গত ছয় মাস ধরে বিছানায় আরাম করে ঘুমাতে পারছি না। প্রতিদিন রাত্রে বিছানায় যাওয়ার পর কি যেন কুট কুট করে কামড়ায়। একদিন ঘুম থেকে উঠে বাতি জ্বালিয়ে দেখি ছোট ছোট অনেক গুলো পোকা। একটা পোকা মেরে দেখি পেট ভরতি রক্ত।এমন পোকা আমি আগে কখনো দেখিনি।সকাল বেলা মাকে বললাম- মা বলল পোকা গুলোর নাম ছার পোকা। এরা রক্ত খায়। দিনেরবেলা আর পোকাদের কথা মনে থাকে না। রাতে বিছানায় যাওয়ার পোকার কামড় খেয়ে- ছার পোকার কথা মনে পড়ে। সামান্য ছোট ছোট পোকা গুলোর জন্য ছয় মাস ধরে ঘুমাতে পারছি না। এই পোকা মারার জন্য সব রকমের ওষুধ দেওয়া হয়েছে- কোনো কাজ হয়নি, ( ডিডিটি পাউডার ছাড়া ) ।
একদিন বিরক্ত হয়ে বালিশ তোষক সব সরিয়ে দেখি- একশো দুইশো না, পাঁচ শো-সাত শো ছারপোকা। এই ভারি জাজিম তোষক ছয় তলার ছাদে নিয়ে গিয়ে রোদে দেওয়া সম্ভব নয়। এই ছোট পোকা গুলো আমার ঘুম হারাম করে দিয়েছে। আরে...রক্ত খাবি খা, কামড়ার কি দরকার। কামড়ানোর পর লাল হয়ে ফুলে থাকে সারাদিন। আমার খালাতো বলেন বলেন- টাকা পয়সা বেশি হলে ঘরে ছারপোকার উপদ্রপ হয়। গভীর রাতে ঘুম থেকে উঠে শত শত ছারপোকা মেরে ওদের প্রতিহত করতে পারছি না। রাতে পোকা গুলো আমার শরীরের উপরে হাঁটা হাটি করে- আমি স্পষ্ট টের পাই। মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে হাসপাতাল থেকে এক ব্যাগ রক্ত কিনে এনে বাটিতে করে ওদের খেতে দেই।
একদিন খবরের কাগজে দেখি- "বাসের সিটে ছারপোকার উৎপাত ঠেকাতে আগুন দেওয়া হয়েছে।" সেদিন রাগে দুঃখে মধ্যেরাত্রে সুনীলের একটি কবিতা মনে পড়ল- আমি কীরকম ভাবে বেঁচে আছি তুই এসে দেখে যা নিখিলেশ/এই কী মানুষজন্ম?/আমি আক্রোশে হেসে উঠি না,/ আমি ছারপোকার পাশে ছারপোকা হয়ে হাঁটি,/ মশা হয়ে উড়ি একদল মশার সঙ্গে;/খাঁটি অন্ধকারে স্ত্রীলোকের খুব মধ্যে ডুব দিয়ে দেখেছি দেশলাই জ্বেলে/আজকাল আমার নিজের চোখ দুটোও মনে হয় একপলক সত্যি চোখ। /এরকম সত্য পৃথিবীতে খুব বেশী নেই আর।" আমি আর বেশী দিন বাচবো না। এই ছারপোকা আমাকে অতিষ্ট করে দিয়েছে। ঈশ্বরের কি দরকার ছিল- ছারপোকা বানানোর?
মানুষের চোখে রয়েছে যখন একক লেন্স তথন পোকামাকড়ের চোখ অথ্যাৎ যৌগ চোখে রয়েছে অনেক ছোট চাক্ষুষ ইউনিট।একদিন এক পাজি ছারপোকা কানের ভেতরে ঢুকে গেল। হঠাত দেখি মোবাইল চার্জ হয়, কারন অনুসন্ধান করে দেখি- মোবাইলের ভেতরে তিন টা ছার পোকা। ছারপোকা শুধু আমার বাসায় না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটা হলে হাজার হাজার ছারপোকা, রাজারবাগ পুলিশ লাইনের প্রতিটা ব্র্যাকে হাজার হাজার ছারপোকা।উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হল রয়েছে ১৭টি। এমন কি অনেক সরকারী হাসপাতা এবং অফিসেও হাজার হাজার ছারপোকা। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছি- এখন সব জাগায় ছারপোকা। দামী এসি বাসে আজকাল অনেক ছারপোকা পাওয়া যায়।কিছু মানুষও ছারপোকার মতন নিষ্ঠুর।
আসুন, ছার পোকা সমন্ধে কিছু যেনে নিই- ছারপোকা সিমিসিডে গোত্রের একটি ছোট্ট পরজীবী পতঙ্গবিশেষ।ইংরেজিতে বলে: Bed bug ।এটি রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকে।মূলতঃ এ পোকাটি বিছানা, মশারী, বালিশের এক প্রান্তে বাসা বাঁধলেও ট্রেন কিংবা বাসের আসনেও এদের দেখা মেলে।পুরোপুরি নিশাচর না হলেও ছারপোকা সাধারণত রাতেই অধিক সক্রিয় থাকে এবং মানুষের অগোচরে রক্ত চোষে নেয়। মশার ন্যায ছোট্ট কামড় বসিয়ে এরা স্থান ত্যাগ করে।