়ালা কে কেন দেখতে পাই না ?
আল্লাহ সুবহানাতায়ালা তো দুনিয়ায় থাকেন না যে আপনি চাইলেই উনাকে দেখতে পারবেন। আল্লাহ সুবহানাতায়ালা থাকেন সপ্ত আসমানের উপরে আরশে আযিমে। মহান আল্লাহ্ এরশাদ করেন: (ان ربكم الله الذي خلق السموات والأرض في ستة أيام ثم استوى على العرش) অর্থ:‘ নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ্, যিনি আকাশ সমূহ এবং পৃথিবীকে ছয় দিনে সৃষ্টিকরেছেন। অতঃপর তিনি আরশে অধিষ্ঠিত হয়েছেন।’ (সূরা আরাফ-৫৪) ২) আল্লাহ্ তা’আলা আরও বলেন: الرحمن على العرش استوى অর্থ: ‘রহমান (আল্লাহ্) আরশে সমুন্নত।’ (সূরাত্বহা-৫) এ কথায় কোনই সন্দেহ নেই যে আরশ আসমান রয়েছে জমিনে নয়। ৩) তাই মহান আল্লাহ্ অন্যস্থানে বলেন: أأمنتم من في السماء أن يخسف بكم الأرض অর্থ: ‘তোমরা কি নিরাপদ হয়ে গেছো যে, যিনি আকাশে অবস্থিত রয়েছেন তিনি তোমাদেরকে ভূগর্ভে বিলীন করে দিবেন না।’ (মূলক-১৬) এ ছাড়া বহু আয়াতে আল্লাহ্ পাক নিজের পরিচয়ে বলেছেন যে, তিনি আকাশের উপর মহান আরশেই রয়েছেন। এ ক্ষেত্রে অধিক প্রমাণের জন্য নিম্ন লিখিত আয়াত গুলো দেখা যেতে পারে। ( ইউনুস-৩, রা’দ-২, ফুরক্বান- ৫৯, সাজদাহ্-৪, হাদীদ-৪) ৪) হাদীছে রাসূলে কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: ألا تأمنوني وأنا أمين من في السماء يأتيني خبر السماء صباحاً ومساءً -متفق عليه
أأمنتم من في السماء أن يخسف بكم الأرض অর্থ: ‘তেমরা কি নিরাপদ হয়ে গেছো যে, যিনি আকাশে অবস্থিত রয়েছেন তিনি তোমাদেরকে ভূগর্ভে বিলীন করে দিবেন না।’ (মূলক-১৬) এ ছাড়া বহু আয়াতে আল্লাহ্ পাক নিজের পরিচয়ে বলেছেন যে, তিনি আকাশের উপর মহান আরশেই রয়েছেন। এ ক্ষেত্রে অধিক প্রমাণের জন্য নিম্ন লিখিত আয়াত গুলো দেখা যেতে পারে। ( ইউনুস-৩, রা’দ-২, ফুরক্বান- ৫৯, সাজদাহ্-৪, হাদীদ-৪)
আল্লাহ সুবহানাতায়ালা আরশে থাকেন বলেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মিরাজ হয়েছিল। তা না হলে তো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
দুনিয়ার জীবনেই আল্লাহ সুবহানাতায়ালার সাথে দেখা করতে পারতেন। তাই দুনিয়ার জীবনে কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব না আল্লাহ সুবহানাতায়ালাকে দেখা। কারন মেরাজ শুধু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হয়েছিল। এমনকি কোন নবী রাসূলেরও মেরাজ হয়নি। আর মানুষের পক্ষে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা কে দেখা তো দূরের কথা ফেরেশতাদেরকে তাদের মূল আকৃতিতে দেখাও সম্ভব না। সূরা আনআমের ৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে যে ফেরেশতারা যদি মূল আকৃতিতে এই পৃথিবীতে আসেন তাইলে মানুষরা তাদের দেখেই ভয়ে মারা যাবে। তবে জান্নাতে সবাই আল্লাহ সুবহানাতায়ালাকে দেখতে পারবেন। বুখারী ও মুসলিম শরীফের জান্নাত অধ্যায়ে বলা আছে যে জান্নাতে মানব জাতি আল্লাহ সুবহানাতায়ালাকে দেখতে পারবে। জান্নাতে জান্নাতবাসীদের মূল আনন্দের উৎসই হবে আল্লাহ সুবহানাতায়ালার দীদার। হাদিসে বলা হয়েছে যে হাজার
হাজার বছর কেটে যাবে যখন মানব জাতি আল্লাহ সুবহানাতায়ালার সৌন্দর্য্য অবলোকন করবে। অর্থ্যাৎ দুনিয়ার জীবনে এটা কোন মানুষের পক্ষেই সম্ভব না আল্লাহ সুবহানাতায়ালাকে দেখা। এটা শুধু আখিরাতেই সম্ভব।
নাস্তিক ভাইদের ২য় প্রশ্নটি হল ; ভাগ্য যদি নির্ধারিতই থাকে তাইলে আমার কৃত কর্মের জন্য আমি কেন দায়ী থাকবো?
মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয় এটা সহীহ হাদীসে দোয়ার ফযীলত অধ্যায়ে বলা আছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন দোয়া ও সৎ কর্মের মাধ্যমে ভাগ্য পরিবর্তন হয়। যেমন ধরেন আপনার তাকদীরে লেখা আছে আপনি ৫০ বছর বাচবেন। কিন্তু আপনি যদি আপনার পিতামাতার খেদমত করেন, আত্নীয় স্বজনদের সাথে ভাল ব্যবহার করেন তাইলে আপনার হায়াত বৃদ্ধি
পাবে। আবার আমরা যে আল্লাহর কাছে দোয়া করি অনেক দোয়াই কিন্তু কবুল হতে দেখি না। হাদিস শরীফে বলা আছে বান্দা যখন আল্লাহর কাছে কোন দোয়া করে তখন এর ৩ টা ফলাফল হয়। প্রথমটা হল যা দোয়া করা হয় তাই পাওয়া, অথবা ঐ বান্দার সম্ভাব্য বিপদ আপদ সরে যাওয়া, অথবা আখিরাতে এই দোয়ার প্রতিদান পাওয়া। ধরেন আপনি আল্লাহর কাছে মেডিক্যালে চান্স পাওয়ার দোয়া করলেন। কিন্তু দেখলেন আপনি মেডিক্যালে চান্স পেলেন না, কিন্তু এই দোয়ার বদৌলতে আপনার কোন সম্ভাব্য বিপদ আপদ যেমন সড়ক দুর্ঘটনা, অঙ্গহানি এগুলি থেকে আপনি বেচে যাবেন। অর্থ্যাৎ তাকদীর একদম অকাট্য নয় আপনার দোয়া ও সৎ কর্মের মাধ্যমে তাকদীর পরিবর্তন হবে।
নাস্তিক ভাইদের ৩য় প্রশ্নটি হল ; আল্লাহ সুবহানাতায়াল যদি এতই দয়ালু হন তাহলে পৃথিবীর অনেক মানুষ না খেয়ে মারা যাচ্ছে, অনেকেই বিভিন্ন জটিল রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত। কই আল্লাহ তো তাদের কে কোন সাহায্য করছেন না ?
এখানে একটা ব্যাপার বুঝতে হবে এই দুনিয়ার জীবন কে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা উপায় উপকরণের উপর নির্ভর করে তৈরি করেছেন। উনি সরাসরি কোন কিছুতে হস্তক্ষেপ করেন না। যেমন রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেরাজে যাওয়ার সময় বুরাকে চড়ে বিদ্যুতের গতিতে ৭ আকাশ কে অতিক্রম করেছেন, কিন্তু হিজরতের সময় মক্কা থেকে মদিনা যাওয়ার সময় ঘোড়ার পিঠে চড়ে, লুকিয়ে অনেক কষ্ট করে ১০ দিনে মদিনা গিয়েছিলেন। ইচ্ছা করলে তো আল্লাহ সুবহানাতায়ালা পারতেন বিদ্যুতের গতিতে উনাকে মক্কা থেকে মদীনায় পৌছে দিতে, কিন্তু আগেই বলা হয়েছে এই দুনিয়ার জীবন কে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা উপায় উপকরণের উপর নির্ভর করে তৈরি করেছেন।
আল-কোরানে বলা হয়েছে আল্লাহ যদি সবার পাপের শাস্তি দুনিয়াতেই দিতে চাইতেন, তাহলে কেউ পৃথিবীতে বেচে থাকতে পারতো না। আবার সেই সাথে আল্লাহ মানুষ কে দুনিয়ার জীবনে সর্বোচ্চ স্বাধীনতা দিয়েছেন, যেন আখিরাতে আল্লাহকে কেঊ কোন প্রশ্ন করতে না পারে।
ফলে একটা সীমিত সময়ের জন্য আল্লাহ মানুষকে তার ইচ্ছা মত সব কিছু করার স্বাধীনতা দিয়েছেন। আল্লাহ সুবহানাতায়ালা যদি দুনিয়ার জীবনে সরাসরি হস্ত ক্ষেপ করেন তাইলে তো এটা আখিরাতই হয়ে যাবে, মৃত্যুর পর তো আর আখিরাত বানানোর উনার দরকার ছিল না।
আর আল্লাহ সুবহানাতায়ালার এটাই ইচ্ছা যে মানুষ তার প্রেরিত নবী রাসূলদের মাধ্যমেই তার প্রতি ঈমান আনবে।
ঈমান অধ্যায়ে বুখারী শরীফে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একবার সাহাবীদের জিজ্ঞাস করেন “ আচ্ছা বল তো সবচেয়ে বেশি ঈমান কাদের ?
তখন সাহাবীরা উত্তর দেয় নবী রাসূলদের।
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন নবী রাসূলরা কেন ঈমান আনবে না ? তাদের উপর ওহী নাযিল হচ্ছে, প্রতিনিয়ত নবী রাসূলরা আল্লাহ সুবহানাতায়ালার কুদরত দেখছে। তখন সাহাবীরা বলে তাইলে সবচেয়ে বেশি ঈমান হল ফেরেশতাদের। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন ফেরেশতারা কেন ঈমান আনবে না ? ফেরেশতারা আল্লাহ কে দেখছে সব সময়। এরপরে সাহাবীরা উত্তর দেয় তাইলে আমাদের ঈমান সবচেয়ে বেশি। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন তোমরা কেন ঈমান আনবে না ? তোমরা আমাকে দেখছ, ওহী নাযিল হতে দেখছ। এরপরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবীদেরকে বলেন ঈমান সবচেয়ে বেশি হল তাদের যারা তোমাদের অনেক অনেক পরে আসবে, শুধু আল্লাহর কিতাব ও আমার বাণী শুনে ঈমান আনবে। ”
এই হাদীসে মূলত আমাদের কথাই বলা হয়েছে। কারন সাহাবীরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে চাক্ষুস চোখে দেখেছেন, হযরত আব্বাস রাঃ, হযরত হামযা রাঃ উনারা জিবরাইল আঃ কে তার মূল আকৃতিতে দেখেছেন। তাছাড়া জিহাদের ময়দানে যখন ফেরেশতারা আসতো তখন সাহাবীরা খুব কাছ থেকে ফেরেশতাদের অনুভব করতে পারতেন, যেটা বর্তমানে আমাদের পক্ষে অসম্ভব।
কোরানে কিন্তু বলা হয়েছে যে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা বলেন আমি জ্বীন ও মানুষ দ্বারা দোযখ কে পরিপূর্ণ করবই। এখন আমাদের চিন্তা শক্তি দ্বারাই আমরা ভাবি আমরা দোযখে যেতে চাই না জান্নাতে যেতে চাই।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:৫৮