somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

কেন মানুষ আমাকে বারবার ঠকায়?

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ছোটবেলা থেকেই আমি খুবই সহজ সরল ভাবে জীবন যাপন করি। কোনো কিছুতেই ভনিতা করি না। নো নেভার। অন্যের ভনিতা পছন্দও করি না। জন্মের পর থেকেই আমি ঠকছি। ঘরে বাইরে, অফিস আদালত সব জায়গায়। এই ঠকা এখনও অব্যহত আছে। বাসে বিশ টাকার ভাড়া, ত্রিশ টাকা রাখে তবুও আমি কিচ্ছু বলি না, চুপ করে সহ্য করে যাই। কেউ কেউ ইচ্ছা করে পালিশ করা জুতো মাড়িয়ে দেয় তবুও কিচ্ছু বলি না। চুপ করে সহ্য করে যাই। ফুটপাতে অন্যায়ভাবে বাইক উঠিয়ে পেছন থেকী বিকট হর্ন দেয়। বাইক গায়ে লাগিয়ে দেয়। কিচ্ছু বলি না। হোটেলে দুপুরে ভাত খাওয়ার সময় রুই মাছ বলে অন্য মাছ দিয়ে দেয়, তখনও আমি কিছু বলি না। মানূষের অন্যায় আর ভুল দেখেও চুপ করে থেকেছি। প্রতিবাদ করতে গেলে উলটো নিজের উপরই চাপ আসে। একবার তো আমার চাকরিই চলে গেল। আসলে আমার ভাগ্যটাই খারাপ। মাঝে মাঝে যখন খুব ক্লান্ত লাগে- তখন আর হাঁটতে ইচ্ছা করে না। বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকি। এক ঘন্টা পার হয়ে যায়, বাস আর আসে না। যা-ও দুই একটা আসে, এমন ধাক্কা ধাক্কি হয়- আমার পক্ষে সেই বাসে উঠা সম্ভব হয় না। এইভাবেই তো চলছে এইসব দিন রাত।

ঘটনা- ১। অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে খুব শখ করে আট টা ইলিশ মাছ কিনলাম। ছয়টা মাছ একটু ছোট কিন্তু দুইটা মাছ বিশাল বড়। (নিশ্চয় পেটে ডিম আছে!) ইলিশ আমার ভীষন প্রিয় মাছ। বিশেষ করে ডিমটা। অনেক দামাদামি করার পর- ৮ টা ইলিশ দাম নিলো ২৫ শ' টাকা। মনে মনে আমি খুব খুশি। মন বলছে- ইলিশ মাছ কিনে জিতেছি।
বাসায় ফেরার পর সুরভি বলল- এগুলো ইলিশ মাছ না। নকল ইলিশ। আমার মাথাটা চক্কড় দিয়ে উঠলো। রান্নার পর কেউ খেতে পারেনি। মাটির দলার মতো। কোনো স্বাদ নেই। বাসায় ফিরে আমি নিজে মাছ গুলো ধুয়ে ফ্রিজে রেখেছি।
মাস শেষ হতে এখনও ১৩ দিন বাকি। তবু বুকে হাত রেখে, মাসের পকেট খরচ সব দিয়ে মাছ গুলো কিনেছিলাম। কেনার সময় আমি মাছওয়ালাকে বলেছিলাম- মামা এগুলো তো আবার নকল না? মাছওয়ালা- সব গুলো দাঁত বের করে বলল- পদ্মার মাছ। যখন খাবেন বুঝবেন। এই মাছ খাওয়ার পর আবার আমার কাছে আসতে হবে। বুয়াকে মাছ গুলো দিয়ে দিয়েছি।
এরপর ঐ মাছওয়ালাকে খুজতে আমি ঐ গলিতে অসংখ্য বার গিয়েছি। হারামজাদাকে পাইনি।

ঘটনা- ২। সুরভি বলল- আমার জন্য একটা হিমালয় ফেশওয়াশ এনো। ইন্ডিয়ানটা। আমি দোকান থেকে হিমালয় ফ্রেশওয়াশ কিনলাম। দোকানদারকে বারবার বললাম- ভাই এটা ইন্ডিয়ান তো? দোকানদার বিরক্ত হয়ে বলল- আমরা নকল জিনিশ বিক্রি করি না। ফেশওয়াশ নিয়ে বাসায় ফিরলাম। সুরভি বলল- এটা নকল। আমি রেগে গিয়ে বললাম- যখনই আমি কেনাকাটা করি- তুমি বলো নকল। ফাজলামো করছো আমার সাথে?
সুরভি তার আগের ব্যবহার করা ফ্রেশওয়াশ দেখালো। আমি খুব ভালো করে দু'টা মিলিয়ে দেখলাম। আমার টায় কোথাও ইন্ডিয়া লেখা নেই। লেখা আছে- জামালপুর, বাংলাদেশ। (লোকজন আমাকে কি নির্বোধ ভাবে? আমাকে দেখলে কি গাধা মনে হয়?)
নিজের উপরই নিজের খুব রাগ হলো। ইচ্ছা হলো- ঐ দোকানে গিয়ে লোকটার কানে ধরে বলি- হারামজাদা এইটা কি ইন্ডিয়ান?

ঘটনা- ৩। সুরভি ভাত খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। ডায়েট করছে। (এর আগেও অনেকবার ডায়েট করেছে)। সে ভাত খায় না। সবজি আর ফল খায়। রাতে আমি খাই ভাত আর সে খায় সালাদ। যাই হোক, তার জন্য নানান রকম ফল কিনি। ফল কিনতে গিয়েও লোকে আমাকে ঠলায়। মাপে কম দেয়- তাও মেনে নিই। কিন্তু কিভাবে -কিভাবে যেন পচা আপেল, আনার এবং মালটা দিয়ে দেয়। দুঃখ লাগে টাকা দিয়ে কিনে এনে ফেলে দিতে হয়। এর চেয়ে দুঃখের আর কি আছে ! মানুষ গুলো এমন কেন? এত প্রতারনার মধ্যে বাঁচবো কি করে? আমার তো অসৎ পথের টাকা না। সারা মাস পরিশ্রম করে, মাস শেষে যা পাই- তা দিয়েই তো খুব হিসেব করে চলি।

ঘটনা- ৪। বাসায় নতুন একটা বেসিন এনেছি। দুইজন মিস্ত্রি এসে বেসিন ফিট করে দিয়ে গেল। সব মিলিয়ে তাদের ৮/১০ মিনিট সময় লেগেছে। এখন তারা ৮০০ টাকা দাবী করছে? আমি প্রচন্ড অবাক! একজন মিস্ত্রির সারা দিনের রোজ কত?
আমি ভেবেছিলাম ১০০ টাকা দিব। এরপরও যদি চায় তাহলে আরও ১০০ টাকা দিব, মোট ২০০ টাকা। আমি ভদ্রলোক মিস্ত্রিদের সাথে টাকা নিয়ে চ্যাচামেচি করা আমার মানায় না। তাই রাগ গোপন রেখে ৫০০ টাকা দিলাম। তারা পাচশো টাকাও নিবে না। আট শ' টাকাই দিতে হবে। ডিল মেশিন ভাড়া আনতেই নাকি তাদের তিন শ' টাকা লেগেছে। শেষে রাগ করে এক হাজার টাকা দিলাম। বললাম দুই শ' টাকা বকশিস। সমাজটা যেন কেমন হয়ে গেছে। একজন আরেকজনকে ঠকাচ্ছে।

ঘটনা- ৫। নতুন একটা গ্যাসের চুলা কিনেছি। আগেরটা কি যেন সমস্যা ছিল। পুরোনো চুলাটা বুয়া নিয়ে গেছে। এইবার আর ভুল করলাম না- মিস্ত্রির সাথে আলাপ করে নিলাম। নতুন চুলা লাগিয়ে দিতে আপনাকে কত টাকা দিতে হবে। মিস্ত্রি বলল- আপনার সাথে দামদস্তর করতে পারব না। যা খুশি দিয়েন। মুহূর্তের মধ্যে চুলা লাগিয়ে ফেলল মিস্ত্রি। দু শ' টাকা দিলাম। দুই শ' টাকা দেখে মিস্ত্রি প্রচন্ড অবাক হলো। শেষ-মেষ পাঁচ শ' টাকা দিতে হয়েছে।
চুলা বা বেসিন লাগানোর সব যন্ত্রপাতি কিন্তু আমার কাছে আছে। আমি নিজেই এইসব খুব ভালো পারি। কিন্তু সুরভি এই কাজ আমাকে করতে দেয় না। মনে হয় আমার উপর ভরসা পায় না।

ঘটনা- ৬। শুক্রবার। মসজিদের সামনে এক লোক মূরগী বিক্রি করছে। আমাকে জোর করে চারটা দিয়ে দিল। বলল, চারটা মূরগী ৫ কেজির উপরে হবে। ১২ শ' টাকা দিয়ে কিনে নিলাম চারটা। ভালো খবর হলো- বাসায় গিয়ে মূরগী কাটাকাটির ঝামেলা নেই। ওরাই সব করে দিয়েছে। বাসায় যাওয়ার পর সুরভি বলল- স্যুপ খাওয়ার জন্য মূরগী এনেছো কেন? আমি বললাম, বড় মূরগী কি স্যুপ খাওয়ার জন্য? কম করে হলেও পাচ কেজি হবে। সুরভি বলল বড় মূরগী কোথায়? রান্না ঘরে গিয়ে দেখি- বদ মূরগীওয়ালা সব গুলো বাচ্চা মুরগী দিয়ে দিয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৪৩
২৪টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×