আমার দাদা জমিদার ছিলেন। তবে তার জমিদারি ছিল না। প্রজা ছিল না। কিন্তু তিনি জমিদারি স্টাইলে চলা ফেরা করতেন। তিনি কলকাতা থেকে জর্দা এনে বিক্রমপুর বসে খেতেন। ঢাকার জর্দা তিনি মুখেই দিতে পারতেন না। লোক দিয়ে কাপড় আয়রন করে আনতেন কলকাতা থেকে। দুই হাতে টাকা উড়াতেন। গ্রামের মানুষ তার চলাচল, ভাবসাব দেখে বলতো- নওসা মিয়া। টাকার দরকার হলেই জমি বিক্রি করতেন। ইন্ডিয়াতে নিউজপ্রিন্ট কাগজের ব্যবসা করতেন। ইন্ডিয়াতে তার একটা তিন তলা বাড়ি আছে। যা এখন ঐ দেশের সরকার নিয়ে নিয়েছে। অবশ্য আমার ছোট চাচা আজ ২০ বছর ধরে সেই তিনতলা বাড়িটি দখল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ছোট চাচার প্রচুর টাকা খরচ হচ্ছে। আমার সাথে দেখা হলেই ছোট চাচা বলেন বাড়িটা বিক্রি করতে পারলে কমপক্ষে ৩ কোটি পাবো। তোকে ৩০ লাখ টাকা দিব। আমি স্বপ্ন দেখতে শুরু করি- ৩০ লক্ষ টাকা দিয়ে কি কি করবো। যাই হোক আজকে আমার আলোচনার বিষয় হলো 'বাত'।
আমার দাদার যখন ৩৮ বছর তখন তিনি হঠাত করে অন্ধ হয়ে যান। (সেই সব কাহিনি অন্য সময় লিখব) এখন আসল গল্পে আসি। আমার দাদাকে দেখতাম সারাক্ষন কেউ না কেউ পা টিপে দিচ্ছে। দাদার এগারো জন ছেলে মেয়ে। ১১ জনেরই বিয়ে হয়েছে। তাদের আবার অনেক গুলো ছেলে মেয়ে। সব মিয়ে ৪০ জন তো হবেই। এই চল্লিশ জনের কেউ না কেউ নওসা মিয়ার পা টিপে দিচ্ছে। দাদার বাসায় গেলেই দেখতাম তাকে কেউ না কেউ পা টিপে দিচ্ছে। এরপর দেখতাম আমার আব্বাকে পা টিপে দিচ্ছে। ব্যাপারটা আমার কাছে খুব একটা ভালো লাগতো না। দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে- এখন আমার মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছা হয় কেউ যদি আমার পা টিপে দিত। আমার পা মাঝে মাঝে এত চাবায়। খুব বেশি চাবায়। তখন আমার মনে হয়- কেউ একজন যদি আমার পা টিপে দিত তাহলে খুব আরাম পেতাম। সুরভিকে মাঝে মাঝে বলি, সে মাঝে মাঝে পা টিপে দেয়। তাতে পা চাবানো টা সাময়িকভাবে বন্ধ হয়।
এই পা চাবানোর জন্য অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি। ডাক্তার শুধু ক্যালশিয়ামের ওষধ দেয়। তাতে কোনো উপকার পাই না। গত দশ বছর বিরক্ত হয়ে আর ডাক্তার এর কাছে যাই নি। মুখ বুঝে পা চাবানো সহ্য করে যাচ্ছি। হুটহাট করে পা চাবানো শুরু হয়। কখনও রাতে কখনও দিনে। কি যে যন্ত্রনা, কি যে কষ্ট! এই পা চাবানো নিয়ে পড়াশোনা করে যা যা জানলাম আজ তাই আমাদের সাথে শেয়ার করবো। সাধারন তো চল্লিশ বছর বয়সের পর বাত হয় আমার শুরু হয়েছে ১৬ বছর বয়স থেকে।
১০০টি বিভিন্ন ধরনের রোগ নিয়ে হয় বাতরোগ। ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হলে এই রোগ হয়। পরিমিত ঘুম না হওয়া। রক্তে ইউরিক এসিডের (Uric acid) মাত্রা বেড়ে গেলে বাত হয়। বাত থেকে বাঁচার জন্য- প্রচুর পানি খেতে হবে, নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে, সুষম খাবার ব্যবহার করার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের ওজন ঠিক রাখতে হবে। আমার এক কলিগ বললেন, আলু রস পান করতে। আলু অনেক টিপেও একটুও রস বের করতে পারলাম না। প্রতিদিন দুই কাপ আদা চা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে আপনার বাতের ব্যথা অনেকাংশে কমে যাবে। একজন বললেন, প্রতিদিন গরম পানিতে গোছল করতে হবে। প্রচন্ড গরমে কি গরম পানি দিয়ে গোছল করা সম্ভব?
এই পা চাবানো রোগ থেকে কিভাবে পরিত্রান পাবো? এই ব্যাপারে কেউ হেল্প করতে পারবেন?
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:৪৪