স্বাধীনতার প্রথম প্রহরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
১৯৭১ এর ২৫ মার্চের কালো রাত্রিতে নিরস্ত্র সাধারন মানুষের পাকবাহিনীর হামলার ফলশ্রুতিতে এক রাত্রেই ঢাকা চট্টগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য মানুষ নিহত হয়। আওয়ামী লীগ নেতা ও তৎকালীন নির্বাচিত এমএনএ এডভোকেট আলী আজম স্থানীয় পুলিশ বেতারের মাধ্যমে এ জঘন্য হত্যাকান্ডের খবর প্রথম জানতে পারেন এর পরপরই তিনি কুমিল্লা সহ বিভিন্ন এলাকা থেকেও একই ধরনের খবর পান ও পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে আলোচনা করেন ও এলাকার গুরুত্বপূর্ন স্থান সমূহের সাথে যোগাযোগ রাখতে শুরু করেন এই ধারাবাহিকতায় এমপিএ লুৎফুল হাই সাচ্চু, যুবনেতা মাহবুবুল হুদা ভূঞা, সফিক খান ও অপরাপর কয়েকজন ছাত্র নেতা সহ স্থানীয় পিডিবি রেষ্ট হাউসে অবস্থানরত ৪র্থ বেংগলের বাংগালী কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে সেন্ট্রির মাধ্যমে খবর পাঠান;এবং মেজর সাফায়াত জামিলকে সার্বিক পরিস্থিতি অবগত করিয়ে চলে আসেন, মেজর সাফায়াত লেঃ হারুনকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করতে বলেন ও সময়মত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আস্বস্থ করেন। অপরদিকে সার্বিক পরিস্থিতি টের পেয়ে ৪র্থ বেংগলের অধিনায়ক খিজির হায়াত খান সেদিনই রাত ১২টার সময় অফিসারদের এক সভা আহবান করেন। এই সভায় সি কোম্পানীর অধিনায়ক মেজর সাফায়াত জামিলকে তার কোম্পানী সহ শহর থেকে ১০ মাইল দূরে শাহবাজপুরে ক্যাম্প করার নির্দেশ দেন। ডি কোম্পানীর মেজর সাদেক নেওয়াজকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে কারফিউ জারি করতে বলা হয়। আর বি কোম্পানীকে রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে পিডিবি এলাকায় থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। শাফায়াত জামিল অনেক দ্বিধা থাকা সত্বেও ঐ রাতেই শাহবাজপুরে অবস্থান নেন। তাকে দূরে সরিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর পাকবাহিনীর নিয়ন্ত্রনে নিয়ে যাওয়াই ছিল খিজির হায়াতের মূল উদ্দেশ্য। ২৬ মার্চ সকালেই ট্রাক বোঝাই পাক সেনারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রাস্তায় নেমে আসে। মাইকে কারফিউর ঘোষনা দিয়ে জনতাকে বাড়ী ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় নির্দেশ অমান্যকারীদের দেখা মাত্র গুলি করার ঘোষনা দেওয়া হয়। জনতা সে ঘোষনা অমান্যকরে কার্ফিউ ভেংগে রাস্তায় নেমে আসে। বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ বাসের লাঠি,কাঠ বল্লম সহ ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের বিভিন্ন রাস্তায় অবস্থান নেয়। জনতা কারফিউ অমান্যকরে মিছিলে মিছিলে শহর প্রকম্পিত করে তুলে। এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে একজন সিনিয়র বাংগালী অফিসারের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় উপস্থিতি প্রয়োজন অনুভব করে ৪র্থ বেংগলের অবাংগালী সিও খিজির হায়াত মেজর সাফায়াত জামিলকে তার কোম্পানী সহ শাহবাজপুর থেকে ফেরৎ নিয়ে আসে। শাফায়াত জামিলের শহরে অবস্থানের পরও বিদ্রোহর অবসান হলোনা। উল্টো স্থানীয় নেতৃবৃন্দের অনুরোধে মেজর সাফায়াত জামিল অপরাপর বাংগালী সেনা সদস্যদের সহায়তায় ২৭ মার্চ প্রত্যোষে বিদ্রোহ ঘোষনা করেন ও অবাংগালী অফিসার ও সেনাসদস্যদের আটক করে বাংগালীর মুক্তির সংগ্রামে একাত্ম হয়ে পরেন। এ ভাবেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শুরু বাংগালীর মুক্তিযুদ্ধ। এর পরের ইতিহাস অনেক রক্ত ঝড়ার ও কান্নার ইতিহাস বাংগালীর আত্মত্যাগ ও বিরত্বের ইতিহাস।