শুল্কমুক্ত কোটার সুবিধা নিয়ে বিলাসবহুল ৮০০০সিসি জিপ আমদানি করছেন সরকারী, বিরোধী ও মহিলা সংসদ সদস্যরা তাদের চলাচলের সুবিদার্থে, যদিও ঐ গাড়ি দিয়ে তাদের কেউই সাধারনত তাঁর নির্বাচনী এলাকার ৮০% জায়গাতেই পৌছাতে পারবেন না রাস্তার না থাকার কারনে । এমনকি কিছু সদস্যের নির্বাচনী এলাকায় গাড়ি নিতে হেলিকপ্টার লাগবে, যেমন তাহিরপুর, মনপুরা, শাল্লা ইত্যাদী। বর্তমান সংসদের মোট ৩৪৫ সদস্যের বিপরীতে এরই মধ্যে ২৫টি গাড়ির একটি বড় চালান চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে। গাড়িগুলো পর্যায়ক্রমে খালাস হচ্ছে। অবশিষ্ট তিনশত বিশটি গাড়ি আমদানির প্রক্রিয়ায় রয়েছে। তিনশ পঁয়তাল্লিশটি গাড়ির সবগুলিই টয়োটা, মিতসুবিশি ব্র্যান্ডের লেঙ্াস, প্রাডোসহ অত্যাধুনিক মডেলের। সব মিলিয়ে শুল্কমুক্ত সুবিধায় অন্তত ৬০০ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে বলে বন্দরসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন।
কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, যেমন লেঙ্াস মডেলের ৪৭০০ সিসির প্রতিটি গাড়ির দাম হচ্ছে মাত্র ৫০ লাখ টাকা হলে; এবং এর শুল্ক দাঁড়ায় ৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় শুল্ক না দিয়েই সংসদ সদস্যরা গাড়ি খালাস করতে পারছেন।
গত ২৩ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার বন্দর থেকে ছাড় করিয়ে আনার কথা স্বীকার করেন পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সংসদ সদস্যরা জনগণের সেবায় ২৪ ঘণ্টা কাজ করেন। তাঁদের জন্য এ ধরনের শুল্ক-সুবিধা দেওয়াটা অধিকার।'
বন্দর কর্মকর্তারা জানান, শুল্কমুক্ত কোটায় ২৫টি গাড়ি আমদানিকারী এমপিরা হলেন চট্টগ্রামের নুরুল ইসলাম বিএসসি, আনোয়ারার আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু, সীতাকুণ্ডের আবুল কাশেম মাস্টার, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় পার্টির এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, নৌ-পরিবহনসংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি নুর ই আলম চৌধুরী লিটন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক, এস এম ফিরোজ, বগুড়ার আবদুল মান্নান, নাটোরের এম এ তালহা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আবদুল ওয়াদুদ, টাঙ্গাইলের আবদুল বাতেন, চুয়াডাঙ্গার সোলাইমান হক জোয়ারদার ও আলী আজগর, যশোরের খান টিপু সুলতান, ময়মনসিংহের গিয়াস উদ্দিন আহমদ, সুনামগঞ্জের মতিউর রহমান, পাবনার শামসুর রহমান শরিফ, পটুয়াখালীর এ এস এম ফিরোজ, নওগাঁর শহিদুজ্জামান সরকার। মহিলা আসনের সংসদ সদস্যদের মধ্যে গাড়ি এনেছেন কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম, এথিন রাখাইন, বেগম আসমা জেরিন ঝুমু, বেগম নাসরিন জাহান রত্না প্রমুখ। ঠিক আছে মেনে নিলাম সাংসদগণ জনগণকে সেবা করার জন্যই কিনছেন কিন্তু যেই সাধারন ভোট দিয়ে আপনাদের এমপি বানালো তাদের চলাচলের বিষয়ে সামান্য সচেতন তো থাকবেন !!!
যেমন দেখুন আমার মত নিম্ন মধ্যবিত্ত একজনকে ঢাকা শহরের এই দুর্বিসহ ট্রাফিকজ্যামে আরও একটি ১৫০ বর্গফুট স্থান দখল করার প্রাইভেটকার ব্যবহার না করে ধারকর্জ করে ১,৭০,০০০/= টাকা দিয়ে যখন উপরের চিত্রের সেকেন্ডহ্যান্ড মোটরসাইকেলটি কিনতে গেল দেখলো বর্তমান বাজারে কাগজপত্র সহ এটি ২,২৫,০০০/= খরচ পড়ে। আরও দেখলো সাধারন মানুষের কষ্টার্জিত ২,২৫,০০০ টাকার মধ্যে ১,৩৫,০০০ টাকা সরকার নানা ট্যাক্স হিসাবে নিয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে ঐ বাইকের দাম ৯০,০০০ টাকা। তার মানে আমি যে ১,৭০,০০০/= টাকা দিয়ে চিত্রের সেকেন্ডহ্যান্ড মোটরসাইকেলটি কিনলাম এর মধ্যে ১,০০,০০০/= টাকা সরকার নিয়ে গেল। এ অন্যায়, এ সামাজিক ন্যায়বিচার পরপহ্নি।
গল্প এখানেই শেষ না এমপিদের ট্যাক্স-ফ্রী ৮০০০ সিসি গাড়ি আনার ব্যবস্থা থাকলেও বাংলাদেশের জনগণের বড় একটা অংশ তাদের চলাচলের জন্য সবচেয়ে উপযোগী, সামর্থের মধ্যে থাকা মোটরসাইকেলের উপর সরকারের আরও অসংখ্য দমন আইন আছে। যেমন এমপিদের ট্যাক্স-ফ্রী ৮০০০সিসি ব্যবস্থা থাকলেও বাংলাদেশে আপনি ১৫০সিসির উপর কোন বাইক রেজিষ্ট্রেশন পাবেন না কারন ট্রাফিক সার্জেন্টরা ১৫০সিসি বাইক ব্যবহার করে। ট্রাফিক সার্জেন্টরা তাদের ঐ বাইক দিয়ে প্রয়োজনের সময় এ সমস্ত বাইক ধরতে পারবে না, তবে গাড়ি পাড়বে (?) শুধু ভারত ছাড়া অন্য কোন দেশ থেকে মোটরসাইকেল আমদানী করা যাবেনা সহ রাস্তায় কারনে অকারনে ট্রাফিক ও রেপিড এ্যাকশন বেটেলিয়ানের অত্যাচারতো আছেই।
অথচ আমাদের দেশের ক্ষেত্রে মোটরসাইকেলের গুনাগুন বলে শেষ করা যাবে না যদিও এটা আমরা কখনও বুঝিনি। উল্টো বাইক মানেই কিছু প্রিজুডিসড মাথায় চলে আসে।মানুষের মোবিলাইজেশনের জন্য বাইক সবচেয়ে ভালো বন্ধু হিসেবে গাড়িরও আগে থেকেই ছিল এবং আছে।
১.বাইক আজকাল গড়ে এক লিটার ফুয়েলে ৫০ কিলোমিটার মোবিলাইজ করে, যা পরিবেশ বান্ধবও, যেখানে গাড়ি অর্থাৎ প্রাইভেটকার জীপ ১০ থেকে ২ কিলোমিটার।
২.বাইকের দাম গড়ে গাড়ির দামের চেয়ে কম পক্ষে বিশ থেকে ত্রিশগুন কম, তুলনা মুলক।
৩. বাইক একজন/দুইজন আরহীর জন্য রাস্তার সর্বোনিম্ন স্থান ব্যবহার করে। যেমন ঢাকার রাস্তায় প্রাইভেটগাড়ির বদলে দশগুন বাইক এক সাথে নামালেও পুরো রাস্তাই খালি পরে থাকবে।
৪. একমাত্র বাইক দিয়ে বাংলাদেশের প্রায় ৯০% লোকেশনে পৌছানো যায়, যেখানে গাড়ি দিয়ে ২০% এর চেয়ে কম লোকেশনে এ্যাক্সেস আছে, রাস্তা না থাকার কারনে। এমপিরা যে গাড়ি কিনছে তাদিয়ে তারা তাদের ৮০% জনগণের কাছে যেতেই পারবে না।
আর ঢাকার ট্রাফিক জ্যামের কমাতে মোটর সাইকেলের চেয়ে ভালো আর কোন মোটর ভেইকেলের নেই তা কনক্লুসিভলি বলা যায়। নিচে কয়েকটি শহরের মোটরসাইকেল ট্রাফিকের ছবি শেয়ার করলাম।
এদিকে ঢাকার ট্রাফিক সিসটেমে সকল থেরাপী অসফল হয়ে অর্থমন্ত্রী গত ২২ ডিসেম্বর বলেন একটি প্রাইভেটকারে ৪/৫ জনের কম যাত্রী হলে তা রাস্তায় চলতে দেয়া হবে না। আইন করা হবে।
ঢাকার প্রাইভেট কারের উপর সংক্ষিপ্ত জরীপ
১. সাধারনতঃ রাস্তায় যেকোন সময় যেকোন লোকেশনে তাকালে দেখাযাবে রাস্তার পাঁচ ভাগের কমপক্ষে তিন ভাগ রাস্তা প্রাইভেটকার দখল করে রেখেছে।
২. একটি প্রাইভেট কার ১০০ থেকে ২৫০ বর্গফুট জায়গা দখল করে যা মাঝারি সাইজের একটি বাসের সমান।
৩. একই পরিমান জায়গা ব্যাবহার করে একটি বাস ২৫ থেকে ৩০ জন মানুষ বহন করে। সুতরাং একটি বাসের পরিবর্তে ১৫ টি প্রাইভেট কার।
ঢাকা শহরের কথা ধরলে প্রাইভেটকার ছাড়া ঢাকার রাস্তায় অন্য কোন থেরাপি বাকি আছে বলে মনে হয়না। অর্থমন্ত্রীর এই আইডেন্টিফিকেশনটি সঠিক থাকলেও প্রাইভেটকার নিয়ে তার উদ্ভট সমাধানটা অবাস্তব বরং তার নিজ মন্ত্রনালেয়ই প্রাইভেটকারকে মোটরসাইকেল দিয়ে রিপলেইস করার নীতি নিয়ার সুজোগ সবচেয়ে বেশি।আর যেটুকু বাইরে তা তিনি চাপ দিতে পারেন। আর ৮০০০সিসি গাড়ি আনা এমপিরা জনগণের চলাচলের বিষয়ে একটু সচেতন হন তাহলে শুধু ঢাকা না সারাদেশের পাবলিক মবিলাইজেশনে একটা রেভুলেশন করে ফেলা যাবে বিনা খরচে।
যেমনঃ
১. বাংলাদেশে পৃথিবীর যেকোন দেশ থেকে মোটরসাইকেল আমদানীর ক্ষেত্রে ৭৫% শুল্ক বাতিল করা।
২. বাংলাদেশ ৭০০সিসির উপরেও বাইক আমদানী করা যাবে।
৩. রাস্তায় কথায় কথায় মোটরসাইকেল ধরা চলবে না। বরং মোটরসাকেল দেখলেই ট্রাফিক পুলিশ স্যালুট দিতে পারে কারন যারা মোটরসাইকেল চালাচ্ছে তারা তাদের পিতার উপকার করছে।
৪. প্রাইভেটকারের চালকরা মোটরসাইকেল দেখলে সাবদ্ধানতা ও সমীহের সাথে চালাবে।
৫. দেশিয় মোটরসাইকেল উৎপাদকদের বিভিন্ন অভ্যন্তরীন প্রনোদনা দিয়ে প্রতিযোগীতায় যোগ্য করে তোলা।
কোন শহরে কি পরিমাণ বাইক ব্যবহার হলে এই পরিমাণ পরিত্যাক্ত করা হয় ! এরকম পরিত্যাক্ত বাইক বাংলাদেশে ডাম্পিং করা উচিত। আইন কানুন তোয়াক্কা না করেই ।
ফটো লিংক Use-Bike Campaign for Bangladesh
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১০ বিকাল ৫:১৩