somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

বুক রিভিউ 'অন্তরীপ'

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



উপন্যাসের নাম 'অন্তরীপ'। প্রকাশকাল ২০০৯।
অন্তরীপ মানে মিলন। লেখক রোকসানা লেইস তার উপন্যাসে একদল কলেজ পড়ুয়া ছেলে মেয়েদের পাওয়া না পাওয়া, আশা-হতাশা, প্রেম ভালোবাসা এবং মনের গোপন রহস্য ও হাহাকার সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন। এই উপন্যাসটিতে আমার কাছে মনে হয়েছে- প্রতিটা চরিত্র লেখকের পরিচিত। উপন্যাসের ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো লেখক নিজের চোখে অবলোকন করেছেন।

উপন্যাসে একটি চরিত্র চন্দ্রা। হাসি খুশি প্রানবন্ত একটি মেয়ে। যে প্রেম ভালোবাসায় বিভোর হয়ে থাকতে ভালোবাসে। এবং ভালো গানও গায়। মহসিন নামের একজন তাকে টিভিতে গান গাওয়ার সুযোগ করে দেয়। বিনিময়ে অবশ্য তাকে চরম মূল্য দিতে হয়েছে। আরেকটি চরিত্র আছে 'দিঠি' নামে। সে চন্দ্রার বিপরীর। পরিবারের ইচ্ছায় তাকে প্রতিটা কাজ করতে হয়। দিঠি আমেরিকা যাওয়ার সুযোগ পেয়ে যায়। উপন্যাসে একজন ফোটোগ্রাফার চরিত্র আছে, নাম অর্ণব। আমাদের সমাজে অর্ণবদের অভাব নেই। আরও বেশ কিছু চরিত্র আছে- সরজিত, মহসিন পারভেজ, অর্পিতা।



'অন্তরীপ' উপন্যাসে যৌনতা আছে। উপন্যাসটি পড়লে বুঝা যায়- এই যৌনতার প্রয়োজন আছে। লেখক এইখানে খুব সুন্দরভাবে যৌনতা উপস্থাপন করেছেন। লেখক লিখেছেন- 'কত রকম ভাবে যে আমাকে আদর করল আমাকে। দেখ ও চলে গেছে কিন্তু ওর চিহ্ন রেখে গেছে আমার গায়ে। অর্পিতা ওর জামা আলগা করে গলা ঘাড় বুকের উপর অসংখ্য লাল দাগ দেখালো।' উপন্যাসের শেষের দিকে দেখা যাবে অর্পিতার জীবনটা বড্ড এলোমেলো হয়ে যায়।

কলেজে পড়ুয়া ছেলে মেয়েদের বন্ধুত্ব প্রেম ভালোবাসা আর মানসিকতা সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। বাবা-মা যে উঠতি বয়সের ছেলে মেয়েদের প্রতি সঠিক আচরন করে না। এবং এর জন্য অনেক বড় মূল্য দিতে হয়। 'অন্তরীপ' উপন্যাসটি প্রতিটা বাবা- মা এবং সন্তানদের পড়া উচিত। লেখক নতুন প্রজন্মদের ভুল গুলো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। কলেজ পড়ুয়া ছেলে মেয়েরা যে ভুল গুলো করে- একমাত্র বাবা-মা'ই সে ভুল গুলো থেকে তাদের আদরের সন্তানকে বাচিয়ে দিতে পারেন- লেখকের 'অন্তরীপ' উপন্যাসে একথাই ফুটে উঠেছে।




এই উপন্যাসে কিছু দুর্বল দিক আছে। লেখক খুব তাড়াহুড়া করেছেন। এত তাড়াহুড়া দেখে মনে হয়- উপন্যাসটি লেখার সময় লেখক অস্থিরতার মধ্যে ছিলেন। যে কোনো উপন্যাসের একটি গভীর বিষয় হচ্ছে- সময়। উপন্যাসটিতে লেখক কোন সময়ের কথা বলছেন, তা বুঝতে বেশ বেগ পেতে হয়। লেখক প্রকৃতি খুব ভালোবাসেন কিন্তু তার এই উপন্যাসে প্রকৃতির খুব সুন্দর বর্ণনা পাওয়া যায় না। এক দুই কথায় তার প্রকৃতি নিয়ে বর্ণনা শেষ করে দিয়েছেন। ব্যাপারটা বেশ দৃষ্টিকটু লেগেছে। উপন্যাসের চরিত্র, ঘটনা এবং ঘটনা প্রবাহ সব কিছু মিলিয়ে 'অন্তরীপ' খুব উপভোগ্য।


লেখক সম্পর্কে কিছু কথা বলি, ছোটবেলা থেকেই তিনি লেখালেখি করছেন। তার লেখায় পাওয়া যায় প্রকৃতি এবং নরনারীর মনের গোপন কামনা বাসনা। ভ্রমন কাহিনি লিখেন, লিখেন কবিতা। দেশ, বিদেশের পত্র-পত্রিকা, ওয়েব প্রকাশনে সমান ভাবে পদচারণা। রোকসানা লেইস এর 'শ্রাবনতিথির সোনালী আলো' এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই 'আলোর যাত্রা' বই দু'টি খুব পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে।

রোকসানা লেইস, এস.এস.সি ১৯৭৪ ও এইচ.এস.সি ১৯৭৬, সুনামগঞ্জ সরকারী কলেজ থেকে। ঢাকার বদরুন্নেসা সরকারী কলেজ থেকে স্নাতক ১৯৮১ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ১৯৮৪। নারী নয়, ‘মানুষ’ হিসেবে আত্মপ্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে চলা রোকসানা লেইসের জীবন-জীবিকার শুরু প্রিন্টিং প্রেস ব্যবসায় এক্সিকিউটিভ হিসেবে ঢাকায় ১৯৯৮ পর্যন্ত। রিয়েল এস্টেট এজেন্ট, টরেন্টো, কানাডা ২০০৯পর্যন্ত। বর্তমানে কানাডাতে মিডিয়া ওয়ার্কার হিসেবে কর্মরত। তার এক পুত্র ও এক কন্যা, টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন করে পেশার পাশাপাশি উচ্চতর ডিগ্রীর জন্য অধ্যয়নরত।


রোকসানা লেইস এর একটি কবিতা

বুকে নিয়ে খুঁজে অন্ধকারের পথ।
তাতান সুখ, বুকের গহীন চিরে, রক্তাক্ত ক্ষরন।
আনমনা চোখে দেখে অতীত স্বপ্ন শূন্য ভবিষ্যত।
হৃদয় পুড়ে গেলে, কারো কিছু যায় আসে না
হৃদয়ের কান্না, থেমে যাবে এক সময়, এই ধারনা।
গতানুগতিক এই, নিয়মে বাঁধা শৃঙ্খল।
ঢেড় ভালো;দেয়াল আঁকড়ে চলা সামাজিক জীবন।
পুড়ে পুড়ে ক্ষয়ে যাক, হাজারো প্রেমিক প্রেমিকার হৃদয়
শুধু স্থাপনায় দৃঢ় থাক, নিয়ম জটিলতা আচরণ।
ভালোবাসা ক্ষানিকের অস্থিত্ব সমুগ্র জীবনে
সংসার আর সবার উপরে।

এই লেখকের অন্যান্য বইঃ স্বপ্ন নগরীর খোঁজে, অজানার স্রোতে, চন্দ্রিমায় নীল জল ইত্যাদি। আরও প্রায় তিনটি উপন্যাসের কাজ শেষের দিকে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:০৪
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×